সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ (সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপ) অথবা দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপ নামে পরিচিত) হচ্ছে একটি প্রাথমিক ফুটবল প্রতিযোগিতা, যেখানে দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সদস্যপ্রাপ্ত পুরুষদের জাতীয় ফুটবল দলগুলো প্রতিযোগিতা করে। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল দক্ষিণ এশীয় চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করে। এই প্রতিযোগিতাটি প্রথম আসর ১৯৯৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি মূলত সার্ক গোল্ড কাপ নামে পরিচিত ছিল, অতঃপর ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ এশীয় গোল্ড কাপ, ১৯৯৭ সালে সাফ গোল্ড কাপ এবং ২০০৮ সালে বর্তমান নামে পরিবর্তন করা হয়েছে।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা
আয়োজকদক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন
প্রতিষ্ঠিত১৯৯৩; ৩১ বছর আগে (1993)
সার্ক গোল্ড কাপ হিসেবে
অঞ্চলদক্ষিণ এশিয়া
দলের সংখ্যা
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত (৯ম শিরোপা)
সবচেয়ে সফল দল ভারত (৯টি শিরোপা)
ওয়েবসাইটsaffederation.org

এপর্যন্ত ১৩টি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ৫টি জাতীয় দল শিরোপা জয়লাভ করেছে: ভারত ৮টি করে শিরোপা জয়লাভ করেছে, মালদ্বীপ ২টি এবং বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা একটি করে শিরোপা জয়লাভ করেছে। আজ পর্যন্ত, ভারত এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে টানা দুইবার শিরোপা জয়লাভ করেছে; ভারত প্রথমবার ১৯৯৭ সালে শিরোপা জয়লাভ করার পর পুনরায় ১৯৯৯ সালে শিরোপা জয়লাভ করেছিল, অতঃপর ভারত ২০০৯ সালে শিরোপা জয়লাভ করার পর পুনরায় ২০১১ সালে শিরোপা জয়লাভ করার মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো টানা দুইবার শিরোপা জয়লাভ করেছিল।

সর্বশেষ আসরটি ২০২৩ সালে ভারতে আয়োজন করা হয়েছে। বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা ফুটবল স্টেডিয়ামে আয়োজিত ফাইনালে ভারত কুয়েতকে ১–১ গোলে ড্র করে ট্রাইব্রেকারে কুয়েতকে ৪-৫ ব্যবধানে পরাজিত করে ২০২১ সালের পর প্রথম, এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে নবমবারের মতো শিরোপা জয়লাভ করেছিল।

ইতিহাস

সম্পাদনা

বর্তমানে যে সকল দেশ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, তারা হলো: বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। এই প্রতিযোগিতাটি প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়।[] আফগানিস্তান ২০০৫ সালে সাফে যোগদান করেছিল, তবে ২০১৫ সালে তারা দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন ত্যাগ করে মধ্য এশীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (সিএএফএ) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়েছে।

১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের লাহোরে দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) চ্যাম্পিয়নশিপ তার যাত্রা শুরু করেছে, যা তার অগ্রদূত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) গোল্ড কাপে বিবর্তিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, এই দ্বিবার্ষিক প্রতিযোগিতা খেলার আঞ্চলিক উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ফুটবল প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। ফিফা থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বরখাস্তের কারণে ২০০১ সালের অক্টোবর/নভেম্বর মাস থেকে ২০০২ সালের জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০০১ স্থগিত করা হয়েছিল; অবশেষে ২০০৩ সালে প্রতিযোগিতার উক্ত আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এই প্রতিযোগিতার ২০২১ সালের আসরটি দুইবার স্থগিত করা হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আয়োজনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।[]

সারাংশ

সম্পাদনা
পাদটীকা
অতিরিক্ত সময়ে ফলাফল নির্ধারণ
পেনাল্টি শুট-আউটের মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ
বছর আয়োজক ফাইনাল তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ/
সেমি-ফাইনালে পরাজিত দল[]
শীর্ষ গোলদাতা
চ্যাম্পিয়ন ফলাফল রানার-আপ তৃতীয় স্থান ফলাফল চতুর্থ স্থান
১৯৯৩   পাকিস্তান   ভারত রা-র   শ্রীলঙ্কা     নেপাল রা-র   পাকিস্তান   ইনিভালাপ্পিল মণি বিজয়ন (৩)
১৯৯৫   শ্রীলঙ্কা   শ্রীলঙ্কা ১–০
(অ.স.প.)
  ভারত   বাংলাদেশ এবং     নেপাল   মুহাম্মদ আমানুল্লা (৩)
১৯৯৭     নেপাল   ভারত ৫–১   মালদ্বীপ   পাকিস্তান ১–০   শ্রীলঙ্কা   ইনিভালাপ্পিল মণি বিজয়ন (৬)
১৯৯৯   ভারত   ভারত ২–০   বাংলাদেশ   মালদ্বীপ ২–০   পাকিস্তান   নরেশ যোশি (৩)
  বাইচুং ভুটিয়া (৩)
  মিজানুর রহমান (৩)
  মুহাম্মদ ওয়াইল্ডহ্যান (৩)
২০০৩   বাংলাদেশ   বাংলাদেশ ১–১ (অ.স.প.)
(৫–৩ পে.)
  মালদ্বীপ   ভারত ২–১   পাকিস্তান   সরফরাজ রাসুল (৪)
২০০৫   পাকিস্তান   ভারত ২–০   বাংলাদেশ   মালদ্বীপ এবং   পাকিস্তান   ইব্রাহিম ফাজিল (৩)
  আলি আশফাক (৩)
  আহমদ সুরিক (৩)
২০০৮   মালদ্বীপ
  শ্রীলঙ্কা
  মালদ্বীপ ১–০   ভারত   ভুটান এবং   শ্রীলঙ্কা   হারেজ হাবিব (৪)
২০০৯   বাংলাদেশ   ভারত ০–০ (অ.স.প.)
(৩–১ পে.)
  মালদ্বীপ   বাংলাদেশ এবং   শ্রীলঙ্কা   এনামুল হক (৪)
  আহমদ সুরিক (৪)
  চান্না এদিতি বান্দানাগে (৪)
২০১১   ভারত   ভারত ৪–০   আফগানিস্তান   মালদ্বীপ এবং     নেপাল   সুনীল ছেত্ৰী (৭)
২০১৩     নেপাল   আফগানিস্তান ২–০   ভারত   মালদ্বীপ এবং     নেপাল   আলি আশফাক (১০)
২০১৫   ভারত   ভারত ২–১ (অ.স.প.)   আফগানিস্তান   মালদ্বীপ এবং   শ্রীলঙ্কা   খৈবর আমানি (৪)
২০১৮   বাংলাদেশ   মালদ্বীপ ২–১   ভারত     নেপাল এবং   পাকিস্তান   মনবীর সিং (৩)
২০২১   মালদ্বীপ   ভারত ৩–০     নেপাল   সুনীল ছেত্রী (৫)
২০২৩  
ভারত
  ভারত ১–১ (অ.স.প.)
(৫–৪ পে.)
  কুয়েত   বাংলাদেশ এবং   লেবানন   সুনীল ছেত্রী (৫)
টীকা
  1. ২০০৩ সালের পর থেকে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা অনুষ্ঠিত হয় না।

পরিসংখ্যান

সম্পাদনা
 
২০০৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা হাতে মালদ্বীপীয় ফুটবলার ইব্রাহিম ফাজিল

দল অনুযায়ী

সম্পাদনা
দল চ্যাম্পিয়ন রানার-আপ
  ভারত (১৯৯৩, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০৫, ২০০৯, ২০১১, ২০১৫, ২০২১, ২০২৩) (১৯৯৫, ২০০৮, ২০১৩, ২০১৮)
  মালদ্বীপ (২০০৮, ২০১৮) (১৯৯৭, ২০০৩, ২০০৯)
  বাংলাদেশ (২০০৩) (১৯৯৯, ২০০৫)
  আফগানিস্তান (২০১৩) (২০১১, ২০১৫)
  শ্রীলঙ্কা (১৯৯৫) (১৯৯৩)
    নেপাল (২০২১)
  কুয়েত (২০২৩)

সর্বকালের পয়েন্ট তালিকা

সম্পাদনা
অব দল অংশগ্রহণ ম্যাচ জয় ড্র হার স্বগো বিগো গোপা পয়েন্ট
  ভারত ১৩ ৫৭ ৩৭ ১২ ৯৯ ৩৬ +৬৩ ১২৩
  মালদ্বীপ ১১ ৪৭ ২৪ ১১ ১২ ৯৫ ৪৮ +৪৭ ৮৩
  বাংলাদেশ ১২ ৪২ ১৬ ১২ ১৪ ৪৬ ৪২ +৪ ৬০
  শ্রীলঙ্কা ১৩ ৪১ ১৩ ২১ ৪৮ ৬৫ −১৭ ৪৬
  পাকিস্তান ১১ ৩৬ ১২ ১৬ ৩২ ৪২ −১০ ৪৪
  আফগানিস্তান ২৭ ১২ ১১ ৪৮ ৪২ +৬ ৪০
    নেপাল ১৩ ৪৩ ১৩ ২৩ ৪৯ ৬৩ −১৪ ৪৬
  ভুটান ২৪ ২২ ১৩ ৯৩ −৮০
  •   বর্তমানে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে না।

আসর অনুযায়ী

সম্পাদনা
পাদটীকা
দল  
১৯৯৩
 
১৯৯৫
 
১৯৯৭
 
১৯৯৯
 
২০০৩
 
২০০৫
  
২০০৮
 
২০০৯
 
২০১১
 
২০১৩
 
২০১৫
 
২০১৮
 
২০২১
 
২০২৩
  বাংলাদেশ × সেমি গ্রুপ রা চ্যা রা গ্রুপ সেমি গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ সেমি
  ভুটান সাফের সদস্য নয় গ্রুপ গ্রুপ সেমি গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ × গ্রুপ
  ভারত চ্যা রা চ্যা চ্যা ৩য় চ্যা রা চ্যা চ্যা রা চ্যা রা চ্যা চ্যা
  মালদ্বীপ × × রা ৩য় রা সেমি চ্যা রা সেমি সেমি সেমি চ্যা গ্রুপ অংশগ্রহণ
    নেপাল ৩য় সেমি গ্রুপ ৪র্থ গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ সেমি সেমি গ্রুপ সেমি রা গ্রুপ
  পাকিস্তান ৪র্থ গ্রুপ ৩য় গ্রুপ ৪র্থ সেমি গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ × সেমি অনুত্তীর্ণ গ্রুপ
  শ্রীলঙ্কা রা চ্যা ৪র্থ গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ সেমি সেমি গ্রুপ গ্রুপ সেমি গ্রুপ গ্রুপ অনুত্তীর্ণ
সাবেক দল
  আফগানিস্তান[] সাফের সদস্য নয় গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ গ্রুপ রা চ্যা রা সাফের সদস্য নয়
আমন্ত্রিত অতিথি
  লেবানন[] সাফের সদস্য নয় সেমি
  কুয়েত[] সাফের সদস্য নয় রা
টীকা
  1. ১৯৯৫ এবং ২০০৩ সালের পর থেকে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা অনুষ্ঠিত হয় না।
  2. ২০১৫ সালে দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন ছেড়ে মধ্য এশীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে যোগদান করেছে।
  3. আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে।
  4. আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "From SAARC Gold Cup to SAFF Championship"Givemegoal.com.np। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৪ 
  2. "We Will Try Our Best To Host SAFF 2021 Matches In Pokhara"Goal Nepal। ২৭ জুলাই ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২১ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা