রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া (২৫ জানুয়ারি ১৯২৮–২৩ মার্চ ১৯৯৬) ছিলেন বাংলাদেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও ভাষাসৈনিক। অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার গভর্ণর। ময়মনসিংহ-১৩ ও ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তিনি পরিচিত।

রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া
ময়মনসিংহ-১৩ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৭৩ – ১৯৭৫
ময়মনসিংহ-৯ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৮৬ – ১৯৮৮
পূর্বসূরীহাবিব উল্লাহ সরকার
উত্তরসূরীখুররম খান চৌধুরী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম২৫ জানুয়ারি ১৯২৮
মৃত্যু২৩ মার্চ ১৯৯৬(1996-03-23) (বয়স ৬৮)
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া ১৯২৮ সালের ২৫ জানুয়ারি নান্দাইল উপজেলার মেরেঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওয়াফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।[] রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া ১৯৪৭ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হন।[]

রাজনীতিতে প্রবেশ ও ভাষা আন্দোলন

সম্পাদনা

আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ'র ঢাকা সফরের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত জনসভায় অংশ নেন। জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে উপস্থিত ছাত্রদের সাথে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া তা প্রত্যাখ্যান করেন।[]

১৯৫২ সালে ময়মনসিংহ জেলা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মনোনীত হন। সেসময় আন্দোলনে অবদান রাখায় আড়াই বছর কারাভোগ করেন।[] ১৯৫৪ সালে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন।[]

স্বাধীনতা যুদ্ধ

সম্পাদনা
 
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়লাভের পর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শামসুল হক এম.পি. (বাম থেকে দ্বিতীয়), সাথে রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া (ডান থেকে দ্বিতীয়) এবং বিগ্রেডিয়ার সনত সিং (ডান থেকে প্রথম)

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তার তত্ত্বাবধানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে অংশ নেন। এর আগে ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনের বীর সৈনিক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। সে সময় তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী কার্যক্রম

সম্পাদনা

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া (ময়মনসিংহ-১৩) নান্দাইল আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[] তিনি দীর্ঘকাল ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়াকিং কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া নান্দাইল সদরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শহীদ স্মৃতি আদর্শ (বর্তমানে ডিগ্রি) কলেজ প্রতিষ্ঠাতা করেন।

১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[][]

মৃত্যু ও সম্মাননা

সম্পাদনা

রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া ১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ বার্ধ্যকজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তার নামানুসারে ময়মনসিংহের স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়েছে "রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম"।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. পারভেজ, আলী আহসান খান (২০১৫)। "জ্যোতির্ময় নক্ষত্রের গল্প"। প্রাণোল্লাস: শতবর্ষ উদ্‌যাপন ২০১৫। চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৫১–৫২। 
  2. "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. "রফিক উদ্দীন ভূঁইয়া, আসন নং: ১৫৪, ময়মনসিংহ-৯, দল: আওয়ামী লীগ (নৌকা)"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২০