মানব দেহ
মানব দেহ হল একটি মানুষের পূর্ণাঙ্গ দেহ কাঠামো যা মাথা, ঘাড়, ধড় (যাতে অন্তর্ভুক্ত হলো বক্ষ এবং পেট), বাহু এবং হাত, পা এবং পায়ের পাতা। মানব দেহের প্রতিটি অংশই বিভিন্ন ধরনের কোষ দ্বারা গঠিত, যা জীবনের মৌলিক একক।[১]
মানব দেহ | |
---|---|
বিস্তারিত | |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | কর্পাস হিউম্যানাম |
মে-এসএইচ | D018594 |
টিএ৯৮ | A01.0.00.000 |
টিএ২ | 96 |
এফএমএ | FMA:20394 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
পরিণত অবস্থায়, মানবদেহের কোষের সংখ্যা থাকে গড়ে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন। এই সংখ্যাটিকে মানবদেহের অন্যতম উপাত্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং পরবর্তী ধাপের অন্যান্য হিসেবনিকেশের সূচনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেহের সকল অঙ্গের এবং সকল প্রকারের কোষের সংখ্যাকে যোগ করে এই সংখ্যাটি নির্ণয় করা হয়েছে।[২] মানব বেশ কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত যাদের মধ্যে অন্যতম হলো কার্বন, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস। আশ্চর্যের কথা এই যে অন্যান্য মানবেতর প্রাণীর দেহগঠনের সঙ্গে মানুষের দেহ- গঠনের সাদৃশ্য অতি নিবিড়। সূক্ষ্ম থেকে স্থূল প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই সাদৃশ্য প্রকট। যেমন সমস্ত প্রাণীর মতো মানব দেহেরও মৌলিক একক সেই সেল বা কোষ। অসংখ্য কোষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে টিসু বা কলা, কলার সমন্বয়ে তৈরী হয় অরগ্যান বা যন্ত্র, বিভিন্ন যন্ত্র একযোগে তৈরী করে সিস্টেম বা তন্ত্র আর একাধিক তন্ত্রের মিলিত রূপই দেহ। ব্যাপারটিকে এইভাবে দেখানো যায়- কোষ (Cell) > কলা (Tissue) > যন্ত্র (Organ) > তন্ত্র (System) > দেহ(Body)।[৩]
মানবদেহ নিয়ে অধ্যয়নের প্রধান দুটি শাখা হলো শারীরস্থান এবং শারীরবিদ্যা। মানব দেহে প্রায়শই কিছু অঙ্গসংস্থানিক ও রোগনির্ণয়-ভিত্তিক বৈচিত্র্য ও অনিয়মিত অস্বাভাবিকতা দেখা যায় যা শনাক্ত করার প্রয়োজন পড়ে। শারীরবিদ্যা দেহের অঙ্গতন্ত্রের এবং অঙ্গের কার্যপ্রণালির দিকে নজর দেয়। মানবদেহের বহু তন্ত্র ও কার্যপ্রণালি দৈহিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের জন্য পারস্পরিকভাবে সম্পর্ক তৈরি করে।
কাঠামো
সম্পাদনাকঙ্কালের গঠন শরীরের প্রায় সম্পূর্ণ আকার প্রদান করে এবং এক জীবদ্দশায় খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না। সাধারণ দেহ কাঠামো (এবং মহিলাদের দেহ কাঠামো) পেশির ও চর্বি টিস্যুর বিন্যাস দ্বারা প্রভাবিত এবং বিভিন্ন প্রকারের হরমোনের দ্বারা পরিচালিত হয়। গড়পড়তা হিসাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের উচ্চতা হয় প্রায় ১.৭-১.৮ মিটার (৫'৭-৫'১১) এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার উচ্চতা হয় প্রায় ১.৬-১.৭ মিটার (৫'২-৫'৭)। মানবদেহের উচ্চতা ব্যাপকভাবে জিন ও খাদ্যাভ্যাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। শরীরের ধরন এবং গঠন জেনেটিক্স, খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রমের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। মানব দেহে বেশ কিছু দেহ গহ্বর রয়েছে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গহ্বরটি হল অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটি বা উদরীয় গহ্বর। এই গহ্বরগুলো দেহের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে ধারণ করে, উদাহরণস্বরূপ সুষুম্না কাণ্ড যা মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকুলার তন্ত্রে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুয়িড এর উৎপত্তি ও প্রবাহের মাঝে সমন্বয় সাধন করে। এছাড়াও সমস্ত শরীর জুড়ে আরও অনেক গহ্বর রয়েছে যেগুলোর নাম সাইনাস, এগুলো বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। সাইনাস বলতে সাধারণত নাসারন্ধ্রের নিকটবর্তী সাইনাসকেই বুঝানো হয় যা সাইনুসাইটিস নামক অবস্থার জন্য দায়ী। নাসারন্ধ্রের নিকটবর্তী সাইনাস হলো মাথার করোটি খুলিতে অবস্থিত চার জোড়া গুরুত্বপূর্ণ বায়ুথলি। এই বায়ুপূর্ণ শূন্যস্থানগুলো দুই চোখের পাশে একটু পেছনে গভীরে এবং নাসাগহ্বরের দুই পাশে জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে।
গঠন
সম্পাদনাএকজন গড় প্রাপ্তবয়স্ক মানব দেহে প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লিটার রক্ত এবং প্রায় ১০ লিটার অন্তস্থ তরল পদার্থ থাকে।
