ভারতের রাজনৈতিক একত্রীকরণ

ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত দুই অঞ্চলে বিভিক্ত হয়

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর, তথা দেশবিভাগের পর ভারত দুই ধরনের অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল; ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশসমূহ ও দেশীয় রাজ্যসমূহ। এই প্রদেশসমূহকে ব্রিটিশ কোম্পানি শাসন করত। অন্যদিকে, উক্ত দেশীয় রাজ্যসমূহের উপরেও ব্রিটিশ সরকারের কর্তৃত্ব বিস্তৃত ছিল, তবে সেখানে শাসন করত উক্ত অঞ্চলের নিজস্ব শাসকেরাই। এছাড়াও ভারত ভূখণ্ডে ফ্রান্সপর্তুগাল দ্বারা শাসিত কিছু ঔপনিবেশিক কলোনিও ছিল। ভারতে এই অঞ্চলগুলোর রাজনৈতিক একত্রীকরণ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম ঘোষিত লক্ষ্য ছিল। পরবর্তী দশকে ভারত সরকার এই লক্ষ্যকেই অনুসরণ করে চলে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং ভি. পি. মেনন ভারতের সাথে একীভূত হবার জন্য বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের শাসকদের জোর দেন। ভারতে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হলে ধাপে ধাপে এই রাজ্যগুলোর উপর কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা ও প্রশাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৬ সালের পরে এই দেশীয় রাজ্যগুলি আর ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে তেমন কোনো তফাৎ ছিল না। ক্রমশ, ভারত সরকার কিছু কূটনৈতিক ও সামরিক উপায়ে দ্য ফ্যাক্টো এবং দ্য জ্যুরে-এর মাধ্যমে অবশিষ্ট ঔপনিবেশিক কলোনিগুলোর উপরও ক্ষমতা বিস্তার করে, এবং এগুলোও ভারতের সাথে একত্রীত হয়।

১৯০৯ সালের ব্রিটিশ ভারত এবং দেশীয় রাজ্যসমূহ

স্বাধীনতা উত্তর ভারতের প্রথম দশকেই ভারতের রাজনৈতিক সংহতিসাধন সম্পূর্ণ হয়। তবে কাশ্মীরের ক্ষেত্রে এই সংহতিসাধন সম্পূর্ণ হয়নি। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানচীন কাশ্মীরের অনেক অংশ দখল করে নেয়। পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতে যোগদান করে। যদিও এই প্রক্রিয়া ভারতের প্রায় সকল দেশীয় রাজ্যকেই স্থান দিতে পেরেছে, তবুও কিছু অঞ্চলে এই বিভাজন নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জম্মু ও কাশ্মীর, ত্রিপুরা এবং মণিপুর রাজ্যগুলি, যেখানে আজও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের অস্তিত্ব বিদ্যমান।

ব্রিটিশ ভারতের দেশীয় রাজ্যসমূহ

সম্পাদনা

দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতি দুইটি পদক্ষেপের সহাবস্থান ভারতে ব্রিটিশদের আধিপত্যের প্রথম দিকের সময়কালকে চিহ্নিত করে।[] দেশীয় রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে জোরপূর্বক অধিকার করে তাদের ওপর সরাসরি শাসন করা ছিল অন্যতম একটি পদক্ষেপ। আবার, রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে ব্রিটিশ প্রভুত্ব বজায় করে পরোক্ষ ভাবে সেই রাজ্যশাসন ছিল অপর একটি পদক্ষেপ। [] ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে জোরপূর্বক অধিকারের নীতির ওপর ব্রিটিশদের নীতি ন্যস্ত ছিল। কিন্তু ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহ ব্রিটিশদের এই নীতির পরিবর্তন ঘটাতে বাধ্য করে। তারা শুধুমাত্র শোষণ করে আত্মসাৎকৃত রাজ্যগুলোকে দমন করার এবং সেইসাথে দেশীয় রাজ্যগুলোকে কেবলই একধরনের সমর্থনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করার সমস্যাগুলো বুঝতে পারে।[] ১৮৫৮ সালে, ব্রিটিশরা আত্মসাৎমূলক নীতিকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে, এবং এরপরে থেকে যাওয়া দেশীয় রাজ্যগুলোর সাথে ব্রিটিশ সম্পর্ক ছিল কেবলই সহায়ক জোট হিসেবে। এরফলে ব্রিটিশরা সকল দেশীয় রাজ্যের উপর সর্বপ্রধানত্ব খাটায় এবং একইসাথে মিত্র হিসেবে তাদের রক্ষা করে চলে। ব্রিটিশরা এইসব রাজ্যের বাহ্যিক সকল সম্পর্কের উপর পূর্ণ প্রভাব খাটিয়ে চলে।[] ব্রিটিশ এবং এইসকল দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে প্রকৃত সম্পর্ক বস্তুত পৃথক পৃথক চুক্তি নিয়ন্ত্রণ করে চলত। এই চুক্তিগুলি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন রকমের ছিল। কিছু রাজ্যের সম্পূর্ণরূপে অভ্যন্তরীণ আত্মশাসন ছিল, কিছু রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় বেশ ভালরকম নিয়ন্ত্রিত ছিল, আবার কিছু রাজ্যের শাসকেরা খুব সামান্যই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ছিল।[]

বিংশ শতকে ব্রিটিশরা দেশীয় রাজ্যগুলোকে ব্রিটিশ ভারতের সাথে একত্রীকরণের বেশ কিছু চেষ্টা চালায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২১ সালে তারা চেম্বার অব প্রিন্সেস নামের একটি পরামর্শমূলক ও উপদেষ্টার পদ তৈরি করে,[] এবং ১৯৩৬ সালে ছোট রাজ্যগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদেশ থেকে কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ভারত সরকার এবং বড় দেশীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক সৃষ্টি করে। এরফলে রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের প্রতিস্থাপন করা হয়।[] ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনে দেশীয় রাজ্য এবং ব্রিটিশ ভারতকে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অধীনে নিয়ে এসে ফেডারেশন গঠনের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা লক্ষ্যমাত্রা তৈরী করা হয়।[] এই প্রকল্প সফলতার খুব নিকটে চলে আসে, কিন্তু এটি ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় এটি বাতিল হয়ে যায়।[] ফলশ্রুতিতে, ১৯৪০ সালে দেশীয় রাজ্য এবং শাসকবর্গের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হয় সর্বপ্রধানত্ব এবং ব্রিটিশ ও রাজ্যগুলোর মধ্যকার চুক্তিদ্বারা।[১০]

সর্বপ্রধানত্ব কিংবা সহায়ক মৈত্রী- কোনটাই ভারতের স্বাধীনতার পরে টিকে থাকা সম্ভবপর ছিল না। যেহেতু সর্বপ্রধানত্ব কিংবা সহায়ক মৈত্রীর চুক্তিগুলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে দেশীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছিল, সেহেতু ব্রিটিশদের দৃষ্টিতে এই ক্ষমতা নব্যগঠিত ভারত কিংবা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করাটা যুক্তিযুক্ত ছিল না।[১১] একই সময়ে এই রাজ্যগুলি ব্রিটেনের উপর দায়িত্ব আরোপ করে, যে তারা রাজ্যগুলির প্রতিরক্ষার জন্য সেনাবাহিনী গঠন করার বাধ্যবাধকতার জন্য বিন্দুমাত্র তৈরী নয়। অতঃপর ব্রিটিশ সরকার ঠিক করে, যে তাদের সাথে দেশীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে সংঘটিত সকল চুক্তিসহ এই সর্বপ্রধানত্ব, ভারত থেকে তাদের বিদায়ের সাথে সাথেই বাতিল হয়ে যাবে।[১২]

একত্রীকরণের কারণ

সম্পাদনা
 
গুজরাতের সৌরাষ্ট্র এবং কাঠিয়ার অঞ্চলে প্রায় দুইশরও বেশি দেশীয় রাজ্যের অবস্থান ছিল। বরোদার এই মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে রাজ্যগুলোর অবস্থান একদম পাশাপাশি ছিল না।

সর্বপ্রধানত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার অর্থ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে যেসকল অধিকার এসব দেশীয় রাজ্যের উপর বর্তাত, সেইসকল অধিকার সম্পূর্ণরূপে দেশীয় রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া। এর মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের নতুন প্রদেশগুলোর সাথে তারা "সম্পূর্ণ স্বাধীনতার" সাথে নিজেদের মতন করে সম্পর্ক তৈরি করতে পারবে।[১৩] ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ব্রিটিশদের প্রাথমিক পরিকল্পনা, যেমন ক্রিপস মিশনে কিছু দেশীয় রাজ্য স্বাধীন ভারত ছেড়েও থাকতে পারবে — এমন পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১৪] ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনা, কারণ তাদের মতে দেশীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীন হওয়ার ঘটনা ভারতীয় ইতিহাসের পরিপন্থী, এবং এই প্রকল্পকে ভারতের "বিচ্ছিন্নকরণ" প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করে।[১৫] এর আগে দেশীয় রাজ্যের ব্যাপারে কংগ্রেস ততটা সক্রিয় ছিল না। এর কারণ কংগ্রেসের সীমিত সম্পদ দেশীয় রাজ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। এরচেয়ে তারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হবার লক্ষ্যের প্রতি অধিক মনোযোগী ছিল।[১৬] এছাড়াও এর অন্যতম কারণ ছিল কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে মহাত্মা গান্ধী,[১৭] দেশীয় রাজ্যের রাজাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন; কারণ এই সমস্ত রাজা "ভারত নিজেদের মত করে শাসন করতে সক্ষম" — উদাহরণটির প্রমাণ ছিলেন।[১৮] এ দৃষ্টিভঙ্গি ১৯৩০ এর দশকে পরিবর্তিত হয়। এর কারণ ছিল ভারত সরকার আইন ১৯৩৫-এ অন্তর্ভুক্ত ফেডারেশন প্রকল্প, এবং জয়প্রকাশ নারায়ণের মত সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেস নেতাদের উত্থান। তখন থেকেই কংগ্রেস দেশীয় রাজ্যগুলোর রাজনৈতিক এবং শ্রমিকবিষয়ক সকল কর্মসূচীতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে।[১৯] দেশীয় রাজ্যগুলোকে অবশ্যই স্বাধীন ভারতে আসতে হবে, তারা ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশের মতই স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে এবং জনগণ কর্তৃক সরকার নির্বাচিত হবে — ১৯৩৯ সালের মধ্যে কংগ্রেস এমন অবস্থানে চলে আসে।[২০] কংগ্রেস ব্রিটিশদের সাথে মধ্যস্থতাকালীন দেশীয় রাজ্যের ব্যাপারে তাদের এমন দাবি জানায়,[২১] তবে ব্রিটিশদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাদের উপর বর্তায় না।

ভারতের শেষ ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের মত কতিপয় ব্রিটিশ নেতাও স্বাধীন ভারতের সাথে দেশীয় রাজ্যগুলোর ভেঙে যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে অস্বস্তিতে ছিলেন। উনবিংশ ও বিংশ শতকে ব্যবসা, বাণিজ্য এবং যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন নানা ক্ষেত্রেই দেশীয় রাজ্যগুলোকে ব্রিটিশ ভারতের সাথে যুক্ত করেছিল।[২২] রেলপথ, কাস্টম, সেচব্যবস্থা, বন্দর ব্যবহার এবং অন্যান্য খাতের চুক্তিগুলোও বাতিল হয়ে যাবে, ফলশ্রুতিতে গোটা উপমহাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়তে পারে। মাউন্টব্যাটেন ভি. পি. মেনন এবং ভারতের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা প্ররোচিত হয়, যে দেশীয় রাজ্যগুলো ভারতের সাথে একত্রীত হলে বিভাজনের ক্ষত কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। ফলশ্রুতিতে মাউন্টব্যাটেন নিজে কংগ্রেসের প্রস্তাব অনুযায়ী দেশীয় রাজ্যগুলোর ভারতভুক্তির ব্যাপারে একমত হন এবং ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য কাজ করেন।[২৩]

দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতভুক্তি

সম্পাদনা

ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান

সম্পাদনা

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশ সরকার, ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যসমূহকে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে আনতে চেয়েছিল।[] ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হলে সেই উদ্যোগের সমাপ্তি ঘটে। দেশীয় রাজ্যগুলোর সাথে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক পূর্বেকার চুক্তি অনুসারেই নির্ধারিত হতে থাকে। ১৯৪২ সালে ক্রিপ্‌সের দৌত্য ভবিষ্যতে দেশীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীন ভারতের বাইরে স্বতন্ত্র অস্তিত্বের সম্ভবনা স্বীকার করে।[১৪]

ক্ষমতার হস্তান্তরের সময় ব্রিটিশ সরকারের নীতিগত অবস্থান এই ছিল যে, যেহেতু দেশীয় রাজ্যগুলো সরাসরি যুক্তরাজ্যের অধীনে সামন্ত রাজ্য ছিল, সুতরাং তাদের ভারত বা পাকিস্তানের অন্তরভূক্ত করা চলবে না। একই সঙ্গে তারা দেশীয় রাজ্যগুলোর সুরক্ষার জন্য ভারতের ভূখণ্ডে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবস্থানের বিপক্ষে ছিল। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে ভারতের ভূখণ্ড থেকে ব্রিটিশ প্রস্থানের সাথে সাথে যুক্তরাজ্যের সাথে সমস্ত দেশীয় রাজ্যগুলোর সমস্ত চুক্তির অবসান ঘটবে।

সাধারণভাবে ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান দেশীয় রাজ্যগুলোর স্বতন্ত্র অস্তিত্বের পক্ষে হলেও, ব্রিটিশ ভারতের শেষ ভাইসরয় লুই মাউন্টব্যাটেন দেশীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতার পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে ক্ষমতার হস্তান্তরের চুক্তির জন্য দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতভূক্তি এক প্রকার বাধ্যতামূলক প্রাকশর্ত। তিনি মনে করতেন যদিও দেশীয় রাজ্যগুলো ভারত বা পাকিস্তানের যে কোনো একটিতে যোগদান করতে পারে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তাদের ভারতেই যোগদান করা উচিত।

ভারত জাতীয় কংগ্রেসের অবস্থান

সম্পাদনা

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বের কাছে দেশীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা ছিল অকল্পনীয়। তারা মনে করে ক্রিপ্‌স দৌত্যের প্রস্তাব ভারতের ইতিহাসের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতিকে অস্বীকার করেছে। দেশীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা ভারতের বল্কানিকরণের পথ সুগম করবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে। তাদের অবস্থান এই ছিল যে ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলোর মত দেশীয় রাজ্যগুলোকেও একই শর্তে স্বাধীন ভারতে যোগদান করতে হবে।

দেশীয় রাজন্যবর্গের অবস্থান

সম্পাদনা

দেশীয় রাজন্যবর্গের অবস্থান ছিল বিভক্ত। কোন কোন রাজ্য যেমন বিকানির ও জওহর আদর্শগত ও দেশপ্রেমের কারণে স্বাধীন ভারতে যোগদান করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে।[২৪] অনেক রাজ্য মনে করে যে তারা তাদের ইচ্ছামত ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগদান করতে পারে, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অবস্থান করতে পারে অথবা অপর দেশীয় রাজ্যগুলির সাথে একযোগে কোন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্তর্গত হতে পারে।[২৫] ভূপাল, ত্রিবাঙ্কুর ও হায়দ্রাবাদ ঘোষণা করে তারা ভারত বা পাকিস্তান কোন অধিরাজ্যেই যোগ দেবে না।[২৬] হায়দ্রাবাদ ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোতে নিজের বাণিজ্য প্রতিনিধি নিয়োগ করে এবং সমুদ্রপথে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে পর্তুগালের কাছ থেকে গোয়া কেনা বা ভাড়া নেওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করে।[২৭] থোরিয়াম সম্ভারের জন্য ত্রিবাঙ্কুর তার কৌশলগত গুরুত্বের উল্লেখ করে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি চায়। কোন কোন রাজ্য সমস্ত দেশীয় রাজ্যগুলোকে নিয়ে উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের বিকল্প একটি তৃতীয় রাষ্ট্রের পরিকল্পনা করে। ভোপাল অন্যান্য দেশীয় রাজ্যগুলোকে সঙ্গে নিয়ে মুসলিম লিগের সাথে সমঝোতা করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভারতে যোগদানের চাপকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।[২৮]

প্রায় সকল অমুসলিমপ্রধান দেশীয় রাজ্যের ভারতে যোগদানে আপত্তি ধীরে ধীরে বিলোপ হওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক কারণ অবদান রাখে। দেশীয় রাজ্যগুলোর মধ্য বাস্তবে কোন ঐক্য ছিল না। ছোট ছোট রাজ্যগুলো বড় রাজ্যগুলো তাদের রক্ষা করবে এটা বিশ্বাস করত না। হিন্দু রাজারা মুসলিম শাসকদের বিশ্বাস করতেন না। বিশেষ করে ভোপালের নবাব স্বাধীনতার অন্যতম প্রবক্তা হামিদুল্লাহ্‌ খানকে পাকিস্তানের দালাল মনে করা হত।[২৯] অনেক রাজ্য আবার ভারতে অন্তর্ভুক্তিকে ভবিতব্য মনে করে কংগ্রেসের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করতে থাকে এই আশায় যদি সমর্পণ চুক্তির সময় বাড়তি সুযোগ সুবিধা আদায় করা যায়।[৩০] যে রাজ্যগুলো ভেবেছিল জোটবদ্ধ হয়ে মুসলিম লিগের সাহায্যে কংগ্রেসের ভারতে অন্তর্ভুক্তির চাপকে প্রতিহত করতে পারবে,[৩১] মুসলিম লিগ গণপরিষদে যোগ না দেওয়ায় সে আশা ভেঙে যায়। ২৮ এপ্রিল, ১৯৪৭ সালে গণপরিষদে বরোদা, বিকানির, কোচিন, গোয়ালিয়র, জয়পুর, যোধপুর, পাটিয়ালা ও রেওয়া যোগ দিলে একযোগে গণপরিষদ বয়কটের পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়।[৩২]

বহু দেশীয় রাজ্যেই রাজা স্বাধীনতার পক্ষে হলেও প্রজারা তাদের রাজ্যের ভারতে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ছিল, অর্থাৎ শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছা প্রজারা সমর্থন করেনি।[৩৩] ত্রিবাঙ্কুরে দেওয়ান সি পি রামস্বামীকে খুনের চেষ্টা হলে ত্রিনাঙ্কুরের রাজা স্বাধীনতার পরিকল্পনা ত্যাগ করেন।[৩৪] কিছু কিছু রাজ্যের দেওয়ান অথবা মুখ্যমন্ত্রী রাজাকে বুঝিয়ে ভারতের অন্তর্ভুক্তিতে রাজি করান।[৩৫] দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বস্তুত লর্ড মাউন্টব্যাটেন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং ভি.পি. মেনন প্রমুখেরাই মুখ্য ভূমিকা রাখেন। পরবর্তী দুইজন রাজ্যবিভাগের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন, যা দেশীয় রাজ্যসমূহের সাথে সম্পর্কে ভূমিকা রাখে।

মাউন্টব্যাটেনের অবস্থান

সম্পাদনা
 
লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ভারতে দেশীয় রাজ্যের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মাউন্টব্যাটেন বিশ্বাস করতেন, যে ভারতে রাজ্যগুলোর সংযোজন ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে কংগ্রেসের সাথে আলোচনা পক্ষে ভাল হবে না।[৩৬] ব্রিটিশ রাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তাকে দেশীয় রাজ্যের নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস করতেন এবং তিনি অনেকেরই ব্যক্তিগত বন্ধুও ছিলেন। যেমন তিনি ভোপালের নবাব হামিদুল্লাহ খানের বিশেষ বন্ধু ছিলেন। উক্ত রাজ্যসমূহের নেতারাও বিশ্বাস করতেন যে স্বাধীন ভারতের পথে তিনি একজন পরামর্শদাতা হবেন, কারণ প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু এবং প্যাটেল তাকে ভারতের অধিরাজ্যসমূহের প্রথম গভর্নর জেনারেল হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।[৩৭]

দেশীয় রাজ্যসমূহের নেতাদের সাথে মাউন্টব্যাটেনের সম্পর্ককে মাউন্টব্যাটেন নিজেই একত্রীকরণের পথে কাজে লাগান। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকার কোন দেশীয় রাজ্যকেই রাষ্ট্রের মর্যাদা দেবে না কিংবা ব্রিটিশ কমনওয়েলথ-এর মধ্যে স্বীকৃতি দেবে না। এর অর্থ দেশীয় রাজ্যসমূহ যতদিন না ভারত বা পাকিস্তানের সাথে একত্রীত হচ্ছে, ততদিন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে তাদের সকল সম্পর্ক ছিন্ন থাকবে।[৩৮] তিনি এও বলেন, যে ভারতীয় উপমহাদেশ একটি অখণ্ডিত অর্থনৈতিক অঞ্চল ছিল। কাজেই এই সংযোগ ভেঙ্গে গেলে রাজ্যসমূহই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।[৩৯] তিনি দেশীয় রাজ্যসমূহে অন্যান্য সমস্যা যেমন সাম্প্রদায়িক হানাহানি এবং সাম্যবাদী আন্দোলনের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সম্ভাবনার কথাও বলেন।[৩৪]

মাউন্টব্যাটেন জোর দিয়ে বলেন যে তিনি দেশীয় রাজ্যসমূহের নেতাদের অঙ্গীকারের ট্রাস্টি হিসেবে থাকবেন, কারণ তিনি ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ভারতের হেড অব স্টেট ওয়েল হিসেবে কর্মরত থাকবেন। তিনি একত্রীকরণে অনিচ্ছুক নেতাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করেন, যেমন ভোপালের নবাবের সাথে। মাউন্টব্যাটেন তাকে একত্রীকরণের চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য একটি গোপন চিঠি পাঠান, যা তিনি নিজের কাছে সুরক্ষিত রাখতেন। এর আগে যদি নবাব তার মন পরিবর্তন না করেন, তাহলে ১৫ই আগস্ট এটিকে তিনি রাজ্যবিভাগের হাতে দেবেন। নবাব রাজি হন এবং তিনি কথার খেলাপ করেননি।[৪০]

এইসময়ে বিভিন্ন নেতারা অভিযোগ করতেন, যে যুক্তরাজ্য তাদের ঠকাচ্ছে, যাকে তারা একমাত্র মিত্র হিসেবে গণ্য করত,[৪১] এবং স্যার কনরাড করফিল্ড মাউন্টব্যাটেনের নীতির বিরোধিতা করে রাজনৈতিক মন্ত্রণালয়ের প্রধান-এর পদ থেকে সরে যান।[৩৪] বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টিও মাউন্টব্যাটেনের এই নীতির সমালোচনা করেন।[৪২] উইনস্টন চার্চিল ভারতীয় সরকারের ভাষার সাথে অস্ট্রিয়া আক্রমণের পূর্বে দেয়া এডলফ হিটলারের ভাষণের তুলনা করেন।[৪৩] লাম্বি ও মুরের মত আধুনিক ঐতিহাসিকগণ বলেন, দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতে একত্রীত হবার ক্ষেত্রে মাউন্টব্যাটেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।[৪৪]

চাপ এবং কূটনৈতিক অবস্থা

সম্পাদনা
 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বল্লভভাই প্যাটেলের অন্যতম দায়িত্ব ছিল ব্রিটিশ ভারত, প্রদেশ এবং দেশীয় রাজ্যসমূহকে নিয়ে অখণ্ড ভারত নির্মাণ।

দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতে অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের বিশেষ করে প্যাটেল এবং মেননের অবদান ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কংগ্রেসের অবস্থান ছিল এমন যে দেশীয় রাজ্যসমূহ সার্বভৌম অঞ্চল ছিল না, এবং তারা তাদের ব্রিটিশদের বিদায়ের পরেও স্বাধীন হিসেবে থাকবে না। একারণে দেশীয় রাজ্যসমূহকে অবশ্যই ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে হবে।[৪৫] ১৯৪৬ সালের জুলাইস মাসে নেহেরু বলেন যে স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো দেশীয় রাজ্য সামরিকভাবে অবস্থান নিতে পারবে না।[৩৪] এর পরের বছরের জানুয়ারিতে তিনি বলেন স্বাধীন ভারত রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতাকে মেনে নেবে না।[৪৬] একই বছরের মে মাসে তিনি ঘোষণা দেন, যে দেশীয় রাজ্য অ্যাসেম্বলিতে যোগ দেবে না, তাদেরকে শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করা হবে।[৩৪] অন্যান্য কংগ্রেস নেতা যেমন সি. রাজাগোপালচারী বলেন সর্বপ্রধানত্ব "সম্মতির ভিত্তিতে নয় বরং ফ্যাক্ট হিসেবে হয়ে গেছে", এবং এটি ব্রিটিশদের থেকে উত্তরাধিকারের ন্যায় স্বাধীন ভারত সরকারের কাছে চলে আসবে।[৪৭]

প্যাটেল এবং মেনন, যারা দেশীয় রাজাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্বে ছিলেন, তারা নেহেরুর প্রতি আরও বন্ধুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।[৪৮] ১৯৪৭ সালের ৫ জুলাই ভারত সরকার যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি তৈরি করে সেখানে কোনোপ্রকার হুমকি দেওয়া হয়নি। বরং, এটি ভারতের অখণ্ডতার গুরুত্ব এবং এর ফলে দেশীয় রাজ্য ও স্বাধীন ভারতের যৌথ লাভ নিয়ে লেখা হয়। এতে কংগ্রেসের উদ্দেশ্য নিয়ে তাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয় এবং স্বাধীন ভারতে যোগদানের আহ্বান হিসেবে "মিলেমিশে বন্ধুর মত আইন তৈরি এবং মিত্রদের মত চুক্তি তৈরি" করাকে উল্লেখ করা হয়।[৪৯] তিনি আরও বলেন যে কেন্দ্রীয় সরকার দেশীয় রাজ্যের শাসনের ক্ষেত্রে ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করবে না। ব্রিটিশ সরকারের রাজনৈতিক বিভাগের মত নয়, অর্থাৎ এখানে সর্বপ্রধানত্বের কোনো ব্যাপার থাকবে না। বরং এটা হবে দেশীয় রাজ্য ও ভারতের মধ্যে সমান সমানভাবে বাণিজ্য পরিচালনার একটি মাধ্যম।[৫০]

অধিগ্রহণের সরঞ্জাম

সম্পাদনা

প্যাটেল এবং মেনন দেশীয় রাজ্যের জন্য আকর্ষণীয় কায়দায় চুক্তি তৈরির জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা চালাতে থাকে। দুটি মুখ্য নথি তৈরি করা হয়। প্রথমটি হল স্ট্যান্ডস্টিল ডকুমেন্ট যা পূর্বের মত চুক্তি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করবে। দ্বিতীয়টি হল ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন, যার মাধ্যমে দেশীয় রাজ্যের শাসকেরা তাদের সাম্রাজ্যের স্বাধীন ভারতে প্রবেশ মেনে নেবেন এবং কিছু বিষয়ে ভারতের ক্ষমতাও থাকবে।[২৫] বিষয়সমূহ রাজ্যভিত্তিতে পরিবর্তিত হবে। যে সকল রাজ্যের ব্রিটিশ শাসনামলেও অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন ছিল তারা ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসনের তিনটি বিষয়ের ভার ভারতকে দেবে — প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক কার্যক্রম এবং যোগাযোগ। এদেরকে গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৯৩৫ এর লিস্ট ১ থেকে শিডিউল ৭ অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। দেশীয় রাজ্যের যে শাসকগণের মূলত এস্টেট বা তালুক ছিল, যেখানে মুকুটের অধিপতি প্রশাসনিক শক্তি প্রয়োগ করে থাকে, তারা ভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন স্বাক্ষর করেন। এখানে সব ক্ষমতা এবং বিচারকার্যের দায়িত্ব ভারত সরকারের উপর দেওয়া হয়। যেসকল শাসকেরা এর মধ্যবর্তী অবস্থায় ছিলেন, তারা তৃতীয় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে ব্রিটিশদের শাসনামলে যে ধরনের ক্ষমতা তাদের ছিল, এখনো তাই অব্যহত থাকবে।[৫১]

ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন অন্যান্য আরও কিছু সুবিধা তৈরি করে। ধারা ৭ অনুযায়ী দেশীয় রাজ্যের রাজা ভারতের সংবিধান মানতে বাধ্য থাকবেন না। ধারা ৮ অনুযায়ী তাদের অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন অব্যাহত থাকবে এবং এ ব্যাপারে ভারত সরকারের প্রতি তারা দায়বদ্ধ থাকবেন না।[৫২] এর পাশাপাশি আরও বেশকিছু সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। দেশীয় রাজন্যবর্গ যারা ভারতে প্রবেশে সম্মত হবেন, তারা আরও অধিক কিছু সুবিধা ভোগ করবেন যেমনঃ ভারতীয় আদালতে প্রসিকিউশন থেকে অব্যাহতি, কাস্টমস শুল্ক থেকে অব্যাহতি প্রভৃতি। সেইসাথে তারা ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের দিকেও যেতে পারবেন। ১৮টি দেশীয় রাজ্যের কোনোটাকেই সংযুক্তিতে বাধ্য করা হবে না এবং তারা ব্রিটিশ পদকের জন্য যোগ্য থাকবেন[৫৩] এক আলোচনায় লর্ড মাউন্টব্যাটেন প্যাটেল এবং মেননের বিবৃতিকে সমর্থন করে বলেন এর মাধ্যমে দেশীয় রাজ্যসমূহ প্রয়োজনীয় "সত্যিকার স্বাধীনতা" পাচ্ছে।[৫৪] মাউন্টব্যাটেন, প্যাটেল ও মেনন এমন এক ধারণা তৈরি করে যার ফলে মনে হয় দেশীয় রাজ্যসমূহ যদি এখনই একত্রিত না-ও হয়, তাহলেও পরবর্তীকালে আরও কম সুযোগ-সুবিধা মেনে নিয়ে তাদের সেটা করতেই হবে।[৫৫] স্ট্যান্ডস্টিল এগ্রিমেন্টও এ ক্ষেত্রে অবদান রাখে, কারণ যে সকল দেশীয় রাজ্য ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেসন স্বাক্ষর করবে না তাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্ট্যান্ডস্টিল এগ্রিমেন্টকে বিবেচনা করবে না।[৫৬]

দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতভুক্তির প্রক্রিয়া

সম্পাদনা

বহদূরবিস্তৃত স্বায়ত্তশাসন, দেশীয় রাজ্যসমূহের উপর নিয়ন্ত্রিত কর্তৃত্ব এবং অন্যান্য শর্ত দেশীয় রাজ্যের অধিপতিদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। ব্রিটিশদের কাছ থেকে সমর্থনের অভাববোধ অনুভব করা এই অধিপতিরা এইসকল কারণে ও অভ্যন্তরীণ চাপে একীভূত হওয়ার প্রতি এগিয়ে আসেন।[৫৭] মে, ১৯৪৭ থেকে ১৫ই আগস্ট, ১৯৪৭ সালের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক রাজ্য একীভূতকরণের চুক্তিতে (Instruments of Accession) স্বাক্ষর করেন। কিছু রাজ্য তখনও স্বাক্ষর করেনি। কিছু রাজ্য এমনিতেই স্বাক্ষরে দেরি করে। পিপলোদা, কেন্দ্রীয় ভারতের একটি ক্ষুদ্র রাজ্য ১৯৪৮ সালের মার্চ পর্যন্ত একীভূত হয়নি।[৫৮] সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল যোধপুর, জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর। যোধপুর পাকিস্তানের সাথে একীভূত হতেই আগ্রহী ছিল; জুনাগড় বস্তুত পাকিস্তানের সাথে একীভূত হতে সম্মত হয়নি। এছাড়া হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর স্বাধীন থাকতেই চেয়েছিল।

সীমান্তবর্তী রাজ্যসমূহ

সম্পাদনা

যোধপুরের শাসক হানওয়াত সিংহ কংগ্রেসের প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ ছিলেন। তিনি ভারতে তার নিজের জন্য তেমন ভাল কোন ভবিষ্যৎ দেখতে পাননি, এবং যেরকম জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন তার প্রতিফলনও দেখতে পারেননি। ফলে জয়সলমীরের রাজার সাথে মিলে তিনি মুহম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে সন্ধি করেন। তখন জিন্নাহ ছিলেন পাকিস্তান রাষ্ট্রের মনোনিত প্রধান। জিন্নাহ কতিপয় বড় বড় সীমান্তবর্তী রাজ্যসমূহকে আকৃষ্ট করতে আগ্রহী ছিলেন। তার আশা ছিল তাহলে হয়ত অন্যান্য রাজপুর রাজ্যদেরকেও নিজেদের ভেতর নিয়ে তিনি অর্ধেক বঙ্গ এবং পাঞ্জাবকে হারানোর ক্ষতিপূরণ করতে সমর্থ হবেন। তিনি যোধপুর এবং জয়সলমীরকে পাকিস্তানে আনার জন্য তাদের দেয়া যেকোন শর্ত মানতে রাজি ছিলেন; তাদেরকে সাদা পাতায় তাদের শর্তসমূহ লেখার প্রস্তাব করেন তিনি, যা তিনি স্বাক্ষর করবেন।[৫৯] জয়সলমীর এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় কারণ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সমস্যাকালীন সময়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিমদের পক্ষে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়বে। হানওয়াত সিংহ স্বাক্ষর করার দ্বারপ্রান্তে চলে যান। কিন্তু যোধপুরের অবস্থা মোটেও পাকিস্তানের সাথে একীভূত হবার পক্ষে ছিল না। মাউন্টব্যাটেনও নির্দিষ্ট করে বলেন যে একটি হিন্দু রাষ্ট্রের পাকিস্তানে একীভূত হওয়াটা দ্বিজাতিতত্ত্বের বিপরীতে চলে যায়, যে তত্ত্বের উপরেই মূলত দেশবিভাগ এবং ফলশ্রুতিতে সাম্প্রদায়িক হানাহানি হয়। হানওয়াত সিংহ এইসকল তর্ক-বিতর্ক দ্বারা প্রভাবিত হন এবং অনেকটা নিমরাজি হয়েই ভারতের দিকে চলে যান।[৬০]

জুনাগড়

সম্পাদনা

যদিও রাজ্যসমূহ ভারতে না পাকিস্তানে যাবে সে বিষয়ে নিজেদের মত করে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়া হয়, তবুও মাউন্টব্যাটেন বলেন যে "ভৌগোলিক বাধ্যবাধকতা"র কারণে কিছু রাজ্যসমূহর উচিত ভারতকে বেছে নেয়া। তার মতে শুধুমাত্র ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী দেশীয় রাজ্যসমূহই বেছে নেবে যে তারা ভারতে যাবে না পাকিস্থানে।[৫৮]

জুনাগড় রাজ্যটি বর্তমান গুজরাতের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত ছিল। পাকিস্তানের খুব কাছে অবস্থিত হলেও পাকিস্তানের সাথে এর কোন যৌথ সীমারেখা ছিল না। জুনাগড়ের নবাব তৃতীয় মহম্মদ মহবত খানজী মাউন্টব্যাটেনের মতামত উপেক্ষা করে পাকিস্তানে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। তার যুক্তি ছিল সমুদ্রপথে পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব। তার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জুনাগড়ের দুই সামন্ত রাজ্য মাংরোলবাবারিয়াওয়াড় স্বাধীনতা ঘোষণা করে। জুনাগড়ের নবাব তখন সেনাবাহিনী পাঠিয়ে উক্ত দুই সামন্ত রাজ্যকে দখল করেন। এতে পার্শ্ববর্তী দেশীয় রাজ্যগুলোর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের নিজ নিজ সেনাবাহিনী জুনাগড় সীমান্তে প্রেরণ করেন এবং ভারত সরকারের নিকট সাহায্যের আবেদন করেন। মোহনদাস গান্ধীর ভ্রাতুষ্পুত্র সামলদাস গান্ধীর নেতৃত্বে জুনাগড়ের প্রজারা আর্জী হুকুমত নামে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করেন।[৬১]

ভারত সরকার মনে করে যদি জুনাগড়ের পাকিস্তানভুক্তি মেনে নেওয়া হয় তাহলে গুজরাত অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে। জুনাগড়ের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিন্দু হওয়ায় ভারত সরকার জুনাগড়ের পাকিস্তানভুক্তি অস্বীকার করে। ভারতের পক্ষ থেকে জুনাগড়ের ভারত বা পাকিস্তানে যোগদানের প্রশ্ন একটি গণভোটের মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি তারা জুনাগড়ে তেলকয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং আকাশপথে যোগাযোগ ও ডাক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ভারত তার সেনাবাহিনীকে জুনাগড়ের সীমান্তে প্রেরণ করে এবং জুনাগড়ের দুই সামন্ত রাজ্য মাংরোলবাবারিয়াওয়াড়কে জুনাগড়ের দখলমুক্ত করে।[৬২] জুনাগড় সীমান্ত থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের শর্তে পাকিস্তান গণভোটে সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের দাবী প্রত্যাখ্যান করে ভারত। ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষের পরে জুনাগড়ের নবাব তার পরিবারকে নিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান। ৭ নভেম্বর জুনাগড় রাজ্য পরিষদ ভারত সরকারকে জুনাগড়ের শাসনভার গ্রহণ করার আবেদন জানায়। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত গণভোটে জুনাগড়বাসীরা বিপুল ভোটে ভারতভুক্তির পক্ষে মত দেন।[৬৩]

কাশ্মীর

সম্পাদনা
 
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে সবুজ রঙে দেখানো হয়েছে। গাঢ়-বাদামি রঙে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর দেখানো হয়েছে। পক্ষান্তরে আকসাই চিন চীনা প্রশাসনভুক্ত।

ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে কাশ্মীরের শাসক ছিলেন মহারাজা হরি সিংহ, যিনি হিন্দু ছিলেন। কাশ্মীর প্রধানত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ছিল। ভারত বা পাকিস্থানে যোগ দেয়ার ব্যাপারে হরি সিংহ দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, কারণ তার ধারণা ছিল তার গৃহীত সিদ্ধান্তের ফলে তার রাজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।[৬৪] তিনি পাকিস্তানের সাথে একটি স্থির চুক্তি করেন, এবং তার পাশাপাশি ভারতের সাথেও একটি চুক্তি করার প্রস্তাব রাখেন।[৬৫] কিন্তু তারপরেও তিনি ঘোষণা করেন, কাশ্মীর স্বাধীন থাকতে চায়।[৫৮] কিন্তু কাশ্মীরের বৃহৎ রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের জনপ্রিয় নেতা শেখ আবদুল্লাহ হরি সিংহের শাসনের বিরোধিতা শুরু করেন। আবদুল্লাহ তার পদত্যাগ কামনা করেন।[৬৫]

কাশ্মীরকে বলপূর্বক একীভূত করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান যোগাযোগ এবং সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়। বিভাগের ফলে পাঞ্জাবে সৃষ্ট ঝামেলার ফলেও ভারতের সাথে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। তখন কাশ্মীরের সাথে এই দুই রাজত্বের মধ্যকার সম্পর্ক শুধুমাত্র আকাশপথেই বর্তমান ছিল। মহারাজার লোকদের মাধ্যমে ছড়ানো পুঞ্চে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপরে নৃশংসতার গুজব নাগরিকদের মধ্যে তীব্র অস্থিরতা ডেকে আনে। এর অল্পকিছুকাল পরেই পাঠান জনগোষ্ঠী পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে কাশ্মীরে প্রবেশ করে।[৬৬] আক্রমণকারীরা শ্রীনগরের দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হতে থাকে। কাশ্মীরের মহারাজা সামরিক সহায়তা চেয়ে ভারতকে চিঠি দেয়। ভারত তখন একীভূতকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করার এবং সেইসাথে শেখ আবদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করার দাবি করে।[৬৭] মহারাজা মেনে নেন, কিন্তু নেহেরু ঘোষণা করেন যে একটি গণভোটের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু এমন নিশ্চিতকরণের জন্য কোনপ্রকার আইনি প্রয়োজনীয়তা ছিল না।[৬৮]

ভারতীয় সৈন্যরা জম্মু, শ্রীনগর এবং প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধকালীন উপত্যকা রক্ষা করে। কিন্তু শীতকাল শুরুর সাথে সাথে শুরু হওয়া এই প্রচণ্ড যুদ্ধের ফলে রাজ্যটির অধিকাংশ স্থান দুর্গম হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী নেহেরু এই বিবাদের উপর আন্তর্জাতিক দৃষ্টি স্মরণে রেখে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন এবং জাতিসংঘের সালিশি কামনা করেন। তিনি বলেন, অন্যথায় উপজাতীয় আক্রমণ থামাতে ভারতকে বাধ্য হয়েই পাকিস্তান আক্রমণ করতে হবে।[৬৯] গণভোট কখনই অনুষ্ঠিত হয়না এবং ২৬শে জানুয়ারি, ১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান কাশ্মীরকে অধিভুক্ত করে, কিন্তু উক্ত রাজ্যের জন্য বিশেষ প্রদেশসমূহ তৈরি করে।[৭০] ভারত কাশ্মীরের সর্বত্র ক্ষমতা বিস্তৃত করেনা। ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরের উত্তর এবং পশ্চিম অংশদ্বয়ের উপর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং উক্ত স্থানকে বর্তমানে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর বলা হয়। ১৯৬২ সালে সিনো-ভারতীয় যুদ্ধে, চীন লাদাখের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল আকসাই চিনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং তা চীনের নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনেই চলছে।

হায়দ্রাবাদ

সম্পাদনা
 
হায়দ্রাবাদের মেজর জেনারেল সৈয়দ আহমেদ এল এদ্রুস (ডান দিকে) ভারতের জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর (বাঁ দিকে) কাছে আত্মসমর্পণ করছেন, সেকেন্দ্রাবাদ

হায়দ্রাবাদ রাজ্য বর্তমান তেলেঙ্গানা, কর্ণাটকমহারাষ্ট্রের কিয়দংশ নিয়ে গঠিত ছিল। রজ্যের ক্ষেত্রফল ছিল ২১২,০০০ বর্গ কিলোমিটার ও জনসংখ্যা ১.৭ কোটি যার ৮৭ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী। হায়দ্রাবাদের শাসক ছিলেন নিজাম ওসমান আলি খান এবং রাজ্যের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হত মুসলিম অভিজাতদের দ্বারা।[৭১] রাজ্যের মুসলিম অভিজাত ও ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমীনের দাবী ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মত হায়দ্রাবাদও একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। এই মর্মে নিজাম ১৯৪৭ সালে একটি ফরমান জারি করেন যাতে বলা হয় ক্ষমতার হস্তান্তরের পর হায়দ্রাবাদ তার স্বাধীনতা পুনরায় ফিরে পাবে।[৭২] ভারত সরকার ওই ফরমানকে প্রত্যাখ্যান করে। ভারত সরকারের যুক্তি ছিল উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী রেলপথ ও সড়কপথ হায়দ্রাবাদ রাজ্যের মধ্যে দিয়ে হওয়ায় স্বাধীন সার্বভৌম হায়দ্রাবাদ ভারতের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে। অন্যদিকে রাজ্যের মানুষ, ইতিহাস এবং অবস্থান প্রশ্নাতীতভাবে রাজ্যটির ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করে এবং হায়দ্রাবাদ ও ভারতের যৌথ স্বার্থেই হায়দ্রাবাদের ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।[৭৩]

হায়দ্রাবাদের নিজাম ভারতের সাথে সীমিত চুক্তিতে রাজি ছিলেন, যা 'ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন'-এর থেকে কিছু অধিক রক্ষাকবচ দেবে, যেমন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে হায়দ্রাবাদ নিরপেক্ষ থাকতে পারবে। ভারত এই যুক্তিতে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যে হায়দ্রাবাদের সাথে এই জাতীয় চুক্তি সম্পাদিত হলে অন্যান্য দেশীয় রাজ্যগুলোও অনুরূপ চুক্তির দাবী উত্থাপন করবে। এ জন্য ভারত ও হায়দ্রাবাদের মধ্যে সাময়িকভাবে স্থিতাবস্থা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে বারংবার স্থিতাবস্থা চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। অপর দিকে হায়দ্রাবাদ ভারতের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের অভিযোগ আনে।

১৯৪৬ সালে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয় যা তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ নামে খ্যাত। যদিও বিদ্রোহটি ছিল অসাম্প্রদায়িক কিন্তু কৃষকগণ ছিল অধিকাংশই হিন্দু এবং শাসক শ্রেণী মূলত মুসলিম। জনৈক কাশিম রিজভি বিদ্রোহের হাত থেকে মুসলিম অভিজাতদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমীনের সংসৃষ্ট রাজাকার নামে এক সৈন্যবাহিনী গঠন করেন। কিন্তু অচিরেই রাজাকার বাহিনী তেলেঙ্গানার গ্রামে গ্রামে গ্রামবাসীদের ভয় দেখাতে থাকে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সংসৃষ্ট হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস হায়দ্রাবাদের ভারতভূক্তির জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করে। কমিউনিস্ট দলগুলো প্রথম দিকে কংগ্রেসের পক্ষে থাকলেও হায়দ্রাবাদের ভারতভূক্তির প্রশ্নে কংগ্রেসের বিরোধিতা করে এবং আক্রমণ পর্যন্ত করতে থাকে। এমত অবস্থায় মাউন্টব্যাটেন মধ্যস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অপর দিকে নিজাম বহিঃআক্রমণের আশঙ্কা করে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিরক্ষা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের দ্বারস্থ হয়। বল্লভভাই পটেল দাবী করেন এই পরিস্থিতিতে হায়দ্রাবাদকে স্বাধীনভাবে চলতে দিলে ভারত সরকারের মুখ পুড়বে এবং হিন্দু ও মুসলিম প্রজা কেউই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে না। এই ঘটনাকে ভারতের বুকে জ্বলন্ত আলসারের সঙ্গে তুলনা করেছেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।

১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮-এ, জিন্নাহর মৃত্যুর দুইদিনের মাথায় ভারত সরকার হায়দ্রাবাদে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রেরণ করে যা অপারেশন পোলো নামে পরিচিত।[৭৪][৭৫] ভারত সরকারের যুক্তি ছিল হায়দ্রাবাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা দক্ষিণ ভারতে শান্তি বিঘ্নিত করছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হায়দ্রাবাদের সেনাবাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর থেকে ১৩-১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সামান্য প্রতিরোধের পর আত্মসমর্পণ করে। ২৩ সেপ্টেম্বর নিজাম রেডিওতে সমর্পণের ঘোষণা করেন। ভারতভুক্তির পর হায়দ্রাবাদকে ভারতের অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং নিজাম ওসমান আলি খান রাজ্যের প্রধান হন, ঠিক যেমনটা অন্য রাজ্যের প্রধানদের (প্রিন্স) সাথে করা হয় যারা ভারতের অভ্যন্তরে যোগদান করেছিলেন।[৭৬] তিনি তখন জাতিসংঘে করা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের তীব্র প্রতিবাদ এবং অন্যান্য দেশের জোরালো সমালোচনার পরেও, নিরাপত্তা পরিষদ এই বিষয়টি নিয়ে আর আলোচনা করেনা। হায়দ্রাবাদ ভারতের মধ্যে একীভূত হয়ে যায়।[৭৭] হায়দ্রাবাদের আত্মসমর্পণের পর রাজ্যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূচনা হয় যাতে প্রায় সরকারি হিসাবে ২৭,০০০ থেকে ৪০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়, যা কিছু বিশেষজ্ঞের মতে ২ লক্ষেরও বেশি।[৭৮][৭৯]

একত্রীকরণ

সম্পাদনা
 
কেন্দ্রীয় প্রদেশসমূহ ও বেরার, যা থেকে পরবর্তীতে ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র গঠিত হয়।

অধিগ্রহণের দলিল অনুযায়ী কেবলমাত্র তিনটি বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ ভারত সরকারের হাতে সমর্পণের মাধ্যমেই তারা ভিন্ন ধরনের প্রশাসন ও শাসনাধীন একটি অপেক্ষাকৃত দূর্বল রাজ্যে, তথা একত্রীত ভারতের অংশে পরিণত হয়। রাজনৈতিক একত্রীকরণের জন্য বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক নেতাদেরকে, ভারতের প্রতি তাদের আনুগত্য, প্রত্যাশা, এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাধ্য করবার প্রয়োজন ছিল।[৮০] এই কাজটি খুব একটা সহজ ছিল না। যেমন মাইশোরের বিধানিক শাসন ব্যবস্থা একটি বিস্তৃত ভোটাধিকারের ভিত্তিশীল ছিল, যা ব্রিটিশ ভারতের ব্যবস্থার চেয়ে খুব একটা ভিন্ন ছিল না।[৮১] অন্যান্য স্থানে, রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণের ঘটনাগুলো ক্ষুদ্র ও অভিজাত চক্রের মধ্যেই সীমিত ছিল। সেইসাথে এর শাসন ব্যবস্থাও ক্ষণজীবী ও তোষামুদি ঘরানার ছিল।[৮২] দেশীয় রাজ্যের একত্রীকরণের এইসব নানাবিধ ঝামেলা এড়ানোর জন্য ভারত সরকার ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে দেশীয় রাজ্য ও ব্রিটিশ কলোনীভুক্ত প্রদেশগুলোতে একটিমাত্র প্রজাতন্ত্রী সংবিধান প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।[৮৩]

একত্রীকরণের প্রথম ধাপ

সম্পাদনা

১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যে একত্রীকরণের প্রথম ধাপ সংগঠিত হয়। এর মাধ্যমে ভারত সরকার যে সকল ছোট রাজ্যকে সঠিকভাবে নিজেরাই পরিচালিত হতে পারবে না বলে মনে করে, তাদেরকে প্রতিবেশী প্রদেশে সংযুক্ত করার জন্য অথবা অন্য দেশীয় রাজ্যের মাধ্যমে “দেশীয় ইউনিয়ন” তৈরির জন্য বলা হয়।[৮৪] এই নীতি বিতর্ক সৃষ্টি করে, কারণ এর মাধ্যমে ভারত একত্রীকরণের সরঞ্জামে যাদের অস্তিত্ব ভারত স্বীকার করে নিয়েছে, তাদেরকে বিলোপ করার কথাই পরোক্ষভাবে হলেও নিহিত ছিল। প্যাটেল এবং মেনন জোর দিয়ে বলেন যে একত্রীকরণ ছাড়া এই সকল রাজ্যের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে, সঠিক গণতন্ত্র ও পরিচালনার অভাবে গণ্ডগোল শুরু হবে। তারা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে অনেক ছোট রাজ্য অতিরিক্ত ছোট এবং তারা নিজেদের সম্পদ দিয়ে বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার জন্য অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সাহায্য চালাতে পারবে না। অনেক রাজ্য কর ও অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করে, যা কিনা মুক্ত বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করে। ঐক্যবদ্ধ ভারত তৈরির জন্য এগুলো সরানো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।[৮৫]

এই সংযুক্তি স্বয়ং মাউন্টব্যাটেন প্রদত্ত নিশ্চয়তার পরিষ্কার লঙ্ঘন। এজন্য প্যাটেল ও নেহেরু চাইছিলেন গভর্নর-জেনারেল পদের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের শেষদিকে উড়িষ্যাতে আদিবাসী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা দ্রুত এ ব্যাপারে তৎপর হয়ে ওঠেন।[৮৪] ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া এজেন্সি ও ছত্তিশগড় এজেন্সির রাজারা মেননের সাথে রাতভর বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে তাদেরকে কেন্দ্রীয় প্রদেশ হিসেবে উড়িষ্যার ও বিহারের সাথে একত্রীকরণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য বলা হয়, যা ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।[৮৬] পরবর্তীতে ঐ বছর গুজরাতের ৬৬টি প্রদেশ, দাক্ষিণাত্য মালভূমি এবং কোহলপুরবারোদার বৃহৎ রাজ্য মিলে বোম্বেতে সংযুক্ত হয়। অন্যান্য ছোট রাজ্যসমূহ মাদ্রাজ, পূর্ব পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, দ্য ঐক্যবদ্ধ প্রদেশআসাম গড়ে তোলে।[৮৭] একত্রীকরণের চুক্তিতে স্বাক্ষরিতে সকল রাজ্যই প্রদেশে যুক্ত হয়নি। আন্তর্জাতিক সীমানার কাছে অবস্থিত পূর্বের পাঞ্জাব হিল স্টেটস এজেন্সি সংযুক্ত হয় হিমাচল প্রদেশে। এই প্রদেশ প্রধান কমিশনারের প্রদেশ হিসেবে কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত হত, নিরাপত্তাজনিত কারণে।[৮৮]

সংযুক্তির চুক্তি অনুযায়ী শাসকদের ভারত অধিরাজ্যকে তাদের রাজ্যের "সরকারবিষয়ক সম্পূর্ণ এবং একচেটিয়া ক্ষমতা" সমর্পণ করতে হবে। তাদের রাজ্যকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করার পরিবর্তে এর মাধ্যমে রাজারা বেশকিছু সুবিধা পায়। রাজারা তাদের ক্ষমতা সমর্পণ এবং স্বতন্ত্র রাজ্যের অবলুপ্তির বিনিময়ে ভারত সরকার থেকে বার্ষিক রাজভাতা লাভ করবেন। রাজ্যের সম্পত্তি নিয়ে নেওয়া হলেও ব্যক্তিগত সম্পত্তি সকল প্রকার ব্যক্তিগত সুবিধা, সম্মান এবং মর্যাদাসহ সংরক্ষণ করা হবে। রীতি অনুযায়ীই উত্তরাধিকার নির্বাচিত হবে। উপরন্তু, প্রাদেশিক প্রশাসন দেশীয় রাজ্যের কর্মকর্তাদের সমান বেতন এবং সুবিধাসহ চাকুরিতে গ্রহণ করবে।[৮৯]

যদিও সংযুক্তির চুক্তি ছোট, টেকসই নয় এমন রাজ্যের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কিছুক্ষেত্রে এই চুক্তি বড় রাজ্যেও প্রযোজ্য হয়। আন্তর্জাতিক সীমানাসংশ্লিষ্ট পশ্চিম ভারতের কুচ এবং উত্তরপূর্ব ভারতের ত্রিপুরা এবং মণিপুর এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর মাধ্যমে এরা মুখ্য কমিশনারের প্রদেশ হিসেবে যুক্ত হয়। ভোপালের রাজা তার প্রশাসনের দক্ষতা নিয়ে গর্বিত ছিলেন এবং তার ভয় ছিল যে মারাঠার সাথে সংযুক্ত হলে তাদের নিজস্ব পরিচয়ের বিলুপ্তি ঘটবে। এই রাজ্যও বিলাসপুরের মত সরাসরিভাবে মুখ্য কমিশনারের প্রদেশ হিসেবে যুক্ত হয়। বিলাসপুরের একটা বড় অংশ ভক্র ড্যাম নির্মাণের ফলে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে।[৮৮]

চার ধাপের একত্রীকরণ

সম্পাদনা

সংযুক্তি

সম্পাদনা

বৃহৎ রাজ্যসমূহ এবং ছোট রাজ্যসমূহ ভিন্ন ধরনের এক চার ধাপের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একত্রীত হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ ছিল নিকটবর্তী বৃহৎ ও অধিক সংখ্যক ছোট রাজ্য মিলে "দেশীয় ইউনিয়ন" তৈরি, যেখানে সেখানকার শাসকগণই সংযুক্তির অঙ্গীকার করবেন। সংযুক্তির অঙ্গীকারণামার মাধ্যমে সকল শাসক তাদের শাসনক্ষমতা হারাবেন, কেবলমাত্র একজন নব্যগঠিত ইউনিয়নের রাজপ্রমুখ হবেন। অন্যান্য শাসকগণ দুটি পরিষদের সাথে যুক্ত হন — দ্য কাউন্সিল অব রুলার্স, যার সদস্যগণ হবেন স্যালুট রাজ্যের শাসকগণ, এবং একটি প্রেসিডিয়াম, যার সদস্যগণ হবেন নন-স্যালুট রাজ্যের শাসক দ্বারা নির্বাচিত। বাকিরা কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। রাজপ্রমুখ এবং তার সহকারী উপরাজপ্রমুখ প্রেসিডিয়ামের সদস্যগণের থেকে কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। অঙ্গীকারণামার মাধ্যমে নতুন ইউনিয়নের জন্য আইন পরিষদ তৈরির বিধান নির্মিত হয়, যা সংবিধান লঙ্ঘনের দিক দেখবে। নিজ রাজ্য এবং স্বতন্ত্র অবস্থান বিলুপ্তির বিনিময়ে শাসকগণ রাজভাতা এবং সংযুক্তির চুক্তির ন্যায় সুবিধা লাভ করবেন।[৯০]

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্যাটেল ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে তার নিজভূমি গুজরাতের কাঠিয়াওয়াড় উপদ্বীপের প্রায় ২২২টি রাজ্যকে সৌরাষ্ট্র নামক দেশীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করেন। পরের বছর আরও ছয়টি রাজ্য এই ইউনিয়নে যুক্ত হয়।[৯১] গোয়ালিয়র, ইন্দোর এবং আঠারোটি ছোট রাজ্য মিলে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মে মধ্য ভারত গঠিত হয়।[৯২] পাঞ্জাবে পাটিয়ালা, কাপুরথালা, জিন্দ, নব, ফরিদকোট, মালেরকোতলা, নলারগড় এবং কালসিয়া মিলে পাটিয়ালা এবং পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন গঠন করে।[৯৩] ধারাবাহিক সংযুক্তির মাধ্যমে ইউনাইটেড স্টেট অব রাজস্থান গঠিত হয়, যার সর্বশেষ সংযুক্তি ঘটে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মে।[৯৪] ট্রাভাঙ্কোর এবং কোচিন ১৯৪৯ সালের মাঝামাঝি ট্রাভাঙ্কোর-কোচিন দেশীয় ইউনিয়নে যুক্ত হয়।[৯৫] কাশ্মীর, মাইসোর এবং হায়দ্রাবাদ সংযুক্তির অঙ্গীকারণামা কিংবা সংযুক্তির চুক্তি — কোনোটাতেই স্বাক্ষর করেনা।

গণতন্ত্রায়ন

সম্পাদনা

বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের প্রশাসনিক বিভাগ সংযুক্তি এবং একত্রীত করে একটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সত্ত্বা তৈরির কাজ সহজ ছিল না। এর কারণ ছিল ঐ রাজ্যসমূহের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ভারত এজেন্সির (যার দেশীয় রাজ্যসমূহ বিন্ধ্য প্রদেশ নামক দেশীয় ইউনিয়নে সংযুক্ত হয়) দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এত বেশি ছিল যে ভারত সরকার রাজ্যের শাসকদের মধ্যে পুরানো সংযুক্তির চুক্তি বাতিল করে নতুন সংযুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করাতে বাধ্য হন এবং প্রধান কমিশনারের রাজ্য হিসেবে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নেয়।[৯৬] ফলাফলে ভারত সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংযুক্তি থেকে সন্তুষ্ট হতে পারেনা। ডিসেম্বরের ১৯৪৭ সালে মেনন পরামর্শ দেন যেন রাজ্যের শাসকবর্গ "জনপ্রিয় সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে কার্যকরী পদক্ষেপ" গ্রহণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরামর্শ গ্রহণ করে। সংযুক্ত দেশীয় ইউনিয়নের রাজপ্রমুখগণ বিশেষ এক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেন একত্রে তারা সাংবিধানিক মোনার্ক হিসেবে কাজ করেন।[৯৭] এর অর্থ হল তাদের ক্ষমতা থাকছে দ্য ফ্যাক্টো হিসেবে, প্রায় প্রাক্তন ব্রিটিশ শাসনাধীন প্রদেশের গভর্নর হিসেবে।[৯৮] এভাবে ঐ সকল অঞ্চলের জনগণ ভারতের বাকি জনগণের মতই দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের অধীনে ছিল।[৯৭]

এই প্রক্রিয়ার ফলাফলকে ব্যাখ্যা করা হয় ভারত সরকারের সর্বপ্রধানত্ব ঘোষণার আরও বৃহত্তর রূপ হিসেবে।[৯৯] যদিও ব্রিটিশ বিবৃতি অনুযায়ী সর্বপ্রধানত্ব ক্ষমতার স্থানান্তরের মাধ্যমে অবসান হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কংগ্রেসের পদক্ষেপ সর্বদাই এমন ছিল যে স্বাধীন ভারত সর্বময় ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্থানে থাকবে।[৪৭]

 
১৯৫১ সালে ভারতের রাজ্যসমূহ

কেন্দ্রীয়করণ এবং সাংবিধানিকরণ

সম্পাদনা

গণতন্ত্রায়নও প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রদেশ আর প্রাক্তন দেশীয় রাজ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্থক্য ধরে রাখে। যেহেতু দেশীয় রাজ্য কেবলমাত্র তিনটি বিষয় নিয়ে গড়া অধিগ্রহণের সরঞ্জাম স্বাক্ষর করে, তাই তাদেরকে কিছু সরকারি নীতি থেকে পৃথক রাখা হয়। এই ঘটনাকে সামাজিক সুবিচার এবং জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে একটি বাধা হিসেবে দেখে কংগ্রেস।[৯৭] পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ব্রিটিশ প্রদেশসমূহের উপর যেমন কর্তৃত্ব ছিল, অনুরূপ কর্তৃত্ব যেন দেশীয় রাজ্যের উপর থাকে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। ১৯৪৮-এর মে মাসে ভি. পি. মেননের আগ্রহে দিল্লিতে দেশীয় ইউনিয়নের রাজপ্রমুখ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শেষে রাজপ্রমুখগণ নতুন অধিগ্রহণের সরঞ্জামে স্বাক্ষর করেন, যার মাধ্যমে ভারত সরকার ভারত সরকার আইন ১৯৩৫ এর অধীনে সাতটি বিষয়ে সকল প্রকার ক্ষমতা লাভ করে।[৯৭] ধীরে ধীরে মাইসোর, হায়দ্রাবাদসহ সকল দেশীয় ইউনিয়ন ভারতের সংবিধান মেনে নিতে শুরু করে। এভাবে তারা প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রদেশসমূহের মত কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিতে একই আইনগত অবস্থান লাভ করে।[১০০] একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল কাশ্মীর, যাদের সাথে ভারতের সম্পর্ক মূল অধিগ্রহণের সরঞ্জামের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল। তাদের সংবিধানও ছিল রাজ্যের সাংবিধানিক অ্যাসেম্বলি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত।

১৯৫০ থেকে কার্যকর ভারতের সংবিধান ভারতের সাংবিধানিক একককে তিনটি অংশে ভাগ করে — পার্ট এ, বি এবং সি রাজ্যসমূহ। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রদেশ এবং দেশীয় রাজ্য মিলে পার্ট এ রাজ্য গঠন করে। দেশীয় ইউনিয়ন, মাইসোর এবং হায়দ্রাবাদ পার্ট বি রাজ্যের ভাগের পড়ে। আর প্রাক্তন প্রধান কমিশনারের প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ ব্যতীত অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ পার্ট সি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।[১০১] পার্ট এ এবং পার্ট বি রাজ্যসমূহের মধ্যে মূল পার্থক্য ছিল এই যে পার্ট বি রাজ্যের রাজপ্রমুখগণ সংযুক্তির চুক্তি দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত, কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নর নন। এর পাশাপাশি সংবিধান কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তুলে দেয় প্রাক্তন দেশীয় রাজ্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণ ক্ষমতা, যার মাধ্যমে "তাদের পরিচালনা ব্যবস্থা প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণাধীন এবং রাষ্ট্রপতির নির্দেশের অনুসারী।" এছাড়া উভয়ক্ষেত্রে সরকারের কাঠামো একইরকম ছিল।[৯৯]

পুনর্বণ্টন

সম্পাদনা

পার্ট এ এবং পার্ট বি রাজ্যসমূহের মধ্যকার পার্থক্য স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যমান ছিল। ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্বণ্টন আইন (স্টেটস রিঅর্গানাইজেশন অ্যাক্ট) প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রদেশ এবং দেশীয় রাজ্যসমূহকে ভাষার ভিত্তিতে পুনরায় বণ্টন করে। একইসাথে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী পার্ট এ এবং পার্ট বি রাজ্যসমূহের মধ্যকার পার্থক্য বিলোপ করে। উভয়ই কেবলমাত্র "রাজ্য" হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পার্ট সি রাজ্যসমূহ লাভ করে "কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল" নাম। রাজপ্রমুখগণ তাদের কর্তৃত্ব হারায় এবং গভর্নর দ্বারা রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান স্থানটি প্রতিস্থাপিত হয়। গভর্নরগণ কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। এইসকল পরিবর্তন আইনগত এবং কার্যকরভাবে দেশীয় শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটায়।[১০২] যে সকল অঞ্চল দেশীয় রাজ্যের অংশ ছিল, তা সম্পূর্ণভাবে ভারতের সাথে একত্রীত হয়ে যায় এবং ব্রিটিশ ভারতের অংশের সাথে তাদের আর কোনো প্রকার পার্থক্য ছিল না।[১০৩] শাসকবর্গের ব্যক্তিগত সুবিধা তথা প্রিভি পার্স, কাস্টমস শুল্ক থেকে অব্যাহতি এবং বিশেষ সম্মান টিকে ছিল, তবে ১৯৭১ সালে এসবেরও বিলোপ ঘটে।[১০৪]

উপনিবেশসমূহের ভারতভুক্তির প্রক্রিয়া

সম্পাদনা

দেশীয় রাজ্য

সম্পাদনা

ভারতের সাথে দেশীয় রাজ্যসমূহের একত্রীকরণ প্রক্রিয়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়, যদিও অনেক রাজ্যের রাজারাই এই ফল নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। অনেকেই নিয়ন্ত্রণের চুক্তিসমূহকে স্থায়ীভাবে কামনা করেছিলেন। সেইসাথে তারা নিজেদের রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন হারাবার পাশাপাশি এর অস্তিত্বের ব্যাপারেও সন্দিহান হয়ে পড়েন। উত্তরাধিকারসূত্রে শাসনকৃত রাজ্যসমূহের বিলোপ তথা ভারতের সাথে একত্রীভবন এবং সুদীর্ঘ সময় ধরে গড়ে তোলা প্রশাসনিক কাঠামোর বিলোপ বিষয়ক নানা ব্যাপারে তারা অস্বস্তিতে পড়েন।[১০২] একজন "সাধারণ নাগরিক" হিসেবে জীবন অতিবাহিত করার সমস্যা[১০২] সত্ত্বেও তারা প্রিভি পার্সের দেয়া 'উদার পেনশন' নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন।[১০৫] অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে সরকারি অফিসে বড় বড় পদে নিযুক্ত হন। উদাহরণস্বরূপ, ভবনগরের মহারাজ, কর্নেল কৃষ্ণ কুমারসিংহ ভবসিংহ গোহিল মাদ্রাজের গভর্নর হন,[১০৬] এবং অন্যান্য অনেকেই কূটনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করে বিদেশে যান।[১০২]

ফ্রান্সের উপনিবেশসমূহ

সম্পাদনা
 
১৯৪৭ সালে ফরাসি উপনিবেশ।

দেশীয় রাজ্যসমূহের ভারতভুক্তির ফলে ভারতের বাকি ঔপনিবেশিক অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। স্বাধীনতার সময় পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে, কারাইকাল ও চন্দননগর ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। দমন ও দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং গোয়া পর্তুগালের উপনিবেশ ছিল।[১০৭] ১৯৪৮ সালে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি চুক্তি অনুসারে ঠিক হয় যে ভারতের ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসী উপনিবেশগুলো গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারবে। ১৯ জুন ১৯৪৯ চন্দননগরে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত গণভোটে চন্দননগরবাসী ৭,৪৬৩ - ১১৪ ভোটে ভারতে যোগদানের পক্ষে মত দেন। ১৪ আগস্ট ১৯৪৯ চন্দননগর কার্যত ভারতভুক্ত হয় এবং ২ মে ১৯৫০ চন্দননগরের ভারতভুক্তি আইনি স্বীকৃতি লাভ করে।[১০৮] এর ফলে ১৪ আগস্ট ১৯৪৯ সালে দে ফ্যাক্টো এবং ২ মে ১৯৫৯ সালে দে জ্যুরে হিসেবে ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়।[১০৮]

ফ্রান্সের অন্যান্য উপনিবেশগুলি যথা পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে ও কারাইকালে পন্ডিচেরীর প্রাক্তন মেয়র এডওয়ার্ড গুবার্ট প্রশাসনিক যন্ত্রের সাহায্যে ভারতভুক্তির পক্ষাবলম্বী আন্দোলনকারীদের দমন করেন। ১৯৫৪ সালে একটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভারতভুক্তির পক্ষের আন্দোলনকারীরা ইয়ানাম ও মাহেতে ক্ষমতা দখল করে। ১৯৫৪ সালের অক্টোবরে পন্ডিচেরী ও কারাইকালে অনুষ্ঠিত গণভোটের ফল ভারতভুক্তির পক্ষে যায়। ১ নভেম্বর ১৯৫৪ পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে ও কারাইকালের শাসনভার কার্যত ভারতের উপর ন্যস্ত হয়। ১৯৫৬ সালে ফ্রান্স ও ভারতের একটি চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্স উক্ত চার উপনিবেশের অধিকার ত্যাগ করে এবং ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের জাতীয় সংসদে তা আইনি স্বীকৃতি লাভ করে।[১০৯]

পর্তুগালের উপনিবেশসমূহ

সম্পাদনা
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট গোয়াকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার দাবীতে আন্দোলন

১৯৫১ সালে পর্তুগাল তার সংবিধান সংশোধন করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত তাদের উপনিবেশগুলোকে পর্তুগালের রাজ্যে পরিণত করে।[১১০] ২৪ জুলাই ১৯৫৪ 'দ্য ইউনাইটেড ফ্রন্ট অফ গোয়ান্‌স্‌' দাদরাকে নিজেদের আয়ত্তে আনে। ২ আগস্ট ১৯৫৪ আজাদ গোমন্তক দল নগর হাভেলীতে পর্তুগালের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তার দখল নেয়। পর্তুগাল সরকার দমন থেকে সৈন্য পাঠিয়ে দাদরা ও নগর হাভেলি দখল করতে চেষ্টা করলে ভারত তাতে বাধা দেয়। ১৫ আগস্ট ১৯৫৫ সালে, পাঁচ হাজার শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহী পর্তুগালের শাসনের হাত থেকে গোয়ার স্বাধীনতার দাবীতে মিছিল করে গোয়া সীমান্তে গিয়ে পৌঁছোয়। গোয়া সীমান্তে পর্তুগিজ সৈন্য বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালনা করলে সেখানে ২২ জনের মৃত্যু হয়। গোয়ায় পর্তুগিজ শাসনের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহগুলি হয়, সেগুলো পর্তুগিজ সরকার কঠোর হস্তে দমন করে ও বিদ্রোহের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে অথবা কারাবন্দী করে। এর প্রতিবাদে ভারত সরকার পানাজিতে অবস্থিত ভারতীয় বাণিজ্য দূতাবাস বন্ধ করে এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পর ভারত গোয়ার ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে ভারত পর্তুগালের সরকারের কাছে গোয়া হস্তান্তরের জন্য আবেদন করে এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও বিষয়টিকে তুলে ধরে। পর্তুগাল আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে আবেদন করলে তা ১৯৬০ সালে নাকচ হয়ে যায়। রাষ্ট্রসংঘও পর্তুগালের গোয়াকে নিজের প্রদেশ হিসেবে ঘোষণাকে অবৈধ আখ্যা দেয়। ১৯৬১ সালে ভারত সংবিধান সংশোধন করে দাদরা ও নগর হাভেলিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে। ১৯৬১ সালের ডিসেম্বরে ভারত গোয়া আক্রমণ করে। মাত্র ৩,৩০০ সৈন্য নিয়ে সামান্য প্রতিরোধের পরই গোয়ার পর্তুগিজ গভর্নর আত্মসমর্পণ করেন এবং ১৯ ডিসেম্বর ১৯৬১ সমর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

 
ভারত ও চীনের সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত পূর্বের সিকিম রাজ্য। ১৯৭৫ সালে ২২তম রাজ্য হিসেবে ভারতের সাথে একত্রীত হয়।

ভারতের সীমান্তবর্তী তিনটি রাজ্য—নেপাল, ভুটানসিকিম—১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যকার সময়ে ভারতের সাথে একত্রীত হয়নি। ব্রিটিশ এবং ভারত সরকার নেপালকে দ্য জ্যুরে স্বাধীন হিসেবে অভিহিত করে।[১০৭] ভারত সরকার ১৯৪৯ সালে ভুটানের সাথে এই বিষয়ে একটি চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ভুটান এর পররাষ্ট্রমূলক বিষয়গুলো ভারত সরকারের পরামর্শানুযায়ীই পালন করবে।[১১১]

ঐতিহাসিকভাবে সিকিম অন্যান্য দেশীয় রাজ্যেগুলোর মতই ব্রিটিশ-নির্ভর ছিল। উপনিবেশবাদের সময় একে ভারতীয় সীমানার মধ্যেই ধরা হত। স্বাধীনতার পর সিকিমের চোগিয়াল ভারতের সাথে পূর্ণ একত্রীকরণে আপত্তি জানায়। ঐ অঞ্চলের উপরে পূর্ণ কৌশলগত গুরুত্ব দিয়ে একটি স্থিতাবস্থা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়, এবং পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে সিকিমের চোগিয়াল ভারতের সাথে একটি চুক্তি করেন, যার ফলশ্রুতিতে সিকিম ভারতের অভিভাবকত্বের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবেই স্বীকৃত হয়। ভারত সিকিমের প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ এবং আইন-আদেশ নিয়ন্ত্রণ করলেও সিকিমের অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন বজায় ছিল।[১১২] ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দিকে চোগিয়াল পালডেন থন্ডুপ নামগিয়াল সংখ্যালঘু ভুটিয়া ও উচ্চশ্রেনির লেপচাদের সমর্থনে বাহ্যিক বিষয়গুলো সহ আরও কিছু বিষয়ে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সিকিম স্টেট কংগ্রেসকাজী লেন্দুপ দর্জি, যারা সিকিমের মধ্যবিত্ত নেপালিদের প্রতিনিধিত্ব করতেন, তারা এর বিরোধিতা করেন।[১১৩]

১৯৭৩ সালের এপ্রিলে একটি চোগিয়াল-বিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে, আন্দোলনকারীরা নির্বাচনের দাবি জানায়। সিকিম পুলিশ এই আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়। দর্জি ভারতকে সিকিমের আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ চায়। ভারত চোগিয়াল ও দর্জির মধ্যকার আলোচনার ব্যবস্থা করে এবং তার একত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যার ফলে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র থেকে চোগিয়াল সরে আসার ব্যাপারে বিবেচনা করে। এছাড়াও তারা নতুন জাতিগত ক্ষমতা বণ্টনের সূত্রমতে নির্বাচন করতে রাজি হয়।[১১৪] চোগিয়ালের বিরোধী দল অভাবনীয়ভাবে জয়লাভ করে এবং একটি নতুন সংবিধান গড়ে ওঠে, যাতে সিকিম গণপ্রজাতন্ত্রী ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার কথা লিপিবদ্ধ হয়।[১১৫] ১০ই এপ্রিল, ১৯৭৫ সালে সিকিমের আইনপরিষদ সিকিমকে পূর্ণরূপে ভারতের সাথে একত্রীত হবার একটি প্রস্তাব পাস করে। প্রস্তাবের পক্ষে ৯৭% ভোট লাভ করার ফলে চারদিনের ব্যবধানে ১৪ই এপ্রিল ভারত সরকার সিকিমকে ২২তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে।[১১৬]

বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উপ-জাতীয়তাবাদ

সম্পাদনা

অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যসমূহ ভারতের সাথে একত্রীত হলেও কিছু অনিষ্পন্ন সমস্যা রয়েই গেল। এরমধ্যে কাশ্মীরের সমস্যাটাই সবচেয়ে বেশি পীড়াদায়ক ছিল, যেখানে ১৯৮০-এর দশকের শেষ থেকেই সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ সংঘটিত হচ্ছিল।[১১৭]

কোনো কোনো শিক্ষাবিদ বলেন, কাশ্মীরের বিদ্রোহ ছিল ভারতে এর একত্রীকরণের প্ন্থারই একটি অংশ। কাশ্মীর, দেশীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম, তাদের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণের কোন প্রকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, তার পরিবর্তে কাশ্মীর সম্পর্কিত আইন প্রণয়নের অধিকার ভারতের সংবিধানের ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ ও জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান-এর ৫ম অনুচ্ছেদ মোতাবেক ভারতীয় সরকারকে দেয়া হয়; যা অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে অধিক কঠোর ছিল। উইডমাম বলেন, ১৯৮০ সালের দিকে কাশ্মীরের তরুণ সমাজ অনুভব করে যে ভারতীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতির ব্যাপারে একটু বেশিই হস্তক্ষেপ করছে।[১১৮] ১৯৮৭ সালের নির্বাচন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উপরে তাদের বিশ্বাসকে ভেঙে দেয় এবং তার সাথে সাথেই সহিংস আন্দোলন শুরু হয়, যা এখনও চলছে।[১১৮] একইভাবে, গাঙ্গুলি বলেন, ভারতীয় সরকার কাশ্মীরের প্রতি যে নীতিগ্রহণ করেছিল, তার ফলে ভারতের অন্যান্য অংশের সাথে তুলনা করে কাশ্মীরে কখনই আধুনিক বহু-জাতিগত গণতন্ত্রধারী পরিপূর্ণরূপে বিকশিত রাজনৈতিক সংস্থা তৈরি হত না।[১১৯] এর ফলশ্রুতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণ সমাজে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ অরাজনৈতিক নানা ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়,[১২০] যার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান কাশ্মীরের উপরে ভারতের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করার জন্য সেই অরাজনৈতিক ক্ষোভকেই সহিংস বিদ্রোহে পরিণত করে।[১২১]

এছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য দুইটি দেশীয় রাজ্য—ত্রিপুরামণিপুরেও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। পণ্ডিতদের মতে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনগুলোতে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহের প্রভাবই বেশি ছিল, যার মূলে ছিল কাশ্মীরের সমস্যা সমাধানে, উত্তর-পূর্বের আদিগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্খা পূরণে এবং ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অভিবাসনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকারের ব্যর্থতা।[১২২]

অন্যান্য প্রদেশের সাথে দেশীয় রাজ্যগুলোর একত্রীকরণের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন রাজ্যে আরও বেশকিছু সমস্যা দেখা দেয়। প্রাক্তন হায়দ্রাবাদ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী জেলাসমূহ নিয়ে গঠিত তেলেঙ্গানা প্রদেশ কিছু দিক দিয়ে ব্রিটিশ ভারতের সময়কার তেলুগু-ভাষাভাষী অঞ্চল থেকে ভিন্ন ছিল। যেমন, রাষ্ট্র পুনর্গঠন কমিশন তেলেঙ্গানাকে একটু পৃথক রাজ্য হিসেবে গঠন করার মত দিয়েছিল, তেলুগু ভাষাভাষীদের নিয়ে বৃহৎ রাজ্য তৈরির মত এই কমিশন দেয়নি। ভারত সরকার এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে, এবং তেলেঙ্গানাকে অন্ধ্র প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলাফল ছিল ১৯৬০ সালের পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন।[১২৩] অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবিকে মেনে নেয়। ২০১৪ সালে জুন মাসে ভারতের ২৯তম রাজ্য হিসেবে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হয়। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন নাগপুর রাজ্য ও প্রাক্তন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের বেরার জেলাকে নিয়ে বিধর্বাতেও এই ধরনের আন্দোলনের অস্তিত্ব রয়েছে, যদিও তা তেলেঙ্গানার দাবির মত ততটা জোরালো না।[১২৪]

জটিল দৃষ্টিকোণ থেকে একত্রীকরণ প্রক্রিয়া

সম্পাদনা

একত্রীকরণ প্রক্রিয়া ক্রমশ ভারতীয় এবং পাকিস্তানি নেতাদেরকে বিবাদে জড়িয়ে ফেলে। আলোচনা চলাকালে জিন্নাহ, মুসলিম লীগের প্রতিনিধি শক্তভাবে দেশীয় রাজ্যগুলোর স্বাধীন থাকার পক্ষে তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। অর্থাৎ, এরা ভারত বা পাকিস্তান কারোর সাথেই যুক্ত হবে না। এই ধরনের মনোভাব সম্পূর্ণরূপে নেহরু এবং কংগ্রেসের অবস্থানের বিপরীতে চলে যায়,[১২৫] এবং তা হায়দ্রাবাদ স্বাধীন থাকার পক্ষে পাকিস্তানের সমর্থনের মাধ্যমে আরও পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয়। বিভাগ-পরবর্তী সময়ে, পাকিস্তান সরকার ভারতকে ভূমির উপর ভণ্ডামির জন্য দোষারোপ করে, কারণ জুনাগড়ের শাসককে পাকিস্তানে সংযোজনের প্রস্তাব যা ভারত অস্বীকার করে এবং কাশ্মীরের মহারাজাকে ভারতে সংযোজনের মধ্যে খুবই সামান্য পার্থক্য ছিল, এবং বেশ কিছু বছর ধরে জুনাগড়ের উপর ভারতের অধিকারের বৈধতা। একে পাকিস্তানি অঞ্চলের উপর দ্য জুরে হিসেবে অভিহিত করা হয়।[৬৩]

এই পর্যায়ে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দদের ব্যাখ্যা করবার জন্য বিভিন্ন তত্ত্বকে বিনির্মাণ করা হয়েছে। রাজমোহন গান্ধীর স্বীকার্য অনুযায়ী পটেলের মনে এক ধরনের চিন্তা খেলছিল, যে যদি মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ভারতকে জুনাগড় এবং হায়দ্রাবাদ পেতে দিতেন, তবে পটেল হয়তো বা পাকিস্তানকে কাশ্মীরের উপর অধিকার স্থাপনে বাধা দিতেন না।[১২৬] তার গ্রন্থ প্যাটেল: আ লাইফ-এ, গান্ধী দাবি করেন যে জিন্নাহর উচিত ছিল এর সাথে জুনাগড় এবং হায়দ্রাবাদের প্রশ্নগুলোকে যুক্ত করা। তিনি যেন ভারতকে জুনাগড় ও হায়দ্রাবাদের প্রশ্নে গণভোটের কথা বলেন, এমন প্রশ্নও করা হয়; কারণ তাহলে একই নীতি কাশ্মীরের উপরেও প্রযুক্ত হবে। সেখানে মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, কাজেই অনায়াসেই পাকিস্তানের পক্ষে ভোট আসবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। বাহাউদ্দিন কলেজ, জুনাগড়ের একটি বক্তৃতায় প্যাটেল বলেন, "আমরা কাশ্মীরের ব্যাপারে একমত হব, যদি তারা হায়দ্রাবাদের বিষয়ে একমত হয়।", যা বোঝায় যে তিনি এই প্রক্রিয়ার ব্যাপারে নমনীয় হয়েছেন।[১২৭] যদিও প্যাটেলের মন্তব্য ভারতের নীতি ছিল না, কিংবা নেহেরু কর্তৃক বলাও ছিলনা, তবুও উভয় নেতাই যোধপুর, ভোপাল এবং ইন্দোরের নেতৃবৃন্দের কাছে 'জিন্নাহর কাছে মাথানতকারী' হিসেবে গৃহীত হন। এরফলে পাকিস্তানের সাথে একটি সম্ভাব্য চুক্তিও কঠিন হয়ে পড়ে।[১২৮]

এই দেশবিভাগকালীন সময়ে বিভাগ পরিষদ ও লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ভূমিকাকে আধুনিক ঐতিহাসিকেরা পুনরায় পরীক্ষা করেন। ইয়ান কোপল্যান্ড বলেন যে, অধিগ্রহণের নীতি অনুসারে নিয়ন্ত্রণের উপায়সমূহকে কংগ্রেস নেতারা স্থায়ী করতে চাননি, এমনকি যখন তারা তাতে স্বাক্ষর করেন, তখনও। সবসময়ে তারা ১৯৪৮ এবং ১৯৫০ সালের মধ্যে একধরনের সম্পূর্ণ একত্রীকরণের কথাই ভেবে যান।[৯৭] তিনি উল্লেখ করেন যে ১৯৪৮ এবং ১৯৫০ সালের মধ্যসময়ে ভারত সরকারের ক্ষমতার অধিগ্রহণ ও সমর্পণ, নিয়ন্ত্রণের উপায়সমূহকে লঙ্ঘিত করে এবং তা অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন এবং মাউন্টব্যাটেনের নেতৃবৃন্দের দেওয়া দেশীয় রাজ্যসমূহের সংরক্ষণের দ্রুতগামী নিশ্চয়তার সঙ্গে বেমানান ছিল।[১২৯] মেনন তার স্মৃতিকথায় বলেন যে সংযোজনের প্রাথমিক পর্যায়ে সংঘটিত পরিবর্তনসমূহ প্রতিটি পর্যায়েই নেতাদের দ্বারা অবাধসম্মত ছিল, কোনপ্রকার বলপ্রয়োগ করা ছাড়াই। কোপল্যান্ড ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বিদেশী কূটনীতিকদের উপর ভিত্তি করে বলেন, তখন তাদের স্বাক্ষর করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না, এবং কিছু নেতারা এই আয়োজনের প্রতি হতাশ ছিলেন।[১৩০] তিনি মাউন্টব্যাটেনের ভূমিকারও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন যে তিনি আইনের অক্ষরের মধ্যে বাস করলেও, এবং অন্তত নীতিগত দিক থেকে হলেও উক্ত রাজ্যের নেতাদের জন্য কিছু করতে পারতেন। কারণ তখন বোঝা যাচ্ছিল যে যে নীতির উপরে ভিত্তি করে পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে, ভারত সরকার তার পরিবর্তন ঘটাবে। স্বাধীনতার পরে এই নীতি বজায় রাখা যাবে কিনা - এমন বিতর্কে তিনি কখনই জড়াননি।[১৩১] কোপল্যান্ড এবং রামুস্যাক বলেন যে শেষ বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজ্যসমূহের নেতারা তাদের রাজ্যের বিলোপের সমর্থন করার অন্যতম একটি কারণ ছিল-তারা ব্রিটিশদের দ্বারা পরিত্যক্ত অনুভব করতেন, এবং তারা বুঝতে পারেন যে তাদের আর কোনো উপায়ও নেই।[৫৭][১৩২] পক্ষান্তরে, লাম্বির ন্যায় পুরাতন ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, যে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে হয়তো দেশীয় রাজ্যসমূহর পক্ষে স্বাধীন থাকা সম্ভব হত না, এবং তাদের ভাঙন অনিবার্য ছিল। তাদের দৃষ্টিতে ভারতের মধ্যে সকল দেশীয় রাজ্যের সফল একত্রীকরণ ছিল ভারত সরকার ও লর্ড মাউন্টব্যাটেনের বিজয়। সেইসাথে এটি ছিল অধিকাংশ নেতার সদ্বিবেচনার প্রতি শ্রদ্ধা; তারা একত্রে কয়েক মাসের মধ্যেই যা অর্জন করেন, ব্রিটিশরা তার পূর্ববর্তী এক শতাব্দী ধরে তা অর্জন করার চেষ্টা করেছিল। পুরো ভারতকে এক শাসনের মধ্যে আনার এই চেষ্টার ক্ষেত্রে তারা পুরো শতক ধরেই ব্যর্থ রয়ে যায়।[৬৩][১৩৩]

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  1. Ramusack 2004, পৃ. 57–59
  2. Ramusack 2004, পৃ. 55–56; Fisher 1984, পৃ. 393–428
  3. Copland 1997, পৃ. 15–16
  4. Lee-Warner 1910, পৃ. 48–51
  5. Lumby 1954, পৃ. 202–204
  6. Ashton 1982, পৃ. 29–57
  7. McLeod 1999, পৃ. 66
  8. Keith 1969, পৃ. 506–514
  9. Ramusack 1978, পৃ. chs 1–3
  10. Copland 1993, পৃ. 387–389
  11. Lumby 1954, পৃ. 218–219
  12. Copland 1993, পৃ. 387–388
  13. Wood এবং অন্যান্য 1985, পৃ. 690–691
  14. Lumby 1954, পৃ. 214–215
  15. Menon 1956, পৃ. 90–91.
  16. Rangaswami 1981, পৃ. 235–246
  17. Phadnis 1969, পৃ. 360–374
  18. Ramusack 1988, পৃ. 378–381
  19. Copland 1987, পৃ. 127–129
  20. Lumby 1954, পৃ. 224–225
  21. Moore 1983, পৃ. 290–314
  22. Lumby 1954, পৃ. 204
  23. Copland 1993, পৃ. 393–394
  24. Copland 1997, পৃ. 237
  25. Ramusack 2004, পৃ. 273
  26. Copland 1993, পৃ. 393; Lumby 1954, পৃ. 232
  27. Morris-Jones 1983, পৃ. 624-625
  28. Lumby 1954, পৃ. 226–227
  29. Ramusack 2004, পৃ. 272
  30. Copland 1997, পৃ. 233–240
  31. Lumby 1954, পৃ. 229
  32. Copland 1997, পৃ. 244
  33. Copland 1997, পৃ. 232
  34. Copland 1997, পৃ. 258
  35. Phadnis 1968, পৃ. 170–171, 192–195
  36. Copland 1997, পৃ. 253–254
  37. Copland 1993, পৃ. 391–392
  38. Copland 1997, পৃ. 255
  39. Gandhi 1991, পৃ. 411–412
  40. Gandhi 1991, পৃ. 413–414
  41. Copland 1993, পৃ. 385
  42. Copland 1997, পৃ. 252
  43. Eagleton 1950, পৃ. 283
  44. Moore 1983, পৃ. 347; Lumby 1954, পৃ. 236
  45. Lumby 1954, পৃ. 232
  46. Lumby 1954, পৃ. 228
  47. Lumby 1954, পৃ. 218–219, 233
  48. Brown 1984, পৃ. 667
  49. Menon 1956, পৃ. 99–100
  50. Lumby 1954, পৃ. 234
  51. Menon 1956, পৃ. 109–110
  52. Copland 1993, পৃ. 399
  53. Copland 1997, পৃ. 256
  54. Copland 1993, পৃ. 396
  55. Copland 1993, পৃ. 396; Menon 1956, পৃ. 120
  56. Menon 1956, পৃ. 114
  57. Ramusack 2004, পৃ. 274
  58. Copland 1997, পৃ. 260
  59. Mosley 1961, পৃ. 177
  60. Menon 1956, পৃ. 116–117
  61. Lumby 1954, পৃ. 237–238
  62. Lumby 1954, পৃ. 238
  63. Furber 1951, পৃ. 359
  64. Menon 1956, পৃ. 394–395
  65. Lumby 1954, পৃ. 245
  66. Lumby 1954, পৃ. 245–247
  67. Lumby 1954, পৃ. 247–248
  68. Potter 1950, পৃ. 361
  69. Potter 1950, পৃ. 361–362
  70. Security Council 1957, পৃ. 359
  71. Talbot 1949, পৃ. 323–324
  72. Lumby 1954, পৃ. 240
  73. Talbot 1949, পৃ. 324–325
  74. Hangloo, Rattan Lal; Murali, A. (২০০৭)। New Themes in Indian History: Art, Politics, Gender, Environment, and Culture। Black & White। পৃষ্ঠা 240–241। আইএসবিএন 978-81-89320-15-7 
  75. "Vol. 17, No. 2, Second Quarter, 1964"Pakistan Horizon। Pakistan Institute of International Affairs। 17 (2): 169। ১৯৬৪। আইএসএসএন 0030-980Xজেস্টোর 41392796। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৫ 
  76. Talbot 1949, পৃ. 326–327
  77. Eagleton 1950, পৃ. 280; Talbot 1949, পৃ. 326–327
  78. Thomson 2013
  79. Noorani 2001
  80. Wood 1984, পৃ. 68
  81. Furber 1951, পৃ. 363
  82. Wood 1984, পৃ. 72
  83. Furber 1951, পৃ. 352
  84. Copland 1997, পৃ. 262
  85. Menon 1956, পৃ. 193–194
  86. Furber 1951, পৃ. 354–355
  87. Furber 1951, পৃ. 355–356
  88. Furber 1951, পৃ. 366–367
  89. Furber 1951, পৃ. 354, 356
  90. Furber 1951, পৃ. 358–359
  91. Furber 1951, পৃ. 358
  92. Furber 1951, পৃ. 359–360
  93. Furber 1951, পৃ. 36o
  94. Furber 1951, পৃ. 361
  95. Furber 1951, পৃ. 362–363
  96. Furber 1951, পৃ. 367–368
  97. Copland 1997, পৃ. 264
  98. Furber 1951, পৃ. 357–358, 360
  99. Furber 1951, পৃ. 369–370
  100. Furber 1951, পৃ. 357
  101. Furber 1951, পৃ. 352–354
  102. Copland 1997, পৃ. 266
  103. Gledhill 1957, পৃ. 270
  104. Roberts 1972, পৃ. 79–110
  105. Furber 1951, পৃ. 354, 371
  106. Furber 1951, পৃ. 371
  107. Furber 1951, পৃ. 369
  108. Fifield 1950, পৃ. 64
  109. Vincent 1990, পৃ. 153–155
  110. Fisher 1962, পৃ. 4
  111. Fifield 1952, পৃ. 450
  112. Furber 1951, পৃ. 369; Note 1975, পৃ. 884
  113. Gupta 1975, পৃ. 789–790
  114. Gupta 1975, পৃ. 790–793
  115. Gupta 1975, পৃ. 793–795
  116. Note 1975, পৃ. 884
  117. Zutshi 2017, পৃ. 123
  118. Widmalm 1997, পৃ. 1019–1023
  119. Ganguly 1996, পৃ. 99–101
  120. Ganguly 1996, পৃ. 91–105
  121. Ganguly 1996, পৃ. 103
  122. See e.g. Hardgrave 1983, পৃ. 1173–1177; Guha 1984, পৃ. 42–65; Singh 1987, পৃ. 263–264
  123. Gray 1971, পৃ. 463–474
  124. Mitra 2006, পৃ. 133
  125. Menon 1956, পৃ. 86–87
  126. Gandhi 1991, পৃ. 430–438
  127. Gandhi 1991, পৃ. 438
  128. Gandhi 1991, পৃ. 407–408
  129. Copland 1993, পৃ. 399–401
  130. Copland 1997, পৃ. 266, 271–272
  131. Copland 1993, পৃ. 398–401
  132. Copland 1997, পৃ. 355–356
  133. Lumby 1954, পৃ. 218

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  • Ashton, S.R. (১৯৮২), British Policy towards the Indian States, 1905–1938, London Studies on South Asia no. 2, London: Curzon Press, আইএসবিএন 0-7007-0146-X 
  • Brown, Judith M. (১৯৮৪), "The Mountbatten Viceroyalty. Announcement and Reception of the 3 June Plan, 31 May-7 July 1947", The English Historical Review, 99 (392): 667–668 
  • Copland, Ian (১৯৮৭), "Congress Paternalism: The "High Command" and the Struggle for Freedom in Princely India"", Masselos, Jim, Struggling and Ruling: The Indian National Congress 1885–1985, New Delhi: Sterling Publishers, পৃষ্ঠা 121–140, আইএসবিএন 81-207-0691-9 
  • Copland, Ian (১৯৯৩), "Lord Mountbatten and the Integration of the Indian States: A Reappraisal", The Journal of Imperial and Commonwealth History, 21 (2): 385–408, ডিওআই:10.1080/03086539308582896 
  • Copland, Ian (১৯৯৭), The Princes of India in the Endgame of Empire, 1917–1947, Cambridge, England: Cambridge University Press, আইএসবিএন 0-521-57179-0 
  • Eagleton, Clyde (১৯৫০), "The Case of Hyderabad Before the Security Council", The American Journal of International Law, American Society of International Law, 44 (2): 277–302, জেস্টোর 2193757, ডিওআই:10.2307/2193757 
  • Fifield, Russell H. (১৯৫০), "The Future of French India", Far Eastern Review, 19 (6): 62–64, ডিওআই:10.1525/as.1950.19.6.01p0582b 
  • Fifield, Russell H. (১৯৫২), "New States in the Indian Realm", The American Journal of International Law, American Society of International Law, 46 (3): 450–463, জেস্টোর 2194500, ডিওআই:10.2307/2194500 
  • Fisher, Margaret W. (১৯৬২), "Goa in Wider Perspective", Asian Survey, 2 (2): 3–10, ডিওআই:10.1525/as.1962.2.2.01p1537e 
  • Fisher, Michael H. (১৯৮৪), "Indirect Rule in the British Empire: The Foundations of the Residency System in India (1764–1858)", Modern Asian Studies, 18 (3): 393–428, ডিওআই:10.1017/S0026749X00009033 
  • Furber, Holden (১৯৫১), "The Unification of India, 1947–1951", Pacific Affairs, Pacific Affairs, University of British Columbia, 24 (4): 352–371, জেস্টোর 2753451, ডিওআই:10.2307/2753451 
  • Gandhi, Rajmohan (১৯৯১), Patel: A Life, Ahmedabad: Navajivan Publishing House 
  • Ganguly, Sumit (১৯৯৬), "Explaining the Kashmir Insurgency: Political Mobilization and Institutional Decay", International Security, The MIT Press, 21 (2): 76–107, জেস্টোর 2539071, ডিওআই:10.2307/2539071 
  • Gledhill, Alan (১৯৫৭), "Constitutional and Legislative Development in the Indian Republic", Bulletin of the School of Oriental and African Studies, University of London, 20 (1–3): 267–278, ডিওআই:10.1017/S0041977X00061838 
  • Gray, Hugh (১৯৭১), "The Demand for a Separate Telengana State in India", Asian Survey, 11 (5): 463–474, ডিওআই:10.1525/as.1971.11.5.01p0113d 
  • Guha, Amalendu (১৯৮৪), "Nationalism: Pan-Indian and Regional in a Historical Perspective", Social Scientist, Social Scientist, 12 (2): 42–65, জেস্টোর 3517093, ডিওআই:10.2307/3517093 
  • Gupta, Ranjan (১৯৭৫), "Sikkim: The Merger with India", Asian Survey, 15 (9): 786–798, ডিওআই:10.1525/as.1975.15.9.01p0110k 
  • Hardgrave, Robert L. (১৯৮৩), "The Northeast, the Punjab, and the Regionalization of Indian Politics", Asian Survey, 23 (11): 1171–1181, ডিওআই:10.1525/as.1983.23.11.01p0095g 
  • Karan, Pradyumna P. (১৯৬০), "A Free Access to Colonial Enclaves", Annals of the Association of American Geographers, 50 (2): 188–190, ডিওআই:10.1111/j.1467-8306.1960.tb00345.x 
  • Keith, Arthur Berriedale (১৯৬৯), A Constitutional History of India, 1600–1935 (2nd সংস্করণ), London: Methuen 
  • Lee-Warner, Sir William (১৯১০), The Native States of India (2nd সংস্করণ), London: Macmillan 
  • Lumby, E.W.R. (১৯৫৪), The Transfer of Power in India, 1945–1947, London: George Allen and Unwin 
  • McLeod, John (১৯৯৯), Sovereignty, Power, Control: Politics in the State of Western India, 1916–1947, Leiden: Brill, আইএসবিএন 90-04-11343-6 
  • Menon, V.P. (১৯৫৬), The Story of the Integration of the Indian States, New York: Macmillan 
  • Mitra, Subrata Kumar (২০০৬), The Puzzle of India's Governance: Culture, Context and Comparative Theory, London: Routledge, আইএসবিএন 0-415-34861-7 
  • Moore, R.J. (১৯৮৩), Escape from Empire: The Attlee Government and the Indian Problem, Oxford: Clarendon Press, আইএসবিএন 0-19-822688-8 
  • Morris-Jones, W.H. (১৯৮৩), "Thirty-Six Years Later: The Mixed Legacies of Mountbatten's Transfer of Power", International Affairs, 59 (4): 621–628, ডিওআই:10.2307/2619473 
  • Mosley, Leonard (১৯৬১), The last days of the British Raj, London: Weidenfield and Nicolson 
  • Note (১৯৭৫), "Current Legal Developments: Sikkim, Constituent Unit of India", International and Comparative Law Quarterly, 24 (4): 884, ডিওআই:10.1093/iclqaj/24.4.884 
  • Phadnis, Urmila (১৯৬৮), Towards the Integration of the Indian States, 1919–1947, London: Asia Publishing House 
  • Phadnis, Urmila (১৯৬৯), "Gandhi and Indian States: A Probe in Strategy", Biswas, S.C., Gandhi: Theory and Practice, Social Impact and Contemporary Relevance, Transactions of the Indian Institute of Advanced Study Vol. 2, Shimla: Indian Institute of Advanced Study, পৃষ্ঠা 360–374 
  • Potter, Pitman B. (১৯৫০), "The Principal Legal and Political Problems Involved in the Kashmir Case", The American Journal of International Law, American Society of International Law, 44 (2): 361–363, জেস্টোর 2193764, ডিওআই:10.2307/2193764 
  • Ramusack, Barbara N. (১৯৭৮), The Princes of India in the Twilight of Empire: Dissolution of a patron-client system, 1914–1939, Colombus, Ohio: Ohio State University Press, আইএসবিএন 0-8142-0272-1 
  • Ramusack, Barbara N. (১৯৮৮), "Congress and the People's Movement in Princely India: Ambivalence in Strategy and Organisation", Sisson, Richard; Wolpert, Stanley, Congress and Indian Nationalism, Berkeley: University of California Press, পৃষ্ঠা 377–403, আইএসবিএন 0-520-06041-5 
  • Ramusack, Barbara N. (২০০৪), The Indian Princes and Their States, The New Cambridge History of India III.6, Cambridge, England: Cambridge University Press, আইএসবিএন 0-521-26727-7 
  • Rangaswami, Vanaja (১৯৮১), The Story of Integration: A New Interpretation in the Context of the Democratic Movements in the Princely States of Mysore, Travancore and Cochin 1900–1947, New Delhi: Manohar 
  • Roberts, Neal A. (১৯৭২), "The Supreme Court in a Developing Society: Progressive or Reactionary Force? A Study of the Privy Purse Case in India", The American Journal of Comparative Law, American Society of Comparative Law, 20 (1): 79–110, জেস্টোর 839489, ডিওআই:10.2307/839489 
  • Security Council (১৯৫৭), "Security Council: India-Pakistan Question", International Organization, 11 (2): 368–372, ডিওআই:10.1017/S0020818300023808 
  • Singh, B.P. (১৯৮৭), "North-East India: Demography, Culture and Identity Crisis", Modern Asian Studies, 21 (2): 257–282, ডিওআই:10.1017/S0026749X00013809 
  • Spate, O.H.K. (১৯৪৮), "The Partition of India and the Prospects of Pakistan", Geographical Review, American Geographical Society, 38 (1): 5–29, জেস্টোর 210736, ডিওআই:10.2307/210736 
  • Talbot, Phillips (১৯৪৯), "Kashmir and Hyderabad", World Politics, Cambridge University Press, 1 (3): 321–332, জেস্টোর 2009033, ডিওআই:10.2307/2009033 
  • Vincent, Rose (১৯৯০), The French in India: From Diamond Traders to Sanskrit Scholars, Bombay: Popular Prakashan , translated by Latika Padgaonkar
  • Wainwright, A. M. (১৯৯৪), Inheritance of Empire: Britain, India and the Balance of Power in Asia, 1938–55, Westport: Praeger, আইএসবিএন 0-275-94733-5 
  • Widmalm, Sten (১৯৯৭), "The Rise and Fall of Democracy in Jammu and Kashmir", Asian Survey, 37 (11): 1005–1030, ডিওআই:10.1525/as.1997.37.11.01p02937 
  • Wright, Quincy (১৯৬২), "The Goa Incident", The American Journal of International Law, American Society of International Law, 56 (3): 617–632, জেস্টোর 2196501, ডিওআই:10.2307/2196501 
  • Wood, John (১৯৮৪), "British versus Princely Legacies and the Political Integration of Gujarat", The Journal of Asian Studies, 44 (1): 65–99, জেস্টোর 2056747, ডিওআই:10.2307/2056747 
  • Wood, John; Moon, Penderel; Blake, David M.; Ashton, Stephen R. (১৯৮৫), "Dividing the Jewel: Mountbatten and the Transfer of Power to India and Pakistan", Pacific Affairs, Pacific Affairs, University of British Columbia, 58 (4): 653–662, জেস্টোর 2758474, ডিওআই:10.2307/2758474 
  • Puchalapalli, Sundarayya (মার্চ ১৯৭৩), "Telangana People's Armed Struggle, 1946-1951. Part Two: First Phase and Its Lessons", Social Scientist, Social Scientist, 1 (8): 18–42, জেস্টোর 3516214, ডিওআই:10.2307/3516214 
  • Metcalf, Barbara D.; Metcalf, Thomas R. (২০০৬)। A Concise History of India (2nd সংস্করণ)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0521682251 
  • Thomson, Mike (সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৩)। "Hyderabad 1948: India's hidden massacre"BBC। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৩ 
  • Noorani, A.G. (মার্চ ৩–১৬, ২০০১)। "Of a massacre untold"Frontline18 (05)। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