বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বভারতী ভারতের একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার বোলপুর শহরে অবস্থিত। ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন।[] ১৯৫১ সালে এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।[] কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। দেশবিদেশ থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতে আসেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রাক্তনীদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্কারবিজয়ী চিত্র-পরিচালক সত্যজিৎ রায়, জয়পুরের রানী তথা কোচবিহারের রাজকন্যা গায়েত্রী দেবী, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ।[]

বিশ্বভারতী
বিশ্বভারতী
লাতিন: Visva-Bharati
নীতিবাক্যযত্র বিশ্বং ভবেত্যকনীড়ম
Where the world makes a home in a single nest
ধরনকেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপিত২৩ ডিসেম্বর ১৯২১
প্রতিষ্ঠাতারবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আচার্যভারতের প্রধানমন্ত্রী
উপাচার্যবিনয় কুমার সরেন (ভারপ্রাপ্ত) []
শিক্ষার্থী৬৫০০ [১]
অবস্থান, ,
শিক্ষাঙ্গনপল্লী অঞ্চল (শান্তিনিকেতনশ্রীনিকেতন) [২]
সংক্ষিপ্ত নামবিশ্বভারতী
অধিভুক্তিবিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ভারত) , জাতীয় মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন পরিষদ, কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সমিতি , ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সমিতি ও জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা
ওয়েবসাইটwww.visva-bharati.ac.in
মানচিত্র

ইতিহাস

সম্পাদনা
উপাচার্য

১৯০১ সালের ডিসেম্বরে (৭ পৌষ ১৩০৮ বঙ্গাব্দ) বোলপুরের নিকটস্থ শান্তিনিকেতন আশ্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "ব্রহ্মচর্যাশ্রম" নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। এই বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ছিল প্রচলিত বৃত্তিমুখী অপূর্ণাঙ্গ শিক্ষার পরিবর্তে ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পূর্ণাঙ্গ মনোবিকাশের সুযোগদান। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন ভারতের তপোবন বিদ্যালয় থেকে এই বিদ্যালয়ের আদর্শটি গ্রহণ করেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সানন্দ অনুমতি ও আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। বিদ্যালয়ের প্রথম পাঁচজন ছাত্রের অন্যতম ছিলেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 
১৯৭১ সালের একটি স্মারক স্ট্যাম্প যা বিশ্বভারতীর পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে প্রকাশিত হয়। ছবিতে রবি ঠাকুর ও বিশ্ববিদ্যালয় ভবন রূপায়িত হয়েছে।

১৯১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। এরপর ১৯২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর (১৩২৮ বঙ্গাব্দের ৮ পৌষ) রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।[]

শিক্ষাপ্রাঙ্গণ

সম্পাদনা

বিশ্বভারতীর বিভাগ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগগুলি ছিল —

  • পাঠ্যভবন
  • উত্তরশিক্ষা সদন
  • মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা
  • শিক্ষাসত্র
  • সন্তোষ পাঠশালা
  • পদ্ম ভবন
  • ভাষা ভবন
  • শিক্ষা ভবন
  • বিদ্যা ভবন
  • রবীন্দ্র ভবন
  • চিনা ভবন
  • নিপ্পন ভবন
  • কলা ভবন
  • সংগীত ভবন
  • শিল্প সদন
  • হিন্দি ভবন
  • বিনয় ভবন
  • শিক্ষা চর্চা
  • পল্লী সংঘটন বিভাগ
  • পল্লী শিক্ষা ভবন
  • রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র
  • বাংলাদেশ ভবন
  • ইন্দো তিব্বত ভবন


শিক্ষা ভবন

সম্পাদনা

এটিকে বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বলা যায়। [] প্রধাণত বিজ্ঞান পড়ানো হয়ে থাকে। যেমন- পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ইত্যাদি।

শিক্ষা-ভবন (বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট) প্রকৃতপক্ষে মানবিক বিষয় পড়ানোর জন্য একটি স্নাতকোত্তর কলেজ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল, যা ১৯৬১-১৯৬৩-এর সময়কালে উদ্ভিদ বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং বিএসসি (অনার্স) পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। গণিত বিষয়ে প্রোগ্রাম ১৯৬৩ সালে চালু হয়েছিল এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য এটি ১৯৬৮ সালে শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৭২ সালে মানবিক ও বিজ্ঞান বিষয়ক পড়াশোনা পুনর্গঠনের কারণে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমের সকল বিজ্ঞান বিভাগকে শিক্ষা-ভবনের আওতায় আনা হয়েছিল, যা এখন বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হিসাবে পরিচিত।[]

দশটি বিভাগের সমন্বয়ে রয়েছে: দশটি বিভাগ (বায়োটেকনোলজি, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, রসায়ন, কম্পিউটার ও সিস্টেম বিজ্ঞান, পরিবেশ গবেষণা, সমন্বিত বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান এবং প্রাণিবিদ্যা) এবং একটি কেন্দ্র (গণিত শিক্ষা) যেখানে শিক্ষাদান এবং গবেষণা প্রোগ্রাম উভয়ই চলছে। বিএসসি (অনার্স), এমএসসি, ইন্টিগ্রেটেড এম.এস.সি. এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

স্নাতকস্তরে কম্পিউটার পাঠ্যক্রমে ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমমাল্টিমিডিয়া পড়ানো হয়। []

বিদ্যা ভবন

সম্পাদনা

এখানে প্রাচীন, আধুনিক ও অন্যান্য ভাষা, সাহিত্যদর্শন যথা সংস্কৃত, পালি, বাংলা, হিন্দী, উর্দু ভাষা অধ্যয়ন এবং বৈদিক, বৌদ্ধগুপ্ত সময়কালʼ; আরবি, ফারসি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা চর্চা হয়।[]

প্রাঙ্গণ

সম্পাদনা

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রাঙ্গণ অবস্থিত। যথা: শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন।

শান্তিনিকেতন গৃহ

সম্পাদনা

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝের সময়ে ১৮৬৩ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরের কাছে একটি অনুর্বর জমি ক্রয় করে সেখানে একটি ব্রহ্মচর্যাশ্রম নির্মাণ করেন এবং সেই জায়গার নাম দেন শান্তিনিকেতন। কালক্রমে পার্শ্ববর্তী পুরো এলাকার নাম হয়ে যায় শান্তিনিকেতন।

ছাতিম তলা

সম্পাদনা
  • পুরাতন ঘণ্টা

আম্রকুঞ্জ

সম্পাদনা

২৮ জানুয়ারি, ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হবার আগে ২১ জানুয়ারি, এখানে রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আসেন। []

কলা ভবন

সম্পাদনা
 
কলা ভবন

এই বিভাগে শিল্পকলা শিল্প-সম্বন্ধীয় যাবতীয় গঠনমূলক কাজ সব রকমের চিত্রাঙ্কন ভাস্কর্য বস্ত্র প্রিন্ট মেকিং ও সিরামিক ডিজাইন ও শিল্পকলার ইতিহাস পড়ানো হয়[]

শিল্প সদন

সম্পাদনা

এই বিভাগে চারু ও কারুশিল্প সম্বন্ধীয় সমস্ত গঠনমূলক কাজ শেখানো হয়। []

সঙ্গীত ভবন

সম্পাদনা

এই বিভাগে কণ্ঠ ও যন্ত্র সঙ্গীত, নৃত্য ও অভিনয় শেখানো হয়।[]