মানবদেহের গঠন প্রসঙ্গে এর পানির পরিমাণ, বিভিন্ন পদার্থের পরিমাণ, কলার ধরন বা উপাদানের ধরন নিয়ে আলোচনা করা হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানব দেহে ৬০% পানি থাকে, যা ওজন ও আয়তন উভয় দিক থেকেই শরীরের মোট উপাদানের অনেক বড় একটি অংশ। পানির পরিমাণ বয়সভেদে বিভিন্ন হয়, যা নবজাতকের ক্ষেত্রে ৭৫% এবং স্থূলকায় ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৪৫% (এই সংখ্যাগুলো প্রয়োজন অনুসারে পরিসংখ্যানিক গড় হিসাব)।
মানব দেহে কোষের সংখ্যা শুধু মানুষের নিজেরই নয়, বরং মানবদেহে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া, আর্কিয়া, এবং মেথানোজেন্সের সংখ্যাও এতে অন্তর্ভুক্ত, যেমন Methanobrevibacter smithii। এর একটা বড় অংশই আসে পাকস্থলী ও পরিপাক নালী থেকে। মানবদেহের ত্বক ও শরীরের অন্যান্য অংশে অবস্থিত সকল অণুজীবের সংখ্যাকে একত্রে হিউম্যান মাইক্রোবায়োম বলা হয়।
মানবদেহের বিভিন্ন উপাদানের অনুপাতের প্রসঙ্গে এর মুখ্য, গৌণ এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়। উপাদানের প্রকরণ আলোচনার প্রসঙ্গে পানি, আমিষ, সংযোজক কলা, চর্বি, শর্করা এবং হাড়ের উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়।
তন্ত্র
সম্পাদনামানব দেহ বহু আন্তঃসম্পর্কিত তন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি তন্ত্র নিজস্ব ও অন্যান্য অঙ্গতন্ত্র এবং সমস্ত শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখে। প্রতিটি তন্ত্রের দুই অথবা ততোধিক অঙ্গ রয়েছে, যেগুলো হল কিছু নির্দিষ্ট কোষকলার কার্যগত সমাবেশ। তন্ত্রগুলো বিচ্ছিন্নভাবে কোন কাজ করে না, এবং ব্যক্তির ভাল থাকা সমস্ত শরীরের আন্তঃসম্পর্কিত তন্ত্রসমূহের ভালো থাকার উপর নির্ভর করে। কিছু সমন্বিত তন্ত্রকে তাদের যৌথ নামে নির্দেশ করা হয়, যেমন স্নায়ুতন্ত্র ও অন্তঃক্ষরা তন্ত্রকে একত্রে স্নায়ু-অন্তঃক্ষরা তন্ত্র বলে ডাকা হয়।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Cell Movements and the Shaping of the Vertebrate Body in Chapter 21 of Molecular Biology of the Cell fourth edition, edited by Bruce Alberts (2002) published by Garland Science.
The Alberts text discusses how the "cellular building blocks" move to shape developing embryos. It is also common to describe small molecules such as amino acids as "molecular building blocks". - ↑ Bianconi, E. Piovesin, A. et al. Annals of Human Biology 2013 Nov–Dec;40(6) 463-71 PMID 23829164
- ↑ উচ্চমাধ্যমিক জীববিজ্ঞান (শারীরবিদ্যা): তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর ১৯৭৬, পৃঃ ২
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Raincoast Books (২০০৪)। Encyclopedic Atlas Human Body। Raincoast Books। আইএসবিএন 978-1-55192-747-3।
- Daniel D. Chiras (১ জুন ২০১২)। Human Body Systems: Structure, Function, and Environment। Jones & Bartlett Publishers। আইএসবিএন 978-1-4496-4793-3।
- Adolf Faller; Michael Schünke; Gabriele Schünke (২০০৪)। The Human Body: An Introduction to Structure and Function। Thieme। আইএসবিএন 978-1-58890-122-4। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - Richard Walker (৩০ মার্চ ২০০৯)। Human Body। Dk Pub। আইএসবিএন 978-0-7566-4545-8।
- DK Publishing (১৮ জুন ২০১২)। Human Body: A Visual Encyclopedia। আইএসবিএন 978-1-4654-0143-4।
- DK Publishing (৩০ আগস্ট ২০১০)। The Complete Human Body: The Definitive Visual Guide। আইএসবিএন 978-0-7566-7509-7।
- Saddleback (১ জানুয়ারি ২০০৮)। Human Body। Saddleback Educational Publ। আইএসবিএন 978-1-59905-234-2।
- Babsky, Evgeni; Boris Khodorov; Grigory Kositsky; Anatoly Zubkov (১৯৮৯)। Evgeni Babsky, সম্পাদক। Human Physiology, in 2 vols.। Translated by Ludmila Aksenova; translation edited by H. C. Creighton (M.A., Oxon)। Moscow: Mir Publishers। আইএসবিএন 5-03-000776-8।
- Sherwood, Lauralee (২০১০)। Human Physiology from cells to systems (Hardcover) (7 সংস্করণ)। Pacific Grove, CA: Brooks/cole। আইএসবিএন 978-0-495-39184-5।
- Nikoletseas, Michael (২০১০)। Cranial Nerves for Medical Students: with clinical correlations। আইএসবিএন 978-1453812945।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- The Book of Humans (from the early 18th century)
- Man and His Bodies (1896)
- 3D Human Body: Explore the human body in 3D - MSN Health & Fitness