চিয়াং কাই-শেক
চিয়াং কাই-শেক (৩১ অক্টোবর, ১৮৮৭ – ৫ এপ্রিল, ১৯৭৫) বিংশ শতাব্দীর একজন চীনা সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা। প্রমিত চীনা ভাষায় তিনি জিয়াং জিয়েশি বা জিয়াং ঝংঝেং নামেও পরিচিত। সান ইয়াৎ-সেনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী চিয়াং ছিলেন চীনা জাতীয়তাবাদী দল ও কুওমিঙটাং (কেএমটি) দলের একজন প্রভাবশালী সদস্য। তিনি কুওমিঙটাঙের হোয়ামপোয়া সামরিক অ্যাকাডেমির কমান্ড্যান্ট ছিলেন। ১৯২৫ সালে সানের মৃত্যু হলে তিনি সে পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯২৬ সালে চিয়াং সমগ্র চীনকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে উত্তর অভিযান পরিচালনা করেন এবং অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে পরো চীনের অঘোষিত নেতায় পরিণত হন[৩] তিনি ১৯২৮ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রী চীনের জাতীয় সামরিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চীনা রণাঙ্গন) তিনি চীনকে নেতৃত্ব দেন এবং সমগ্র চীনের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তিনি সান ইয়াৎ-সেনের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে সামাজিক রক্ষণশীলতা ও রাজনৈতিক একনায়কতন্ত্রের উপর জোর দেন। এছাড়া পশ্চিমা গণতন্ত্রকে ত্যাগ করে ঐতিহ্যগত চীনা সংস্কৃতিকে তুলে ধরার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
জেনারেলিসিমো চিয়াং কাই-শেক | |
---|---|
蒋中正 蔣介石 | |
চীনা জাতীয় সরকারের চেয়ারম্যান | |
কাজের মেয়াদ ১০ অক্টোবর, ১৯২৮ – ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৩১ | |
প্রিমিয়ার | তান ইয়াংকাই সুং সে-ভেন |
পূর্বসূরী | গু ওয়েইজুন (ভারপ্রাপ্ত) |
উত্তরসূরী | লিং সেন |
কাজের মেয়াদ ১ আগস্ট, ১৯৪৩ – ২০ মে, ১৯৪৮ ১০ অক্টোবর, ১৯৪৩ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত | |
প্রিমিয়ার | সুং সে-ভেন |
পূর্বসূরী | লিং সেন |
উত্তরসূরী | স্বয়ং (প্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে) |
জাতীয় সামরিক কাউন্সিল | |
কাজের মেয়াদ ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৩১ – ৩১ মে, ১৯৪৬ | |
পূর্বসূরী | পদ স্থাপিত |
উত্তরসূরী | পদ স্থগিত |
প্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ২০ মে, ১৯৪৮ – ২১ জানুয়ারি, ১৯৪৯ | |
প্রিমিয়ার | চ্যাং চুং ওয়াং ওয়েং-হাও সুং ফো |
উপরাষ্ট্রপতি | লি জংরেন |
পূর্বসূরী | স্বয়ং (চীনা জাতীয় সরকারের চেয়ারম্যান হিসেবে) |
উত্তরসূরী | লি জংরেন (ভারপ্রাপ্ত) |
কাজের মেয়াদ ১ মার্চ, ১৯৫০ – ৫ এপ্রিল, ১৯৭৫ | |
প্রিমিয়ার | ইয়েন সি-শান চেন চেং ইয়ু হাং-চুং চেন চেং ইয়েং চিয়া-কান চিয়াং চিং-কুয়ো |
উপরাষ্ট্রপতি | লি জংরেন চেন চেং ইয়েং চিয়া-কান |
পূর্বসূরী | লি জংরেন (ভারপ্রাপ্ত) |
উত্তরসূরী | ইয়েং চিয়া-কান |
প্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধান | |
কাজের মেয়াদ ৪ ডিসেম্বর, ১৯৩০ – ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৩১ | |
পূর্বসূরী | সুং সে-ভেন |
উত্তরসূরী | চেন মিংশু |
কাজের মেয়াদ ৯ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ – ১ জানুয়ারি, ১৯৩৮ | |
রাষ্ট্রপতি | লিং সেন |
পূর্বসূরী | ওয়াং জিংবেই |
উত্তরসূরী | সিয়াং-সি কুং |
কাজের মেয়াদ ২০ নভেম্বর, ১৯৩৯ – ৩১ মে, ১৯৪৫ | |
রাষ্ট্রপতি | লিং সেন |
পূর্বসূরী | সিয়াং-সি কুং |
উত্তরসূরী | সুং সে-ভেন |
কাজের মেয়াদ ১ মার্চ, ১৯৪৭ – ১৮ এপ্রিল, ১৯৪৭ | |
পূর্বসূরী | সুং সে-ভেন |
উত্তরসূরী | চ্যাং চুং |
১ম ও ৩য় মহাপরিচালক, কুওমিঙটাং | |
কাজের মেয়াদ ২৯ মার্চ, ১৯৩৮ – ৫ এপ্রিল, ১৯৭৫ | |
পূর্বসূরী | হু হানমিং |
উত্তরসূরী | চিয়াং চিং-কুও (সভাপতি, কুওমিঙটাং) |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ফেংহুয়া, ঝেজিয়াং | ৩১ অক্টোবর ১৮৮৭
মৃত্যু | ৫ এপ্রিল ১৯৭৫ তাইপে, তাইওয়ান | (বয়স ৮৭)
জাতীয়তা | চীনা |
রাজনৈতিক দল | কুওমিঙটাং (কেএমটি) |
দাম্পত্য সঙ্গী | মাও ফুমেই ইয়াও ইয়েচেং (উপপত্নী) চেন জিয়েরু সুং মে-লিং |
সন্তান | চিয়াং চিং-কুও চিয়াং ওয়েই-কুও (দত্তক) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | বাওডিং সামরিক অ্যাকাডেমি, রাজকীয় জাপানি সামরিক অ্যাকাডেমি প্রাথমিক বিদ্যালয় |
পেশা | সৈনিক (সাধারণ অফিসার) |
ধর্ম | খ্রিস্ট ধর্ম [১] |
পুরস্কার | অর্ডার অব ন্যাশনাল গ্লোরি, অর্ডার অব ব্লু স্কাই অ্যান্ড হোয়াইট সান, অর্ডার অব দি সেক্রেড ট্রাইপড (ফার্স্ট ক্লাস), লিজিয়ন অব মেরিট |
স্বাক্ষর | |
সামরিক পরিষেবা | |
ডাকনাম | "জেনারেলিসিমো" বা "লাল জেনারেল"[২] |
আনুগত্য | প্রজাতন্ত্রী চীন |
কাজের মেয়াদ | ১৯২৩–১৯৭৫ |
পদ | জেনারেলিসিমো |
যুদ্ধ | জিনহাই বিপ্লব, উত্তর অভিযান, চীন-তিব্বত যুদ্ধ, কুমাল বিদ্রোহ, জিনজিয়াঙে সোভিয়েত আগ্রাসন, চীনা গৃহযুদ্ধ, দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ, কুওমিঙটাং ইসলামী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন (১৯৫০-১৯৫৮) |
Chiang Kai-shek | |||||||||||||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 蔣介石 | ||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সরলীকৃত চীনা | 蒋介石 | ||||||||||||||||
| |||||||||||||||||
Chiang Chung-cheng | |||||||||||||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 蔣中正 | ||||||||||||||||
সরলীকৃত চীনা | 蒋中正 | ||||||||||||||||
|
চিয়াঙের পূর্বসূরী সান ইয়াৎ-সেন ছিলেন জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য জননেতা। নেতা হিসেবে চীনা কমিউনিস্টদের শ্রদ্ধা অর্জন করতে তিনি সমর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু পূর্বসূরীর ন্যায় চিয়াং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যর্থ হন। ১৯২৭ সালে সাংহাই গণহত্যার পথ ধরে চীনা জাতীয়তাবাদী ও কমিউনিস্ট গোষ্ঠী দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। এরপর চিয়াঙের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী গোটা চীন জুড়ে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৩৭ সালে জাপানি বাহিনী চীন আক্রমণ করলে তিনি সিসিপির সাথে একটি অস্থায়ী শান্তিচুক্তিতে সম্মত হতে বাধ্য হন। সম্মিলিত চীনা শক্তি প্রথম দিকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জয়ী হলেও ১৯৪৫ সালে জাপান আত্মসমর্পণ করার সময় সিসিপি আর কেএমটি উভয়ের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতার যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কোয়ালিশন সরকার গঠনের প্রস্তাব ব্যর্থ হলে গৃহযুদ্ধ নতুন করে আবার শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে পরাজিত করে। ইতিহাসবিদদের মতে কমিউনিস্টরা চিয়াং কাই-শেকের তুলনায় সামরিক কলাকৌশলের ক্ষেত্রে কম ভুল করেছিল। এছাড়া তিনি একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত সরকার গঠনের চেষ্টা করেন যা চীনের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে ক্ষেপিয়ে তোলে। এসবই ছিল জাতীয়তাবাদী শক্তির পরাজয়ের মূল কারণ। এছাড়া জাপানের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। অপরদিকে কমিউনিস্টরা তাদের আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী চেতনার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কৃষক ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল।[৪]
চিয়াঙের সরকার আর সামরিক বাহিনী তাইওয়ানে পশ্চাৎপদসরণ করে এবং সেখানে তিনি সামরিক আইন জারি করেন। সে সময়ে সরকারবিরোধী সকল ব্যক্তিকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয়। তার এই শাসনামল "শ্বেত-সন্ত্রাস" নামে কুখ্যাত। তাইওয়ানে অবস্থানকালে তিনি চীনা মূল ভূখণ্ড পুনরায় দখল করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চিয়াং কাই-শেক ১৯৭৫ সাল অবধি আমৃত্যু প্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি এবং কুওমিঙটাং দলের জেনারেল পদে বহাল ছিলেন। তিনি সর্বমোট ২২ বছর চীনের মূল ভূখণ্ড আর ৩০ বছর তাইওয়ান শাসন করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Jay Taylor. The Generalissimo: Chiang Kai-Shek and the Struggle for Modern China. (Cambridge, MA: Belknap Press of Harvard University Press, 2009)p. 2.
- ↑ Hannah Pakula (২০০৯)। The last empress: Madame Chiang Kai-Shek and the birth of modern China। Simon and Schuster। পৃষ্ঠা 346। আইএসবিএন 1-4391-4893-7। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৮, ২০১০।
- ↑ Zarrow, Peter Gue (২০০৫)। China in War and Revolution, 1895–1949। পৃষ্ঠা 230–231।
- ↑ Odd Arne Westad, Restless Empire: China and the World Since 1750 (2012) p 291