নান্দাইল উপজেলা
নান্দাইল উপজেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
নান্দাইল | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে নান্দাইল উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৩′৫৩″ উত্তর ৯০°৪০′৫৯″ পূর্ব / ২৪.৫৬৪৭২° উত্তর ৯০.৬৮৩০৬° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা | ময়মনসিংহ জেলা |
প্রতিষ্ঠিত | ২ জানুয়ারি ১৯১২ (থানা) ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮২ (উপজেলা) |
সংসদীয় আসন | ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
• উপজেলা চেয়ারম্যান | হাসান মাহমুদ জুয়েল |
আয়তন | |
• মোট | ৩২৬.১৩ বর্গকিমি (১২৫.৯২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ৪,০২,৭১৭ |
• জনঘনত্ব | ১,২০০/বর্গকিমি (৩,২০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৫% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২২৯০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৬১ ৭২ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
ইতিহাস
সম্পাদনানামকরণ
সম্পাদনাএক সময়ে নন্দদুলাল নামের এক জমিদার ছিলেন। জমিদারি সীমানা তিনি নির্ধারণ করেছিলেন আইলের মাধ্যমে। মুঘল আমলে এ এলাকার জনগণের নিকট থেকে জমির খাজনা আদায় করা খুবই দুরূহ ছিল। নন্দলাল প্রজাদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি করে খাজনা আদায়ে সাফল্য লাভ করেন। তখন থেকেই এ এলাকার নাম তার নামানুসারে নান্দাইল রাখা হয়। নন্দ দুলালের "নন্দ"। এর সঙ্গে আইল অপভ্রংশ যুক্ত হয়ে নান্দাইল নামকরণ হয়।
কিংবদন্তি
সম্পাদনালোকজ ঐতিহ্যের সঙ্গে নান্দাইলের গৌরবময় সম্পৃক্ততা রয়েছে। ময়মনসিংহ গীতিকায় নান্দাইলের আড়ালিয়া বিলের কুড়া শিকারী প্রসঙ্গ এসেছে। মৈমনসিংহ গীতিকার 'মলুয়া পালার' পটভূমি এই নান্দাইল উপজেলা। এছাড়াও মনসা মঙ্গলের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কানাহরির অধিবাস ছিল এই নান্দাইলে। পূর্ব ময়মনসিংহের নান্দাইলেই কানাহরির সাকিন (গ্রাম) ছিলো বলে ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দাবি করা হয়। যদিও এ সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে।
মধ্যযুগ ও ইংরেজ শাসনামল
সম্পাদনাসুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে মুয়াজ্জামাবাদ (বর্তমানে মোয়াজ্জেমপুর) পূর্ব বাংলার অন্যতম প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। তখন থেকে ময়মনসিংহ জেলার একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল নান্দাইল। আঠারো শতকে নান্দাইলের দেওয়ানগঞ্জ বাজার (রাজবাড়ী বাজার) এলাকায় নীলকরদের কুঠি স্থাপনের পর ‘নীল আন্দোলন’ শুরু হয়।
পাকিস্তান আমল
সম্পাদনাপাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হলে নান্দাইলের খালেক নওয়াজ খান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের খালেক নওয়াজ খান মুসলিম লীগের নুরুল আমিনকে পরাজিত করেন। নির্বাচন উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী খালেক নওয়াজের পক্ষে নান্দাইল আসেন।[২] ১৯৭০ সালের মে মাসে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান নান্দাইল আসেন ও নান্দাইল শহরের চণ্ডীপাশা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বক্তব্য দেন।[৩]
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
সম্পাদনাপ্রাথমিক প্রতিরোধ
সম্পাদনা১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী উভই পক্ষই সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে।[টীকা ১][২] এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহেই পাকিস্তানি বাহিনীকে আটকানোর জন্য মুশুল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ে গোপনে মেজর খালেদ মোশাররফ ও এটিএম হায়দারের নেতৃত্বে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠকদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।[২] বৈঠকের কয়েকদিনের মধ্যে পরিকল্পনা মোতাবেক ডিনামাইট দিয়ে মুশুল্লী রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণে অবস্থিত শুভখিলা রেলব্রিজ ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। মেজর খালেদ এ অপারেশনে নেতৃত্ব দেন।[২] ফলে কিশোরগঞ্জ থেকে রেলপথে ভারী অস্ত্রসহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আসার পথ আপাতদৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কয়েকদিন পরেই কিশোরগঞ্জ থেকে পাকিস্তানি বাহিনী শুভখিলা রেলব্রিজ পর্যন্ত আসে এবং স্থানীয়দের নদী পারাপারের নৌকায় হালকা অস্ত্রসহ নান্দাইলে প্রবেশ করে।[২]
অন্যদিকে সড়কপথে সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনীর আগমন ঠেকানোর জন্য ১৮ এপ্রিল নান্দাইল শহরের প্রবেশমুখে কিশোরগঞ্জ সড়কের অংশবিশেষ কেটে ট্রেঞ্চ তৈরি করা হয়। কিন্তু স্থানীয় দালালদের সহায়তায় আগেই খবর পেয়ে পাকবাহিনী সতর্ক হয়ে যায় এবং এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহনেওয়াজ ভূঁইয়াসহ সাত জনের বিরুদ্ধে নান্দাইল থানায় মামলা করা হয়। ২১ এপ্রিল মেজর আশফাকের নেতৃত্বে পাকবাহিনী নান্দাইলে ঘাঁটি স্থাপন করে।[২] এই দিন রাজগাঁতী, শুভখিলা ও কালীগঞ্জ এলাকায় ১৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয় ও কয়েকশ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী নান্দাইল শহরের তিন-চার কিলোমিটার পূর্বে বারুইগ্রাম মাদ্রাসায় ক্যাম্প স্থাপন করে। স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নান্দাইল শহরের পার্শ্ববর্তী আমুদাবাদ গ্রামে আশ্রয় নেন এবং স্থানীয় দালালদের সাথে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হন।[২]
শুভখিলা বধ্যভূমি ও ভাংরীবন্দের গণহত্যা
সম্পাদনাপাকিস্তানি সেনাবাহিনী নান্দাইলে ঘাঁটি স্থাপনের পর স্থানীয় রাজাকার ও আলবদর বাহিনী শুভখিলা রেলব্রিজের উভয় পাশে পাহারা বসায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনানুসারে, সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর রিজার্ভ ট্রেনে গৌরীপুর ও ভৈরব থেকে সন্দেহভাজন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের আত্মীয়দের ধরে এনে রেলব্রিজের নিচে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হতো।[২] এছাড়াও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দমনের জন্য পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় রাজাকার ও আলবদরের সহায়তায় বারুইগ্রাম ক্যাম্পের পাশের ভাংরীবন্দ গ্রাম ও একটি পরিত্যক্ত ইটাখোলায় ২৫-৩০ জনকে হত্যা করে।[২]
নান্দাইল যুদ্ধ
সম্পাদনামুক্তিযোদ্ধারা গোপনে বৈঠক করে ১০ নভেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ নভেম্বর আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়।[২]
১৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চারটি দলে ভাগ হয়ে নান্দাইল থানা ঘিরে ফেলে।[২] কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পনা আগে থেকেই জেনে যায় এবং নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভ্রান্ত করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে অভিযান ব্যর্থ হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সাড়ে চার ঘণ্টার সম্মুখ যুদ্ধে ২৪ জন শহীদ হয়।[২][৪] অভিযানের ব্যর্থতার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহনেওয়াজ ভূঁইয়াসহ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া চারিআনিপাড়া, গারুয়া, ধুরুয়া, শেরপুর, রাজগাঁতী, মুশুল্লী প্রভৃতি স্থানে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করা হয়।
ইলিয়াস উদ্দিন ভূঁঁইয়া, শামসুল হক, জিল্লুল বাকি, শাহনেওয়াজ ভূঁঁইয়াসহ মোট ২৭ জন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ১৭ নভেম্বর শহীদ হন। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছর দিনটিকে "নান্দাইল শহীদ দিবস" হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
নান্দাইলের মুক্তি
সম্পাদনাডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকে রণাঙ্গনে পাকবাহিনীর পরাজয়ে মনোবল কমিয়ে দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নতুন আক্রমণের পরিকল্পনা করে। ১০ ডিসেম্বর রাতে নান্দাইল শহরকে তিনদিক থেকে ঘিরে রাখা নরসুন্দা নদীকে কাজে লাগিয়ে কমান্ডার ফারুকের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী থানা ঘেরাও করে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। রাত দুইটার দিকে নান্দাইলে প্রথম বিজয়সূচক স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। তাই ১১ ডিসেম্বরকেই "নান্দাইল মুক্ত দিবস" হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৫]
প্রশাসনিক ইতিহাস
সম্পাদনা১৯১২ সালের ২ জানুয়ারি প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে নান্দাইল থানার গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯১২ সালের ১৮ জানুয়ারি নান্দাইল থানা সরকারি গেজেটভুক্ত হয়। ১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর নান্দাইল উপজেলা সৃষ্টি হয়।[৬]
ভূগোল
সম্পাদনাভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা
সম্পাদনানান্দাইল উপজেলার অবস্থান হলো ২৪°৩৪′০০″ উত্তর ৯০°৪১′০০″ পূর্ব / ২৪.৫৬৬৭° উত্তর ৯০.৬৮৩৩° পূর্ব। ৩২৬.১৩ কিমি২ আয়তনবিশিষ্ট উপজেলায় প্রায় ৬২,৫৩৩টি গৃহস্থালি রয়েছে। এই উপজেলার উত্তরে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলা ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলা, পশ্চিমে ত্রিশাল উপজেলা ও গফরগাঁও উপজেলা।
নদ-নদী ও জলাশয়
সম্পাদনাউপজেলার প্রধান নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, নরসুন্দা, বাথাইল, কাঁচামাটিয়া ও মঘা নদী। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে তালার কুর, হামাই বিল, বাইলতা বিল(চকমতি), বান্না বিল, কালাইধর, জিলা বিল, হামাই বিল, আড়ালিয়া বিল, বলদা বিল, বাপাইল বিল, টঙ্গী ও বাউলার বিল।[৭][৮]
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনানান্দাইল উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম নান্দাইল থানার আওতাধীন।[৯]
- ১নং বীর বেতাগৈর
- ২নং মোয়াজ্জেমপুর
- ৩নং নান্দাইল
- ৪নং চণ্ডীপাশা
- ৫নং গাংগাইল
- ৬নং রাজগাতী
- ৭নং মুশুল্লী
- ৮নং সিংরইল
- ৯নং আচারগাঁও
- ১০নং শেরপুর
- ১১নং খারুয়া
- ১২নং জাহাঙ্গীরপুর
- ১৩নং চর বেতাগৈর
এ উপজেলায় মোট ১৬৩টি মৌজা ও ২৬৫টি গ্রাম রয়েছে। ২৩.০৬ কিমি২ আয়তন নিয়ে নান্দাইল পৌরসভা গঠিত। নান্দাইল পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড ও ২০টি মহল্লায় বিভক্ত। উপজেলা শহরের আয়তন ১২.৩৮ কিমি২।[১০]
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনা২০১১ বাংলাদেশ আদমশুমারি অনুসারে নান্দাইলের জনসংখ্যা প্রায় ৪,০২,৭২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৯.২১% এবং নারী ৫০.৭৯%। মোট জনসংখ্যার ৯৮.০৪% মুসলমান, ১.৮৭% হিন্দু এবং ০.০৯% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। সাত বছর বয়সের ঊর্ধ্বে শিক্ষার হার ৪০.৩৮%।[১১] বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২১%।
১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নান্দাইলের জনসংখ্যা ছিল ৩,২৮,৮৪৭ জন। মোট জনসংখ্যার ৫০.৮২% ছিল পুরুষ ও ৪৯.১৮% ছিল নারী। প্রায় ১,৫৫,৯৩০ জনের বয়স আঠারো বছর বা তার বেশি। নান্দাইল উপজেলায় শিক্ষার হার ছিল ২২.৩% (৭+ বছর), যেখানে জাতীয় শিক্ষার হার ছিল ৩২.৪%।[১২]
শিক্ষা
সম্পাদনাউপজেলার শিক্ষার হার ৬৫%। পুরুষদের মধ্যে শিক্ষার হার ৬৮% ও নারীদের ৬২%। উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭৫টি, জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় ৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪১টি, বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩টি, দাখিল মাদ্রাসা ১৬টি, আলিয়া মাদ্রাসা ৭টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৪টি, কামিল মাদ্রাসা ২টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯টি, বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১টি ও উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র ১১, মাদ্রাসা ৮৯।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনা•জহুরা খাতুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
- খুররম খান চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫),
- নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ (১৯৭২),
- চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫),
- ঘোষপালা ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৪৩),
- খারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৬৬),
- বাকচান্দা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫২),
- সমূর্ত্ত জাহান মহিলা কলেজ
- মুসুল্লী স্কুল এন্ড কলেজ
- বরিল্যা কে. এ স্কুল এন্ড কলেজ
- আগারগাঁও ফাজিল মাদ্রাসা
- আশরাফ চৌধুরী ফাজিল মাদ্রাসা
- জাহাঙ্গীরপুর আলিম মাদ্রাসা
- এডভোকেট আব্দুল হাই কলেজ
- হাজী ছফির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৯৯)
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
সম্পাদনাপত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী
সম্পাদনানান্দাইলের উল্লেখযোগ্য স্থানীয় পত্রপত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: মাসিক নান্দাইল, নরসুন্দার বাঁকে, মাসিক দেশের কথা, দেশের মাটি (অনিয়মিত), কীটনাশক (সাহিত্য পত্রিকা) ইত্যাদি। নান্দাইলের সাংবাদিকদের সংগঠন হিসেবে ১৯৮২ সালের ৭ জানুয়ারি "নান্দাইল প্রেসক্লাব" স্থাপিত হয়। এর কার্যালয় নান্দাইল চৌরাস্তায় অবস্থিত।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনানান্দাইল উপজেলার সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইব্রেরি ৯টি, ক্লাব ১২টি, থিয়েটার গ্রুপ ১টি (নান্দাইল থিয়েটার), সিনেমা হল ১টি (অবসর সিনেমা হল) ও খেলার মাঠ ২১টি। উপজেলার একমাত্র সিনেমা হলটি সাম্প্রতিককালে বন্ধ হয়ে যায়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনানান্দাইলের মসজিদ প্রায় ৬৩৯টি ও মন্দির প্রায় ২৮টি। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মোয়াজ্জমাবাদ মসজিদ, নান্দাইল বাজার বায়তুল মামুর মসজিদ, জাহাঙ্গীরপুর মসজিদ, মার্কাজ মসজিদ, নান্দাইল বাজার কালীমন্দির, নান্দাইল কাজী বাড়ী জামে মসজিদ।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:
সম্পাদনা- আনিসুল হক আকন্দ, উপাধি প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা
- আনোয়ারুল আবেদীন খান, রাজনীতিবিদ, বর্তমান সংসদ সদস্য।
- আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরী, রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য।
- আবদুল জব্বার, বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
- আবদুস সালাম, মেজর জেনারেল, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য।
- করুণাময় গোস্বামী, নজরুল গবেষক।
- কানাহরি দত্ত (১২ - ১৩ শতক), মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি।
- কুদরতুল্লাহ মন্ডল, রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য।
- ক্ষীরোদাসুন্দরী চৌধুরী (১৮৮৩ - ?), অগ্নিকন্যাখ্যাত ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
- খালেক নওয়াজ খান, ভাষা সৈনিক, রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।
- খুররম খান চৌধুরী, রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য।
- গাজী আবদুস সালাম ভূঁইয়া, বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
- জহুরুল ইসলাম খান, রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য।
- নুরুল আমিন, পাকিস্তানের উপরাষ্ট্রপতি, পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
- রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া (১৯২৮-১৯৯৬), ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের প্রাক্তন গভর্নর ও শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা।
- শহীদ আখন্দ, ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ
সম্পাদনা- মোয়াজ্জমাবাদ মসজিদ (১৪৯৩-১৫১৯ সালে নির্মিত),
- জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে তাপস জাহাঙ্গীর শাহের মাজার ও খানকা,
- গণকবর: বারুইগ্রাম,
- বধ্যভূমি: শুভখিলা কালীগঞ্জ রেলওয়ে ব্রিজ এলাকা।
- নগর কচুরী গায়েবী মসজিদ।
- সৈয়দগাঁও বুড়া পীর সাহেবের মাজার
- নান্দাইল কাজী বাড়ী জামে মসজিদ
যাতায়াত
সম্পাদনাসড়কপথ
সম্পাদনাময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ হয়ে ভৈরব বাজারগামী আঞ্চলিক মহাসড়ক আর৩৬০ নান্দাইল উপজেলার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে নান্দাইল উপজেলা শহরকে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ শহরের সাথে যুক্ত করে। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে নান্দাইল চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বিআরটিসির দ্বিতল বাস সার্ভিস চালু করা হয়।[১৩]
রেলপথ
সম্পাদনানান্দাইল রেলওয়ে স্টেশন নান্দাইল উপজেল শহর থেকে প্রায় ৮ কিমি পূর্বে তাড়াইল সড়কের নান্দাইল রোড নামক স্থানে অবস্থিত। ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব হয়ে চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস ও ময়মনসিংহ-ভৈরবগামী বিভিন্ন লোকাল ট্রেন নান্দাইল স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাপাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ একদিকে আওয়ামী লীগের রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া, খালেক নওয়াজ খান এবং অন্যদিকে মুসলিম লীগের নুরুল আমিনের বাড়ি নান্দাইল উপজেলায় হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম থেকেই উভয় পক্ষ সক্রিয় হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে নান্দাইল"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ মাজহার, সোহেল। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস (প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সংস্করণ)। গতিধারা। পৃষ্ঠা ৯৬–১০১। আইএসবিএন 978-984-8946-35-0।
- ↑ "রাষ্ট্রপতির বাণী"। প্রাণোল্লাস: শতবর্ষ উদ্যাপন ২০১৫। চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ২০১৫। পৃষ্ঠা ৩।
- ↑ "নান্দাইল মুক্তিযুদ্ধ-শহীদ দিবস পালিত"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ নভেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০২০।
- ↑ মাজহার, সোহেল। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। গতিধারা। পৃষ্ঠা ১৮২-১৮৩। আইএসবিএন 978-984-8946-35-0।
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (এপ্রিল ২০১৮)। "নান্দাইল উপজেলার পটভূমি"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
- ↑ মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬০৬। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
- ↑ "ইউনিয়নসমূহ - নান্দাইল উপজেলা"। nandail.mymensingh.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০২০।
- ↑ আজিজুর রহমান ভূঞা (১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "নান্দাইল উপজেলা"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "Bangladesh Population and Housing Census 2011: Zila Report – Mymensingh" (পিডিএফ)। Table P01 : Household and Population by Sex and Residence, Table P05 : Population by Religion, Age group and Residence, Table P09 : Literacy of Population 7 Years & Above by Religion, Sex and Residence। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "Population Census Wing, BBS."। ২০০৫-০৩-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০০৬।
- ↑ "নান্দাইল-ময়মনসিংহ রুটে বিআরটিসি দ্বিতল বাস সার্ভিস উদ্বোধন"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ২৬ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০২০।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |