শূন্যসন্নিকর্ষী
যেসব সংখ্যা অন্য যেকোনো আদর্শ বাস্তব সংখ্যার চেয়ে শূন্যের অত্যন্ত কাছাকাছি মানের, অথচ সেগুলো শূন্যও নয়, গণিতের ভাষায় তাদেরকে শূন্যসন্নিকর্ষী বা ইনফিনিটেসিমাল বলা হয়। শূন্যসন্নিকর্ষী আবশ্যিকভাবেই একটি অ-শূন্য সংখ্যা যা ধনাত্মক ও ঋণাত্মক উভয়ই হতে পারে। ঋণাত্মক শূন্যসন্নিকর্ষী হলো সবচেয়ে বড় ঋণাত্মক সংখ্যা, এর বিপরীতে ধনাত্মক শূন্যসন্নিকর্ষী হলো সবচেয়ে ক্ষুদ্র ধনাত্মক সংখ্যা। infinitesimal শব্দটি ১৭শ শতকের আধুনিক ল্যাটিনের জন্য নতুনভাবে উদ্ভাবিত শব্দ infinitesimus থেকে এসেছে, ব্যুৎপত্তিগতভাবে যা মূলত কোনো অনুক্রমের অসীম-তম পদকে বুঝিয়ে থাকে।
শূন্যসন্নিকর্ষিসমূহ আদর্শ বাস্তব সংখ্যা ব্যবস্থায় খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরাবাস্তব ও অধিবাস্তব সংখ্যার ন্যায় অন্যান্য সংখ্যা ব্যবস্থায় এদেরকে দেখা যায়, যেখানে এই সংখ্যা ব্যবস্থাগুলোকে শূন্যসন্নিকর্ষী ও অসীম উভয় ধরনের রাশি সহযোগে সম্প্রসারিত বাস্তব সংখ্যারূপে বিবেচনা করা যেতে পারে, যেথায় আবার এই সম্প্রসারণসমূহ অর্থাৎ শূন্যসন্নিকর্ষী ও অসীম রাশিসমূহ পরস্পরের গুণাত্মক বিপরীত।
ক্যালকুলাসের উন্নয়নের অংশরূপে শূন্যসন্নিকর্ষী সংখ্যার ধারণার প্রবর্তন ঘটে। ক্যালকুলাসের বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় অন্তরজকে প্রথমদিকে দুটি শূন্যসন্নিকর্ষী রাশির অনুপাত হিসেবে গণ্য করা হতো। তবে এই সংজ্ঞার আনুষ্ঠানিক কোন শক্ত ভিত্তি ছিল না। ক্যালকুলাসের আরও উন্নয়ন ঘটলে শূন্যসন্নিকর্ষিতার স্থলে সীমার ধারণা প্রবর্তিত হয়, যা আদর্শ বাস্তব সংখ্যা ব্যবহার করে গণনা করা সম্ভব।
বিশ শতকে অব্রাহাম রবিনসন কর্তৃক অনাদর্শ বিশ্লেষণ এবং অধিবাস্তব সংখ্যার উন্নয়নের সাথে সাথে শূন্যসন্নিকর্ষিতা পুণরায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শূন্যসন্নিকর্ষিতার ক্যালকুলাসের তথা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রাশির গণনার আনুষ্ঠানিক ব্যবহার ও প্রয়োগ যে সম্ভব শতাব্দীর পর শতাব্দী বিতর্কের পর এর মাধ্যমে সেটা প্রমাণিত হয়েছিল। এরপরে, গণিতবিদরা পরাবাস্তব সংখ্যা যা বৃহত্তম ক্রমভুক্ত ক্ষেত্র তার উন্নয়ন ঘটান। পরাবাস্তব সংখ্যা হলো, অসীম ও শূন্যসন্নিকর্ষী সংখ্যার সাথে জড়িত একটি আনুষ্ঠানিক রূপ বা আনুষ্ঠানিকীকরণ, অধিবাস্তব ও ক্রমবাচক উভয় সংখ্যাই যার অন্তর্ভুক্ত।
শূন্যসন্নিকর্ষিসমূহের প্রায়োগিক অন্তর্দৃষ্টি বা সূক্ষ্মদর্শিতার যে অস্তিত্ব তখন পর্যন্ত জানা ছিল তার মাধ্যমে অন্ততপক্ষে কোণ অথবা ঢালের মতো বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোর ব্যাখ্যা করা যেত, যদিও এই বিষয়গুলো ছিল সীমাহীভাবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র।[১]
