ইন্দোর রাজ্য

সাবেক রাষ্ট্র

ইন্দোর রাজ্য, যা হোলকার রাজ্য নামেও পরিচিত ছিল, ভারতের একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। এর শাসকরা হোলকার রাজবংশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।[] ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে ইন্দোর রাজ্য ছিল ১৯-বন্দুক স্যালুটের সম্মান প্রাপ্ত একটি রাজ্য। []

ইন্দোর রাজ্য

इंदौर राज्य
ইন্দোরের জাতীয় পতাকা
Flag of the state (1732–1818)
ইন্দোরের অবস্থান
রাজধানীইন্দোর
ইন্দোরের প্পুরাতন প্রাসাদ রাজওয়াড়া
সুখনিবাস প্রাসাদ
রাজ্যহস্তীর উপরে আসীন ইন্দোরের মহারাজা
১৮০৫ সালে যশোবন্ত রাও হোলকার এবং রণজিত সিং
মহারাজা দ্বিতীয় তুকোজিরাও হোলকার
মহারাজা তৃতীয় তুকোজিরাও হোলকার
ইন্দোরের মহারাজা তৃতীয় তুকোজি রাও হোলকারের স্ত্রী মহারাণী শ্রীমন্ত চন্দ্রাবতী বাঈ সাহেব হোলকার

ইন্দোর রাজ্যটি বর্তমান ভারতেমধ্যপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত। রাজ্যের রাজধানী ছিল ইন্দোর শহর। রাজ্যটির আয়তন ছিল ২৪,৬০৫ বর্গ কিলোমিটার এবং ১৯৩১ সালে জনসংখ্যা ছিল ১,৩২৫,০৮৯ জন। ইন্দোর ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে ছিল, রামপুরা, খরগোনে, মহেশ্বর, মাহিদপুর, বরওয়াহ এবং ভানপুরা। রাজ্যের অধীনে মোট ৩৬৮৮ টি গ্রাম ছিল[]

ইতিহাস

সম্পাদনা

১৭২০ সাল নাগাদ, স্থানীয় পরগনার সদর দফতরটি ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক কার্যকলাপের কারণে কমপেল থেকে ইন্দোর শহরে স্থানান্তরিত হয়েছিল। ১৭২৪য়ের ১৮ই মে, হায়দ্রাবাদের নিজাম শাসক এই অঞ্চল থেকে চৌথ (কর) সংগ্রহের জন্য মারাঠা পেশোয়া প্রথম বাজিরাও-এর অধিকার স্বীকার করেছিলেন। ১৭৩২ সালে পেশোয়া বাজিরাও মালওয়া অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং তার সেনাপতি মলহার রাও হোলকারকে এই প্রদেশের সুবেদার (গভর্নর) নিযুক্ত করেন।

১৭৩২ সালের ২৯ জুলাই পেশোয়া প্রথম বাজিরাও হোলকার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শাসক মলহার রাও হোলকারের সাথে সাড়ে ২৮টি পরগনা একত্র করে হোলকার রাজ্যর সুবেদার নিযুক্ত করেন। মলহার রাওয়ের পুত্রবধূ অহল্যাবাঈ হোলকার রাজ্যের রাজধানী মহেশ্বরে সরিয়ে নিয়েছিলেন ১৭৬৭ সালে, তবে ইন্দোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সামরিক কেন্দ্র হিসাবে রয়ে গিয়েছিল। তৃতীয় অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধে হোলকার শাসকদের পরাজয়ের পরে ১৮১৮ সালের ব্রিটিশদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ইন্দোর রাজ্যটি একটি ব্রিটিশ করদ রাজ্যে পরিণত হয়। মূলত দেওয়ান (মুখ্যমন্ত্রী) তাত্যা জগের প্রচেষ্টার কারণে হোলকার রাজবংশ ইন্দোর দেশীয় রাজ্যে রাজত্ব করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৮১৮ সালের ৩রা নভেম্বর রাজধানীটি মহেশ্বর থেকে ইন্দোরে স্থানান্তরিত হয় এবং ব্রিটিশ বাসিন্দাদের একটি রাজনৈতিক আবাসস্থল্রূপে ইন্দোর রেসিডেন্সি শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে, ইন্দোর ব্রিটিশ মধ্য ভারত এজেন্সি এর সদর দফতর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৬ সালে শহরে বৈদ্যুতিক পরিকাঠামো স্থাপন করা হয়েছিল এবং ১৯০৯ সালে ফায়ার ব্রিগেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯১৮ সালের মধ্যে পতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্যাট্রিক গেডেস নগরীর প্রথম মাস্টার প্ল্যানটি প্রস্তুত করেন। মহারাজা দ্বিতীয় তুকোজি রাও হোলকার তার রাজত্বকালে (১৮৫২-–১৮৮৬) ইন্দোরের পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং শিল্প বিকাশের জন্য প্রভূত প্রচেষ্টা করেন। মহারাজা শিবাজি রাও হোলকার, মহারাজা তৃতীয় তুকোজি রাও হোলকার এবং মহারাজা যশবন্ত রাও হোলকারের রাজত্বকালে শহরের ব্যাপক ব্যবসায়িক উন্নতি ঘটে। ১৮৭৫ সালে রাজ্যে যে রেলপথ চালু হয়েছিল, তার পূর্ণ সদব্যবহার করে ইন্দোর রাজ্য। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পরে, বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী রাজ্য সহ, ইন্দোর দেশীয় রাজ্যটীও ভারতে যোগদান করে। রাজ্যের তআদানীন্তন শাসক এবং হোলকার বংশের শেষ মহারাজা দ্বিতীয় যশবন্ত রাও হোলকার ১৯৫০ সালের ১লা জানুয়ারি ভারতীয় ইউনিয়নে প্রবেশের জন্যে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেন। ইন্দোর রাজ্যের অঞ্চলগুলি নবগঠিত মধ্য ভারত রাজ্যের অন্তর্গত হয়।

ইন্দোরের রাজারা 'মহারাজা' উপাধি ধারণ করতেন। রাজ্যের শাসকরা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১৯ টি বন্দুকের স্যালুটের অধিকারী ছিল।.[]

ইন্দোরের মহারাজা

সম্পাদনা
নাম জন্ম মৃত্যু রাজত্ব
মলহার রাও হোলকার ১৬৯৪ ১৭৬৬ ১৭৩১-২০শে মে, ১৭৬৬
মালে রাও হোলকার ১৭৪৫ ১৭৬৭ ২০শে মে, ১৭৬৬-৫ই এপ্রিল, ১৭৬৭
মহারাণি অহল্যা বাঈ হোলকার ১৭২৫ ১৭৯৫ এপ্রিল ১৭৬৭-১৩ই আগস্ট, ১৭৯৫
প্রথম তুকোজি রাও হোলকার ১৭২৩ ১৭৯৭ ১৩ই আগস্ট ১৭৯৫ – ২৯শে জানুয়ারি,১৭৯৭
(এছাড়াও তালিকাভুক্ত সহ-শাসক ১৭৬৭র এপ্রিল থেকে)
কাশী রাও হোলকার ? ১৮০৮ ২৯শে জানুয়ারি,১৭৯৭ – জানুয়ারি, ১৭৯৯
খান্ডে রাও হোলকার ১৭৯৮ ১৮০৬ জানুয়ারি ১৭৯৯– ১৮০৬
প্রথম যশবন্ত রাও হোলকার ১৭৭৬ ১৮১১ ১৮০৬ – ২৭শে অক্টোবর,১৮১১



(রিজেন্ট -১৭৯৯এর জানুয়ারি থেকে)
তৃতীয় মলহার রাও হোলকার ১৮০১ ১৮৩৩ নভেম্বর ১৮১১ – ২৭শে অক্টোবর, ১৮৩৩
মহারানি তুলসী বাই (f), রিজেন্ট ? ১৮১৭ নভেম্বর ১৮১১ – ২০শে ডিসেম্বর ১৮১৭
মার্তন্ড রাও হোলকার ১৮৩০ ১৮৪৯ ২৭শে অক্টোবর, ১৮৩৩ –২রা ফেব্রুয়ারি ১৮৩৪
হরি রাও হোলকার ১৭৯৫ ১৮৪৩ ২রা ফেব্রুয়ারি ১৮৩৪ – ২৪শে অক্টোবর ১৮৪৩
দ্বিতীয় খান্ডে রাও হোলকার ১৮২৮ ১৮৪৪ ২৪শে অক্টোবর ১৮৪৩ – ১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৮৪৪
মহারানি মাজি ? ১৮৪৯ ২৪শে অক্টোবর ১৮৪৩ – ১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৮৪৪
দ্বিতীয় তুকোজি রাও হোলকার



('নাইট ২৫শে জুন ১৮৬১)
১৮৩৫ ১৮৮৬ ২৭শে জুন ১৮৪৪– ১৭ই জুন ১৮৮৬
মহারানি মাজিi (f) দ্বিতীয় রাজপ্রতিনিধি ? ১৮৪৯ ২৭শে জুন ১৮৪৪– সেপ্টেম্বর ১৮৪৯
শিবাজি রাও হোলকার



('নাইট 30 জুন 1887)
১৮৫৯ ১৯০৮ ১৭ই জুন, ১৮৮৬ – ৩১শে জানুয়ারি ১৯০৩
তৃতীয় তুকোজি রাও হোলকার



('নাইট ১লা জানুয়ারি ১৯১৮)
১৮৯০ ১৯৭৮ ৩১শে জানুয়ারি, ১৯০৩ – ২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯২৬
দ্বিতীয় যশবন্ত রাও হোলকার



('নাইট ১লা জানুয়ারি ১৯৩৫)
১৯০৮ ১৯৬১ ২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ – ১৫ই আগস্ট, ১৯৪৭
উষা দেবী হোলকার ১৯৬১ বর্তমান

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  • মারাঠা রাজবংশ এবং রাজত্বের তালিকাসমূহ
  • মারাঠা
  • ভারতের রাজনৈতিক একত্রীকরণ

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Cotton, James Sutherland (১৯১১)। "Indore"। চিসাম, হিউ। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ14 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 500–501। 
  2. Princely States of India
  3. Great Britain India Office. The Imperial Gazetteer of India. Oxford: Clarendon Press, 1908.
  4. "Indore Princely State (19 gun salute)"। ৬ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৪