পাঠ ভবন

সম্পাদনা

শিক্ষাসত্র

চীনা ভবন

সম্পাদনা

এই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত শিক্ষানবিশদের চীনা ভাষাগুলি ও সাহিত্য, চীনা সংস্কৃতি ও চীনা সভ্যতা ইত্যাদি ও চীনা ছাত্রছাত্রীদের ভারতীয় সংস্কৃতি, সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য পড়ানো হয়।[] রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন ছিল সাম্প্রতিক শতাব্দীতে ভারতচীনের মধ্যে যে প্রাচীন সাংস্কৃতিক ও সভ্যতার গভীর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, তাকে পুনরুদ্ধার করতে শান্তিনিকেতন ভিত্তি হোক।[] তার এই বিশ্বাসকে স্বতন্ত্রভাবে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করেন "তান ইউন-শান" যিনি বিশ্বভারতীতে "টান সাহেব" বলে পরিচিত ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা করাকালীন টান সাহেবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে প্রথমবার দেখা হয়। দুজন সমমনা মানুষ ছিলেন। টান রবীন্দ্রনাথের আহবানে ১৯২৭ সালের জুলাই মাসে ভারতে আসেন। ১৯২৮ সালে তিনি জোড়াসাঁকো হয়ে পাঠভবনের তৎকালীন প্রিন্সিপাল সত্যজীবন পালের সঙ্গে শান্তিনিকেতন আসেন।[] কয়েকদিনের মধ্যেই সেখানে ৫ জন ছাত্র নিয়ে পড়ানো শুরু করেন যারা পরে জ্ঞানীগুণী মানুষ রূপে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ১৯২৬ সালে "চ্যান নাই-ওয়েই"-এর সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন যিনি একজন গুণী মানুষ ছিলেন এবং তানের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে এসে টান এবং রবীন্দ্রনাথের ইন্দো চীন সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের জন্য একটি প্রমুখ আন্তর্জাতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে সর্বদা সাহায্য করেছিলেন। সাংস্কৃতিক সৌহার্দ্যের মিলন, চীনা ভবনের প্রিন্ট, টান নিজে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরামর্শ করে বানিয়েছিলেন। ১৯৩১ সালে, তিন বছর শান্তিনিকেতনে পড়ানোর পর এই ইন্দো-চীন সৌহার্দ্যের ভাবনাকে প্রচার ও জনপ্রিয় করতে, টান চীনে ফিরত যান। প্রায় দু বছর সেখানে বিভিন্ন বক্তৃতা ও লেখার মাধ্যমে সেখানকার মানুষদের জাগরূক করেন ও ১৯৩৩ সালে নানকিনে ইন্দো-চীন সাংস্কৃতিক সমিতি খোলেন। সেই বছর তিনি ও তার কিছু জ্ঞানীগুণী বন্ধু প্রায় ৫০ হাজার বই ও প্রচুর অর্থ শান্তিনিকেতনে দান করেন। সেখানকার কিছু প্রকাশকরা সবরকম চীনা জ্ঞানে সমৃদ্ধ বইও দান করেন। ১৪ এপ্রিল ১৯৩৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে চীনা ভবনের উদ্বোধন হয়।[] শান্তিনিকেতন টান সাহেবকে ১৯৭৯ সালে "দেশিকোত্তম" উপাধিতে ভূষিত করে। []। ২০১৭ সালে চীনা ভবনের প্রধান হন অভিজিৎ ব্যানার্জী।[১০] সম্প্রতি চীনা ভবন চারটি সমঝোতা স্মারক (এম ও ইউ) সই করেছে। সেটা দুই দেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিক্ষা আদানপ্রদান জাতীয় প্রকল্পের জন্য।

হিন্দি ভবন

সম্পাদনা

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি ভবনের অন্তর্ভুক্তি হয়। হাজারী প্রসাদ দ্বিবেদী ছিলেন হিন্দী ভবনের প্রথম অধ্যক্ষ।

রবীন্দ্র ভবন

সম্পাদনা

এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িগুলো সংরক্ষিত করা হয়েছে। বর্তমানে সেই বাড়িগুলো মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

দর্শন সদন

সম্পাদনা

আনন্দ পাঠশালা

সম্পাদনা

রতন কুঠি

সম্পাদনা

বিশ্বভারতীর বিদেশী অধ্যাপক দের বাসের জন্য একটি বাড়ি নির্মাণকল্পে, পার্সি দানপতি স্যার রতন টাটা (স্যার রতনজী জামসেদজী টাটা) ২৫ হাজার টাকা দান করেন। এই কারনে এই বাড়িটির নামকরন করা হয় 'রতন কুঠি'। ১৪ এপ্রিল ১৯২৩ সালে নববর্ষের উপাসনার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্সি অধ্যাপক ডক্টর তারাপুরওয়ালা এই গৃহের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আশ্রমের এক ছাত্র চন্ডীচরণ গৃহ নির্মাণের ভার নেন। এই গৃহটি টাটা গেস্ট হাউস নামেও পরিচিত। এই বাড়ির গেটের দু'পাশে বাংলা ও ইংরেজিতে, রবীন্দ্রনাথের হস্তাক্ষরে 'রতন কুঠি' শব্দটি খোদাই করা আছে যা একটি অন্য মাত্রা যোগ করেছে। (তথ্য : রবীন্দ্রজীবনী, প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়)

নাট্য ঘর

সম্পাদনা

প্রশাসনিক ভবন

সম্পাদনা

বিনয় ভবন

সম্পাদনা

বিনয় ভবন ১৯৪৮ সালে কলা ও কারুশিল্প এবং সঙ্গীত শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তীকালে ১৯৫১ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ হিসেবে গড়ে ওঠে।[১১] বিনয় ভবন শিক্ষকদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষার অন্যান্য দিশার প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। বিনয় ভবন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ব্যবস্থার একত্রিকরণ পদ্ধতিকে গ্রহণ করে, যার মাধ্যমে বর্ণ বৈচিত্র্যময় সমুদায়কে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা ও সেবা প্রদান করা যায়। যদি শিক্ষা পরিবর্তনের মাধ্যম হয়, তাহলে পর্যাপ্তরূপে প্রশিক্ষণ কর্মীদের থাকার প্রয়োজন জরুরি। এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা যথা বি এড, এম এড, এম এ পি এইচ ডি ইত্যাদি করতে পারে।[১১] এখানে শারীরিক শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলার ব্যাপারে শিক্ষা নিতে পারে।

কেন্দ্রীয় পাঠাগার

সম্পাদনা

পূর্বপল্লী অতিথি ভবন

সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক অতিথি ভবন

সম্পাদনা

শান্তিনিকেতন ডাকঘর

সম্পাদনা

জনসংযোগ কার্যালয়

সম্পাদনা

কৃষি অর্থনৈতিক গবেষণা কেন্দ্র

সম্পাদনা

পিয়ারসন স্মৃতি হাসপাতাল

সম্পাদনা

প্রেস্কো পেভিলিওন

সম্পাদনা

ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক শান্তিনিকেতন,

সম্পাদনা

মেলা প্রাঙ্গণ- পৌষ মেলা

সম্পাদনা

১৮৯১ সালে মহর্ষির ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা নেওয়া এবং পরে উপাসনা গৃহ নির্মাণের মতন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮৯৪ সালে শুরু হওয়া পৌষ মেলায় বিক্রি হত শান্তিনিকেতন লাগোয়া কিছু গ্রাম এর মানুষ এর কিছু ঘরোয়া সামগ্রী, যেমন: মাটির হাঁড়ি, লোহার কড়াই, পাথরের বাটি, কাচের চুড়ি ইত্যাদি। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ সাধন। সময়ের সাথে সাথে মেলা যেমন কলেবরে বেড়েছে তেমনই হারিয়াছে তার সাবেক রং-রূপ ও উদ্দেশ্য।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

শিল্প সদন

সম্পাদনা

শিক্ষা চর্চা

সম্পাদনা

[১২]

পল্লী শিক্ষা ভবন

সম্পাদনা

বিশ্বভারতী আইন-১৯৮৪ অনুসারে ১৯৬৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর, স্থাপিত "পল্লী শিক্ষা সদন" বাড়িটির নতুন নামকরণ করে "পল্লী শিক্ষা ভবন" রাখা হয়। এটি শ্রীনিকেতনে অবস্থিত। শ্রীনিকেতন নামটির উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯২৩ সাল থেকে। শ্রীনিকেতনের অনেকগুলো উদ্দেশ্য ছিল তার ভিতরে কৃষির উন্নতি অন্যতম ছিল। ১৯৬৩ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর একটি মহাবিদ্যালয় পল্লী শিক্ষা সদন রূপে যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৪ সালে পল্লী শিক্ষা ভবন নামে রূপান্তরিত হয়ে ভারতীয় কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র রূপে বিদ্যমান আছে। বর্তমানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী, ৪৬ জন শিক্ষক ও শতাধিক কর্মচারী-কর্মকর্তা এই ভবনের সাথে নিয়জিত আছেন। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সকালে শিক্ষামূলক সেমিনার এবং বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক করে থাকেন। এই দিনটি অনেক উৎসব মুখর হয়ে থাকে।[১৩]

বাংলাদেশ ভবন

সম্পাদনা

২৫ মে ২০১৮ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীতে যে বাংলাদেশ ভবন তৈরি হয়েছে সেদেশের সরকারের অর্থানুকূল্যে, সেটির উদ্বোধন করেছেন ভারত আর বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রী - নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনা।

অত্যাধুনিক দোতলা এই ভবনটিতে আছে একটি মিলনায়তন, জাদুঘর এবং গ্রন্থাগার। প্রায় ৪৬,০০০ বর্গফুট জায়গার এই ভবনে উদ্বোধনের আগের রাত পর্যন্তও কাজে ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা শিল্পী আর কর্মীরা। জাদুঘরটি চালু হচ্ছে প্রায় ৪০০০ বর্গফুট এলাকা নিয়ে। পরে এটিকে আরও বড় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আর গ্রন্থাগারের জন্য বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে প্রায় ৩৫০০ বই। এর মধ্যে অনেক বইই রবীন্দ্রচর্চা এবং রবীন্দ্র গবেষণা ভিত্তিক, যা ভারতে সহজলভ্য নয়। গ্রন্থাগার আর জাদুঘরটিতে রয়েছে অনেকগুলি ইন্টার অ্যাকটিভ, টাচ স্ক্রিন কিয়স্ক। রয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা শোনার জন্য অডিও কিয়স্ক।

ছাপানো বই ছাড়াও ডিজিটাল বইও পড়তে পারবেন পাঠকরা। জাদুঘরেই দেখা হয়েছিল ভবনটির কিউরেটর তারিক সুজাতের সঙ্গে। তিনিই জানালেন, জাদুঘরটিকে মূলত ৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছে।

শুরু হয়েছে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত ২৫০০ হাজার বছর পুরনো সভ্যতার নিদর্শন দিয়ে। শেষ হয়েছে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে। মাঝের অনেকটা সময় জুড়ে এসেছে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গ।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন রয়েছে, তেমনই আছে অতি দুর্লভ কিছু ছবি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত নানা প্রত্ন নিদর্শনের অনুকৃতি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির মধ্যে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত প্রত্ন নিদর্শন যেমন আছে, তেমনই আছে ৬ষ্ঠ-৭ম শতকের পোড়ামাটির কাজ, ১৬শ শতকের নক্সাখচিত ইট প্রভৃতি। রয়েছে পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়ের নানা নিদর্শন, দেবদেবীদের মূর্তি। কোনটা পোড়ামাটির, কোনটি ধাতব। মাঝখানে সুলতানি এবং ব্রিটিশ শাসনামলও এসেছে জাদুঘরটিতে রাখা নানা প্যানেলে। রয়েছে ঢাকার জাতীয় জাদুঘর থেকে আনা বেশ কিছু মুদ্রা।

[১৪]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "বিশ্বভারতীতে নজির! বিদ্যুৎ জমানার পর তৃতীয় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি"আনন্দবাজার পত্রিকা। ৩১ আগস্ট ২০২৪। 
  2. "বিশ্বভারতী", অমিয়কুমার সেন, ভারতকোষ, পঞ্চম খণ্ড, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৯৭৩, পৃ. ১১২-১৪
  3. Kumari, Ruchika, সম্পাদক (৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। "Visva Bharati University: Look back at the 100 year old legacy, its founder and famous alumni" [বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়: ১০০ বছরের ঐতিহ্যের দিকে ফিরে দেখা, এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশিষ্ট প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী]। টাইমস নাউ (ইংরেজি ভাষায়)। 
  4. "Bishwabharati"। ২৯ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  5. Ram Nath Sharma; Rajendra Kumar Sharma (২০০৬)। Problems of Education in India। Atlantic Publishers & Dist। পৃষ্ঠা ৩৫৩–। আইএসবিএন 978-81-7156-612-9 
  6. "Shikha Bhavan" 
  7. "Syllabus" (পিডিএফ) 
  8. Tapati Dasgupta (১৯৯৩)। Social Thought of Rabindranath Tagore: A Historical Analysis। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা ১৮৮–। আইএসবিএন 978-81-7017-302-1 
  9. K.C. Brahmachary (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। Foreigners Who Loved and Served India। Diamond Pocket Books Pvt Ltd। পৃষ্ঠা ২১৭–। আইএসবিএন 978-93-5083-396-4 
  10. "Cheena Bhavana to increase student exchange programmes"। 03 November 2017। সংগ্রহের তারিখ 16 মার্চ 2018  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  11. "VinayaBhavana"। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৮ 
  12. থাকে, এটি। "বিশ্বভারতীর পল্লী শিক্ষা ভবনের ৫৮-তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিক"https://www.bangladarpan.com/। ২২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২০  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  13. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  14. ভট্টশালী, অমিতাভ (২৫ মে ২০১৮)। "শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন: উয়ারি বটেশ্বর থেকে মুক্তিযুদ্ধ"বিবিসি বাংলা, কলকাতা। সংগ্রহের তারিখ ০৮/০৮/২০২৪  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েব‌সাইট (ইংরেজিতে) আম্রকুঞ্জের ছবি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

আরও দেখুন

সম্পাদনা