লিবনিজ অবিচ্ছিন্নতার নীতি এবং সমসত্ত্বার তুরীয় নীতির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে যে ক্যালকুলাসের উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন শূন্যসন্নিকর্ষিতা হল সেই ক্যালকুলাসের মৌলিক উপাদান। সাধারণভাবে বলা যায়, একটি শূন্যসন্নিকর্ষী বস্তু হচ্ছে এমন একটি বস্তু যা যেকোন সম্ভাব্য পরিমাপের চেয়েও ক্ষুদ্রতর, কিন্তু আকারে শূন্য নয় — অথবা, এটি এতই ক্ষুদ্র যে প্রচলিত কোন অর্থেই একে শূন্য থেকে আলাদা করা যায় না। এর দরুন গণিতে শূন্যসন্নিকর্ষী শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার করা হলে এটি অসীমতকভাবে বা সীমাহীনভাবে ক্ষুদ্র তথা যে কোনও আদর্শ বাস্তব সংখ্যার তুলনায় ক্ষুদ্রতর এমনটি বুঝিয়ে থাকে। কোন ফাংশনের অন্তরজকে যেভাবে দেখা হয় একটি শূন্যসন্নিকর্ষিকে সচরাচর সেভাবেই অনুরূপ আকারের আরেকটি শূন্যসন্নিকর্ষির সাথে তুলনা করা হয়। ক্যালকুলাসের যোগজ নির্ণয়ে অসীম সংখ্যক শূন্যসন্নিকর্ষির সমষ্টি বের করা হয়।
শূন্যসন্নিকর্ষিতার ধারণাটি মূলত নিকোলাস মার্ক্যাটর নতুবা লিবনিজ এদের যেকোন একজনের মাধ্যমে ১৬৭০ সালের দিকে চালু হয়।[২] আর্কিমিডিস ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ও কঠিন বস্তুর আয়তন নির্ণয় করার জন্য যে নিয়মটি ব্যবহার করেছিলেন ঘটনাক্রমে সেটা তার মেথড অফ মেকানিক্যাল থিওরেমস গ্রন্থে অবিভাজ্যতার পদ্ধতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।[৩] আর্কিমিডিস তার প্রথামাফিক প্রকাশিত প্রাচীন গ্রন্থসমহূহে নিঃশেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে একই সমস্যার সমাধান করেছেন। পঞ্চদশ শতাব্দী কুসের নিকোলাসের প্রচেষ্টার সাক্ষী হয়ে রয়েছে যা আমরা সপ্তদশ শতকে জোহানেস কেপলারকে আরও উন্নত করতে দেখলাম যেখানে তিনি (কেপলার) বিশেষ করে কোন বৃত্তের ক্ষেত্রফল গণনার ক্ষেত্রে বৃত্তটিকে অসীম সংখ্যক বাহুযুক্ত নতুন একটি বহুভুজ হিসেবে উপস্থাপন করলেন। ১৬শ শতকে সাইমন স্ট্যাভিন সকল সংখ্যাকে দশমিকের মাধ্যমে প্রকাশের জন্য কাজ করেন যা বাস্তব ধারার পটভূমি তৈরি করে। বোনাভনটুরা কাভালিয়ারির অবিভাজ্যতার পদ্ধতির প্রয়োগের দরুন ধ্রুপদী লেখকেরা তাদের অনুসন্ধান কার্যের ফলাফলে একটি সম্প্রসারণ পেয়ে যান। The method of indivisibles related to geometrical figures as being composed of entities of codimension 1.[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] John Wallis's infinitesimals differed from indivisibles in that he would decompose geometrical figures into infinitely thin building blocks of the same dimension as the figure, preparing the ground for general methods of the integral calculus.[বঙ্গানুবাদ প্রয়োজন] ক্যালকুলাসের প্রেক্ষাপটে তিনি শূন্যসন্নিকর্ষী সংখ্যাকে 1/∞ এর মাধ্যমে প্রয়োগ ও নির্দেশ করেন।
লিবনিজ অবিচ্ছিন্নতার নীতি এবং সমসত্ত্বার তুরীয় নীতির মতো কিছু অনুসন্ধানী নীতির ভিত্তিতে শূন্যসন্নিকর্ষিসমূহ ব্যবহার করেছেন। অবিচ্ছিন্নতার নীতি অনুসারে, সসীম সংখ্যার জন্য যা সফল হয় তা অসীম সংখ্যার জন্যও সফল। এর বিপরীতে সমসত্ত্বার তুরীয় নীতি অবরাদ্দযোগ্য রাশি নিয়ে গঠিত রাশিমালাকে শুধু বরাদ্দযোগ্য রাশি নিয়ে গঠিত রাশিমালার দ্বারা প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াসমূহ নির্দেশ করে। ১৮শ শতকে লিওনার্ড অয়লার এবং জোসেফ লুই ল্যাগ্রাঞ্জ এদের মতো গণিতবিদদেরকে শূন্যসন্নিকর্ষির নিয়মিত ব্যবহার করতে দেখা যায়। অগাস্টিন লুই কোশি তার কোর্স ডি'অ্যানালিসে অবিচ্ছিন্নতার সংজ্ঞায়নে এবং ডিরাক ডেল্টা ফাংশনের যে আদি রূপ ছিল তার সংজ্ঞায়নে শূন্যসন্নিকর্ষিসমূহের প্রয়োগ ঘটান। ক্যান্টর এবং ডেডেকিন্ড যখন স্ট্যাভিনের ধারার বিমূর্ত সংস্করণসমূহের আরও উন্নয়ন করছিলেন তখন পল ডু বয়স-রেমন্ড ফাংশনের বৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে শূন্যসন্নিকর্ষি-সমৃদ্ধ ধারাসমূহের উপর ধারাবাহিক-প্রবন্ধ (সিরিজ প্রবন্ধ) লিখছিলেন। ডু বয়স-রেমন্ডের লেখা এমিল বোরেল এবং থোরালফ স্কোলেম এদের দুজনকেই অনুপ্রাণিত করেছিল। শূন্যসন্নিকর্ষী সংখ্যার বৃদ্ধি হার নিয়ে কোশি যে কাজ করেছিলেন বোরেল সুস্পষ্টভাবে তার সাথে বয়স-রেমন্ডের কাজের সমন্বয় করেন। স্কোলেম ১৯৩৪ সালে প্রথম পাটীগাণিতের অনাদর্শ মডেলটির উন্নয়ন করেছিলেন। অবশেষে আব্রাহাম রবিনসন যিনি তার পূর্ববর্তী এডুইন হিউয়েটের ১৯৪৮ সালের এবং জার্জি লসের ১৯৫৫ সালের সম্পাদিত কাজের উপর ভিত্তি করে অনাদর্শ বিশ্লেষণের উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন তার মাধ্যমে ১৯৬১ সালে অবিচ্ছিন্নতার নীতি এবং শূন্যসন্নিকর্ষিতা উভয়ের একটি গাণিতিক বাস্তবায়ন সফলভাবে সম্পাদিত হয়। শূন্যসন্নিকর্ষি-সমৃদ্ধ ধারার বাস্তবায়ন ঘটে অধিবাস্তব সংখ্যাগুলোর মাধ্যমে এবং লিবনিজের অবিচ্ছিন্নতার নীতির বাস্তবায়ন ঘটে স্থানান্তর নীতিটির মাধ্যমে। ফের্মার আসন্ন সমতার বাস্তবায়ন ঘটে আদর্শ অংশ ফাংশনটির মাধ্যমে।
ভ্লাদিমির আর্নল্ড ১৯৯০ সালে লেখেন:
আজকাল বিশ্লেষণ সম্পর্কে পড়ানোর ক্ষেত্রে শূন্যসন্নিকর্ষী রাশিসমূহ নিয়ে কথা বলার জনপ্রিয়তা খুব একটা নেই। ফলস্বরূপ বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরা এই ভাষার সাথে পুরোপুরি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। তথাপি এটি সাচ্ছন্দ্যের বিষয় হওয়া প্রয়োজন।[৪]
শূন্যসন্নিকর্ষিতার ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রাক-সক্রেটীয় দর্শন যুগের এলিয়্যাটিক স্কুলে "সীমাহীনভাবে ক্ষুদ্র রাশি" নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস (আনু. ২৮৭ খ্রীস্টপূর্বাব্দ – আনু. ২১২ খ্রীস্টপূর্বাব্দ) ছিলেন প্রথম যিনি তার মেথড অব মেকানিকাল থিওরেমসে শূন্যসন্নিকর্ষী সংখ্যার জন্য যুক্তিগতভাবে অনড় একটি সংজ্ঞার প্রস্তাব করেন।[৫] আর্কিমিডিসীয় ধর্ম অনুসারে x সংখ্যাটি অসীম(সংখ্যা)রূপে সংজ্ঞায়িত হবে, যদি এই সংখ্যাটি |x|>1, |x|>1+1, |x|>1+1+1, ... শর্তগুলো পূরণ করে। আবার x সংখ্যাটি শূন্যসন্নিকর্ষী হবে যদি x≠0 হওয়ার পাশাপাশি x-এর ক্ষেত্রে এবং ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাসমূহের গুণাত্মক বিপরীত সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে একই ধরনের একগুচ্ছ শর্ত বিদ্যমান থাকে। একটি সংখ্যা পদ্ধতিতে কোন অসীম সংখ্যা বা শূন্যসন্নিকর্ষী সংখ্যা না থাকলে এটা আর্কিমিডিসীয় হবে বলা হয়।
