তান ইউন-শান (১০ অক্টোবর ১৮৯৮ - ১৯৮৩) ছিলেন একজন চীনা পণ্ডিত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা ভাষা অধ্যয়নের প্রাচীনতম কেন্দ্র, শান্তিনিকেতনের চীনা ভবনের প্রতিষ্ঠাতা-অধ্যক্ষ। চীন-ভারত সংস্কৃতির সেতুবন্ধনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াসকে সফল করতে জীবন উৎসর্গ করেন তিনি। []

তান ইউন-শান
জন্ম(১৮৯৮-১০-১০)১০ অক্টোবর ১৮৯৮
চালিং কাউন্টি, হুনান, চীন
মৃত্যু১৯৮৩
বুদ্ধ গয়া, বিহার ভারত
পেশাচীনা পণ্ডিত, চীন-ভারতীয় সাংস্কৃতিক কর্মী
জাতীয়তাচীনা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারদেশিকোত্তম (১৯৭৯)
দাম্পত্যসঙ্গীচ্যান নাই-ওয়েই
সন্তানতান চুং, তান চেং, তান লি, তান ওয়েন, তান ইউয়ান চামেলী,তান অজিত, তান অর্জুন

তান ইউন-শান ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর চীনের হুনান প্রদেশের চালিং কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন কনফুসিয়ান পণ্ডিত এবং শিক্ষকের কনিষ্ঠ সন্তান। বাড়িতেই তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। জীবনের প্রথম দিকে বাবা-মা দুজনকেই হারান তিনি। তিনি প্রথমে কাউন্টি লেভেল স্কুলে এবং তারপর জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি কনফুসিয়ান ক্লাসিক, প্রাচীন ও সমসাময়িক চীনা দর্শন ও সাহিত্য, চার রাজবংশের ইতিহাস এবং কবিতা ও উপন্যাসের প্রাচীন ও আধুনিক বইগুলি পড়ে ফেলেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি চাংশার হুনান টিচার্স কলেজ থেকে স্নাতক হন। কলেজে তান ইউন-শানের সহপাঠি ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও ৎসে-তুং[] তান ইউন-শান তারপর চীনা এবং পাশ্চাত্য উভয় পদ্ধতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই সঙ্গে তিনি বৌদ্ধশাস্ত্রে পাঠ গ্রহণের পাশাপাশি নানা পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি ও প্রকাশনা শুরু করেন। তিনি মাও ৎসে-তুং এর কিছু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। []

বিশ শতকের দুইয়ের দশকে চীনে গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে, অরাজনৈতিক তরুণ তান চীন ছেড়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন এবং চীনা সাহিত্যের কাজে অগ্রণী ভূমিকা নেন এবং স্থানীয় সংবাদপত্রে লেখালেখি করেন। সে সময়ের তিনি কয়েক মাস জোহরে অতিবাহিত করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ দ্বিতীয় বার চিন সফরে গিয়ে তার সিঙ্গাপুরে অবস্থানকালে চিনা তরুণ তান ইউন-শানের সাক্ষাৎ এবং নানা বিষয়ে কথাবার্তা হয়। শান্তিনিকেতনে বহু ভাষা সংস্কৃতির মিলনায়তন গড়ে তোলার আগ্রহে রবীন্দ্রনাথ তাকে শান্তিনিকেতনে শিক্ষকতায় যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। []

শান্তিনিকেতন

সম্পাদনা

চীনা ভবন স্থাপনা

সম্পাদনা
 
চীনা ভবন

তান ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে আসেন এবং চীনা স্টাডিজের অধ্যাপক হিসেবে বিশ্বভারতীতে যোগ দেন। তিনি মাত্র পাঁচজন ছাত্র নিয়ে চাইনিজ ক্লাস শুরু করেন। তিনি নিজেই সংস্কৃত শিখতে শুরু করেন। তিনি শান্তিনিকেতনে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের সঙ্গেও আলোচনা করেন। তিনি শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিলেন যে তার কাজের জন্য একটি পৃথক হল/বিল্ডিং প্রয়োজন কিন্তু বিশ্বভারতী, তখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অর্থের অভাব ছিল। ট্যান এই উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহের জন্য ঘুরে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি নিজেকে সমর্থন করার জন্য অদ্ভুত চাকরি নেন। তিনি সিঙ্গাপুর ও রেঙ্গুনে গিয়েছিলেন। তিনি তিব্বতে তাঁর মিশনে চীনের বিশেষ দূতের সাথে ছিলেন। দূত পথিমধ্যে মারা যান এবং তাই তান তার কাগজপত্র বহন করে লাসায় ত্রয়োদশ দালাই লামার কাছে হস্তান্তর করেন। তাকে মহাত্মা গান্ধীর জন্য একটি বার্তা দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি আহমেদাবাদের সবরমতি আশ্রমে প্রদান করেছিলেন। তিনি বৌদ্ধ তীর্থস্থান পরিদর্শন করেন এবং শান্তিনিকেতনে কিছুক্ষণ থাকার পর চীনে যান। []

বছর তিনেক শান্তিনিকেতনে কাজ করার পর ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চীনে এসে তিনি শান্তিনিকেতনে চীনা ভাষা চর্চা ও কেন্দ্র স্থাপনের সমর্থন এবং সহায়তা সংগ্রহে সফল হন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে নানকিংয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সিনো-ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটি। ভারতবর্ষে সোসাইটির সভাপতি করলেন রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের কেন্দ্রস্থলে চীনা ভবন নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ করেন। তান ইউন-শান আশ্রম-সচিব ও শিল্পী সুরেন্দ্রনাথ কর- এর সহযোগিতায় বৌদ্ধ স্থাপত্যশৈলী চৈত্যের অনুকরণে চীনা ভবন প্রতিষ্ঠার একটি নকশা তথা খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং সেটি কবির মন্তব্যসহ চিন ও ভারত দুই দেশেই চীনা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করেন।

তারপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে চীনা ভবন প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। সে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী, এমনকি রাষ্ট্র প্রধানের সহযোগিতা ও আন্তরিক সমর্থন লাভ করেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তান চীনা ভবন নির্মাণের জন্য সংগৃহীত পর্যাপ্ত অর্থ (পঞ্চাশ হাজার টাকা) এবং সিনো-ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটির আনুকূল্যে প্রাপ্ত এক লক্ষ টাকার বই নিয়ে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসেন। ওই বছরেই তার উদ্যোগে এবং রেকর্ড সময়ে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। নন্দলাল বসু , বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেইজ বিনায়ক মাসোজী এবং কলা ভবনের ছাত্রছাত্রীরা দেওয়ালচিত্র তথা ফ্রেস্কো এবং রিলিফ দিয়ে সাজসজ্জা গড়ে তোলেন। ভবনের চারপাশে তান ফুলের গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করেন।

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন চীনা ভবনের উদ্বোধন করেন রবীন্দ্রনাথ। উদ্বোধন করে তিনি বলেছিলেন-

"এদিনটি আমার কাছে বস্তুতই একটি স্মরণীয় দিন।..... ভারতবাসী ও চীনবাসীর মধ্যে সংস্কৃতি ও বন্ধুত্ব আদানপ্রদানের একটি ব্যবস্থার পত্তন আজ করা গেল।...."

[]

তান ইউন-শান চীনা ভবনের প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তিনি বিশ্বভারতীর ভয়াবহ আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বেতন গ্রহণে অসম্মত হলে, চীন সরকার তাঁকে সম্মাননা প্রদান করে। মহাত্মা গান্ধী এক বার্তায় রবীন্দ্রনাথকে বলেন: "চীনা ভবন হোক চীন ও ভারতের মধ্যে জীবন্ত যোগাযোগের প্রতীক"। পরবর্তীতে যুগল কিশোর বিড়লা চীনা ভবনে গবেষণার জন্য পাঁচ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করেন। []

নিবেদিত জীবন

সম্পাদনা

পরবর্তীতে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ শুরু হলে তান ইউন-শান চীনা জনগণের দুর্ভোগে বিচলিত হন। জু বেইহং নামক এক চীনা চিত্রশিল্পী, শান্তিনিকেতনে আসেন এবং চীনা চারুকলার ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে এক বছর কাজ করেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে, তানের উদ্যোগে,সিনো-ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটি তথা চীন-ভারতীয় সাংস্কৃতিক সোসাইটি জওহরলাল নেহরুর চীন সফরের আয়োজন করে। তান শান্তিনিকেতন, বিশেষ করে চীনা ভবন পরিদর্শনের জন্য চীন থেকে আসা বিভিন্ন প্রতিনিধিদল, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, পণ্ডিত এবং ছাত্রদের সফরের আয়োজন করতে থাকেন। চীনা সরকারও তানের অনুদানের অনুরোধ রক্ষা করেছে। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে, তান চীনা ভবনে আরো একটি তলা যুক্ত করার জন্য আরও অনুদান সংগ্রহ করেন। চীন সরকারের কাছ থেকে নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা অব্যাহত ছিল। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে, সিনো-ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটি বিশ্বভারতীতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য সাংস্কৃতিক সোসাইটি পাঁচ লক্ষ টাকার একটি বিশেষ অনুদান পাঠিয়েছিল। []

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে, চীনা সামরিক নেতা ও এক সময়ের জাতীয় সরকারের চেয়ারম্যান ও পরবর্তীতে প্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি চিয়াং কাই-শেক এবং মাদাম চিয়াং শান্তিনিকেতনের চীনা ভবন' পরিদর্শন করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হয়ে আরও পঞ্চাশ হাজার টাকার অনুদান ঘোষণা করেন। []

১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক উন্নতি হয়েছিল কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আদর্শের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হয়নি। চীনা ভাষা শিক্ষা অব্যাহত ছিল কিন্তু বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থের উপর গবেষণা উপেক্ষিত ছিল। বিষয়টি তান'কে বিব্রত করেছিল। চীনা সরকার তানের সম্মানী বন্ধ করে দেয় এবং তাকে বেতন গ্রহণে রাজি করানো হয়। তবে তার পক্ষে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল যে, চীনা ভবন অনেক নতুন নতুন পণ্ডিতদের আকর্ষণ করতে থাকে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত আমেরিকান সিনোলজিস্ট এবং চীনের ইতিহাসবিদ ডঃ লুথার ক্যারিংটন গুডরিচ ১৯৫৩-৫৪ খ্রিস্টাব্দে সাইনোলজির ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে আসেন। []

১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাই তান'কে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান। অন্যান্য চীনা নেতাদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি মাও সে তুং তার বন্ধুকে স্বাগত জানান। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে, ভারত ভ্রমণের সময়, চৌ এন-লাই শান্তিনিকেতনে আসেন। তিনি চীনা ভবন-এ রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিতে ষাট হাজার টাকার অনুদান প্রদান করেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে, যখন জওহরলাল নেহেরু শান্তিনিকেতনে তাঁর সমাবর্তন ভাষণে চীন-ভারত যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেন, তখন তান রোদন চেপে রাখতে পারেন নি। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেওয়া পর্যন্ত তান ইউন-শান যথারীতি শিক্ষকতা ও গবেষণার কাজ চালিয়ে যান।

তান ইউন-শান বুদ্ধ গয়ায় বিশ্ব বৌদ্ধ একাডেমী প্রতিষ্ঠার জন্য এক নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। বয়োবৃদ্ধ হওয়ার সত্ত্বেও তিনি রাস্তায় নেমে হংকং এবং সিঙ্গাপুরে অর্থ সংগ্রহ করেন। যে পরিমাণ অর্থ এই সময়ে সংগৃহীত হয় তার পরিমাণ – চীনা ভবন স্থাপনার সময়ে সংগৃহীত পরিমাণের বেশি ছিল। []

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে, তান ইউন-শান ৮৫ বছর বয়সে বিহারের বুদ্ধ গয়াতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [][]

প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার শোক বার্তায় বলেছেন–

"গুরুদেব এবং আমার পিতার প্রতি তাঁর স্নেহ ও শুভেচ্ছা ছিল। তিনি শান্তিনিকেতনের সাথে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছিলেন এবং ভারত ও চীনের সভ্যতার মধ্যে আরও ভাল বোঝাপড়ার জন্য প্রচুর অবদান রেখেছিলেন"।

[]

পুরস্কার

সম্পাদনা
  • ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে, জাতির প্রতি অনন্য সাধারণ অবদান রাখার জন্য চীন সরকার তাকে 'ভিক্টরি মেডেল' প্রদান করে। []
  • ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পুরস্কার সম্মান দেশিকোত্তম প্রদান করে। [][]

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ওয়েবসাইটে তান ইউন-শান সম্পর্কে উল্লেখ করেছে–

"অনন্য সাধারণ মার্জিত স্বভাবের বিনয়ী, সুবিবেচক ও উপসর্গিত পণ্ডিত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে বিশ্বভারতীর রূপ দিতে অক্লান্ত পরিশ্রমে ও নীরবে যে অবদান রেখেছেন, সেজন্য তিনি বিশ্বব্যাপী সম্মানিত। আধুনিক যুগে চীন ও ভারতের সভ্যতার মধ্যে প্রাচীন সাংস্কৃতিক সম্পর্ক পুনঃনির্মাণে তাঁর অগ্রণী প্রচেষ্টার জন্য তান ইউন-শানকে বিশ্ব স্মরণ করবে।" []

পরিবার

সম্পাদনা

তান ইউন-শান চীনের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় চীন ছেড়ে মালয়েশিয়ায় গেলে জোহোরের এক স্কুলের অধ্যক্ষ চ্যান নাই-ওয়েইয়ের সাক্ষাৎ হয়। তান ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বিবাহ করেন। তারা শান্তিনিকেতন আসেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তার স্ত্রী চ্যান নাই-ওয়েই মারা যান। তাদের সাত সন্তানের মধ্যে দুইটি কন্যা সন্তান। []

  • তাদের জ্যেষ্ঠ পুত্র- তান চুং, ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল মালায়ার জোহোর রাজ্যের মাতুয়াবাহারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে চীনে শিক্ষিত হন এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে আসেন। বিশ্বভারতী থেকে পিএইচডি শেষ করার পর, এনডিএ, খাদকভাসলাতে শিক্ষকতা করেন, তারপর যোগ দেন। দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে চাইনিজ ভাষার অধ্যাপক এবং জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের প্রধান হন। তার স্ত্রী হুয়াং ই-শু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা পড়ান। এদের পুত্র তান সিদ্ধার্থ, তান ইউন-শানের বড় পৌত্র। তিনি একজন চিকিৎসক-একজন নবজাতক-পেরিনেটাল শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ৪২ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা তার।[]
  • তাদের দ্বিতীয় পুত্র তান চেং, ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট চীনের চাংশায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সস্ত্রীক দেশ ত্যাগ করে শান্তিনিকেতনে আসেন। তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চীন ভবনে চীনা ভাষা শেখাতেন। তার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তান চেং-এর কন্যা তান মিন, তান ইউন-শানের বড় পৌত্রী। তিনি একজন লেখিকা।কমিউনিস্ট চীনের জীবন সম্পর্কে রচিত তার উপন্যাস- "দ্য লাস্ট রেড এম্পায়ার"[]
  • তাদের তৃতীয় পুত্র, তান লি ১৯৩৪ সালের ৩০ নভেম্বর চীনের সাংহাইতে জন্মগ্রহণ করেন। মাতাপিতার সঙ্গে শান্তিনিকেতনে আসেন। []
  • তাদের জ্যেষ্ঠ কন্যা তান ওয়েন, ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই চাংশায় জন্মগ্রহণ করেন। মাতাপিতার সঙ্গে শান্তিনিকেতনে আসেন। শান্তিনিকেতনে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে বাংলায় বিএ (অনার্স)এ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন।১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম চীনা মহিলা। []
  • তাদের দ্বিতীয় কন্যা তান ইউয়ান, ১৯৪০ সালের ৫ আগস্ট শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নাম রেখেছিলেন চামেলি। []
  • তাদের চতুর্থ পুত্র, তান অজিত, ১৯৪২ সালের ৩ এপ্রিল শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেন। []
  • তাদের পঞ্চম পুত্র,তান অর্জুন ১৯৪৩ সালের ৬ আগস্ট শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেন। []

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "চিন-ভারতের সেতু বেঁধেছিলেন কবি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-১৫ 
  2. "Tan Yun-Shan"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-১৫ 
  3. "In the Footsteps of Zuangzang: Tan Yun-Shan and India"Life sketch of Tan Yun-Shan by Tan Lee। Indira Gandhi National Centre for Arts। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৯ 
  4. "In the Footsteps of Zuangzang: Tan Yun-Shan and India"Life sketch of Tan Yun-Shan by Tan Lee। Indira Gandhi National Centre for Arts। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৯ 
  5. "The Chinese Mahatma:Tan Yun-Shan and for a forgotten 'plea for Asia"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-১৮ 
  6. "Tan Yun-Shan (1898-1983)"Great Personalities। Visva Bharati। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৯