চুনারুঘাট রেলওয়ে স্টেশন
চুনারুঘাট রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি রেলওয়ে স্টেশন। ২০০৩ সাল থেকে স্টেশনটি বন্ধ রয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে বাল্লা স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে।[১]
চুনারুঘাট রেলওয়ে স্টেশন | |
---|---|
বাংলাদেশের রেলওয়ে স্টেশন | |
অবস্থান | চুনারুঘাট উপজেলা, হবিগঞ্জ জেলা, সিলেট বিভাগ বাংলাদেশ |
মালিকানাধীন | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
পরিচালিত | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
লাইন | |
ট্রেন পরিচালক | পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে |
অন্য তথ্য | |
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস | |
চালু | ১৯২৯ |
বন্ধ হয় | ২০০৩ |
ইতিহাস
সম্পাদনাচুনারুঘাট রেলওয়ে স্টেশন হচ্ছে বাংলাদেশের একটি রেলওয়ে স্টেশন যা হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সেকশনের সিলেট বিভাগে পাঁচটি জংশন ছিল, তার মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন অন্যতম।[২] ১৯০৩ সালে এটি চালু হয়।[৩] পরবর্তীতে ১৯২৮-১৯২৯ সালে হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ চালু হলে স্টেশনটি জংশন স্টেশনে রুপান্তরিত হয়।[৩] আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক ১৯২৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে বাল্লা পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হয়।[৪] এসময় এই লাইনের স্টেশন হিসেবে চুনারুঘাট রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়।
রেলপথ
সম্পাদনাহবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথটি ১৯২৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক [৪] হবিগঞ্জ জেলা সদর শহর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে বাল্লা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪৫[৫] অথবা ৫২ কিলোমিটার[৬] দীর্ঘ রেলপথ চালু করে।[৫][৭] এর মধ্যে ১৯২৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ (১৫[৫] অথবা ১৬ কিমি[৬]) এবং ১৯২৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা (৩০[৬] অথবা ৩৬ কিমি[৫]) রেলপথ উদ্বোধন করা হয়। শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ লাইনের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে হবিগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয় এবং শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা লাইনের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে বাল্লা রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়।
সে সময় হবিগঞ্জের চুনারঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা পাতা রপ্তানি ও বাগানের রেশনসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আমদানী করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথ। শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ রেলপথে মোট ৪টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: হবিগঞ্জ বাজার, হবিগঞ্জ কোর্ট, ধুলিয়াখাল এবং পাইকপাড়া। শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে মোট ৭টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: বারকোটা, শাকির মোহাম্মদ, সুতাং বাজার, চুনারুঘাট, আমু রোড, আসামপারা এবং বাল্লা।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের প্রথম দিকে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথটি সর্বপ্রথম বন্ধ হয়, তবে পরে আবার চালু হয়। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে অনুরূপ বন্ধ হয় এবং ২০০০ সালে রেলপথটি উন্নত সংস্কার করে ট্রেন চলাচল চালু হয়েও সর্বশেষ ২০০৩ সালে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের অঘোষিতভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল রেলের বিশাল সম্পদের দিকে নজর দেয়।[৬] ২০০৫ সালের দিকে সড়ক করার অজুহাতে হবিগঞ্জ বাজার থেকে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেলপথ তুলে ফেলা হয়।[৫] পরে আবার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনটি উঠিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়।[৬] আগে এ লাইনে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করতো।
২০০৩ সালে এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এ রেলপথটি।[৫] এরপর থেকে কোটি কোটি টাকার রেল সম্পদ লুটপাট হতে থাকে।[৫] এরই মধ্যে পথটির মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও স্টেশন ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট হয়ে গেছে।[৫] এখন চলছে রেলপথের জমি দখল।[৫] একশ্রেণির মানুষ এসব জমি দখল করে ইমারত নির্মাণ করছে।[৫] চাষ করছে নানা ফসল।[৫] পরিত্যক্ত রেলপথটির সাথে জড়িয়ে আছে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের নাম।[৬] জশংনের ঐতিহ্য রক্ষায় দ্রুত এ রেলপথে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবি স্থানীয়দের।[৬]
রেল ব্যবস্থা
সম্পাদনাহবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ টি মূলত শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের অন্তর্ভুক্ত। শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ সেকশনে চুনারুঘাট একটি রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশন থেকে দুই টি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: দক্ষিণ-পূর্বে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ, এবং উত্তর-পশ্চিমে বাল্লা–শায়েস্তাগঞ্জ[৬] রেলপথ, (বাল্লা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে) পশ্চিম-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ বাজার[৬] রেলপথ।
পরিষেবা
সম্পাদনাহবিগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে ২০০৩ সাল পর্যন্ত, হবিগঞ্জ বাজার থেকে বল্লা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চলাচল করতো। যা বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে।[২] এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সাল থেকে পূর্ববর্তী বিগত বছর গুলোতে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে লোকাল ট্রেন চলাচল করতো, ২০০৩ সালে অঘোষিত ভাবে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় সেই লোকাল ট্রেন এখন সিলেট-আখাউড়া রুটে চলে।[৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সবুজ, জাহিদ। "অস্তিত্ব সংকটে হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ"। Sylhet Voice। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে টিকিট যেন সোনার হরিণ"। রাইজিংবিডি.কম। ২০১৬-০৭-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২২।
- ↑ ক খ "বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের প্লাটফর্ম"। দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ। ২০২০-০৭-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২২।
- ↑ ক খ "রেলওয়ে - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট "১৪ বছরেও চালু হয়নি শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ"। samakal.com। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। ২০২০-১১-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ "কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটপাট : ১৬ বছর ধরে বন্ধ হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ বাল্লা রেলপথ"। dailyjalalabad.com। ৩১ জানুয়ারি ২০২০। ২০২১-০১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৮।
- ↑ "সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"। railway.gov.bd। Archived from the original on ২০১১-১২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৮।