ইংরেজ গণিতবিদ জন ওয়ালিস ১৬৫৫ সালে প্রকাশিত তার ট্রিটিস অন দ্য কনিক সেকশনস বইয়ে 1/∞ গণিতিক অভিব্যক্তিটির তথা রাশিমালাটির প্রবর্তন করেছিলেন। ∞ চিহ্নটির (তথা অসীমতার) গুণাত্মক বিপরীত নির্দেশকারী এই প্রতীকটি (1/∞) হচ্ছে শূন্যসন্নিকর্ষির গাণিতিক ধারণার একটি প্রতীকী উপস্থাপন। ওয়ালিস তার এই বইয়ে অসীমতার উপস্থাপনের জন্য ∞ প্রতীকটির এবং শূন্যসন্নিকর্ষীর প্রতীকী উপস্থাপনের জন্য 1/∞ প্রতীকটির প্রবর্তন করেছিলেন এবং এদের মধ্যে সম্পর্ক কী হবে তা নিয়েও আলোচনা করেছিলেন। একটি সসীম ক্ষেত্র গঠনের নিমিত্তে শূন্যসন্নিকর্ষী প্রস্থের অসীম সংখ্যক সামান্তরিকের সমষ্টির একটি পরিকল্পনামাফিক-পরীক্ষণের অনুমান পাওয়া যায় এই ধারণাটি থেকে। সমাকলনীয় ক্যালকুলাসে ব্যবহৃত সমাকলনের আধুনিক নিয়মটির পূর্বসূরি ছিল এই ধারণাটি। শূন্যসন্নিকর্ষী 1/∞ এর ধারণাগত উৎপত্তি সুদূর অতীতের গ্রীক দার্শনিক এলেয়ার জিনোর সময়ে বলে অনুমান করা যায়। একটি সসীম ব্যবধি এবং একটি শূন্যসন্নিকর্ষী আকারের ব্যবধির মধ্যকার যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্কের প্রথম গাণিতিক স্বীকৃতি হিসেবে জিনোর প্যারাডক্সকে অনুমান করা হয়।
১৭শ শতকে ইউরোপে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিতর্কের একটি বিষয় ছিল এই শূন্যসন্নিকর্ষিতা। এমনকি ১৬৩২ সালে রোমে ধর্মগুরুরা এটার উপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছিলেন। [৬]
ক্যালকুলাস আবিষ্কারের পূর্বে গণিতবিদরা পিয়েরে দ্য ফার্মার অ্যাডেকুয়ালিটি নিয়ম এবং র্যনে দেকার্তের মেথড অব নর্মালস ব্যবহার করে স্পর্শক রেখাসমূহের পরিমাপকার্য চালাতে সক্ষম ছিলেন। এই পদ্ধতিটি শূন্যসন্নিকর্ষী প্রকৃতির ছিল না কি বীজগাণিতিক প্রকৃতির ছিল তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। নিউটন এবং লিবনিজ যখন ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন, তখন তারা শূন্যসন্নিকর্ষীর প্রয়োগ করেন, নিউটন ফ্লাকশন এবং লিবনিজ ডিফারেন্সিয়াল নামে। বিশপ বার্কলি শূন্যসন্নিকর্ষীর প্রয়োগকে সঠিক নয় ধরে নিয়ে তার দ্য অ্যানালিস্ট গ্রন্থে এর তীব্র সমালোচনা করেছেন।[৭] গণিতবিদ, বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা সঠিক ফলাফলের জন্য শূন্যসন্নিকর্ষীর ব্যবহার চালিয়ে যেতে থাকেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে অগাস্টিন-লুই কোশি, বার্নার্ড বলজানো, কার্ল উইর্সট্রাস, ক্যান্টর, রিচার্ড ডেডেকিন্ড এবং অন্যান্যরা সীমার (ε, δ)-সংজ্ঞা এবং সেট তত্ত্ব ব্যবহার করে ক্যালকুলাসের পুনর্গঠন করেছিলেন। ক্যান্টর, ডেডেকিন্ড এবং উইর্সট্রাসের অনুসারীরা যেখানে শূন্যসন্নিকর্ষির বিশ্লেষণ থেকে মুক্তির চেষ্টা করেছিলেন, তদ্বিপরীতে সেখানে বার্ট্রান্ড রাসেল এবং রুডলফ কারনাপের মতো তাদের দার্শনিক সহযোদ্ধারা শূন্যসন্নিকর্ষিগুলোকে ছদ্মবেশী অনুমান বলে ঘোষণা করেছিলেন এবং অপরদিকে হারম্যান কোহেন ও নব্য কান্টবাদ ভাবধারার মারবুর্গ শাখা শূন্যসন্নিকর্ষির জন্য একটি কার্যকরী যুক্তির বিকাশে অনুসন্ধিৎসু ছিলেন।[৮] পরবর্তীতে উনবিংশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতকের দিকে টিউলিউয়ো লেভি-সিভিটা, গুইসেপ ভেরোনিস, পল ডু বয়স-রেমন্ড এবং অন্যান্যদের কাজের মাধ্যমে শূন্যসন্নিকর্ষী সম্পর্কিত সমস্যার গাণিতিক অধ্যয়ন-আলোচনা অব্যাহত ছিল বলে ফিলিপ এরলিশ ২০০৬ সালে নথিভুক্ত করেছেন। শূন্যসন্নিকর্ষীসমূহ যে ক্যালকুলাস এবং বিশ্লেষণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে তা বিংশ শতকে আবিষ্কার হয়েছিল। (দেখুন:অধিবাস্তব সংখ্যা)
প্রথম-ক্রমের ধর্ম
সম্পাদনাশূন্যসন্নিকর্ষী এবং অসীম রাশিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাস্তব সংখ্যার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে, এদের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যগুলোর কোনও পরিবর্তন না করে সাধারণত যতটা সম্ভব রক্ষণশীল হওয়ার চেষ্টা করা হয়। এটি নিশ্চিত যে, যতটা সম্ভব পরিচিত ফলাফলগুলো এখানেও বিদ্যমান। সাধারণত মৌলিক বলতে এটা বোঝানো হয় যে, সেটের উপর কোনো কোয়ান্টিফিকেশন নেই, এটা রয়েছে কেবল উপাদানের উপর। "যেকোনো সংখ্যা x-এর জন্য..." ধাঁচের বিবৃতি যে এখানেও প্রযোজ্য হবে উপর্যুক্ত সীমাবদ্ধতাটি থেকে এরূপ বিবৃতিসমূহের অনুমোদন পাওয়া যায়। যেমন: "যেকোনো সংখ্যা x-এর জন্য x + 0 = x" বিবৃতি প্রদানকারী স্বতঃসিদ্ধটি এখানেও প্রযোজ্য হবে। কয়েকটি সংখ্যার উপর কোয়ান্টিফিকেশনের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। যেমন: "যেকোনো সংখ্যা x এবং y-এর জন্য xy = yx।" উপরন্তু, "... সংখ্যার যেকোনো সেট S-এর জন্য..." ধাঁচের বিবৃতিসমূহ এক্ষেত্রে কার্যকর অর্থ বহন নাও করতে পারে। কোয়ান্টিফিকেশনের উপর এই সীমাবদ্ধতার সাথে সংশ্লিষ্ট লজিককে প্রথম ক্রমের লজিক হিসেবে নির্দেশ করা হয়।
ফলস্বরূপ, সেটের উপর কোয়ান্টিফিকেশনের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব এমন বৈশিষ্ট্যসমূহের সবগুলোর ক্ষেত্রে, সম্প্রসারিত-সংখ্যা-ব্যবস্থা বাস্তব সংখ্যার সাথে সহমত হতে পারে না। কারণ, উদ্দেশ্য হলো একটি অ-আর্কিমিডিসীয় ব্যবস্থা গঠন করা, আর আর্কিমিডিসীয় মূলনীতিকে সেটের উপর কোয়ান্টিফিকেশনের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। শূন্যসন্নিকর্ষীসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করার নিমিত্তে, 1/2, 1/3, 1/4 এবং অনুরূপ অন্যান্য সংখ্যার চেয়েও ছোট একটি সংখ্যার দাবি করে যে স্বতঃসিদ্ধগুলো, সেই স্বতঃসিদ্ধগুলোর একটি গণনাযোগ্য অসীম তালিকার কেবল সংযুক্তির মাধ্যমেই, বাস্তব সংখ্যাসহ এবং সেট তত্ত্বসহ যেকোনো তত্ত্বকে সংরক্ষণশীলতার অধীনে সম্প্রসারণ করা সম্ভব। একইভাবে, পরিপূর্ণতার বৈশিষ্ট্য আবির্ভাবের আশা করা যায় না, কারণ বাস্তবসংখ্যাসমূহ আইসোমরফিজম (সমরূপতা) পর্যন্ত অনন্যভাবে পরিপূর্ণ-ক্রমভুক্ত-ক্ষেত্র (ordered field)।
আমরা তিনটি স্তরকে আলাদা করতে পারি যেখানে একটি অ-আর্কিমিডিসীয় সংখ্যা-ব্যবস্থার প্রথম-ক্রমের বৈশিষ্ট্যাবলি থাকতে পারে, যে বৈশিষ্ট্যগুলো আবার বাস্তব সংখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- একটি ক্রমভুক্ত ক্ষেত্র (ordered field) বাস্তব সংখ্যা ব্যবস্থার সকল সাধারণ স্বতঃসিদ্ধকে মেনে চলে, যে স্বতঃসিদ্ধসমূহকে প্রথম ক্রমের লজিকের মধ্যে ঘোষণা করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, x + y = y + x বিনিময় স্বতঃসিদ্ধটি এই বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
- +, ×, এবং ≤ এই মৌলিক ক্রমভুক্ত ক্ষেত্র সম্পর্কসমূহের সাথে জড়িত বিবৃতির ক্ষেত্রে একটি বাস্তব বদ্ধ ক্ষেত্র বাস্তব সংখ্যা পদ্ধতির সমস্ত প্রথম-ক্রমের বৈশিষ্ট্যই ধারণ করে, এবং বাস্তব বদ্ধ ক্ষেত্রের এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকার ব্যাপারটি এই বৈশিষ্ট্যগুলো কোথায় কোথায় স্বতঃসিদ্ধরূপে ব্যবহৃত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে না। এটি ক্রমভুক্ত-ক্ষেত্রের স্বতঃসিদ্ধসমূহ মেনে চলার চেয়ে শক্তিশালী একটি শর্ত। আরও নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, বিজোড়-মাত্রার প্রতিটি বহুপদীর জন্য একটি মূলের অস্তিত্বের মতো বাড়তি প্রথম-ক্রমের বৈশিষ্ট্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটি সংখ্যার একটি ঘনমূল থাকবে।
- যেকোন সম্পর্কের সাথে সংশ্লিষ্ট বিবৃতির জন্য বাস্তব সংখ্যা ব্যবস্থার সমস্ত প্রথম-ক্রম বৈশিষ্ট্যই ব্যবস্থাটিতে থাকতে পারে, ( +, ×, এবং ≤ ব্যবহার করে এই সম্পর্কসমূহকে প্রকাশ করা যাক কিংবা নাই যাক তা নির্বিশেষে)। উদাহরণস্বরূপ, এমন একটি সাইন ফাংশন থাকতে হবে যা অসীম সংখ্যক ইনপুটের জন্য সুসংজ্ঞায়িত; একইভাবে এটি সত্য হবে প্রতিটি বাস্তব ফাংশনের ক্ষেত্রেও।
শূন্যসন্নিকর্ষী অন্তর্ভুক্তকারী সংখ্যা পদ্ধতিসমূহ
সম্পাদনাশূন্যসন্নিকর্ষী ডেল্টা ফাংশন
সম্পাদনাযৌক্তিক ধর্ম
সম্পাদনাপাঠ্যক্রমে শূন্যসন্নিকর্ষী
সম্পাদনাশূন্যের দিকে ধাবমান ফাংশন
সম্পাদনাবিভিন্ন চলকের বিন্যাস
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Bell, John L. (৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Continuity and Infinitesimals"। Stanford Encyclopedia of Philosophy।
- ↑ Katz, Mikhail G.; Sherry, David (২০১২), "Leibniz's Infinitesimals: Their Fictionality, Their Modern Implementations, and Their Foes from Berkeley to Russell and Beyond", Erkenntnis, 78 (3): 571–625, arXiv:1205.0174 , এসটুসিআইডি 119329569, ডিওআই:10.1007/s10670-012-9370-y
- ↑ Reviel, Netz; Saito, Ken; Tchernetska, Natalie (২০০১)। "A New Reading of Method Proposition 14: Preliminary Evidence from the Archimedes Palimpsest (Part 1)"। Sciamvs। 2: 9–29।
- ↑ Arnolʹd, V. I. Huygens and Barrow, Newton and Hooke. Pioneers in mathematical analysis and catastrophe theory from evolvents to quasicrystals. Translated from the Russian by Eric J. F. Primrose. Birkhäuser Verlag, Basel, 1990. p. 27
- ↑ Archimedes, The Method of Mechanical Theorems; see Archimedes Palimpsest
- ↑ Alexander, Amir (২০১৪)। Infinitesimal: How a Dangerous Mathematical Theory Shaped the Modern World। Scientific American / Farrar, Straus and Giroux। আইএসবিএন 978-0-374-17681-5।
- ↑ Berkeley, George (১৭৩৪)। The Analyst: A Discourse Addressed to an Infidel Mathematician.। London।
- ↑ Mormann, Thomas; Katz, Mikhail (Fall ২০১৩)। "Infinitesimals as an Issue of Neo-Kantian Philosophy of Science"। HOPOS: The Journal of the International Society for the History of Philosophy of Science। 3 (2): 236–280। arXiv:1304.1027 । এসটুসিআইডি 119128707। জেস্টোর 10.1086/671348। ডিওআই:10.1086/671348।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- B. Crowell, "Calculus" (2003)
- Ehrlich, P. (2006) The rise of non-Archimedean mathematics and the roots of a misconception. I. The emergence of non-Archimedean systems of magnitudes. Arch. Hist. Exact Sci. 60, no. 1, 1–121.
- Malet, Antoni. "Barrow, Wallis, and the remaking of seventeenth century indivisibles". Centaurus 39 (1997), no. 1, 67–92.
- J. Keisler, "Elementary Calculus" (2000) University of Wisconsin
- K. Stroyan "Foundations of Infinitesimal Calculus" (1993)
- Stroyan, K. D.; Luxemburg, W. A. J. Introduction to the theory of infinitesimals. Pure and Applied Mathematics, No. 72. Academic Press [Harcourt Brace Jovanovich, Publishers], New York-London, 1976.
- Robert Goldblatt (1998) "Lectures on the hyperreals" Springer.
- Cutland et al. "Nonstandard Methods and Applications in Mathematics" (2007) Lecture Notes in Logic 25, Association for Symbolic Logic.
- "The Strength of Nonstandard Analysis" (2007) Springer.
- Laugwitz, D. (১৯৮৯)। "Definite values of infinite sums: aspects of the foundations of infinitesimal analysis around 1820"। Archive for History of Exact Sciences। 39 (3): 195–245। এসটুসিআইডি 120890300। ডিওআই:10.1007/BF00329867।
- Yamashita, H.: Comment on: "Pointwise analysis of scalar Fields: a nonstandard approach" [J. Math. Phys. 47 (2006), no. 9, 092301; 16 pp.]. J. Math. Phys. 48 (2007), no. 8, 084101, 1 page.
গণিত বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |