সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান এবং সমাজ সংস্কারক।

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১ জুন, ১৮৪২ - ৯ জানুয়ারি, ১৯২৩) ছিলেন বাঙালি লেখক, সংগীতস্রষ্টা ও ভাষাবিদ। তিনি ছিলেন ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগদানকারী প্রথম ভারতীয়। ব্রিটিশ ভারতের নারীমুক্তি আন্দোলনে সত্যেন্দ্রনাথ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।[][] পারিবারিক পরিচয়ে তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্রজ।

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
জন্ম(১৮৪২-০৬-০১)১ জুন ১৮৪২
মৃত্যু৯ জানুয়ারি ১৯২৩(1923-01-09) (বয়স ৮০)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাজনপালন নির্বাহী (আইসিএস), সমাজ সংস্কারক
পরিচিতির কারণব্রিটিশ ভারতের নারীমুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন
দাম্পত্য সঙ্গীজ্ঞানদানন্দিনী দেবী
সন্তানসুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী
পিতা-মাতা
আত্মীয়দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ভ্রাতা), সৌদামিনী দেবী, স্বর্ণকুমারী দেবী (ভগিনী)

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ঠাকুর পরিবারের জোড়াসাঁকো শাখার দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র। তিনি বাড়িতেই সংস্কৃতইংরেজি শিখেছিলেন। হিন্দু স্কুলের ছাত্র হিসাবে সত্যেন্দ্রনাথ ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত প্রথম প্রবেশিকা পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন এবং প্রথম বিভাগে স্থান অধিকার করে প্রেসিডেন্সি কলেজে (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন।[]

সেকালের রীতি অনুযায়ী, ১৮৫৯ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। এই বছরই সত্যেন্দ্রনাথ ও কেশবচন্দ্র সেন দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে সিংহল (অধুনা শ্রীলঙ্কা) ভ্রমণ করেন।

জনপালন নির্বাহী

সম্পাদনা

দীর্ঘকাল কেবলমাত্র ব্রিটিশ অফিসারেরাই সকল সরকারি পদে নিযুক্ত হতেন।[] ১৮৩২ সালে মুনসেফসদর আমিন নামে দুটি পদ সৃষ্টি করে সেগুলি ভারতীয়দের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।[] ১৮৩৩ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদদুটি চালু করে সেগুলির দরজাও ভারতীয়দের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৮৬১ সালে আইসিএস আইন বলে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস চালু হয়। ইতঃপূর্বেই অবশ্য ১৮৫৩ সালের আইন বলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের প্রথা চালু হয়ে গিয়েছিল।[]

সেযুগে ইংল্যান্ডে গিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে সরকারি উচ্চপদ লাভ খুব কঠিন কাজ ছিল। এই ব্যাপারে সত্যেন্দ্রনাথকে উৎসাহ ও অর্থসাহায্য জোগান বন্ধু মনমোহন ঘোষ। ১৮৬২ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে দু-জনে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।[]

১৮৬৩ সালের জুন মাসে সত্যেন্দ্রনাথ ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে নির্বাচিত হন। এরপর শিক্ষাধীন প্রশিক্ষণ (প্রবেশনারি ট্রেনিং) সমাপ্ত করে ১৮৬৪ সালের নভেম্বর মাসে দেশে ফিরে আসেন।[] মনমোহন ঘোষ পরীক্ষায় কৃতকার্য না হলেও বারে ডাক পেয়েছিলেন।[] বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে কর্মে বহাল হন সত্যেন্দ্রনাথ। সেযুগে বোম্বাই প্রেসিডেন্সি গঠিত ছিল বর্তমান মহারাষ্ট্র, গুজরাতসিন্ধু প্রদেশের অংশ বিশেষ নিয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে চার মাস বোম্বাই (অধুনা মুম্বই) শহরে বহাল হলেও, তার প্রথম কার্যকর নিযুক্তি হয়েছিল আমেদাবাদে[]

এরপর বদলি চাকরির সূত্রে তিনি সারা দেশ ভ্রমণ করেন। বাড়ি থেকে দূরে থাকতেন। তাই আত্মীয়স্বজনেরা প্রায়ই তার কাছে আসতেন এবং বেশ কিছুদিন করে কাটিয়ে যেতেন। নিয়মিত আসতেন তার দুই অনুজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৯-১৯২৫), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) ও বোন স্বর্ণকুমারী দেবী[]

বাংলার বাইরে বদলির চাকরির সূত্রে সত্যেন্দ্রনাথ অনেকগুলি ভারতীয় ভাষা শেখারও সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বাল গঙ্গাধর তিলকের গীতারহস্যতুকারামের অভঙ্গ কবিতাবলি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। তার অনুজ রবীন্দ্রনাথও তুকারামের কয়েকটি কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন।[] সত্যেন্দ্রনাথ যেখানেই বদলির সূত্রে গিয়েছিলেন, সেখানেই ব্রাহ্মসমাজের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমেদাবাদহায়দ্রাবাদ (সিন্ধু প্রদেশ) শহরে ব্রাহ্মসমাজের প্রসারে তার বিশেষ অবদান ছিল।[]

সত্যেন্দ্রনাথ মহারাষ্ট্র অঞ্চলের অগ্রণী সমাজ সংস্কারক ও প্রার্থনা সমাজ নেতৃবর্গের সংস্পর্শে আসেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, কাশীনাথ ত্রিম্বক তেলঙ্গ, রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকরনারায়ণ গণেশ চন্দবরকর[]

৩০ বছর তিনি আইসিএস পদ অলংকৃত করেছিলেন। ১৮৯৭ সালে মহারাষ্ট্রের সাতারার জজ হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।[]

নারীমুক্তি আন্দোলন

সম্পাদনা

রামমোহন রায় দেখেছিলেন সেযুগের হিন্দু নারীরা ছিলেন অশিক্ষিত ও নিরক্ষর; তারা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিতা হতেন, বাল্যকালেই তাদের বিবাহ হয়ে যেত, তারপর সারা জীবন পর্দার আড়ালে কাটাতেন [১০] এবং স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই সতী করার নামে তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হত।[১১] সতীদাহ প্রথা ১৮২৯ সালে অর্থাৎ সত্যেন্দ্রনাথের জন্মের বহু আগেই আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হয়েছিল এবং মেয়েদের সামাজিক অধিকার প্রদানের প্রক্রিয়াগুলিও শুরু হয়ে গিয়েছিল।

তা সত্ত্বেও হিন্দু সমাজে নারীর অবমাননাকর অবস্থান ছেলেবেলা থেকেই সত্যেন্দ্রনাথকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তিনি মনে করতেন, তার পরিবারে প্রচলিত পর্দা প্রথা হিন্দু সংস্কৃতির অঙ্গ নয়, বরং তা মুসলমান সমাজে প্রচলিত প্রথার অনুকরণ মাত্র। ইংল্যান্ডের সমাজে তিনি নারীর যে উচ্চ স্থান দেখেছিলেন, তা ভারতীয় সমাজে নারীর তুলনামূলকভাবে অসম্মানজনক অবস্থানটি তার কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছিল।[]

বিবাহের পর সত্যেন্দ্রনাথ দেখলেন, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী তার আদর্শ জীবনসঙ্গিনী। ইংল্যান্ডের সমাজে সত্যেন্দ্রনাথ যে নারী স্বাধীনতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তা তিনি জ্ঞানদানন্দিনীকেও দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাধায় সেবার জ্ঞানদানন্দিনীর ইংল্যান্ড যাওয়া হয়নি।[]

দেশে ফেরার পর অবশ্য সত্যেন্দ্রনাথ জ্ঞানদানন্দিনীকে বোম্বাই নিয়ে যান। ইংরেজ আইসিএস অফিসারদের স্ত্রীরা যে আদবকায়দায় চলতেন, তা বোম্বাইতে গিয়ে রপ্ত করে নেন জ্ঞানদানন্দিনী। অবকাশের সময় সস্ত্রীক সত্যেন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোর বাড়িতে ফিরলে, কলকাতার সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই সময়, লাটভবনে (অধুনা রাজভবন) একটি ভোজসভায় নিমন্ত্রিত সব সামাজিক প্রথা লঙ্ঘন করে স্বামীর সঙ্গে সেই ভোজসভায় যান জ্ঞানদানন্দিনী। সেখানে ইংরেজ রমণীদের মাঝে তিনি ছিলেন একমাত্র বাঙালি রমণী। ঠাকুর পরিবারের পাথুরিয়াঘাটা শাখার প্রসন্নকুমার ঠাকুর এই ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি পরিবারের এক গৃহবধূকে ওইরকম প্রকাশ্য স্থানে দেখে লজ্জায় ও ক্ষোভে তৎক্ষণাৎ সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।[]

১৮৭৭ সালে সত্যেন্দ্রনাথ জ্ঞানদানন্দিনীকে এক ইংরেজ দম্পতির সঙ্গে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন। জ্ঞানদানন্দিনী যে স্বামীকে ছাড়াই তার তিন সন্তানকে নিয়ে ইংল্যান্ড পাড়ি দিয়েছিলেন, তা সেকালে ছিল এক দুঃসাহসী কাজ। প্রথম দিকে তারা তাদের জ্ঞাতি প্রসন্নকুমার ঠাকুরের পুত্র জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুরের বাড়িতে ওঠেন। উল্লেখ্য, জ্ঞানেন্দ্রমোহনই ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি ইংল্যান্ডের বারে সাফল্য অর্জন করেন। ইনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। পরে জ্ঞানদানন্দিনী ব্রাইটনে চলে আসেন এবং সন্তানদের নিয়ে সেখানে পৃথকভাবে থাকতে শুরু করেন।[]

এরপর সত্যেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথকেও ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথের সেই ছিল প্রথম ইংল্যান্ড ভ্রমণ। ১৮৮০ সালে সকলে ভারতে ফিরে আসেন। শুধুমাত্র জ্ঞানদানন্দিনীই নন, সত্যেন্দ্রনাথের বোনেরাও সামাজিক পরিবর্তনে অংশ নিয়েছিলেন। তার বোন সৌদামিনী দেবী লিখেছেন যে, পথেঘাটে তাদের যে বিদ্রুপ সহ্য করতে হত, তা আজকের যুগে অবিশ্বাস্য শোনায়।[]

এজন্য উচ্চ ও মধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দু সমাজের মেয়েদের পর্দাপ্রথার বাইরে বের করে আনার কৃতিত্ব অনেকটাই পেয়ে থাকেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর।[]

জ্ঞানদানন্দিনী দেবী সমাজ সংস্কারে নিজস্ব কিছু অবদান রেখেছিলেন। তিনি শাড়ি পরার যে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, তা আজকের ভারতীয় সমাজে ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়। এছাড়া যথাযথ অন্তর্বাস ব্যবহার করার প্রথাও তিনি চালু করেন।[]

শিশুদের বিকাশের দিকেও জ্ঞানদানন্দিনী বিশেষ নজর রাখতেন। তিনি পরিবারে ছেলেমেয়েদের জন্মদিন পালনের প্রথা চালু করেন। এই উপলক্ষে তাদের উপহার দিয়ে দিনটি বিশেষভাবে উদ্‌যাপন করা হত। ১৮৮৫ সালে তিনি বালক নামে একটি শিশুপাঠ্য পত্রিকা চালু করেন। এটিই সম্ভবত বাংলা ভাষায় প্রথম শিশুপাঠ্য পত্রিকা। এই পত্রিকাটিই রবীন্দ্রনাথকে ছোটোদের জন্য লেখালিখিতে উৎসাহিত করে তুলেছিল। রাজর্ষি সহ তার একাধিক উল্লেখযোগ্য রচনা এই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছিল। একবছর চলার পর পত্রিকাটি ঠাকুর পরিবারের পারিবারিক পত্রিকা ভারতী-র সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়।[১২]

অন্যান্য কীর্তি

সম্পাদনা

দেশাত্মবোধ

সম্পাদনা

ঠাকুর পরিবারে গভীরভাবে দেশপ্রেমিক ছিলেন। সেযুগে উচ্চশিক্ষিত সমাজে পোশাক ও ভাষার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করা হত। কিন্তু ঠাকুর পরিবার ভারতীয় পোশাক ও বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করেছিলেন। ইংরেজ সমাজের ভাল দিকগুলির প্রশংসা করে সত্যেন্দ্রনাথ ভারতীয় সমাজেরই সংস্কার করতে চেয়েছিলেন। দেশাত্মবোধ তার মধ্যেও সক্রিয় ছিল।[]

জনগণের মধ্যে দেশাত্মবোধ সঞ্চারের উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত হিন্দুমেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ। ১৮৬৭ সালের এপ্রিল মাসে হিন্দুমেলার প্রথম অধিবেশনের সময় তিনি পশ্চিম ভারতে ছিলেন। কিন্তু ১৮৬৮ সালের অধিবেশনে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং মেলা উপলক্ষে মিলে সবে ভারতসন্তান, একতান গাহ গান গানটি রচনা করেন। এই গানটিকে ভারতের প্রথম জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেওয়া হয়। সত্যেন্দ্রনাথ অনেকগুলি দেশাত্মবোধক গান লিখেছিলেন।[]

ব্রাহ্মসমাজ

সম্পাদনা

পিতা দেবেন্দ্রনাথ ও তার সংগঠিত ধর্মমতের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল সত্যেন্দ্রনাথ। প্রথম যৌবনেই তিনি ও মনমোহন ঘোষ কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে কৃষ্ণনগর কলেজে গিয়ে সেখানকার তরুণ সমাজকে ব্রাহ্মসমাজের প্রতি আকৃষ্ট করেন।[][১৩]

ইংল্যান্ডে পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি ব্রাহ্মসমাজে উপদেশ প্রদান করতেন। পরবর্তীকালে আমেদাবাদে কর্মরত থাকার সময় তিনি ম্যাক্স মুলরকে ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পাঠান। ম্যাক্সমুলরের স্ত্রী স্বামীর জীবনীগ্রন্থটি রচনা করেছিলেন, সেখানে তিনি এই প্রতিবেদনটি অন্তর্ভুক্ত করেন।[]

সমাজ ও সাহিত্য সেবা

সম্পাদনা

অবসর গ্রহণের পর সত্যেন্দ্রনাথ প্রথমে পার্ক স্ট্রিটে (অধুনা মাদার টেরিজা সরণি) ও পরে বালিগঞ্জে বসবাস করতে থাকেন। পারিবারিক সদস্যবর্গ ছাড়াও তারকনাথ পালিত, মনমোহন ঘোষ, সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত, বিহারীলাল গুপ্ত প্রমুখ বিশিষ্ট বন্ধুবর্গও এই দুই বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।[]

তাদের পার্ক স্ট্রিটের বাড়িটি ছিল তাদের সাহিত্যিক মজলিস-এর কেন্দ্র। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু একটি বইতে গ্রন্থিত হয়েছিল। কিন্তু বইটি পরিবারের বাইরে প্রকাশিত হয়নি, এমনকি মুদ্রিতও হয়নি। আলোচনার কয়েকটি বিষয় ছিল বাংলা ভাষা ও বাংলা অক্ষর, কবিতার উপাদান, শৌর্য, পুরুষের প্রেম ও নারীর প্রেম।[১৪]

১৯০০-০১ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতিত্ব করেন। ১৮৯৭ সালে নাটোরে আয়োজিত দশম বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনেরও পৌরোহিত্য করেন।[১৫]

রচনাবলি

সম্পাদনা
  • সুশীলা ও বীরসিংহ (নাটক, ১৮৬৭)
  • বোম্বাই চিত্র (১৮৮৮)
  • নবরত্নমালা
  • স্ত্রীস্বাধীনতা
  • বৌদ্ধধর্ম (১৯০১)
  • আমার বাল্যকথা ও বোম্বাই প্রবাস (১৯১৫)
  • ভারতবর্ষীয় ইংরেজ (১৯০৮)
  • রাজা রামমোহন রায়[১৫]

সন্তানসন্ততি

সম্পাদনা

সত্যেন্দ্রনাথের দুই সন্তান সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭২-১৯৪০) ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী (১৮৭৩-১৯৬০) ছিলেন কৃতি ব্যক্তিত্ব। তাদের ছেলেবেলা কেটেছিল ইংল্যান্ডে। সুরেন্দ্রনাথ ইংরেজি ভাষায় বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের চার অধ্যায় উপন্যাসটি তিনিই ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। এছাড়া মহাভারতের মূল অংশটির একটি সংক্ষিপ্ত পুনর্লিখন তিনি প্রকাশ করেছিলেন।[] সুরেন্দ্রনাথ সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।[১৬] ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন ফরাসি ভাষায়। তিনি ছিলেন এক বিশিষ্ট সংগীতবিদ। রবীন্দ্রসংগীত বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান ছিল। সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী ছিলেন তার স্বামী। ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা উপাচার্য।[]

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. Sengupta, Subodh Chandra and Bose, Anjali (editors), Sansad Bangali Charitabhidhan (Biographical dictionary) Vol I, 1976/1998, pp. 554–5, Sahitya Sansad, আইএসবিএন ৮১-৮৫৬২৬-৬৫-০ (বাংলা).
  2. Bandopadhyay, Hiranmay, Thakurbarir Katha, pp. 98–104, Sishu Sahitya Sansad (বাংলা).
  3. Sengupta, Nitish, History of the Bengali-speaking People, p. 275, UBS Publishers’ Distributors Pvt. Ltd., আইএসবিএন ৮১-৭৪৭৬-৩৫৫-৪.
  4. Sastri, Sivanath, Ramtanu Lahiri O Tatkalin Bangasamaj, 1903/2001, p. 86, New Age Publishers Pvt. Ltd (বাংলা).
  5. Devi Choudhurani, Indira, Smritisamput, Rabindrabhaban, Viswabharati, p. 187 (বাংলা).
  6. TAGORE, Rabindranath। "Tukram"Tukaram.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-০৩ 
  7. Sastri, Sivanath, History of the Brahmo Samaj, pp. 468, 531.
  8. Devi Choudhurani, Indira, p. 57.
  9. Devi Choudhurani, Indira, pp. 1–2.
  10. Purdah was a system wherein women were not allowed to come out in the open in front of other men. It effectively meant that they had to live entirely inside the house all their lives.
  11. Kopf, David, The Brahmo Samaj and the Shaping of the Modern Indian Mind, 1979, p. 15. Princeton University Press, আইএসবিএন ০-৬৯১-০৩১২৫-৮.
  12. Bandopadhyay, Hiranmay, p. 219
  13. Kopf, David, p. 258.
  14. Ghosh, Tapobrata, Literature and Literaray Life in Calcutta, in Calcutta, the Living City, Vol II, edited by Sukanta Chaudhuri, 1990/2005, p. 224, Oxford University Press, আইএসবিএন ০১৯ ৫৬৩৬৯৭ X.
  15. Mohanta, Sambhu Chandra। "Tagore, Satyendranath"। Banglapedia 
  16. Deb, Chitra, Jorasanko and the Thakur Family, in Calcutta, the Living City, Vol I, edited by Sukanta Chaudhuri, p. 65, Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৩৬৯৬-১.