জিয়াউর রহমান
জিয়াউর রহমান (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬[৩] – ৩০ মে ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগণের উপর আক্রমণ করার পর তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার একটি বিবৃতি পাঠ করেন।[৪][৫] তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করে।[৬]
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন[৭][৮][৯] ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চার বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর ১৯৮১ সালের ৩০শে মে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নির্মমভাবে নিহত হন। ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা পরিচালিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে ২০ জন শ্রেষ্ঠ বাঙালির মধ্যে জিয়াউর রহমানের নাম ১৯ নম্বরে উঠে আসে।[১০]
জন্ম ও বংশ
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি তারিখে ব্রিটিশ বেঙ্গলের বগুড়া জেলার নশিপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামের মণ্ডল বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল মনসুর রহমান এবং মাতার নাম ছিল জাহানারা খাতুন ওরফে রানী। পাঁচ ভাইদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। তার পিতা কলকাতা শহরে এক সরকারি দপ্তরে রসায়নবিদ রূপে কর্মরত ছিলেন। তার ডাক নাম ছিলো কমল।[১১]
জিয়াউর রহমানের মূল পূর্বপৈত্রিক নিবাস বগুড়ার মহিষাবান গ্রামে তবে দাদার বিয়ের পর পরিবারটি বাগবাড়ী গ্রামে বসতি স্থাপন করে। গাবতলী, সুখানপুকুর ও যমুনার পশ্চিম তীরবর্তী এলাকার বিখ্যাত নেতা মুমিন উদ্দিন মণ্ডল মহিষাবানী (মৃঃ ১৮৪০) এবং উনার তৃতীয় অধঃস্তন আওলাদ কাঁকর মণ্ডল সাহেবের সরাসরি বংশধর জিয়াউর রহমান।[১২] জিয়াউর রহমানের দাদা মৌলবী কামালুদ্দীন মণ্ডল (জন্ম ১৮৫৪) ছিলেন কাঁকর মণ্ডল সাহেবের একমাত্র পুত্র এবং বাগবাড়ী মাইনর স্কুলের প্রধান শিক্ষক।[১৩]
শিক্ষাজীবন
তার শৈশবের কিছুকাল বগুড়ার গ্রামে ও কিছুকাল কলকাতা নগরীতে অতিবাহিত হয়। ভারতবর্ষ বিভাগের পর তার পিতা পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি নগরীতে চলে যান। তখন জিয়া কলকাতার হেয়ার স্কুল ত্যাগ করেন এবং করাচি একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন। ঐ বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং তারপর ১৯৫৩ সালে করাচিতে ডি.জে. কলেজে ভর্তি হন। শিক্ষাজীবনে উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করায় তিনি বাংলায় কথা বলতে পারলেও সাবলিলভাবে বাংলা লিখতে ও পড়তে পারতেন না।[১৪] ১৯৫৩ সালেই তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার ক্যাডেট রূপে যোগদান করেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে জিয়া
১৯৫৩ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কাকুলস্থিত পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদবীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন।[১৫] সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ ছত্রীসেনা ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[১৬] করাচিতে দুই বছর কর্মরত থাকার পর ১৯৫৭ সালে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে স্থানান্তরিত হয়ে আসেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন। ঐ সময়ই ১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুর শহরের বালিকা, খালেদা খানমের সঙ্গে জিয়াউর রহমান বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। যুদ্ধে দুর্ধর্ষ সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য যেসব কোম্পানি সর্বাধিক বীরত্বসূচক পুরস্কার লাভ করে, জিয়াউর রহমানের কোম্পানি ছিলো এদের অন্যতম। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমানকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে।[১৭] এছাড়াও জিয়াউর রহমানের ইউনিট এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য দুটি সিতারা-ই-জুরাত এবং নয়টি তামঘা-ই-জুরাত পদক লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। সে বছরই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটাস্থিত কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে স্টাফ কোর্সে যোগ দেন।[১৮] ১৯৬৯ সালে তিনি মেজর পদবীতে জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের দায়িত্ব লাভ করেন। অ্যাডভান্সড মিলিটারি অ্যান্ড কমান্ড ট্রেনিং কোর্স নামক একটি উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানিতে যান[১৯] এবং কয়েক মাস ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাথেও কাজ করেন।[১৬] ১৯৭০ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের দায়িত্ব লাভ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালায়। সে রাতে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।[২০] গ্রেফতার হবার পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।[২১][২২][২৩][২৪][২৫][২৬][২৭] পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে শেখ মুজিবের আদেশে আত্মগোপনে চলে যান। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের পর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করেন[৪][২৮]
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে জিয়া প্রশংসিত হন। ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান ইতোপূর্বে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ও সে ঘোষণা চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেন। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান কালুরঘাট সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিব প্রেরিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের লিফলেট, যা পূর্বেই মাইকে প্রচার ও বিতরণ করা হয়েছিলো,[২৯] তা পাঠ করেছিলেন যে ঘোষণা জিয়াও শুনেছিলেন।[৩০] অধ্যাপক আবুল কাশেম সন্দ্বীপও সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন।[৩১] বেলাল মোহাম্মদ নিজে, আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ,বেতার ঘোষক- আব্দুল্লাহ আল ফারুক, মাহমুদ হোসেন এবং সুলতানুল আলম-ও জিয়ার পূর্বে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেছিলেন।[৩২] এ. কে. খন্দকারের মতে বেতারের একজন টেকনিশিয়ানও ঘোষণাটি পাঠ করেছিলেন।[৩৩] বেলাল মোহাম্মদের দাবি, ঘোষণাপত্রের পাঠক হিসেবে জিয়া ছিলেন নবম।[৩০] বেলাল মোহাম্মদের এ বক্তব্যকে অনেকে নিছক রসিকতা বলেও আখ্যা দিয়েছেন।[৩৪] মূলত, অনেকের ঘোষণার সময় নিয়মিত আয়োজনের সময় না হওয়ায় তাদের ঘোষণা সীমিতসংখ্যক মানুষ শুনতে পেয়েছিলেন।[৩২] তবে এম এ হান্নান ও আবুল কাশেম সন্দ্বীপের ঘোষণা ছিল জিয়ার পূর্বে এবং তাদের (বিশেষ করে এম এ হান্নানের) ঘোষণাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৮]
কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার পর সম্প্রচার কেন্দ্রের উদ্যোক্তাগণ নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে থাকেন। বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা বেলাল মোহাম্মদ বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা পাহারার জন্য মেজর রফিকুল ইসলামকে সৈনিক পাঠাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি তা করতে ব্যর্থ হলে বেতার কেন্দ্রের উদ্যোক্তাগণ অসহায় বোধ করতে থাকেন।[৩০] এক সহকর্মীর পরামর্শে বেলাল মোহাম্মদ পটিয়ায় সেনাছাউনিতে যান এবং কথাবার্তায় নিশ্চিত হন সেখানকার উচ্চপদস্থ সামরিক সদস্য মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর সাপোর্টার। বেলাল, জিয়াকে তাঁর সেনাছাউনি বেতার কেন্দ্রের কাছে স্থানান্তর করতে অনুরোধ জানালে জিয়া রাজি হন এবং জিপ নিয়ে বেতার কেন্দ্রে যান।[৩০]
২৭শে মার্চ প্রথমবারের মতো [৪][৫][৩৫] এবং পরে ২৮ ও ২৯ তারিখেও তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। বেলাল মোহাম্মদ জিয়ার ২৭শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে বলেন,
আমার সহকর্মী যারা উপস্থিত ছিল, তারা প্রোগ্রাম শুরু করলো। একসময় জিয়াউর রহমান ও আমি একটা রুমে বসেছি। আমার এক সহকর্মী আমাকে কিছু কাগজপত্র দেখাচ্ছে। আমি কী মনে করে বললাম, “আচ্ছা মেজর সাহেব, এখানেতো আমরা সবাই minor আপনিই একমাত্র Major। আপনি কি নিজের কণ্ঠে কিছু বলবেন?”
উনি বললেন, “হ্যাঁ সত্যিই তো, কী বলা যায়?” একটা কাগজ এগিয়ে দেওয়া হলো। তার প্রতিটি শব্দ তিনিও উচ্চারণ করেছেন এবং আমিও উচ্চারণ করেছি। এইভাবে লেখা শুরু হলো, “I Major Zia, on behalf of our great national leader Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, do hereby declare [the] independence of Bangladesh”
তারপরে লেখা হলো "পাঞ্জাবিরা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে। তাদের দমন করতে আমাদের দুই দিন কি তিন দিনের বেশি সময় লাগবে না।" তার পরে শেষ করা হলো ‘খোদা হাফেজ জয় বাংলা’ বলে। ... কিছুক্ষণের মধ্যে মেজর জিয়া একটা জরুরি ভাষণ দেবেন – এভাবে দুই তিনবার অ্যাডভান্স অ্যানাউন্সমেন্ট করা হলো। তারপর তিনি নিজের কণ্ঠে ইংরেজিটা পড়েছেন।
কিন্তু জিয়ার ঘোষণাপাঠের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ধোঁয়াশা ও বিতর্ক রয়েছে। ২৭শে মার্চের কোনো এক ঘোষণায় জিয়া নিজেকে অস্থায়ী সরকারপ্রধান বলে দাবি করেন যা একটি মার্কিন গোপন নথিতে শেখ মুজিবের ঘোষণার বর্ণনার পরে লিপিবদ্ধ হয়েছে।[৩৬] রহস্যজনকভাবে তিনি ২৮শে মার্চেও বেশ কয়েকবার নিজেকে Provisional Head of Bangladesh এবং Liberation Army Chief বলে ঘোষণা দেন এবং স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র নামটি থেকে বিপ্লবী শব্দটি বাদ দেন।[৩২] জিয়ার এ বিতর্কিত কার্যকলাপ বেতার কেন্দ্রের উদ্যোক্তাগণ সহজভাবে নিতে পারেননি। বেতার উদ্যোক্তাদের অনেক পরিচিতজন যোগাযোগ করে ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর নাম না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন এবং চট্টগ্রামের জনতার মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রতিবাদের মুখে জিয়া ২৯শে মার্চ তার শেষ ঘোষণাগুলোতে তার ভুল সংশোধন করেন।[৩২]
মেজর জিয়া এবং তার বাহিনী সামনের সারি থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং বেশ কয়েকদিন তারা চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অভিযানের মুখে কৌশলগতভাবে তারা সীমান্ত অতিক্রম করেন। ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রথমে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন[৩৭] এবং চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী,রাঙ্গামাটি, মিরসরাই, রামগড়, ফেনী প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। তিনি সেনা-ছাত্র-যুব সদস্যদের সংগঠিত করে পরবর্তীতে ১ম, ৩য় ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এই তিনটি ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনীর প্রথম নিয়মিত সশস্ত্র ব্রিগেড জেড ফোর্সের অধিনায়ক[৩৮] হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান, যুদ্ধ পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল হতে জুন পর্যন্ত ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং তারপর জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত যুগপৎ ১১ নম্বর সেক্টরের[৩৯] ও জেড-ফোর্সের[৩৮] কমান্ডার হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক পেশাজীবন
স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে কুমিল্লায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৪তম ব্রিগেডের কমান্ডার নিয়োগ করা হয় যে ব্রিগেডের সদস্যরা তারই অধীনে ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো। '৭২ এর জুন মাসে তিনি কর্নেল পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ (উপ সেনাপ্রধান) নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে, ঐ বছরের অক্টোবরে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল করেন এবং নিজেও লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবি গ্রহণ করেন।[৪০] তার বিরুদ্ধে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার এবং অমুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তান প্রত্যাগত সেনা অফিসারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগানো ও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ রয়েছে, এমনটা লিখেছেন জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী তাঁর কারাগারের ডায়রী বইতে।[৪১][খ]
শেখ মুজিব হত্যা ও পরবর্তী সময়
মুজিব-হত্যা, ৩রা নভেম্বরের অভ্যুত্থান ও জিয়া
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান তার নিজ দলের কিছু বিপথগামী সদস্য, কথিত বৈদেশিক শক্তি এবং সামরিক বাহিনীর ডজনসংখ্যক সামরিক অফিসার দ্বারা সংঘটিত একটি তথাকথিত অভ্যুত্থানে তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নং বাড়িতে নিহত হন।[৪২][৪৩][৪৪] শেখ মুজিবকে হত্যার চক্রান্তে জিয়া সমালোচিত ভূমিকা রাখেন।[৪২][৪৩][৪৪] মুজিব-হত্যার পর হত্যার চক্রান্তকারী মুজিব মন্ত্রীসভার বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ সংবিধান বহির্ভূতভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট, শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার ১০ দিন পর জিয়া খন্দকার মোশতাক আহমেদ কর্তৃক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। [১৬][৪৫] পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।[৪৬]
মোশতাক ক্ষমতায় থাকাকালে তার নামে মূলত শেখ মুজিবের খুনি সামরিক অফিসারগণই ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।[৪৭] খুনিচক্র রাষ্ট্র পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে থাকলে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। খালেদ মোশাররফ, শাফায়াত জামিল সহ কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী সিনিয়র অফিসার এর বিরোধিতা করে জিয়াকে সেসব খুনি রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী জুনিয়র অফিসারদের বঙ্গভবন থেকে সেনানিবাসে ফিরিয়ে এনে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহবান জানান।[৪৮] কিন্তু জিয়া নিজেই ঐসব খুনি অফিসারচক্র কর্তৃক নিযুক্ত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে ব্যর্থ হন।[৪৮] ফলে ঐ বছরের ৩রা নভেম্বর বীর বিক্রম কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বাধীন ঢাকা ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের সহায়তায় বীর উত্তম মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। এর ফলে ৬ই নভেম্বর খন্দকার মোশতাক আহমেদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হন। তাকে নির্বাচন আয়োজন করে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেয়া হয়।[৮] জিয়াউর রহমানকে চিফ-অফ-আর্মি স্টাফ হিসেবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং তার ঢাকা সেনানিবাসের বাসভবনে গৃহবন্দী করে রাখা হয়।
জিয়াকে গৃহবন্দি করা হয় এবং তার বাড়িটি যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু তার শোবার ঘরের টেলিফোনটি সচল ছিল।[৮]
৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থান ও এর পরবর্তীসময়ের ঘটনাবলী
জিয়া অনেক পূর্ব থেকেই সেনাবাহিনীর একজন জনপ্রিয় অফিসার, কর্নেল তাহেরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।[৪৮] কর্নেল তাহের সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে জাসদ-সৃষ্ট ‘গণবাহিনী’র প্রধান ছিলেন। গণবাহিনীর লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ পদ্ধতির পরিবর্তে একটি চীনা ধরনের ‘পিপলস আর্মি’[৪৮] তথা ‘শ্রেণিবিহীন সেনাবাহিনী’ গঠন করা। জিয়া টেলিফোনে তাহেরকে নিজের মুক্তির জন্য সহায়তা চান।[৮] তাহের সৈনিকদের একতাবদ্ধ করার লক্ষ্যে ১২ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।[৮] এই ১২টি দফা মূলত সিপাহীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রণীত হয়। জিয়াকে মুক্ত করার জন্য কর্নেল তাহের ও জাসদের উদ্যোগে পরিকল্পনা করা হয়: জিয়াকে মুক্ত করা, খালেদ মোশাররফের পতন ঘটানো এবং জিয়ার কাছ থেকে সিপাহীদের স্বার্থে ১২ দফার বাস্তবায়ন।[৮]
তাহের এবং জাসদের উদ্যোগে সেনানিবাসে সহস্রাধিক লিফলেট প্রচার করা হয়। প্রচার চালানো হয় যে, খালেদ মোশাররফ ভারতের দালাল এবং ভারতের চক্রান্তে খালেদ ক্ষমতায় আরোহণ করেছেন।[৪৮] এ পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ সামরিক নিম্নপদস্থ সিপাহীরা জাসদের গণবাহিনীর সহায়তায় ৭ই নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটায়। এ অভ্যুত্থানের স্লোগান ছিল:
“ | "সেপাই সেপাই ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই!... সেপাই সেপাই ভাই ভাই, সুবেদাররের ওপরে অফিসার নাই"। | ” |
বিক্ষুব্ধ সৈনিকেরা এ অভ্যুত্থানে অফিসারদের খুন করতে থাকে। জিয়াউর রহমানকে তার ঢাকা সেনানিবাসের গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্ত করে অভ্যুত্থানকারীরা ২য় ফিল্ড আর্টিলারির সদরদপ্তরে নিয়ে আসে। [৪৭] ঐ দিন সকালেই পাল্টা অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় শেরে বাংলা নগরে নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদরদপ্তরে ক্ষুব্ধ জওয়ানদের হাতে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম,কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম এবং লেঃ কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তম নিহত হন।[৪৮]
এদিকে জিয়া কর্নেল তাহেরকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেন এবং তার (জিয়ার) জীবন রক্ষা করার জন্য তাহেরকে ধন্যবাদ জানান। জিয়া আরো বলেন, কর্নেল তাহের ও জাসদের জন্য তিনি (জিয়া) জীবন দিতেও প্রস্তুত।[৮] তারপর জিয়া রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যতিরেকে বেতারে ভাষণ দেন এবং নিজেই নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বলে দাবি করেন। পরে প্রতিবাদের মুখে পিছিয়ে এসে উপ-সামরিক আইন প্রশাসক হন। জিয়া ৭ই নভেম্বর ০৭:৪৫ মিনিটে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা তথা গণবাহিনীর ১২ দফা দাবিতে স্বাক্ষর করেন।[৮]
কিন্তু অভ্যুত্থানের পর থেকে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তীত হয়ে যায়। জিয়া সৈনিকদের দাবি পূরণে অস্মীকৃতি জানাতে থাকেন।[৪৮] সৈনিকগণ তাদের দাবি অনুযায়ী শ্রেণিহীন সেনাবাহিনীর অনুকূলে জিয়াকে ‘জনাব জিয়া’ ও ‘জিয়া ভাই’ বলে ডাকতে শুরু করেন।[৪৮][৪৯] জিয়া এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন,
“ | "আমি জনাব জিয়া নই, আমি জেনারেল জিয়া"। | ” |
এদিকে কর্নেল তাহেরও জিয়ার উদাসীনতা দেখে ক্ষুব্ধ হন। জিয়া, তাহেরের গোপন দাবিদাওয়া মেনে নিতে অস্মীকার করেন।
সৈনিকদের দাবি পূরণে জিয়ার উদাসীনতা দেখে তারা জিয়াকে সন্দেহ করেন। ফলে সৈনিকগণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে যায় এবং অফিসারদের বাসস্থানে প্রবেশ করে হত্যা করতে থাকে। এমন দিনগুলোতে নাটকীয়ভাবে অফিসারদের ক্যান্টনমেন্ট থেকে বোরকা পরিধান করে সপরিবারে পলায়ন করতে দেখা যেত।[৪৮] তাহের আবারো অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনা করার জন্য মনঃস্থির করেন। ক্যাপ্টেন সিতারা, মেজর করিম, ক্যাপ্টেন আনোয়ার, লেফটেন্যান্ট মুস্তাফিজ, মেজর আজিম, মেজর মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন খালেক ও লেফটেন্যান্ট সিকান্দার প্রমুখ অফিসারগণ সৈনিকদের হাতে নিহত হন।[৮]
বাধ্য হয়ে জিয়া সৈনিকদের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে থাকেন। কর্নেল তাহেরকে ৭ই নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত ‘নির্বাচিত’ সরকারকে উতখাত, সেনাবাহিনীতে উস্কানিমুলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার অভিযোগে ২৪শে নভেম্বর গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হয়। রব, জলিল ও অন্যান্য জাসদ নেতাদেরও আটক করা হয়।[৮]
একটি প্রহসনমূলক বিচারে ২১ জুলাই, ১৯৭৬ ‘জিয়ার আদেশে’ তাহেরকে ফাঁসি দেয়া হয়।[৪৬][৫০] তাকে অভিযোগপত্র প্রদর্শন করা হয়নি কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থন বা আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শেরও সুযোগ দেয়া হয়নি এবং বিচারের প্রহসন সম্পর্কে অবগত হয়েও বিচারপতি সায়েম তাহেরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত করতে ব্যর্থ হন। কারণ সায়েমের নামে জিয়াই ছিলেন মূল ক্ষমতার অধিকারী।[৮] তাহেরের মৃত্যুদণ্ডের তিন দশক পর আদালত মৃত্যুদণ্ডটিকে অবৈধ এবং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে আখ্যা দেয়।[৫১]
রাষ্ট্রপতিত্ব (১৯৭৭-১৯৮১)
এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন। |
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর অভ্যুত্থানের পর তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন।[৫২] ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চিফ অফ আর্মি স্টাফ পদে নিযুক্ত করা হয়[৫৩] এবং বেতারে ভাষণে জিয়া নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন এবং প্রতিবাদের মুখে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। ৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পর থেকে সায়েমের নামে তিনিই ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।[৯]
বিচারপতি সাদাত মোহাম্মদ সায়েম একটি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে থাকেন। সায়েম নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাঁর অত্যন্ত আস্থাভাজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে দায়িত্ব দেন।[৫৪]
এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের এ সময়ে সেনানিবাসে ভিড় করতে দেখা যেত যা সম্পর্কে বিচারপতি সায়েমও অবগত ছিলেন।[৮][৫৪][৫৫] শেখ মুজিব বা আওয়ামী লীগ জাতীয় চার নেতার মৃত্যু হলেও আওয়ামী লীগের সংগঠন ছিল ঈর্ষণীয় এবং স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত।[৫৬] সম্ভাব্য সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অনুকূলে ছিল। তাই সেসব সুযোগসন্ধানী রাজনীতিবিদগণ জিয়াকে যেকোনো মূল্যে সম্ভাব্য নির্বাচন স্থগিত করতে আহবান জানান।[৮]
এদিকে সায়েমের পরম আস্থাভাজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সাত্তারও তার নির্বাচন অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব আগ্রাহ্য করে জিয়াকে ক্ষমতা দখলের ইন্ধন জোগাতে থাকেন।[৫৫]
জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে নেন।
জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালের ৮ই মার্চ মহিলা পুলিশ গঠন করেন, ১৯৭৬ সালে কলম্বোতে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ ৭ জাতি গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালেই তিনি উলশি যদুনাথপুর থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন উদ্বোধন করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯শে নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন।[৫২] ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চিফ অফ আর্মি স্টাফ পদে দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়[৫৩] তিনি ১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করেন, ১৯৭৭ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি একুশে পদক প্রবর্তন করেন এবং রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত সায়েমের উত্তরসূরি হিসেবে ২১শে এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়া দেশে আবার গণতন্ত্রায়ণের উদ্যোগ নেন। তিনি বহুদলীয় রাজনীতি চালুর সিদ্ধান্ত নেন। দেশের রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির আভাস দিয়ে তিনি বলেন,[৫৭]
“ | I will make politics difficult for the politicians.[৫৮] | ” |
১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনে মোট ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে,-এ নির্বাচনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। ২ জনের মনোনয়নপত্র বাছাই –এ বাদ পড়ায় বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা ৯ জন। ১ জন আপিল দাখিল করায় ও তার আপিল গৃহীত হওয়ায় এবং কোন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ১০ জন ছিল। এরপর জিয়াউর রহমান মে মাসে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা এবং আস্থা যাচাইয়ের জন্য ৩০শে মে গণভোট অনুষ্ঠান ও হ্যাঁ-সূচক ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেন।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব প্রদান করে তা জনপ্রিয় করে তোলেন। বাংলাদেশে বহু সংখ্যক বিভিন্ন ধরনের মতের ও ধর্মের নানা জাতিগোষ্ঠী বাস করে। তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মাত্রা ও ধরন একে অপরের থেকে ভিন্ন। তাই জিয়া মনে করেন যে, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে নয়, ভূখণ্ডের ভিত্তিতেই জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করা উচিত। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের ঐক্য ও সংহতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এই ধারণা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার শক্তি হিসেবে বাংলাদেশে শক্তিশালী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালান।
আইন শৃঙ্খলা
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই জিয়াউর রহমান দেশে শান্তি শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি পুলিশ বাহিনীকে শক্তিশালী করেন। পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করে তিনি তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সশস্ত্র বাহিনীতেও তিনি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি কঠোর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে পেশাগত শৃঙ্খলা উন্নয়নের কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং তাদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করেন। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে যথেষ্ট সফল হলেও জিয়াউর রহমানকে বেশ কয়েকটি সেনা-বিদ্রোহ ও সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মোকাবেলা করতে হয়। এসব বিদ্রোহ দমনে বাধ্য হয়ে তাকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
বহুদলীয় গণতন্ত্র
নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং অবাধ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান যত দ্রুত সম্ভব রাজনীতির গণতন্ত্রায়ণে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের আমলে নিষিদ্ধঘোষিত রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এইভাবে, তিনি সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রবাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রধান করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন। ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে তিনি ৭৬.৬৭% ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এবং রাষ্ট্রপতির পদে নিয়োজিত থাকেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া এই দলের চেয়ারপারসন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। জিয়ার এই দলে বাম, ডান ও মধ্যপন্থীসহ সকল স্তরের লোক ছিলেন। বিএনপির সব থেকে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর নিয়োগ পদ্ধতি। প্রায় ৪৫% সদস্য কেবল রাজনীতিতে নতুন ছিলেন তাই নয়, তারা ছিলেন তরুণ। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহবায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যদের নাম এবং ১৯শে সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, বিএনপি গঠন করার আগে ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। ২৮শে আগস্ট ১৯৭৮ সালে নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে।[৫৯] নির্বাচনে অংশ নিয়ে আব্দুল মালেক উকিল এর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৮টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১টি ও মুসলিম ডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি আসনে জয়লাভ করে।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন
জিয়া প্রবর্তিত উন্নয়নের রাজনীতির কতিপয় সাফল্য:[৬০]
- সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান।
- জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি।
- বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া।
- দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লব।
- সেচব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন।[৬১]
- গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লক্ষ মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দান।
- গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা প্রদান ও গ্রামোন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) গঠন।
- গ্রামাঞ্চলে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি বন্ধ করা।
- হাজার হাজার মাইল রাস্তা-ঘাট নির্মাণ।
- ২৭৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ করে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধিকরণ।
- নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ।
- কলকারখানায় তিন শিফট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি।
- কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশকে খাদ্য রপ্তানির পর্যায়ে উন্নীতকরণ।[৬১]
- যুব উন্নয়ন মন্ত্রাণালয় ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে সম্পৃক্তকরণ।
- ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে সকল মানুষের স্ব স্ব ধর্ম পালনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণ।
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন।
- তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামের জনগণকে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তকরণ এবং সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব সৃষ্টি করার লক্ষ্যে গ্রাম সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন।[৬১]
- জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আসনলাভ।
- তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি।
- দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে 'সার্ক' প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ।
- বেসরকারি খাত ও উদ্যোগকে উৎসাহিতকরণ।[৬১]
- জনশক্তি রপ্তানি, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্পসহ সকল অপ্রচলিত পণ্যোর রপ্তানির দ্বার উন্মোচন।
- শিল্পখাতে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পরপরই জিয়াউর রহমান দলের কর্মীদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ নেন, যার মাধ্যমে দলের কর্মীদের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, দলের আদর্শ, সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হত।
১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে এরকম একটি কর্মশালা উদ্বোধনকালে তিনি দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন,[৬২]
“ | কোন রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। একটা অবদান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে কখনোই রাজনীতি করা যেতে পারে না। অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে ধর্মকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সময়ে যখনই রাজনীতি করা হয়েছিল সেটা বিফল হয়েছে। কারণ ধর্ম ধর্মই। আমাদের অনেকে আছে যারা আমাদের দেশে যে বিভিন্ন ধর্ম রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেন। রাজনীতির রূপরেখা বানাতে চেষ্টা করেন, আমরা বারবার দেখেছি তারা বিফল হয়েছে। ধর্মের অবদান থাকতে পারে রাজনীতিতে, কিন্তু রাজনৈতিক দল ধর্মকে কেন্দ্র করে হতে পারে না। এটা মনে রাখবেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। | ” |
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর জিয়া বাংলাদেশের কূটনৈতিক নীতিমালায় বিশেষ পরিবর্তন আনেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তির দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে বিশেষ একটি কূটনৈতিক অবস্থানের সৃষ্টি হয়, যার ফলে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশি ভারত সহ সোভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধুতা অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক নৈকট্য গড়ে তুলেছিল। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আন্তর্জাতিক স্নায়ু যুদ্ধের তৎকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখযোগ্য সংস্কার করেন যার দুটি মূল দিক ছিল সোভিয়েত ব্লক থেকে বাংলাদেশের সরে আসা ও মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক স্থাপন করা[১৯]। জিয়াউর রহমান সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যতীত প্রাচ্যের আরেক পারমাণবিক শক্তি চীনের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হন। তার পররাষ্ট্রনীতি সংস্কার প্রক্রিয়ার আওতায় আরও ছিল বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের সাথে সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ, যে সম্পর্কে স্বাধীনতার পর থেকেই শৈত্য বিরাজ করছিল। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সুবিধা ও উপকারিতা বাংলাদেশ আজও পুরোমাত্রায় উপভোগ করছে, কেননা বর্তমানে সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মস্থলে পরিণত হয়েছে তার রূপরেখা জিয়াই রচনা করে গিয়েছিলেন[৬৩]। এক্ষেত্রে সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সাথে স্থাপিত সম্পর্ক অনেকটা অর্থনৈতিক হলেও যুক্তরাষ্ট্র[৬৪] ও চীনের[৬৫] সাথে স্থাপিত সম্পর্কে সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলোও প্রাসঙ্গিক ছিল। বিশেষ করে চীনের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করার মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পু্নর্গঠনের কাজ অনেকটা ত্বরান্বিত করেছিলেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অস্ত্রাগারের দিকে তাকালে সেই সত্যই প্রতিফলিত হয়। সামরিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সাথে উন্নত কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে জিয়া রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা বিমানের আধুনিকীকরণও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন[৬৬]। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট জিয়ার পররাষ্ট্র নীতির সাফল্যে বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে শক্তিশালী জাপানকে হারিয়ে প্রথমবারের মত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত[৬৭] হয়।
প্রাথমিকভাবে এসব সংস্কার বৃহত্তর প্রতিবেশি ভারতের সাথে সামান্য দূরত্ব সৃষ্টির ইঙ্গিত বহন করলেও জিয়াউর রহমান যে আঞ্চলিক সহায়তাকে গুরুত্ব দিতেন সেই সত্যের প্রতিফলন ঘটে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহায়তা সংস্থা (সার্ক) গঠনে তার উদ্যোগ ও অবদানের মধ্য দিয়ে। যেহেতু ভারত সে সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অত্যন্ত বন্ধুভাবাপন্ন ছিল, স্নায়ুযুদ্ধের অপরপক্ষ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ কূটনৈতিক নৈকট্য ভারতের সাথে দূরত্ব সৃষ্টির একটি কারণ হতে পারত। চীনের সাথে বাংলাদেশের তৎকালীন সদ্যস্থাপিত সুসম্পর্কও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ[৬৮]। কিন্তু জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন যে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতা স্থাপিত হলে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে যার ফলে বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো উপকৃত হবে। এই লক্ষ্যে তিনি সার্কের রূপরেখা রচনা করেন যা পরে ১৯৮৫ সালে বাস্তবে রূপ নেয় ও প্রতিষ্ঠিত হয় সার্ক।
ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার
১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুর শহরের বালিকা, খালেদা খানমের সঙ্গে জিয়াউর রহমান বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো।
মৃত্যু
জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে — তিনি সেনাবাহিনীতে তার বিরোধিতাকারীদের নিপীড়ন করতেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তবে জিয়া অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন।[৬৯] অনেক উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বিপদের সমূহ সম্ভাবনা জেনেও জিয়া চট্টগ্রামের স্থানীয় সেনাকর্মকর্তাদের মধ্যে ঘটিত কলহ থামানোর জন্য ১৯৮১ সালের ২৯শে মে চট্টগ্রামে আসেন এবং সেখানে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে থাকেন। তারপর ৩০শে মে গভীর রাতে সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন। জিয়াউর রহমানকে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে দাফন করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়ার জানাজায় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ জনসমাগম ঘটে যেখানে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হয়।[৭০][৭১][৭২]
সমালোচনা
রণনায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদদের কাছে সমাদৃত ও স্বীকৃত।[৭৩] শেখ মুজিবের আমলের শেষের দিকে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দমন এবং বাকশাল (মুজিবের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একদলীয় শাসন) রহিতকরণের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য জিয়াকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। অপরপক্ষে, জিয়া তার বিরোধীদের দমন করার জন্য সমালোচিত হন।[৭৪] তবু অর্থনীতি পুনর্নির্মাণ করার জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার গ্রহণের জন্য জিয়াকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। তার ইসলামিক মনোভাব তাকে বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন এনে দেয়। তার জাতীয়তাবাদী দর্শন অনেকের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয় যারা ভারত ও সোভিয়েতপন্থী রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল।[৭৫]
রাজনৈতিক বিতর্ক
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে জিয়ার ভূমিকা বিতর্কিত।[৭৬] ১৯৭৫ সালে মুজিবের হত্যাকারীদের বিচারকার্য বন্ধ করার জন্য খন্দকার মোশতাক আহমেদের অনুমোদিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জিয়ার দ্বারা তার আমলে বৈধকরণ করা হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন শেখ মুজিবুর রহমানের কতিপয় হত্যাকারীকে বিদেশে প্রেরণ করা হয়।
রাষ্ট্রপতিত্ব
ঢাকা হাইকোর্ট এক রায়ে জিয়ার সামরিক শাসনসহ ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকে "বেআইনি ও অসাংবিধানিক" বলে ঘোষণা করে। জিয়ার সামরিক আইন ও আদেশ, অভ্যুত্থান থেকে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ এবং অনুষ্ঠিত গণভোট সংবিধানবিরোধী বলে ঘোষিত হয় এবং আদালতের রায়বলে ইনডেমনিটি আধ্যাদেশ বাতিল করা হয়।[৭৪]
সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ
শেখ মুজিবের অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রত্যাখান করে জিয়া বাংলাদেশে ইসলামিক রাজনীতি চালু করেন এবং মুসলিম জাতিসমূহের সহযোগিতা সংস্থায় বাংলাদেশকে তুলে ধরেন যা সাধারণ জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। তবু অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, এসব ব্যবস্থা বাংলাদেশের অনেক উপজাতীয় ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিচ্ছিন্ন ও বিরুদ্ধাচরণ করে যা ভবিষ্যতের বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক ও উপজাতিক দ্বন্দ্বকে ত্বরান্বিত করে।[৭৫]
বিরোধী দমন
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের কঠোরভাবে দমন করা হয়। এ সময় তার বিরুদ্ধে প্রায় ৬২ হাজার আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে রাখার অভিযোগ রয়েছে যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছিল।[৮] দাবি করা হয়, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অন্তত ৩০০০ সেনাসদস্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা নিহত অথবা গুম হন।[৭৭] ১৯৭৭ সালের অক্টোবরের ২ তারিখে অনুষ্ঠিত এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১১৪৩ জনকে বিভিন্ন কারাগারে ফাঁসি দেয়া হয়।[৭৮]
জাতীয় সংগীত বিতর্ক
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান এক গোপন চিঠিতে বলেন,
“ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি গান ভারতীয় জাতীয় সংগীত। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ও নন। হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন কবির লেখা গান জাতীয় সংগীত হওয়ায় মুসলিম উম্মাহ উদ্বিগ্ন। এই গান আমাদের সংস্কৃতির চেতনার পরিপন্থী বিধায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন আবশ্যক। | ” |
প্রধানমন্ত্রীর ওই চিঠিতে ‘আমার সোনার বাংলা’র পরিবর্তে ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’কে জাতীয় সঙ্গীত করার প্রস্তাব করা হয়।[৭৯][গ] প্রধানমন্ত্রীর এই চিঠি পেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রেডিও, টেলিভিশন এবং সব সরকারি অনুষ্ঠানে প্রথম বাংলাদেশ গানটি প্রচারের নির্দেশনা জারি করে। জিয়া নিজেই জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন, বিএনপি নেতা ডা. ইউসুফ এক অধিবেশনে জিয়াকে জাতীয় পতাকায় পরিবর্তন আনতে অনুরোধ করলে জিয়া জবাব দেন,[৮০]
“ | হবে, হবে, সবকিছুই হবে। আগে হিন্দুর লেখা জাতীয় সঙ্গীত বদলানো হোক। তারপর জাতীয় পতাকার কথা ভাববো। | ” |
এসময় রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি প্রথম বাংলাদেশ গানটি গাওয়া শুরু হয়। কিন্তু ১৯৮১ সালে জিয়ার মৃত্যুর পর সেই উদ্যোগ থমকে যায়।[৮১]
জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের চেষ্টা
১৯৭৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে সরকারি ভবনের ওপর সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের পতাকার পরিবর্তে কমলা রঙের বৃত্তের পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দেয়া হয়।[৮] কিন্তু প্রতিবাদের মুখে জিয়াকে এ পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসতে হয়েছিল।[৮]
খেতাব
২০১৬ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়।[৮২] মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকার সময় সংবিধান লঙ্ঘন, শেখ মুজিবের আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তার বীর উত্তম খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।[৮৩][৮৪] তবে পরবর্তীতে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, তার খেতাব বাতিল করা হয়নি।[৮৫][৮৬] দুটি ক্ষেত্রেই তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি এবং পরিবার এটির প্রতিবাদ জানায়।[৮৭][৮৮]
কৃতিত্ব
বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদ জিয়াউর রহমানকে যুদ্ধের নায়ক মনে করেন।[৮৯] জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবের শাসনের শেষ বছরগুলির বিশৃঙ্খলার অবসান এবং বাকশাল (মুজিব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এক দলীয় শাসন) বাতিল করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কৃতিত্বপ্রাপ্ত। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান বিরোধী দলকে দমন করার জন্য তার সমালোচকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন। যাইহোক, জিয়ার অর্থনৈতিক সংস্কারকে অর্থনীতির পুনর্গঠনের কৃতিত্ব দেওয়া হয় এবং ইসলামীকরণের দিকে তার পদক্ষেপ তাকে সাধারণ বাংলাদেশী মানুষের সমর্থন এনে দেয়।[৯০]
মূল্যায়ন
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করে। ২০০৩ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান।[৯১] তিনি সামরিক বেশকিছু পুরস্কার পান। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমানকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়াও জিয়াউর রহমানের ইউনিট এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য দুটি সিতারা-ই-জুরাত এবং নয়টি তামঘা-ই-জুরাত পদক লাভ করেন। তুরস্ক মরণোত্তর তার সম্মানে আঙ্কারায় একটি সড়কের নামকরণ করেছে জিয়াউর রহমান কাদেসি। ২০০৪ সালে, জিয়াউর রহমান বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জরিপে ১৯ নম্বরে ছিলেন। জিয়াকে তার রাষ্ট্রনায়কত্ব এবং দৃষ্টিভঙ্গির জন্য দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা দ্বারাও সম্মানিত করা হয়েছিল।[৯২] অন্যান্য সম্মানের মধ্যে রয়েছে:
- পাকিস্তান:
- মিশর:
- উত্তর কোরিয়া:
- যুগোস্লাভিয়া:
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
জিয়াউর রহমানের নামে নামকরণ
চিত্রশালা
-
এ. কে. এ. ফিরোজ নুন ও রাষ্ট্রপতি জিয়া (১৯৭৯)
-
১৯৭৯ সালে নেদারল্যান্ডের রানী জুলিয়ানা এবং জিয়াউর রহমান
-
জিয়াউর রহমান নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ড্রিস ভ্যান অ্যাগটের সাথে কথা বলছেন
-
১৯৭৮ সালে ডাচ রাজপরিবারের সদস্যদের সাথে জিয়াউর রহমান (দ্বিতীয় ডানদিকে)
-
জিয়াউর রহমান এবং রয় জেনকিন্সের মধ্যে আলোচনা, ডানদিকে মুহাম্মদ শামসুল হক এবং উইলহেম হাফারক্যাম্পের উপস্থিতিতে
-
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং রানী জুলিয়ানা লেলিস্টাডের নিউ ল্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারে
-
জিয়াউর রহমান এবং রয় জেনকিন্স
-
জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর জীবনের উপর চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র
আরও দেখুন
পাদটীকা
- ↑ ২০১৬ সালে, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীপরিষদের মতামতের ভিত্তিতে জিয়াউর রহমানের এই সম্মাননা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়।[১][২]
- ↑ কর্নেল (অব.) শওকত আলী লিখেছেন,
"সে (জিয়া) প্রত্যাগতদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলতো। কিন্তু গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের উস্কিয়ে দিতো প্রত্যাগতদের বিরুদ্ধে। প্রত্যাগতদের মধ্যে কিছু অফিসারের আস্থা অর্জন করে অনুরূপভাবে তাদের ক্ষেপিয়ে তুলতো মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে। চুয়াত্তরের প্রথম দিকের কথা। পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত পুরাতন বন্ধুদের সাথে আমার বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ন ছিল। তাদের সাথে মেলামেশা জিয়ার চোখ এড়ায় নি। একদিন সে তার অফিসে এক প্রত্যাগতের নাম উল্লেখ করে বলল, তার সাথে তোমার এত ঘনিষ্ঠতা কেনো ? বললাম, সে আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু।... জিয়া গম্ভীর হয়ে বলল, ‘শওকত, কোন প্রত্যাগত অফিসার তোমার বন্ধু হতে পারে না। তোমার মত একজন মুক্তিযোদ্ধার পাকিস্তানীদের সাথে ঘনিষ্ঠ রাখা ঠিক নয়’। হঠাৎ করে আমি যেন দিব্যদৃষ্টি পেলাম। সেনাবাহিনীতে তখন যে সকল ঘটনা ঘটেছিল আমার কাছে তার অনেক কারণ পরিষ্কার হয়ে উঠলো। অবশ্য আমি আগেও কিছু কিছু জানতাম। কিন্তু জিয়া আমার কাছে ধরা দেবে তা আশা করি নি। আমি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললাম, ‘স্যার, আমি দুঃখিত। আপনার সাথে একমত হতে পারছিনা।... অনুগ্রহ করে আপনি খেলা বন্ধ করুন। জাতীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে সেনাবাহিনীতে বিভেদ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি সেনা বাহিনীর উপপ্রধান। আপনি যদি এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কাজে লিপ্ত হন, তাহলে আমাদের জুনিয়রগণ কী করবে’? কথাগুলো বলে আমি চলে আসি। কড়া কথা ইচ্ছে করেই বলেছিলাম। এজন্য অবশ্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে।... পরবর্তীকালে ক্ষমতার শীর্ষে বসে জিয়াউর রহমান আমার বিরুদ্ধে যেসব হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নেয়, তার জের এখনো চলছে।"
- ↑ উল্লেখ্য যে, জিয়া মন্ত্রীসভার প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী। বাঙালি হয়েও ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রতিনিধি হয়ে জাতিসংঘে যান এবং বলেন,
“ …পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী হামলা চালিয়ে অন্যায় কিছু করেনি। পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধের নামে যা চলছে তা ভারতীয় ষড়যন্ত্র এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন…। ”
তথ্যসূত্র
- ↑ "মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার অবস্থান কেউ নিতে পারবে না: বিএনপি"। বিবিসি বাংলা। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬। ১৬ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ "জিয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহার"। দৈনিক প্রথম আলো। ২৭ আগস্ট ২০১৬। ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৩।
- ↑ "Former Presidents, Lt. General Ziaur Rahman"। archive.org। Archived from the original on ৫ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ ক খ গ "বাংলাদেশ প্রতিদিন ৬ এপ্রিল ২০১৪"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। Archived from the original on ৭ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ "'ক্যারিশমেটিক' জিয়া সেনাবাহিনীর রাজনীতিকীকরণ করেছেন - প্রথম আলো"। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ইশতিয়াক, আহমাদ (৮ জানুয়ারি ২০২২)। "খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা: জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম"। দ্য ডেইলি স্টার। ৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ "Former Presidents, Lt. General Ziaur Rahman"। Bangabhaban.gov.bd। ৫ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ সাইয়িদ, আবু। জেনারেল জিয়ার রাজত্ব।
- ↑ ক খ "সামরিক শাসন"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২১।
- ↑ "বিবিসি জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ১৯ নম্বরে জিয়াউর রহমান"। বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৭।
- ↑ "শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ"। এনটিভি। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ শিকদার, তামিম, শহীদ জিয়ার জন্ম বংশ পরিচয় ও শৈশব
- ↑ মহম্মদ আব্দুল মালেক। "জাতীয়তাবাদী চেতনার উৎস "প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান""। Ziaur Rahman। ১২ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "জাগদল থেকে বিএনপি: রাজনীতিতে জিয়ার উত্থান"। বিবিসি বাংলা। ২০২২-০৮-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৪।
- ↑ "জিয়াউর রহমানের জন্মদিন আজ"। banglanews24.com। ১৯ জানুয়ারি ২০২৪। ৫ মার্চ ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ গ "বঙ্গভবন বায়োগ্রাফি"। বঙ্গভবন (ইংরেজি ভাষায়)। bangabhaban.gov.bd। ২০১২-১২-০৮। Archived from the original on ২০১৩-০৬-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ "Ziaur Rahman getting Hilal_e_Jurat" (ইংরেজি ভাষায়)। Ncml.page.tl। ২০১৪-০২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ রাজু, মহসিন আলী (১৯ জানুয়ারি ২০১৮)। "জিয়াউর রহমান : গণমানুষের হৃদয়ে যার নাম লেখা হয়ে আছে"। দৈনিক ইনকিলাব।
- ↑ ক খ "বাংলাপিডিয়া বায়োগ্রাফি"। banglapedia.org। ২০১২-১২-০৮। ২০১৩-০৩-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ Nabī, Nūruna (৬ নভেম্বর ২০১৭)। "Bullets of '71: A Freedom Fighter's Story"। AuthorHouse। ২২ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭ – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ "স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১: বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কতটা এসেছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা?"। ২২ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "সে রাতে যেভাবে মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠান"। ২২ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা: গণপরিষদ ও সংবিধান"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২২ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "১০ এপ্রিল, ১৯৭১: স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র"। ২২ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস"। The Daily Star।
- ↑ "স্বাধীনতার ৪৯তম বার্ষিকী আজ"। ১৯ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২১।
- ↑ Khan, Adil (৩১ মে ২০০৯)। "The Destiny of a Child Is the Mystery of Creation"। AuthorHouse। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭ – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ সাদিক, মুসা (মার্চ ২৬, ২০১৪)। "বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রামে কীভাবে পৌঁছায়"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৯, ২০২১।
- ↑ ক খ গ ঘ চৌধুরী, প্রদীপ (২৮ মার্চ ২০১০)। "সংযোজনঃ স্বাধীনতার ঘোষণা: বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাৎকার"। বিডিনিউজ ২৪। ২৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০২১।
- ↑ সাইয়িদ, অধ্যাপক আবু। মুক্তিযুদ্ধঃ সত্যের মুখোমুখি।
- ↑ ক খ গ ঘ ইমরান, তন্ময় (মার্চ ২৫, ২০২১)। "জিয়া যেভাবে বদলেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র"। বিডি নিউজ ২৪। ২৫ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৯, ২০২১।
- ↑ খন্দকার, আবদুল করিম। ১৯৭১, ভেতরে বাইরে।
- ↑ পিয়াল, অমি রহমান (মার্চ ২৭, ২০১৪)। "রহস্যময় মাহমুদ হোসেন ও কালুরঘাট"। বিডি নিউজ ২৪। ১২ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২৯, ২০২১।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২১।
- ↑ "United States Reports" (পিডিএফ)। ২০ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ "বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বিএসএফ এর ভূমিকা" (পিডিএফ)। bharat-rakshak.com। ২০১২-১২-০৮। ২০১২-০৯-২৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ ক খ "জেড ফোর্স অরগানোগ্রাম"। pdfcast.org। ২০১২-১২-০৮। ২০১৩-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরসমূহের তালিকা"। bengalrenaissance.com। ২০১২-১২-০৮। ২০১৭-১২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ Mascarenhas, Anthony (১৯৮৬)। বাংলাদেশ, রক্তের ঋণ। Hodder and Stoughton। আইএসবিএন 978-0340394205।
- ↑ আলী, শওকত। কারাগারের ডায়রী।
- ↑ ক খ সাইয়িদ, অধ্যাপক আবু। ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড।
- ↑ ক খ দাসগুপ্ত, সুখরঞ্জন। মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র।
- ↑ ক খ সাহা, পরেশ। মুজিব হত্যার তদন্ত ও রায়।
- ↑ Gandhi, Rajmohan (৬ নভেম্বর ১৯৯৯)। "Revenge and Reconciliation"। Penguin Books India। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭ – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ ক খ Mascarenhas, Anthony। Bangladesh: A Legacy of Blood। Hodder and Stoughton। ১৩ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ লেঃ কর্নেল (অবঃ) এম এ হামিদ, পিএসসি, মোহনা প্রকাশনী, ৩২/২-ক বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, ১৯৯৩, পৃষ্ঠা ১০২-১০৩। তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ লেঃ কর্নেল (অবঃ) এম এ হামিদ, পিএসসি, মোহনা প্রকাশনী, ৩২/২-ক বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, ১৯৯৩, পৃষ্ঠা ১০৮-১০৯। তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা।
- ↑ "বন্দীদশা থেকে যেভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে এলেন জিয়াউর রহমান"। বি বি সি বাংলা। ১৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০২১।
- ↑ "ফাঁসির মঞ্চে মেজর জিয়াউদ্দিনের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন কর্নেল তাহের"।
- ↑ "প্রহসনের ফাঁসি ও কর্নেল তাহের"। ১৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ ক খ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ ক খ Chowdhury, Hamidul Huq (৬ নভেম্বর ১৯৮৯)। "Memoirs"। Associated Printers Ltd.। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭ – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ ক খ সায়েম, আবু সাদাত মোহাম্মদ। বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি।
- ↑ ক খ "'বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি' গ্রন্থে ইতিহাসের কুৎসিত অধ্যায়"। দৈনিক সমকাল। ২৫ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০২১।
- ↑ মিয়া, ড. এম এ ওয়াজেদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ।
- ↑ Liton, Shakhawat (১৫ আগস্ট ২০১৪)। "History would have been different"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ Chowdhury, Mahfuzul H. (৬ নভেম্বর ২০১৭)। "Democratization in South Asia: Lessons from American Institutions"। Ashgate। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৭ – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ "এক নজরে বিএনপির ৪০ বছর"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ মল্লিক, মারুফ (৩০ মে ২০২৪)। "জিয়ার মধ্যবাম ধারার উন্নয়ননীতি"। প্রথম আলো।
- ↑ ক খ গ ঘ "জিয়াউর রহমানের শাসনামলের আলোচিত-সমালোচিত পাঁচটি দিক"। বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-০৭।
- ↑ আহামেদ, এমাজুদ্দীন; ইসলাম, মাজেদুলl; মাহমুদ, শওকত; শিকদার, আব্দুল হাই (২০১০)। তারেক রহমান : অপেক্ষায় বাংলাদেশ। ঢাকা: জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশান। পৃষ্ঠা ৩৮৯। আইএসবিএন 984-760-141-0।
- ↑ "প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৩ সদস্য বিশিষ্ট আল-কুদস কমিটির সদস্য নির্বাচিত"। news.google.com। ২০১২-১২-০৮। ২০২৪-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ "যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য লাভের প্রতিশ্রুতি"। news.google.com। ২০১২-১২-০৮। ২০২৪-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ "চীন সফরে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য লাভের প্রতিশ্রুতি"। news.google.com। ২০১২-১২-০৮। ২০২৪-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ "Foreign Relations of Bangladesh"। banglapedia.org। ২০১২-১২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত"। news.google.com। ২০১২-১২-০৮। ২০২৪-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ লিওনার্ড, টমাস এম. Encyclopedia of the developing world ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে, Volume 3, p.1440 to p.1444
- ↑ "জিয়াউর রহমান ৭ই নভেম্বর সামরিক শাসক হওয়ার পরের সপ্তাহজুড়ে কী করেছিলেন"। BBC News বাংলা। ৮ নভেম্বর ২০২২।
- ↑ "দ্যা পিটসবার্গ প্রেস, জুন ২, ১৯৮১"। news.google.com। ২০১২-১২-০৮। ২০১৬-০১-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ "নিউজউইক ম্যাগাজিন, জুন ১৫, ১৯৮১"। ২০১৩-১১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ "সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পরের এক সপ্তাহে যা যা ঘটেছিল"। বিবিসি বাংলা। ২০২৪-০৫-৩০। ২০২৪-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ Chowdhury, Afsan (২৯ আগস্ট ২০১৬)। "Must laws protect Sheikh Mujib's honour and 1971 history?"। bdnews24.com (অভিমত)। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ Haque, Azizul (ফেব্রুয়ারি ১৯৮০)। "Bangladesh 1979: Cry for a Sovereign Parliament"। Asian Survey। 20 (2): 217–230। জেস্টোর 2644413। ডিওআই:10.1525/as.1980.20.2.01p0136m।
- ↑ ক খ Hashmi, Taj। "Was Ziaur Rahman Responsible For Islamic Resurgence In Bangladesh?"। countercurrents.org। ১৪ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার জড়িত থাকার প্রামাণ্য দলিল"। ১১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০২০।
- ↑ "Major Dalim | chapter 17"। majordalimbubangla.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-০১।
- ↑ মহিউদ্দিন, আহমদ (অক্টোবর ২০১৪)। পৃষ্ঠাঃ ২৩৫, জাসদের উত্থান পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি। প্রথমা প্রকাশনী,19, Karwan BazarDhaka, Bangladesh 1215। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ "যে ৩ সময়ে 'জাতীয় সংগীত' পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল"। দৈনিক যুগান্তর। ১৮ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ সাব্বির, হোসাইন (জুলাই ১০, ২০১৬)। "জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত বদলাতে চেয়েছিলেন জিয়া"। চ্যানেল আই। ১১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ "National Anthem"। ৬ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "জিয়ার স্বাধীনতা পদক যে কারণে বাতিল করছে সরকার"। বাংলা ট্রিবিউন। ২৬ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ ইসলাম, রোজিনা। "জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত"। দৈনিক প্রথম আলো। ২২ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ "জিয়ার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ"। দৈনিক প্রথম আলো। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ "জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হয়নি: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী"। দৈনিক যুগান্তর। Archived from the original on ২০২৩-১১-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১২।
- ↑ "জিয়াউর রহমানের 'বীরউত্তম' বাতিলে পিছু হটল জামুকা"। দৈনিক সমকাল। ১৭ অক্টোবর ২০২৩।
- ↑ "জিয়ার পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২৬ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "জিয়ার খেতাব বাতিল, বিএনপি বলল প্রতিহিংসা"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ Chowdhury, Afsan (২৯ আগস্ট ২০১৬)। "Must laws protect Sheikh Mujib's honour and 1971 history?"। bdnews24.com (Opinion)। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ Haque, Azizul (ফেব্রুয়ারি ১৯৮০)। "Bangladesh 1979: Cry for a Sovereign Parliament"। Asian Survey। 20 (2): 217–230। জেস্টোর 2644413। ডিওআই:10.2307/2644025।
- ↑ "List of Independence Awardees"। Cabinet Division - Bangladesh। ২০১৩-০৫-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Tarique receives 1st Saarc Award for Zia"। archive.thedailystar.net। ১৩ নভেম্বর ২০০৫। Archived from the original on ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ "Not just PM M., these foreign leaders too honoured with Egypt's 'Order of the Nile'"। হিন্দুস্তান টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ জুন ২০২৩।
- ↑ "বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জি ১৯৭১-২০১১ - বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান"। Rokomari। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Ručak u čast Rahmana"। Slobodna Dalmacija (10463): 1। ২৩ নভেম্বর ১৯৭৮।
বহিঃসংযোগ
পূর্বসূরী: আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম |
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এপ্রিল ২১ ১৯৭৭–মে ৩০ ১৯৮১ |
উত্তরসূরী: আবদুস সাত্তার |
পূর্বসূরী কাজী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ |
সেনাপ্রধান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২৫ আগস্ট ১৯৭৫ – ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ |
উত্তরসূরী খালেদ মোশাররফ |
পূর্বসূরী খালেদ মোশাররফ |
সেনাপ্রধান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ – ২৮ এপ্রিল ১৯৭৮ |
উত্তরসূরী হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ |