বাংলা বর্ণমালার ইতিহাস
অনুগ্রহ করে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করে এর উন্নতিতে সহায়তা করুন। অতিরিক্ত তথ্যের জন্য আলাপ পাতা দেখতে পারেন।
|
উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্মত অবস্থায় আনতে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদের উইকিকরণ প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে সম্পর্কিত আন্তঃসংযোগ প্রয়োগের মাধ্যমে নিবন্ধের উন্নয়নে সহায়তা করুন। |
এই নিবন্ধটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
প্রাকৃতের বাতাবরণে সংস্কৃতভাষার গর্ভে বাংলাভাষার জন্ম। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলাভাষার, বিশেষত বাংলা গদ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান পুরুষ ও অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। তিনিই প্রথম বাংলাভাষার পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ লিখেছেন, যা মূলত সংস্কৃত ব্যাকরণেরই প্রসারণ হলেও আজ অবধি বাংলা ভাষার ব্যাকরণ এই আদলের মধ্যেই রয়েছে।
প্রাচীন কাল
সম্পাদনাবাঙলা বর্ণমালা এসেছে প্রাচীন ভারতীয় "ব্রাহ্মী লিপি" থেকে।[১] ব্রাহ্মণদের দ্বারা এই লিপি আবিষ্কৃত হয়েছিল বলেই এর নাম ব্রাহ্মীলিপি। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে ৩৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে ব্রাহ্মীলিপি প্রচলিত ছিল। [২]
এরপর ব্রাহ্মীলিপি উত্তরী ও দক্ষিণী – এই দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। উত্তরী লিপিগুলির মধ্যে ৪র্থ ও ৫ম শতাব্দীতে প্রচলিত পূর্বদেশীয় গুপ্তলিপি থেকে আবির্ভাব হয় "কুটিল লিপির" বা সিদ্ধমাতৃকা লিপি , এটি ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শতক পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।।[৩]
সিদ্ধমাতৃকা লিপির পরিবর্তন জন্ম দেয় প্রটো বাংলা লিপির।[৪] এ লিপিতে বাংলা লিপির বর্তমান চেহারার প্রথম সাদৃশ্য পাওয়া যায়, তাই এর নাম প্রটো বাংলা লিপি বা গৌড়ি লিপি ।এ সময়ে যেসব বর্ণ ছিল তার অনেকগুলো হুবহু বর্তমানে আমরা ব্যবহার করি। ‘ই’, ‘ঈ’, ‘উ’, ‘ঊ’, ‘ট’ প্রভৃতি বর্ণগুলির উপরের লেজ ছাড়া বাকি অংশ বর্তমানের মতোই ছিল।[৫]
গুপ্ত ও গুপ্তোত্তর যুগের যোগ চিহ্নের মতো ‘ক’ বর্ণটি সপ্তম শতকে ত্রিকোণাকার রূপ নেয় এবং ডানদিকে বক্ররেখা (loop) যুক্ত হয় যা বাংলা ‘ক’ বর্ণের উদ্ভবের প্রাথমিক রূপ ধরা পড়ে। আবার ব্রাহ্মী ‘র’ বর্ণটি ছিল একটি উল্লম্ব (vertical) রেখার মতো। কিন্তু এ যুগে ‘র’ বর্ণটি ক্রিকোণাকার রূপ লাভ ( ) করে। তবে ‘র’ বর্ণের নিচে কোন বিন্দু দেখা যায় না। ‘থ’-এর মধ্যভাগটি আরেকটু স্ফীত হয় এবং শিরোভাগে একটি পুটুলি দেখা যায়।অনুরূপ ‘ফ’-এর ডানদিকে একটি পুটুলি যুক্ত হয়েছে, যা থেকে বাংলা ‘ফ’ বর্ণের উদ্ভব[৬]।
নাগরী লিপি বা উত্তর নাগরী হল দেবনাগরী রূপের পূর্বপুরুষ, বাংলার লিপিতে উত্তরভারতীয় নাগরী লিপির প্রভাব পড়ে।পূর্বভারতীয় লিপি নতুন চরিত্র লাভ করে, যাকে লিপিবিদ্যাবিশারদগণ ‘‘প্রোটো-নাগরী’’ (Proto-Nagari) লিপি বলে অভিহিত করেছেন। এ সময়ে লিপি পরিবর্তনের মূলে ছিল পাল রাজবংশের(৭৫০-১১৬১ খ্রি) উদ্ভব।[৭]
বাংলা লিপির বিবর্তনের চূড়ান্ত ধাপটি লক্ষ করা যায় সেনযুগের প্রথম দিকে বিজয় সেন, বল্লাল সেনের সময়ের পান্ডুলিপি ও তাম্রলিপিতে প্রোটো-বাংলা লিপির বহুল প্রচলন ছিলো। এ সময়ে বহু বর্ণ অবিকল বাংলার মতোই লেখা হতে থাকে।[৮][৯] ‘ই’, ‘ঈ’, ‘উ’, ‘ঊ’, ‘ট’ প্রভৃতি বর্ণগুলির আলংকারিক উড়ি ছাড়া অবিকল বাংলা বর্ণমালার মতোই লেখা হতো। লিপিমালায় স্বতন্ত্র ‘ঈ’ বর্ণের ব্যবহার দেখা যায়।[১০] ‘ঈ’ বর্ণটি প্রথম দেখা যায় উত্তর ভারতীয় ক্ষত্রপদের মুদ্রায়। সেন ও চন্দ্র লিপিতে পৃথক ‘ঈ’ বর্ণের ব্যবহার দেখা যায়। ‘চ’-বর্ণটি প্রোটো-বাংলায় নতুন রূপে পরিবর্তিত হয়। ইতিপূর্বে ‘চ’-এর নিচের বক্রাকার রেখাটি ছিল বামদিকে। কিন্তু প্রোটো-বাংলায় সেটা ডানদিকে চলে আসে। এছাড়া প্রোটো-বাংলা লিপিতে ‘ক্ষ’, ‘ঙ্গ’, ‘ঞ্জ’, ‘চ্ছ’, ‘ঞ্চ’ প্রভৃতি যুক্তাক্ষরগুলি বাংলা অক্ষরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করতে থাকে।[১১]।
লক্ষ্মণসেনের আনুলিয়া তাম্রশাসনে বাংলা লিপির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। বিশ্বরূপসেনের সাহিত্য পরিষৎ লিপিতে বাংলালিপির ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পায়। ডোম্মনপালের সুন্দরবন তাম্রলিপিটি (১১৯৬ খ্রি.) প্রায় পূর্ণাঙ্গ বাংলা হরফে উৎকীর্ণ। বারো শতকের পরে বাংলায় আর কোনোও তাম্রলিপি পাওয়া যায়নি। তের শতকের মাঝামাঝি থেকে সতেরো শতক পর্যন্ত পান্ডুলিপি পাওয়া যায়। এসব পান্ডুলিপি থেকে বাংলা লিপির পূর্ণাঙ্গ রূপ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।[১২]খালিমপুর তাম্রলিপি, দেবপালের মুঙ্গের তাম্রশাসন এবং প্রথম মহীপালের সারনাথ লিপিতে ‘‘প্রোটো-নাগরী’’ (Proto-Nagari) লিপির প্রচলন দেখা যায়। ময়নামতির আদি দেব (Early Deva) রাজাদের লিপিতে ও চন্দ্রলিপিতে প্রোটো-নাগরী লিপির প্রভাব প্রতিফলিত হয়। নবম শতকের মাঝামাঝি থেকে সমগ্র দশম শতক জুড়ে বাংলায় প্রোটো-বাংলা লিপির ব্যাপক প্রচলন প্রত্যক্ষ করা যায়। মহীপালের বানগড় লিপি, নারায়ণপালের গরুড় স্তম্ভলিপি এবং বিগ্রহপালের আমগাছি লিপিতে প্রোটো-বাংলা লিপির প্রাথমিক রূপ লক্ষ করা যায়। পালযুগের পান্ডুলিপি ‘অষ্টসহস্রিকাপ্রজ্ঞাপারমিতা’ এবং সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতম্’ গ্রন্থেও প্রোটো-বাংলা লিপির বহুল ব্যবহার দেখা যায়।[১৩]
বিদ্যাসাগরীয় সংস্কার
সম্পাদনাবাঙালির শিক্ষা-দীক্ষার পটভূমি বিচার করলেই বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়-এর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠবে। মুকুন্দরামের চন্ডীমঙ্গল কাব্যে বর্ণিত শ্রীমন্তের শিক্ষারম্ভ থেকে আমরা অন্তত ষোড়শ শতকের বাংলায় শিশুর শিক্ষার সূচনাপর্বের একটা চিত্র পেয়ে যাই। পাঁচ বছরের শিশুকে গুরুর পাঠশালায় হাতেখড়ি দেওয়া হতো এবং সেখানে এই শিশু শিক্ষার্থী গুরুর কাছে মুখে মুখে এবং হাতে লেখা পুথি থেকে ভাষা, নীতি এবং জমিজমা ও ব্যবসা সংক্রান্ত হিসাব- নিকাশ, বাক্য, শ্লোক ইত্যাদি পড়ত, মূলত মুখস্থ করত। মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হওয়ার পর প্রথম একটি বাধা ছিল পাশ্চাত্যের যন্ত্রে মুদ্রিত গ্রন্থপাঠে জাত যাবে-এ রকম কুসংস্কার। অন্যদিকে দেখা যায়, রাধাকান্ত দেব রচিত বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ (১৮২১) বইটিতে বর্ণমালা, ব্যাকরণ, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত ইত্যাদি বিষয়ের সমাবেশ ঘটেছে ও বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮! যে কারো ক্ষেত্রে-শিশু বা বৃদ্ধ-শিক্ষাজীবন শুরু করার জন্য এ রকম ঢাউস ও গুরুগম্ভীর বইকে উপযুক্ত ভাবার কোনো উপায় নেই।
বিদ্যাসাগরের আগে বর্ণমালা শেখার যেসব বই রচিত ও প্রকাশিত হয়েছিল তার অধিকাংশই বস্তুতপক্ষে শিশুর বাংলা প্রথম পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। শ্রীরামপুর মিশনের লিপিধারা (১৮১৫), জ্ঞানারুণোদয় (১৮২০), রামমোহন রায়ের গৌড়ীয় ব্যাকরণ (১৮৩৩), শিশুবোধক, বঙ্গবর্ণমালা (১৮৩৫), রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের শিশুসেবধি, বর্ণমালা (১৮৪০), কলিকাতা স্কুল বকু সোসাইটির বর্ণমালা প্রথম ভাগ (১৮৫৩), ও বর্ণমালা দ্বিতীয় ভাগ (১৮৫৪) এবং হ্যালহেডের এ গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ সহ (১৭৬৮) অন্যান্য বইয়ের মধ্যে বিদ্যাসাগরের পূর্ববর্তী বাংলাভাষা শিক্ষার প্রথম পাঠ হিসেবে সর্বাগ্রে নাম করতে হবে বিদ্যাসাগরেরই সুহৃদ পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কারের শিশুশিক্ষা প্রথম ভাগ (১৮৪৯) বইটির। শিশুর প্রথম পাঠ হিসেবে এটি উল্লেখযোগ্য বই।
ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় বাংলা প্রাইমার লেখায় যে জোয়ার এসেছিল তার কারণ ঔপনিবেশিক ইংরেজ সরকার তাদেরই প্রয়োজনে একটি শিক্ষিত শ্রেণী গড়ে তুলতে চেয়েছিল। শাসনকাজের প্রয়োজনে শাসিত প্রজাদের মধ্যে যেমন ইংরেজি জানা একটা শ্রেণীর প্রয়োজন তেমনি শাসক ইংরেজ ও প্রজাকুলের এই শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে স্থানীয় অর্থাৎ বাংলাভাষা চর্চারও প্রয়োজনীয়তা ছিল। বস্তুত ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞানার্জন ও তা চর্চার কোনো বিকল্প ছিল না। এ কাজে মাতৃভাষার চর্চাও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছিল। ওই সময় শিক্ষা বিস্তার, স্কুল প্রতিষ্ঠা, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। আমরা জানি শিক্ষা নিয়ে এ সময় অনেক কমিশনও গঠিত হয়, যারা জরিপ চালিয়ে প্রকৃত অবস্থা জেনে করণীয় নির্ধারণ করতে চেয়েছে। এসব প্রতিবেদনে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবে প্রায়ই পাঠ্যবইয়ের অভাবের কথা বলা হয়। ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়-এর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়:
"গভর্নমেন্টের যে কয়টা পাঠশালা আছে তাহাতে বাংলাভাষা শিক্ষা দিবার শৃঙ্খলামাত্র নাই।---ভাষা শিক্ষার নিমিত্ত কেবল বর্ণমালা, নীতিকথা ইত্যাদি দুই-তিনখানি পুস্তক ভিন্ন অন্য পুস্তক পাঠ হয় না, তাহাতে ভাষার সম্যক জ্ঞান বৃদ্ধির কেমন সম্ভাবনা পাঠকবর্গ বুঝিতে পারিবেন।"
আবার বিভিন্ন সরকারি প্রতিবেদনে উপযুক্ত পাঠ্যবইয়ের অভাবে স্কুলে ছাত্রসংখ্যা কমে যাওয়ার কথাও উল্লিখিত হতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে একটা ভালো বাংলা প্রাইমারের চাহিদা তৈরি হয়। ঠিক এই সময় বিদ্যাসাগর বর্ণপরিচয় রচনা ও প্রকাশ করেন।
শিশুদের জন্য বর্ণপরিচয় রচনার গোড়ায়ই এসে পড়ে বর্ণমালার কথা। আমরা জানি ব্রাহ্মীলিপি থেকেই বিবর্তিত হয়ে বাংলা বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছে। এ বিবর্তন প্রক্রিয়া চলেছে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে বলা যেতে পারে, বিদ্যাসাগরের হাতেই বাংলা বর্ণমালার যথাযথ উন্নতি হয়েছে, যে মৌলিক উন্নয়নের পর পরবর্তী সার্ধশতবছরে মাত্র কিছু সংস্কারমূলক কাজ হয়েছে। তাকে প্রথমত বর্ণমালার প্রকৃতি ও সংখ্যা নির্ধারণ করতে হয়েছে। ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হালহেডের বইয়ে স্বরবর্ণের সংখ্যা ছিল ১৬। পরবর্তী প্রায় একশত বছর মদনমোহনের শিশুশিক্ষা প্রথম ভাগ পর্যন্ত স্বরবর্ণের সংখ্যা ১৬টিই ছিল। এগুলো হলো অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ৠ, ঌ, ৡ, এ, ঐ, ও, ঔ, অ৽, অঃ। বিদ্যাসাগর এই সংখ্যা কমিয়ে ১২তে নামালেন। তিনি ভূমিকায় লিখলেন:
"বহূকালাবধি বর্ণমালা ষোল স্বর ও চৌত্রিশ ব্যঞ্জন এই পঞ্চাশ অক্ষরে পরিগণিত ছিল। কিন্তু বাঙ্গালা ভাষায় দীর্ঘ ৠ-কার ও দীর্ঘ ৡ-কারের প্রয়োজন নাই। এই নিমিত্ত ঐ দুই বর্ণ পরিত্যক্ত হইয়াছে। আর সবিশেষ অনুধাবন করিয়া দেখিলে অনুস্বার ও বিসর্গ স্বরবর্ণ মধ্যে পরিগণিত হইতে পারে না। এই নিমিত্ত ঐ দুই বর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ মধ্যে পঠিত হইয়াছে। আর চন্দ্রবিন্দুকে ব্যঞ্জনবর্ণস্থলে এক স্বতন্ত্র বর্ণ বলিয়া গণনা করা গিয়াছে। "ড, ঢ, য এই তিন ব্যঞ্জনবর্ণ পদের মধ্যে অথবা পদের অন্তে থাকিলে, ড়, ঢ়, য় হয়।"
বিদ্যাসাগরের এই মৌলিক সংস্কারের ১২৫ বছর পর স্বরবর্ণে মাত্র আর একটি সংস্কার ঘটেছে, তাহলো ঌ বর্ণটি বাদ দেওয়া। এখন স্বরবর্ণ ১১টি। ব্যঞ্জনবর্ণ ছিল ৩৪টি। বিদ্যাসাগর তাতে নতুনভাবে ছয়টি বর্ণ যুক্ত করেন। অনুস্বার ও বিসর্গকে স্বরবর্ণ থেকে ব্যঞ্জনবর্ণে নিয়ে এসে চন্দ্রবিন্দুকেও যোগ করে দিলেন। ড, ঢ, য-এর দ্বিবিধ উচ্চারণের ক্ষেত্রে নিচে ফুটকি বা শূন্য দিয়ে নতুন তিনটি ব্যঞ্জন অক্ষর আবিষ্কার করলেন। তা ছাড়া বিদ্যাসাগর দেখলেন, "বাঙ্গালা ভাষায় একারের ত, ৎ এই দ্বিবিধ কলেবর প্রচলিত আছে।" তাই এটিকেও ব্যঞ্জনবর্ণে যুক্ত করেছেন। আর ক্ষ যেহেতু ক ও ষ মিলে হয় "সুতরাং উহা সংযুক্তবর্ণ, এ জন্য অসংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ গণনাস্থলে পরিত্যক্ত হইয়াছে।" এভাবে তার হাতে ব্যঞ্জনবর্ণ হলো ৪০টি। এর মধ্যে স্বরবর্ণ ঌ-এর মতই শুধু অন্তঃস্থ 'ব' বর্ণটি বাদ যায়। এখন ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি।
|
|
|
|
আজকের দিনে বর্ণক্রমিক ভাষাশিক্ষার পরিবর্তে বাক্যক্রমিক পদ্ধতি চালু হয়েছে। শিশুর ভাষা শেখার যে স্বাভাবিক পদ্ধতি তার ওপর ভিত্তি করেই দেশে-বিদেশে এ পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে। শতাধিক বছরব্যাপী শিশুর প্রথম পাঠ হিসেবে এ বইটি প্রায় একচ্ছত্র প্রাধান্য বজায় রেখেছে। এর পাশাপাশি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের শিশুশিক্ষা প্রথম ভাগ এবং আরো পরে রামসুন্দর বসাকের বাল্যশিক্ষা বাঙালি বাড়িতে শিশুদের প্রথম পাঠের বই হিসেবে বহুকাল প্রচলিত ছিল। বলা যায় ভাষাশিক্ষার নতুন কালে প্রবেশ করে আমরা বর্ণপরিচয়ের কালকে পেছনে ফেলে এসেছি।
আধুনিক বাঙালি মানসের অগ্রদূত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো বর্ণপরিচয় রচনা-শিক্ষিত আধুনিক বাঙালি জাতি বিনির্মাণে এ বই তার প্রথম মানসপুষ্টির যোগান দিয়েছে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাগ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- বন্দ্যোপাধ্যায়, রাখালদাস (১৯১৯), দি অরিজিন অব দ্য বেঙ্গলি স্ক্রিপ্ট। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস।
- ↑ "কোথা থেকে এলো আমাদের বাঙলা বর্ণমালা?"। bdnews24। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "কোথা থেকে এলো আমাদের বাঙলা বর্ণমালা?"। bdnews24। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "কোথা থেকে এলো আমাদের বাঙলা বর্ণমালা?"। bdnews24। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলা বর্ণমালার ইতিকথা"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলা বর্ণমালার ইতিকথা"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলালিপি"। .banglapedia। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলালিপি"। banglapedia। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলালিপি"। banglapedia। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলা বর্ণমালার ইতিকথা"। banglanews24। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলালিপি"। .banglapedia। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলালিপি"। .banglapedia। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলালিপি"। .banglapedia। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বাংলালিপি"। .banglapedia। ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।