মাহফুজুর রহমান খান
মাহফুজুর রহমান খান (১০ মে ১৯৪৯ – ৬ ডিসেম্বর ২০১৯) ছিলেন একজন বাংলাদেশী চিত্রগ্রাহক। পেশাদার চিত্রগ্রাহক হিসেবে তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি আলমগীর কবির, আলমগীর কুমকুম, হুমায়ুন আহমেদ, শিবলি সাদিক, তানভীর মোকাম্মেলদের মত চলচ্চিত্র পরিচালকদের সাথে কাজ করেন।
মাহফুজুর রহমান খান | |
---|---|
জন্ম | মাহ্ফুজ-উর-রহমান খান ১০ মে ১৯৪৯[১] |
মৃত্যু | ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ | (বয়স ৭০)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
শিক্ষা | স্নাতক |
পেশা | চিত্রগ্রাহক |
কর্মজীবন | ১৯৭২-২০১৯ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | শ্রাবণ মেঘের দিন ঘেটুপুত্র কমলা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ড. নিরাফাত আলম শিপ্রা (১৯৭৮-২০০১) (মৃত্যু) |
পিতা-মাতা | ইরতিজা-উর-রহমান খান (পিতা) |
আত্মীয় | ই আর খান (চাচা) এহতেশাম (ফুফাত ভাই) মুস্তাফিজ (ফুফাত ভাই) |
পুরস্কার | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বাচসাস পুরস্কার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার |
চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের জন্য তিনি দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আটবার বাচসাস পুরস্কার এবং একবার বিশেষ বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন।[২]
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনামাহফুজুর রহমান ১৯৪৯ সালের ১০ মে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার লালবাগে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার পিতা হাকিম ইরতিজা-উর-রহমান খান ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তার পৈতৃক নিবাস ছিল লালবাগের চকবাজারস্থ হাকিম হাবিবুর রহমান খান রোডে। রোডটির নাম তার দাদা হাকিম হাবিবুর রহমান খান নামানুসারে রাখা হয়েছিল। তার চাচা ই আর খান (ইরতিফা-উর-রহমান খান) ১৯৬০-৮০-এর দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের একজন খ্যাতনামা পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। তাছাড়া প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক ভাতৃদ্বয় এহতেশাম ও মুস্তাফিজ ছিলেন তার ফুফাত ভাই।[২]
স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকে তিনি চিত্রগ্রহণে আগ্রহী ছিলেন। তার বাবার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে তার চিত্রগ্রহণে হাতেখড়ি হয়। চিত্রগ্রহণ শেখার উদ্দেশ্যে তিনি প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক জহির রায়হান নির্মাণাধীন লেট দেয়ার বি লাইট-এর সেটে গিয়েছিলেন। এছাড়া রফিকুল বারী চৌধুরী ও আব্দুল লতিফ বাচ্চুর সেটে গিয়ে চিত্রগ্রহণের বিভিন্ন বিষয় শিখেছেন।[৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনামাহফুজুর রহমান আরেক প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আব্দুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্য।[৪] তিনি তার অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে দর্প চূর্ণ ও ১৯৭১ সালে স্বরলিপি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে তার প্রথম কাজ আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত কাঁচের স্বর্গ (১৯৭২)। এছাড়া একই সময় তিনি আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত জল্লাদের দরবার ১৯৭২), আলমগীর কুমকুম পরিচালিত আমার জন্মভূমি (১৯৭৩), মুস্তাফিজ পরিচালিত আলো-ছায়া (১৯৭৪), নুর-উল-আলম পরিচালিত চলো-ঘর-বাঁধি (১৯৭৪), দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত দাবি (১৯৭৪), সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া পরিচালিত একালের নায়ক (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[২] তিনি প্রথম রাজ্জাক পরিচালিত অভিযান চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরে আজহারুল ইসলাম খানের সহযাত্রী ও আখতারুজ্জামানের পোকামাকড়ের ঘরবসতি চলচ্চিত্রের জন্য এই পুরস্কার লাভ করেন। তিনি হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত আটটি চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের কাজ করেন[৫] এবং চারটি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[৩] চলচ্চিত্রগুলো হল শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, আমার আছে জল ও ঘেটুপুত্র কমলা। এছাড়া কোহিনূর আক্তার সুচন্দার হাজার বছর ধরে, গোলাম রাব্বানী বিপ্লব পরিচালিত বৃত্তের বাইরে চলচ্চিত্রের জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেন।[৪]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনামাহফুজুর রহমান ১৯৭৮ সালে ড. নিরাফাত আলম শিপ্রাকে বিয়ে করেন। শিপ্রা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০০১ সালের ২৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। দাম্পত্য জীবনে তারা নিঃসন্তান ছিলেন।[২] মাহফুজুর ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ৭০ বছর বয়সে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[৬] এরপূর্বে অসুস্থতার ফলে তাকে ২৫ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।[৬]
চলচ্চিত্রের তালিকা
সম্পাদনাপুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাচলচ্চিত্র পুরস্কার
সম্পাদনাপুরস্কার | বছর | বিভাগ | চলচ্চিত্র | ফলাফল |
---|---|---|---|---|
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার | ১৯৮৪ | শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক (রঙ্গিন) | অভিযান | বিজয়ী |
১৯৮৭ | শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক (সাদাকালো) | সহযাত্রী | বিজয়ী | |
১৯৯৬ | শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক | পোকা মাকড়ের ঘর বসতি | বিজয়ী | |
১৯৯৯ | শ্রাবণ মেঘের দিন | বিজয়ী | ||
২০০০ | দুই দুয়ারী | বিজয়ী | ||
২০০৫ | হাজার বছর ধরে | বিজয়ী | ||
২০০৮ | আমার আছে জল | বিজয়ী | ||
২০০৯ | বৃত্তের বাইরে | বিজয়ী | ||
২০১২ | ঘেটুপুত্র কমলা | বিজয়ী | ||
বাচসাস পুরস্কার | ১৯৮৩ | সেরা চিত্রগ্রাহক | প্রিন্সেস টিনা খান | বিজয়ী |
১৯৮৫ | চাঁপা ডাঙ্গার বউ | বিজয়ী | ||
১৯৯৮ | পাহারাদার | বিজয়ী | ||
১৯৯৯ | শ্রাবণ মেঘের দিন | বিজয়ী | ||
২০০১ | মেঘলা আকাশ | বিজয়ী | ||
২০০৫ | হাজার বছর ধরে | বিজয়ী | ||
২০০৮ | চন্দ্রগ্রহণ | বিজয়ী | ||
২০০৯ | বৃত্তের বাইরে | বিজয়ী | ||
প্রযোজক সমিতি পুরস্কার | ২০০০ | সেরা চিত্রগ্রাহক | দুই দুয়ারী | বিজয়ী |
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার | ২০০৫ | বিশেষ পুরস্কার (চিত্রগ্রাহক) | হাজার বছর ধরে | বিজয়ী |
সম্মাননা
সম্পাদনা- এম. আব্দুস সামাদ স্মৃতি সম্মাননা (২০১৫)[৭]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "চিত্র-গ্রাহক মাহ্ফুজ"। dainikazadi। ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ পারভেজ, আতিক (১৪ নভেম্বর ২০১৩)। "চিত্র-গ্রাহক মাহ্ফুজ"। দৈনিক আজাদী। ২০১৫-১১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৬।
- ↑ ক খ নওরোজ, অহ (২২ মে ২০১৬)। "সেরা কাজটি এখনো করতে পারিনি : মাহফুজুর রহমান খান"। রাইজিংবিডি ডট কম। ২৬ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ ক খ "মুক্তিযুদ্ধের দুই চলচ্চিত্র নিয়ে মাহফুজুর রহমান খান"। দৈনিক মানবজমিন। ২০১৪-১২-১৯। Archived from the original on ২০২০-০৮-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "চলচ্চিত্রে নতুন জোয়ার"। যায়যায়দিন। Archived from the original on ১৬ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ ক খ "চলে গেলেন মাহফুজুর রহমান খান"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ "এম. আব্দুস সামাদ স্মৃতি সম্মাননা পেলেন চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান"। দৈনিক ইত্তেফাক। ৩১ অক্টোবর ২০১৫। ২২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে মাহফুজুর রহমান খান (ইংরেজি)
- বাংলা মুভি ডেটাবেজে মাহফুজুর রহমান খান