মানব অঙ্গসংস্থানবিদ্যা
মানব অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (ইংরেজি: Human anatomy) বলতে প্রধানত মানবদেহের গঠন সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে বোঝায়।[১] এটি সামগ্রিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (Gross anatomy) ও আণুবীক্ষণিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা এই দুই ভাগে বিভক্ত।[১]
সামগ্রিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (একে ইংরেজিতে Topographical anatomy, Regional anatomy বা Anthopotomy-ও বলে) হলো খালি চোখে দৃশ্যমান দৈহিক গাঠনিক পাঠ। আর আণুবীক্ষণিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা মানবদেহের আণুবীক্ষনিক গঠন-কাঠামো বিষয়ক পাঠ: কলাবিদ্যা (Histology) তথা কলার গঠন সংক্রান্ত পাঠ[১] এবং কোষবিদ্যা (Cytology) তথা কোষের গঠন সংক্রান্ত পাঠ এর অন্তর্ভুক্ত।
বিবর্তনবাদে এদের মূল নিহিত থাকার ফলে ভ্রুণবিদ্যা (Embryology), তুলনামূলক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (Comparative anatomy), তুলনামূলক ভ্রুণবিদ্যা (Comparative embryology)[১] -এর সঙ্গে মানব অঙ্গসংস্থানবিদ্যা নিবিড়ভাবে জরিত।
সকল প্রাণীর মতই মানবদেহ কতগুলো তন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত, যেগুলির প্রতিটি আবার কতগুলো অঙ্গ দ্বারা গঠিত। এই সকল অঙ্গ অনেকগুলো কলা দ্বারা তৈরি এবং কলা সমূহ বহু সংখ্যক কোষ ও ধাত্রের সমন্বয়ে গঠিত।
সময়ের আবর্তে বিরামহীনভাবে অন্ত্রগুলোর কাজ ও দেহের গঠনকে অনুধাবন করার মধ্য দিয়ে অঙ্গসংস্থানবিদ্যার ইতিহাস এগিয়েছে। গবেষণা পদ্ধতিরও নাটকীয় উন্নতি হয়েছে ২০শ শতকে; প্রাণীদেহ পরীক্ষার ক্ষেত্রে মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ হতে প্রযুক্তিগতভাবে আরও জটিল পদ্ধতির উদ্ভব ঘটেছে।
শিক্ষা
সম্পাদনাসাধারণত মেডিকেল ছাত্র, ফিজিওথেরাপিষ্ট, নার্স, প্যারামেডিক এবং জীববিজ্ঞানের কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের ছাত্ররা অঙ্গসংস্থানগত মডেল, কঙ্কাল, পাঠ্যবই, ছবি, লেকচার ও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে সামগ্রিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা ও আণুবীক্ষণিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। মাইক্রস্কোপের নিচে হিস্টোলোজিক্যাল প্রিপারেশন (বা স্লাইড) পর্যবেক্ষণ আণুবীক্ষণিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা (বা কলাতত্ত্ব) শিক্ষায় সহায়তা করে থাকে। জীবন্ত মানুষের উপর অস্ত্রোপচার না করলে খালি বাহ্যিক অঙ্গসংস্থান (surface anatomy) দেখা সম্ভব। অধিকন্তু, মেডিকেল ছাত্ররা মৃত মানবদেহ (Cadaver ক্যাডেভার) পরীক্ষণ ও ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে সামগ্রিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যা পাঠ নিয়ে থাকে। অঙ্গসংস্থানবিদ্যার পরিপূর্ণ ও কার্যকর জ্ঞান থাকা সকল চিকিৎসকের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, বিষেশত সার্জন এবং ডায়াগনস্টিক স্পেশালিষ্ট হিসাবে কর্মরত চিকিৎসকগণের জন্য, যেমন- হিস্টোপেথোলজী ও রেডিওলোজী।
মানব এ্যানাটমী, ফিজিওলোজী এবং বায়োকেমিস্ট্রি হলো বুনিয়াদি চিকিৎসা বিজ্ঞান। সাধারণত মেডিকেল স্কুলগুলোতে ছাত্রদেরকে এই বিষয়গুলো প্রথম বছরে পড়ানো হয়। মানব এ্যানাটমী আঞ্চলিক বা তন্ত্র আনুসারে পড়ান হয়[১], অর্থাৎ দেহের বিভিন্ন অঞ্চলানুসারে এ্যানাটমী শেখা যেমন মাথা ও বুক অথবা নির্দিষ্ট তন্ত্র অনুসারে অধ্যয়ন যেমন স্নায়ুতন্ত্র বা শ্বসনতন্ত্র। প্রধান এ্যানাটমীর পাঠ্যবই, গ্রে’স এ্যানাটমী, আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি অনুসরণ করে সাম্প্রতিককালে তান্ত্রিক বর্ণনা হতে আন্ঞ্চলিক বর্ণনা ধারায় রূপান্তরিত হয়েছে।[২][৩]
আঞ্চলিক বিভাগ সমূহ
সম্পাদনা- মস্তক(মাথা, Head) ও গ্রীবা (গলা, Neck)- "থোরাসিক ইনলেট" (অর্থাৎ বক্ষের প্রবেশপথ)-এর উপরের সবকিছু। বক্ষের প্রবেশপথ দুপাশে প্রথম পিঞ্জরাস্থি (পাঁজর), পিছনে প্রথম বক্ষ কশেরুকা ও সামনে স্টার্নাম দিয়ে ঘেরা।
- উর্ধ্ববাহু (উর্ধাঙ্গ, Upper limb)- এতে আছে হাত, কব্জি, কলাচী, কনুই, বাহু এবং স্কন্ধ (কাঁধ)।
- বক্ষ (বুক, Thorax)- থোরাসিক ইনলেট হতে মধ্যচ্ছদা (থোরাসিক ডায়াফ্রাম) পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা।
- উদর (পেট, (Abdomen)- মধ্যচ্ছদা (থোরাসিক ডায়াফ্রাম) হতে শ্রোণীচক্রের উপরের কানা (পেলভিক ব্রিম বা পেলভিক ইনলেট পর্যন্ত সবকিছূ।
- পৃষ্ঠ(পিঠ, Back)- মেরুদণ্ড ও তার অংশসমূহ, কশেরুকা (vertebrae) এবং আন্তঃকশেরুকীয় চাক্তি (inter vertebral disks) ও মেরুদণ্ডের দুপাশের পেশী (paraspinal muscles) ও তাদের আনুষঙ্গিক অংশ সমূহ।
- পেলভিস ও পেরিনিয়াম- পেলভিস হলো পেলভিক ইনলেট হতে পেলভিক ডায়াফ্রাম পর্যন্ত অংশ। পেরিনিয়াম হলো যৌনাঙ্গ ও পায়ু-এর মধ্যবর্তী অঞ্চল।
- নিম্নবাহু (নিম্নাঙ্গ, Lower limb)- ইঙ্গুইনাল লিগামেন্ট (অর্থাৎ কুঁচকি)-এর নিচ হতে সবকিছু; এতে নিতম্ব (পাছা, buttock), উরু(থোরা, thigh), জানু (হাঁটু, knee), জঙ্ঘা (পায়ের হাঁটু থেকে গোড়ালি অবধি অংশ, Shin), পদগ্রন্থি (গোড়ালি, ankle) এবং পদতল (পায়ের পাতা, feet) অন্তর্ভুক্ত।
প্রধান অঙ্গ ও তন্ত্র
সম্পাদনা- সংবহন তন্ত্র: হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালীর সাহায্যে রক্ত সারা দেহে সঞ্চালিত হয়।
- লসিকাতন্ত্র: কলা ও রক্ত প্রবাহের মধ্যে লসিকা (লিম্ফ) আদান-প্রদানের কজে নিয়োজিত, যা লসিকা এবং লসিকাগ্রন্থি ও লসিকানালী দ্বারা সম্পন্ন হয়; এর সাথে অনাক্রম্যতন্ত্র (প্রতিরক্ষাতন্ত্র)ও জড়িত যা শ্বেতকণিকা, টনসিল, এ্যাডেনয়েড, থাইমাস ও প্লীহা (স্প্লিন) এর সাহায্যে রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।
- পরিপাকতন্ত্র: লালাগ্রন্থি, ইসোফেগাস, পাকস্থলী, যকৃৎ, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয়, অন্ত্র (ইন্টেস্টাইন) সমূহ, মলাশয় ও পায়ু দ্বারা খাদ্য পরিপাক ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
- অন্তঃক্ষরা তন্ত্র: অন্তঃক্ষরা (এন্ডক্রাইন) গ্রন্থিসমূহ যেমন- হাইপোথেলামাস, পিটুইটারী, পিনিয়াল বডি, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড এবং অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিসমূহ, হতে উৎপন্ন হর্মোন দ্বারা দেহের বিভিন্ন কার্যাদি সম্পন্ন হয়।
- আচ্ছাদন তন্ত্র: ত্বক, চুল, নখ।
- পেশীতন্ত্র: পেশীর সাহায্যে নড়াচড়া করা হয়।
- স্নায়ুতন্ত্র: মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, প্রান্তদেশীয় স্নায়ু ও স্নায়ু সমূহের দ্বারা তথ্য সংগ্রহ, প্রেরণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।
- প্রজননতন্ত্র: যৌনাঙ্গ সমূহ।
- শ্বসনতন্ত্র: শ্বাস-প্রশ্বাসের অঙ্গ সমূহ- ফ্যারিংক্স, ল্যারিংক্স, ট্রাকিয়া, ব্রংকাই, ফুসফুস এবং মধ্যচ্ছদা।
- কঙ্কালতন্ত্র: হাড়, তরুণাস্থি, লিগামেন্ট ও টেন্ডনের মাধ্যমে দৈহিক গঠন ও প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত।
- রেচনতন্ত্র: তরল ভারসাম্য, ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য ও মূত্র নিষ্কাশনের কাজ বৃক্ক (কিডনি), গবিনী (ইউরেটার), মুত্রথলি এবং মূত্রনালী (ইউরেথ্রা) করে থাকে।
উপরিগত শারীরস্থান
সম্পাদনাসুপারফিশিয়াল এ্যানাটমী বা সারফেস এ্যানাটমী মানব অঙ্গসংস্থানবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যার সাহায্যে দেহের পৃষ্টতল হতে এ্যানাটমীকাল ল্যান্ডমার্কগুলোকে সহজেই চেনা যায়।[১] সুপারফিশিয়াল এ্যানাটমীর জ্ঞান দ্বারা চিকিৎসকগণ কোন অন্ত্রের অবস্থান ও সহযোগী অন্যান্য বস্তু সমূহের এ্যানাটমী সম্বন্ধে ধারণা লাভ করেন।
সাধারনে পরিচিত মানবদেহের উপরিগত অঙ্গ সমূহের প্রচলিত নাম সমূহ (নিম্নগামী) :
- মাথা —কপাল — চোয়াল — মুখ — গাল — থুতনী - চোখ - কান - নাক - মুখগহব্বর - দাঁত - জিভ - গলা - কন্ঠ
- গলা - ঘাড় — কাঁধ
- বাহু — কনুই — কবজি — হাত — আঙ্গুল — বৃদ্ধাঙ্গুলি
- শিরদাড়া —স্তন - বুক — বুকের খাঁচা
- পেট — নাভি - কুঁচকি
- কটি — শ্রোণী - পুং জননেন্দ্রিয় - অন্ডকোষ - ভগাঙ্কুর - যোনি - নিতম্ব — পা — ঊরু — হাঁটু — পায়ের গুল — গোড়ালি — গুল্ফ — চরণ — পদাঙ্গুলি।
দেহাভ্যন্তরস্থ অঙ্গ সমূহ
সম্পাদনাদেহাভ্যন্তরস্থ অঙ্গ সমূহের সাধারণ নাম:
এ্যাড্রেনাল গ্রন্থি—এ্যাপেন্ডিক্স—মুত্রথলী—মস্তিষ্ক—চোখ—পিত্তথোলী—হৃৎপিণ্ড— ইন্টেস্টাইন সমূহ—বৃক্ক—যকৃৎ—ফুসফুস— ইসোফেগাস —ডিম্বাশয়—অগ্নাশয়—প্যারাথাইরয়েড—পিটুইটারী—প্রসটেট—স্প্লিন—পাকস্থলী—অন্ডকোষ—থাইমাস—থাইরয়েড—শিরা—গর্ভাশয়
মস্তিষ্ক
সম্পাদনাঅ্যামিগডালা—ব্রেইন স্টেম—সেরিবেলাম—সেরিব্রাল কর্টেক্স—লিমবিক সিস্টেম—মেডুলা—মধ্যমস্তিষ্ক—পন্স মস্তিষ্কের অংশগুলো এবার দেখা যাক ব্রেইন এর প্রধান আর প্রাথমিক অংশগুলো কি কি |
বিবর্তনের ধাপগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক যত উন্নত হয়েছে সেরেব্রাম তত বড় হয়েছে | বা উল্টো করেও বলা যায় যে সেরেব্রাম যত বড় হয়েছে মস্তিষ্ক তত উন্নত হয়েছে | এই বড় আকারের সেরেব্রামের দরকার হয়েছে উন্নত ও জটিল কার্য সম্পন্ন করার জন্য, যেমন কথা বলা, স্মৃতি ধারণ, তথ্য সংশ্লেষণ ইত্যাদি | খুব ছোট এবং সরল শারীরবৃত্তীয় গঠনের যেসব প্রাণী তাদের ব্রেইন তো দূরের কথা, কেন্দ্রীয় কোনো স্নায়ুতন্ত্রও থাকেনা | তাদের স্নায়ুতন্ত্র বলতে যা থাকে তা হলো মানুষের হাঁটু ঝাঁকুনির মতো অতি সরল কিছু in-built " রিফ্লেক্স পাথ" এর নেটওয়ার্ক | উদাহরণ হিসাবে চ্যাপ্টাকৃমি বা নিম্নশ্রেনীর অমেরুদণ্ডি প্রানিদের কথা বলা যায় | এদের সারা শরীরে আছে এলেমেলোভাবে সংলগ্ন আর অনির্দিষ্টভাবে সংযুক্ত কিছু নিউরনের সরল নেটওয়ার্ক | কিছু কিছু অমেরুদণ্ডি প্রাণী যেমন চিংড়ি মাছেদের সামান্য উন্নত ব্যবস্থা থাকে | এদের সারা শরীরকে কয়েকটি প্রধান কাল্পনিক অংশে বিভক্ত করে (ছবিটা দেখলে আরো পরিষ্কার হবে), প্রত্যেকটা অংশের জন্য নিযুক্ত থাকে গুচ্ছাকারে সন্নিবিষ্ট কিছু "নিউরোনাল সেল বডি" র বিন্যাস | এই গুচ্ছাকার বিন্যাসকে বলা হয় গ্যাংলিয়া | প্রত্যেকটা গ্যাংলিয়া, তার সংশ্লিষ্ট অংশের নিউরাল নেটওয়ার্ককে পরিচালনা করে | গ্যাংলিয়াগুলোর একে অন্যের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই | এদের থেকে উন্নততর প্রাণীদের এই গ্যাংলিয়াগুলো পরস্পর যোগাযোগ তৈরী করে উদ্ভব করেছে সরল মস্তিষ্কের |
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের চিত্র যেসব প্রাণীর ব্রেইন আছে তাদের ব্রেইনের নিম্নোক্ত অংশগুলো থাকবেই : ব্রেইন স্টেম(Brain Stem) : মেডুলা(Medulla), পনস(Pons), মিড-ব্রেইন(Mid Brain) নিয়ে তৈরী অংশটাকে বলা হয় ব্রেইন স্টেম | মেডুলাটা আদতে হলো সুষুম্নাকান্ডের অপরের ভাগের স্ফিত অংশমাত্র | নিম্নপ্রজাতির প্রাণীর ক্ষেত্রে অবশ্য পনস বা মিড ব্রেইন থাকেনা | ব্রেইন স্টেম মূলত রিফ্লেক্স একশন অর্থাৎ প্রতিবর্ত ক্রিয়া, বিভিন্ন ধরনের স্বয়ংক্রিয় কাজ (হৃদস্পন্দনের হার, রক্তচাপ), বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন, আন্ত্রিক কার্যকলাপ (হজম, মুত্রত্যাগ) পরিচালনা করে | সেরেবেলাম(Cerebellum) : অবস্থান, দিক, মাত্র ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য এনালিসিস করে প্রাণীর ভারসাম্য বজায় রাখতে তথা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঠিক সঞ্চালনা পরিচালনা করে | হাইপোথ্যালামাস(Hypothalamus) আর পিটুইটারি গ্ল্যান্ড(Pituitary Gland) : এরা অন্ত্রের কার্য, শরীরের তাপমাত্রা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে | এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারগত আচরণও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, যেমন: খাদ্যগ্রহণ, পানীয়গ্রহণ, যৌনতা, আগ্রাসী মনোভাব, আনন্দ | সেরেব্রাম(Cerebrum) : একে সেরেব্রাল কর্টেক্স বা শুধু কর্টেক্সও বলা হয় | ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এই অংশের কাজ হলো শরীরের ইন্দ্রিয়গুলো থেকে তথ্য আহরণ করে সেই অনুযায়ী মোটর নিউরনগুলোর কাজের সূত্রপাত ঘটানো, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, স্মৃতি-ধারণ এবং চিন্তাশক্তি নামক জটিল প্রক্রিয়ার পরিচালন | আশ্চর্যরকমের একটা প্রক্রিয়া হলো এই 'চিন্তা' | কীভাবে এই প্রক্রিয়াটা সংঘটিত হয় মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে ? দেখা যাক | নিম্নশ্রেনীর প্রাণীরা, যেমন সরীসৃপ, পাখি, উভচর, জলচর; এরা প্রতিদিনের জীবনে অনেক আপাত জটিল কাজ করে থাকে | খাদ্য আহরণ, প্রজনন, ঘুমানো, আত্মরক্ষা ইত্যাদি | কিন্তু এই গুলো এরা কিন্তু সচেতন ভাবে করেনা | এগুলো এদের instinct বা প্রবৃত্তি | এবং এইসব প্রবৃত্তি মানুষের মধ্যেও স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান; কারণ মানুষ ও প্রাণী | কিন্তু ভাবনা, চিন্তা, গবেষণা এইসব প্রক্রিয়াগুলোর জন্ম মস্তিষ্কের কোন রহস্যময় অঞ্চলে ? সেটা জানার জন্য আগে জেনে নেই যে দৈনন্দিন এইসব প্রবৃত্তিমূলক কাজ (instinctual process) প্রানীদের দিয়ে করিয়ে নেয় মস্তিষ্কের কোন অঞ্চলগুলো | মস্তিষ্কের নিম্নভাগ
মস্তিষ্কের নিম্নভাগের ভেতরের ছবি প্রথমেই আসা যাক মস্তিষ্কের নিম্নাঞ্চলের দিকে | মেডুলা(Medulla) : মস্তিষ্কের অভিযোজনের প্রথম থেকেই থাকা এই অংশটি রক্তের চাপ, নিঃশ্বাস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে | এছাড়া বিভিন্ন সংবেদী অঙ্গ থেকে আসা সংকেতগুলো মস্তিষ্কের উর্ধাংশে সংবহন করতে সাহায্য করে | পনস(Pons) : এটি চলন এবং অবস্থান সম্পর্কিত সংকেতগুলো সেরিবেলাম থেকে কর্টেক্স এ বহন করে | এছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাস, স্বাদগ্রহণ, নিদ্রা এইসব কাজগুলো পরিচালনাতে সাহায্য করে | মিডব্রেইন(Mid Brain) : এই অংশটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য অংশগুলোকে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করে | এছাড়াও এটি চোখের নড়াচড়া, শ্রবণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে | এর মধ্যে একটা অংশ থাকে যার নাম সাবট্যানশিয়া নিগ্রা (Subtantia Nigra) | এটি কোনকারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়াতে কাঁপুনি চলে আসে | তখন সেটাকে পার্কিস্ন্সনস ডিজিজ বলে | বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী এই রোগের শিকার | থ্যালামাস(Thalamus) : বিভিন্ন সংবেদী অঙ্গ থেকে আসা সংকেতগুলোকে গ্রহণ করে বিচার করে যে ওই সংকেতগুলোর কোনটা কর্টেক্স এর কোন অঞ্চলে যাওয়া উচিত | সেই অনুসারে তাদের ঠিক ঠিক জায়গাতে পৌঁছাতে সাহায্য করে | হাইপথ্যালামাস(Hypothalamus) : এই অংশটি পিটুইটারি গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে | আর পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন যৌন প্রজনন, খাদ্য/পানীয় গ্রহণ, বৃদ্ধি, স্তন্যপায়ীদের দুধ তৈরী ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে | এছাড়া হাইপথালামাসের আরেকটি ভীষণ জরুরি কাজ হলো ব্যবহার বা আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণ | এমনকি শরীরের যে Biological Clock থাকে; যার কারণে দিন-রাত্রের আলো ও আঁধারের প্রভাবে প্রাণীরা ঘুমায় ও জাগে সেটাকেও নিয়ন্ত্রণ করে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশটি | ভারসাম্য রক্ষায় মস্তিষ্ক
কানের ভেতরের অংশ, বিশেষ একটা নার্ভ ও মস্তিষ্কের কিছু অংশ কে একত্রে ভেস্টিবিউলার সিস্টেম বলে |ভেস্টিবিউলার সিস্টেম মানুষের দৈহিক অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করে | এই অংশগুলোর মধ্যে আলাদা করে সেরেবেলাম সম্পর্কে একটু না বললেই নয় | কারণ প্রানিদেহের ভারসাম্য রক্ষার মতো অসাধারণ ও জটিল কাজটি সুসম্পন্ন করে এ | একে চলতি কথায় ইংরেজিতে Little Brain বলা হয় | এরকম নামকরণের কারণ এটি মস্তিষ্কের ২য় বৃহত্তম অংশ এবং মূল মস্তিষ্কের মতই এর মধ্যেও অনেক ভাঁজ ও খাঁজ থাকে | সুষুম্নাকান্ড থেকে আসা সংবেদী সংকেত, কর্টেক্স/বেসাল গ্যাংলিয়া থেকে মোটর ইনপুট, ভেস্টিবিউলার সিস্টেম থেকে থেকে আসা অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য; এই সমস্ত কিছু আহরণ করে প্রানিদেহের ভারসাম্য রাখার বা পারিপার্শ্বিকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া করানোর প্রক্রিয়াটা সুসম্পন্ন করে থাকে | ধরা যাক, আমরা আমাদের সামনের কম্পিউটারের মনিটরটা ছুঁতে চাইছি | খুব সুন্দর ভাবে ছুঁয়ে ফেলতে পারি আমরা সেটা | চোখ থেকে এবং ভেস্টিবিউলার সিস্টেম থেকে পাওয়া তথ্য গুলো আহরণ করে মস্তিষ্ক এমনভাবে আদেশ দেয় হাতের পেশীকে কে খুব মসৃনভাবে হাতটা এগিয়ে গিয়ে ছুঁয়ে ফেলে মনিটরটাকে | কোনো কারণে সেরেবেলাম ক্ষতিগ্রস্ত হলে হাতের মোশনটা আর মসৃন থাকতনা; কেঁপে কেঁপে এগোত | কারণ তখন কর্টেক্স হাতের পেশীকে কাটা কাটা আদেশ পাঠাত মনিটরের দিকে এগোনোর জন্য | ওই কাটা কাটা আদেশগুলোকে মসৃন করার কাজটাও সেরেবেলাম করে | এছাড়াও মানুষের ভাষার মসৃনতাও রক্ষা করে সেরেবেলাম | কারণ শব্দ উচ্চারণ করার জন্য ঠোঁটের এবং গলার পেশীর নিঁখুত চলনের প্রয়োজন হয় | মস্তিষ্কের উপরের দিকের গঠন
এবার দেখা যাক মস্তিষ্কের উপরের দিকের গঠন |
প্রস্থচ্ছেদে মস্তিষ্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশের অবস্থান অপরের অংশটাকে বলা হয় সেরেব্রাল কর্টেক্স | এটি মস্তিষ্কের সর্ববৃহৎ অংশ | এর বহির্ভাগ তৈরী গ্রে ম্যাটার (Grey Matter) দিয়ে আর অন্তর্ভাগ তৈরী হোয়াইট ম্যাটার (White Matter) দিয়ে | মস্তিষ্কের ক্ষেত্রফল মোটামুটি ২৩৩ থেকে ৪৬৫ বর্গইঞ্চির মধ্যে অর্থাৎ খবরের কাগজের ১টা থেকে ২টা পাতা পাতলে যতটা জায়গা নেবে | করোটি বা খুলির ঐটুকু জায়গার মধ্যে তাহলে কি করে থাকে পুরো মস্তিষ্ক ? স্থান সংকুলানের জন্য তাই কর্টেক্স কুঁচকে-মুঁচকে থাকে | সঙ্গত কারণেই তাই কর্টেক্স এ প্রচুর ভাঁজ অর্থাৎ fold ও খাঁজ অর্থাৎ groove থাকে | এই ভাঁজগুলোকে জাইরি(Gyri) এবং খাঁজগুলোকে সালসি(Sulci) বলে | এরকম কয়েকটা বড় বড় খাঁজ (Sulci) দিয়ে পুরো সেরেব্রাল কর্টেক্সটা কয়েকটি প্রধান অংশে ভাগ করা | এই ভাগ গুলোর আলাদা আলাদা কাজ আছে | সর্বোপরি, একটা বড় খাঁজ দিয়ে পুরো মস্তিষ্কটা দুটো আলাদা প্রধান ভাগ বা গোলার্ধে বিভক্ত করা | যদি মাথার ঠিক ওপর থেকে দেখা যেত তাহলে এই ব্যাপারটা পরিষ্কার দেখা যায় | এই দুটো গোলার্ধের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে কর্পাস ক্যালোসাম (Corpus Callosum) নামের একটা অংশ, যেটা তৈরী হোয়াইট ম্যাটার দিয়ে | যেমন ভাবে কোনো বাড়ির ভেতরে ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং করা থাকে ঠিক তেমনি ভাবে মস্তিষ্কের এই সমস্ত অংশও সংযুক্ত থাকে সংকেত আদান প্রদানের জন্য | পার্থক্য এটাই যে, এইক্ষেত্রে সংযোগ রক্ষা করে নিউরনগুলো | বড় বড় খাঁজ দিয়ে মস্তিষ্কের যে বিভিন্ন অঞ্চল বিভক্ত হয়েছে, সেগুলোর কাজ ও গঠন সম্পর্কে একটু জানা যাক:
বিভিন্ন lobe এর অবস্থান প্যারাইটাল লোব(Parietal Lobe) : সুষুম্নাকান্ড থেকে আসা নিউরন সমৃদ্ধ প্রচুর তন্তুর মতো জিনিস হাইপোথ্যালামাসের মধ্যে দিয়ে ঢুকে প্যারাইটাল লোব এর বিভিন্ন অঞ্চলে যুক্ত থাকে | এরা শরীরের বিভিন্ন অংশের বহিঃত্বকের " ম্যাপ " গঠন করে | এই ম্যাপের সাহায্যেই এই প্যারাইটাল লোব বহিঃত্বক থেকে আসা চাপ, স্পর্শ, ব্যথা ইত্যাদি সংবেদন সংশ্লেষ করে এবং সেই অনুযায়ী শরীরের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলোকে আদেশ প্রদান করে | প্যারাইটাল লোব এর পেছনের দিকে ওয়ের্নিকেস এরিয়া (Wernicke's Area) | ভাষা সংক্রান্ত শ্রবণ-দর্শন সংকেত সংশ্লেষণে এর গুরুত্ব অপরিসীম | এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেনসরি এফেসিয়া (Sensory Aphasia) নামের রোগ হয় | এই রোগগ্রস্থ ব্যক্তি ভাষা বুঝতে পারেনা কিন্তু দুর্বোধ্য শব্দ উচ্চারণ করতে পারে মুখে | ফ্রন্টাল লোব (Frontal Lobe) : এই অংশটি মানুষের চিন্তা, বোধ, মনন ইত্যাদি জিনিসগুলো নিয়ন্ত্রণ করে | চলন, গমন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া ইত্যাদি কাজগুলোকে বলা হয় মোটর ফাংশন (Motor Function) | এই মোটর ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে ফ্রন্টাল লোবের একদম পেছনের দিকে অর্থাৎ প্যারাইটাল লোব এর সীমানার কাছে থাকা মোটর সেন্টার(Motor Center) | প্যারাইটাল লোব এর সোমাটোসেনসরি (SomatoSensory) অংশ থেকে মোটর সংকেত আহরণ করে ফ্রন্টাল লোব এবং প্রয়োজন অনুযায়ী মোটর ফাংশনের সূচনা করে | এর মধ্যেও শরীরের বিভিন্ন অংশের মোটর ম্যাপ থাকে | ফ্রন্টাল লোবের বাম দিকে ব্রোকাস এরিয়া (Broca's Area) বলে একটা অংশ থাকে | এটি ভাষা বা শব্দ উচ্চারণের জন্য প্রয়োজনীয় মোটর ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে | কোনো মানুষের এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মোটর এফেসিয়া (Motor Aphasia) রোগ হয় | এই রোগ হলে সেনসরি এফেসিয়া রোগের ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটে | এতে মানুষটি ভাষা বা শব্দ বুঝতে পারে ঠিকই কিন্তু কোনো শব্দ উপযুক্ত কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারেনা | অক্সিপিটাল লোব(Occipital Lobe) : এই অংশটি চোখ থেকে আসা দৃশ্য-সংকেতকে সরাসরি গ্রহণ ও সংশ্লেষ করে | এই সংকেতকে এরপর প্যারাইটাল লোব এর ওয়ের্নিকেস এরিয়া আর ফ্রন্টাল লোব এর মোটর সেন্টারে সংযুক্ত করে | আরেকটা যে জরুরি কাজ এটা করে; রেটিনার ওপর বাইরের জগতের যে উল্টো ছবি পড়ে সেটাকে ঠিকঠাক করার কাজ | টেম্পোরাল লোব(Temporal Lobe) : অক্সিপিটাল লোব এর কাজের সাথে এর মিল আছে | এটি কান থেকে শব্দ-সংকেত গ্রহণ করে সংযুক্ত করে প্যারাইটাল লোব এর ওয়ের্নিকেস এরিয়া আর ফ্রন্টাল লোব এর মোটর সেন্টারে | টেম্পোরাল লোবের ভেতরে থাকা বেসাল গ্যাংলিয়া (Basal Ganglia) নামের অংশটি সেরিবেলামের সাথে একসাথে কাজ করে শরীরের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সঞ্চালনকে (যেমন আঙ্গুলের ডগা দিয়ে কিছু ছোঁয়া) পরিচালনা করে | এর ভেতরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো লিম্বিক সিস্টেম (Limbic System) | সিন্গুলেট জাইরাস(Cingulate Gyrus), কর্পাস ক্যালোসাম(Corpus Callosum), ম্যামিলারী বডি(Mammillary Body), অলফ্যাক্টরি ট্র্যাক্ট(Olfactory Tract), এমিগডালা(Amygdala) এবং হিপ্পোক্যাম্পাস(Hippocampus) অংশ গুলোকে একত্রে লিম্বিক সিস্টেম বলা হয় | মানুষের স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি পরিচালনা করে হিপ্পোক্যাম্পাস| এমিগডালা মানুষের সামাজিক ও যৌন আচরণ এবং অন্যান্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে | ইনসুলা(Insula) নামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আছে যেটি ব্রেইন স্টেম এর স্বয়ংক্রিয় কাজগুলোর ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে | উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যখন আমরা কোনো কারণে নিজে থেকেই নিঃশ্বাস বন্ধ করি তখন ইনসুলা থেকে সংকেত প্রবাহ গিয়ে মেডুলার শ্বাস কেন্দ্রকে চাপা দিয়ে দেয় | এছাড়া ইনসুলা স্বাদ-সংকেতও সংশ্লেষ করে | এটি টেম্পোরাল আর ফ্রন্টাল লোবকেও আলাদা করে |
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কাজ সুরক্ষা ব্যবস্থা
এবার এই জটিল এবং উন্নত প্রসেসিং সিস্টেম টা চোট-আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য কি ব্যবস্থা আছে শরীরে সেটা একটু দেখা যাক |
মস্তিষ্কের সুরক্ষা ব্যবস্থা আমাদের মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকান্ড ঢাকা থাকে মেনিনজেস(Meninges) নামের সহনশীল একধরনের পর্দাসদৃশ আবরণ দিয়ে, যাতে ঐসব গুরুত্বপূর্ণ এবং অতি নরম অঙ্গ গুলো মেরুদন্ডের হাড় বা খুলির শক্ত আবরণের সাথে ঘষা থেকে বাঁচে | এই সুরক্ষা অধিকতর নিশ্চিত করার জন্য খুলি ও সুষুম্নাকান্ডের ভেতরটা সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইড(CerebroSpinal Fluid) দিয়ে পূর্ণ থাকে | ঘিলু ও সুষুম্নাকাণ্ড আসলে ওই ফ্লুইডের মধ্যে ভাসতে থাকে | এই সুরক্ষা তরলটি নিরন্তর তৈরী হতে থাকে মস্তিষ্কের মধ্যে থাকা করোয়েড প্লেক্সাস টিস্যু (Choroid Plexus Tissue) দ্বারা | তৈরী হয়ে এটি মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকান্ডের মাঝের বিভিন্ন ফাঁকফোকর বেয়ে নামতে থাকে যথাযথ জায়গায় পৌঁছানোর জন্য | এই সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইড কে রক্তের সাথে মিশে যাওয়া থেকে বিরত রাখে ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার(Blood Brain Barrier)|
মানুষ অন্যান্য যেকোনো প্রাণীর তুলনায় দুর্বল হওয়া সত্বেও লক্ষ কোটি বছর ধরে তৈরী হওয়া এই অত্যাশ্চর্য তন্ত্রটিই মানুষকে করে তুলেছে সমগ্র প্রাণীজগতের শাসক | এরপরের টিউনে আমরা জানব পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে এই মস্তিষ্ক তথা চিন্তা ভাবনা কীভাবে আলাদা হয়ে যায় | কীভাবে একই গঠনের মস্তিষ্ক আলাদা আলাদা রকম ভাবে চালনা করে পুরুষ-নারীকে | কি করে ভ্রুনকে গড়ে তোলে আলাদা দুটো যৌন অবয়ব হিসাবে |
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "Introduction page, "Anatomy of the Human Body". Henry Gray. 20th edition. 1918"। অজানা প্যারামিটার
|accessyear=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|accessdaymonth=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "Publisher's page for Gray's Anatomy. 39th edition (UK). 2004. ISBN 0-443-07168-3"। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০০৭। অজানা প্যারামিটার
|accessdaymonth=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|accessyear=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ "Publisher's page for Gray's Anatomy. 39th edition (US). 2004. ISBN 0-443-07168-3"। অজানা প্যারামিটার
|accessyear=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|accessdaymonth=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
- "Anatomy of the Human Body". 20th edition. 1918. Henry Gray. In public domain.
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- এ্যানাটমী ব্যাবচ্ছেদ ভিডিও
- ই-এ্যানাটমী - সমগ্র মানবদেহের মিথস্ক্রিয় মানচিত্র ক্রস-সেকশনাল এ্যানাটমী।