সেনানিবাস
সেনানিবাস (ক্যান্টনমেন্ট নামেও পরিচিত) সামরিক বাহিনী কিংবা পুলিশ বাহিনীর আবাসস্থল বিশেষ।[১] ফরাসী শব্দ ক্যান্টন থেকে ক্যান্টনমেন্ট শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। ক্যান্টন শব্দের অর্থ কোণ বা জেলা যা সুইজারল্যান্ডের ক্যান্টন নাম থেকে এসেছে।[২] প্রায়শঃই ক্যান্টনমেন্টকে সংক্ষেপে ক্যান্টঃ নামে অভিহিত করা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় সেনানিবাসকে স্থায়ী সামরিক আবাসস্থল হিসেবে গণ্য করা হয়।[১] বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, ঘানা, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে সামরিক বাহিনীর সেনানিবাস দেখতে পাওয়া যায়।
সামরিক অভিযান
সম্পাদনাসামরিক অভিযান পরিচালনাকালীন সময়ে যুদ্ধস্থলের কাছাকাছ অস্থায়ী সেনানিবাস বা শিবির প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে অথবা শীতকালীন আবাস গড়ে তোলা হয়।[১] ১৮১৫ সালে সংঘটিত ওয়াটারলু যুদ্ধে ডিউক অব ওয়েলিংটন আর্থার ওয়েলেসলি তার সেনানিবাস ছিল ব্রাসেল্সে। ৯৩,০০০ সৈন্যের মধ্যে তার মিত্রপক্ষীয় অধিকাংশ এ্যাংলো সৈন্যের অস্থায়ী শিবির গঠন করা হয় ব্রাসেলসের দক্ষিণে।[৩]
ব্রিটিশ ভারত
সম্পাদনাভারতীয় উপমহাদেশের অনেকগুলো শহরে সেনানিবাস রয়েছে। তন্মধ্যে - উত্তর ভারতের আহমেদাবাদ, বেলগাম, ব্যাঙ্গালোর, আম্বালা, কানপুর, বাথিন্ডা, দিল্লি, পুনে, সিয়ালকোট, সেকান্দারাবাদ, ত্রিচি, রাওয়ালপিন্ডি, মিরাট এবং রামগড় সেনানিবাস প্রতিরক্ষার দিক দিয়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং বড়। এগুলোর সদর দফতর ছিল রাওয়ালপিন্ডিতে। ১৮০৩ সালে মিরাটে প্রতিষ্ঠিত সেনানিবাসটি বর্তমান ভারতে ২য় বৃহত্তম ও তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতীয় আর্মির সেনানিবাস হিসেবে সবচেয়ে বড় ছিল।[৪]
অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতকে স্থাপিত সেনানিবাসগুলো প্রধানত অর্ধ-স্থায়িত্বের প্রতীক ছিল। বিংশ শতাব্দীতে ঐগুলো স্থায়ী দুর্গে পরিণত হয় এবং ১৯০৩ সালে লর্ড কিচেনার কর্তৃক সামরিক পুণর্গঠন ও সেনানিবাস অধ্যাদেশ, ১৯২৪-এর মাধ্যমে সেনানিবাসের চারধারে পরিখা খনন করা হয়েছিল।[৫]
বাংলাদেশ
সম্পাদনাবাংলাদেশে অনেকগুলো সেনানিবাস রয়েছে। তন্মধ্যে - ঢাকা, মিরপুর, পোস্তগোলা, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, হালিশহর, খাগড়াছড়ি, ঘাগড়া, রাঙ্গামাটি, কাদিরাবাদ (নাটোর), যশোর, জাহানাবাদ (খুলনা), রাজশাহী, বগুড়া, শেখ হাসিনা (পটুয়াখালী), রংপুর, পার্বতীপুর, সৈয়দপুর, ঘাটাইল, ময়মনসিংহ, জালালাবাদ (সিলেট), ময়নামতি (কুমিল্লা), বঙ্গবন্ধু (যমুনা সেতু) (টাঙ্গাইল), শেখ রাসেল (শরিয়তপুর) সেনানিবাস অন্যতম।
ভারত
সম্পাদনাভারতের ১৭টি রাজ্যে ৬৮টি সেনানিবাস রয়েছে। অধিকাংশ ভারতীয় সেনানিবাস উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ঊনবিংশ শতকে গ্রেট গেম নামে পরিচিতি মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কৌশলগত কারণে রুশ সাম্রাজ্যের সাথে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তৎকালীন ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ব্রিটিশ যুগের ঐ সকল সেনানিবাসকে বর্তমান ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক আধুনিকায়ণ ও সম্প্রসারণ করে যুদ্ধকালীন অবস্থার উপযোগী করে তোলে ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখে। কিছুসংখ্যক সেনানিবাসকে বিলুপ্ত কিংবা একীভূতকরণ করা হয়। বর্তমানে সেনানিবাস অধ্যাদেশ, ২০০৬-এর মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী পরিচালিত হয়।
সেনানিবাসগুলো হলো - আগ্রা, আহমেদাবাদ (গান্ধীনগর), আহমেদনগর (মহারাষ্ট্র), আজমীর, এলাহাবাদ, আলমোরা, আম্বালা, অমৃতসর, ঔরঙ্গবাদ, ববিনা (ঝাঁসি), বাদামিবাগ (শ্রীনগর), বাকলোহ (চাম্বা), ব্যারাকপুর (কলকাতা), ব্যারিলি, বেলগম, চক্রতা (দেরাদুন), দেকশাই (সোলান), ডালহৌসি (চাম্বা), দানাপুর (পাটনা), দেরাদুন ক্লিমেন্ট টাউন (দেরাদুন), দেরাদুন নিউ ক্যান্টনমেন্ট, দেহু রোড (পুনে), দিল্লী, দিওলালী (নাশিক), ফৈজাবাদ, ফতেগড়[৬] (ফররুখাবাদ, কানপুর), ফিরোজপুর, গোয়ালিয়র, জবলপুর, জলন্ধর, জালাফার (দার্জিলিং), ঝাঁসি, যোধপুর, জুতোঘ (শিমলা), ক্যানানোর, কাম্পতি (নাগপুর), কানপুর, কাসাউলি (সোলান), খাদকি (পুনে), খাসিয়ল (কাংগ্রা), ল্যান্ডোর (মুসুরি), ল্যান্সডোন (পৌরি গড়োয়াল), লেবং (দার্জিলিং), লক্ষ্মৌ, মথুরা, মীরাত, মো, মিরপুর (কানপুর), মোরার (গোয়ালিয়র), নাগরোতা (জম্মু), নৈনিতাল, নাসিরাবাদ (আজমীর), ওইএফ (কানপুর), পাচমারি, পাতিয়ালা, পুনে, রামগড়, রাণীখেত (অলমোরা), রুরকি, সাগর, সেকান্দারাবাদ, শাহজাহানপুর, শিলং, সেন্ট থমাস মাউন্ট (চেন্নাই), সুবাথু (সোলান), উন্নাও (কানপুর), বারাণশী, ওয়েলিংটন সেনানিবাস (উটি) প্রমূখ।
পাকিস্তান
সম্পাদনাপাকিস্তানের প্রধান সেনানিবাসগুলো হলো - এবোতাবাদ, এটক, বান্নু, ভাওয়ালপুর, চাকলালা, ক্লিফটন (করাচী), দেরা ইসমাইল খান, ফয়সাল (করাচী), ফয়সালাবাদ, গুজরানওয়ালা, হায়দরাবাদ, ঝিলাম, কামরা, করাচী, খারিয়ান, খুজদার[৭], কোরাঙ্গী ক্রীক (করাচী), লাহোর[৫], ওয়াল্টন (লাহোর)[৫], লোরালাই, মলির (করাচী), মাঙ্গলা, মেনোরা (করাচী), মর্দন, মুলতান, মুরী, নাউসেরা, ওকারা, ওরমারা, পানো আকিল, পেশোয়ার[৮], কোয়েটা, রাওয়ালপিন্ডি, সঞ্জোয়াল, সারগোদা, শোরকট, শিয়ালকোট, টাক্সিলা, ওয়াহ, ঝোব সেনানিবাস প্রমূখ।
সিঙ্গাপুর
সম্পাদনাসিঙ্গাপুরে সেনানিবাসকে পুলিশের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[৯]
স্থায়ী সেনানিবাসের তালিকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ Oxford English Dictionary cantonment
- ↑ Oxford English Dictionary cantonment and canton, v.
- ↑ Encyclopaedia Britannica Eleventh Edition Waterloo Campaign
- ↑ Maya, Jayapal. Meerut, The most important militory cantonment was established in 1803 and from 150 years it has been the biggest cantonment in the region. Bangalore: The Story of a City. East West Books (Madras) Pvt. Ltd
- ↑ ক খ গ Sheikh, M. O. Lahore Cantonment https://www.webcitation.org/query?url=http://www.geocities.com/momers_termpapers/ss153LahoreCantonment.htm&date=2009-10-26+02:56:58
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২১ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১২।
- ↑ "Military: Khuzdar Cantonment" Global Security
- ↑ "Sarhad Conservation Network Reports: Book on Peshawar Cantonment Launched"। ২৭ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "Singapore Police Force"। ৪ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১২।