আগলাবি রাজবংশ
আগলাবি রাজবংশ (আরবি: الأغالبة) হলো আফ্রিকা শাসনকারী একটি আরব রাজবংশ।[১] এই রাজবংশ আব্বাসীয় খলিফার পক্ষে হয়ে শাসন করত। তাদের শাসনকাল এক শতাব্দীর মত চালু ছিল। এরপর ফাতেমীয়রা আগলাবিদের ক্ষমতাচ্যুত করে গোটা আগলাবি রাজ্য নিজেদের কর্তৃত্বে নিয়ে নেয়।[১]
ঐতিহাসিক আরব রাজ্য এবং রাজবংশ | ||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| ||||||||||||||||
মাশরিক রাজবংশ
| ||||||||||||||||
ইতিহাস
সম্পাদনা৮০০ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদ বনু তামিম গোত্রের এক খোরাসানীয় আরব কমান্ডারের ছেলে ইবরাহিম ইবনুল আগলাবকে ইফ্রিকিয়ার আমির হিসেবে নিয়োগ দেন।[২] মুহাল্লাবিদের পতনের পর সৃষ্ট নৈরাজ্যের কারণে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও ত্রিপলিতানিয়ার অংশ নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছিল।[৩] স্বাধীনভাবে রাজ্যপরিচালনা করলেও আগলাবিরা আব্বাসীয়দের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করতেন।
আগলাবিদের সাত্থে কর্ডোবা আমিরাতের রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্ব্ব থাকলেও আগলাবিদের সিসিলি জয়ের সময় স্পেনের মুসলিমরা আসবা ইবনে ওয়াকিলের অধীনে নৌবহর পাঠিয়ে সাহায্য করেছিল। ইবনে কাসিরের বিবরণ অনুযায়ী উমাইয়া ও আগলাবিদের যৌথ বাহিনীতে মোট ৩০০ জাহাজ উপস্থিত ছিল।[৪]
কাইরাওয়ানের বাইরে আল আব্বাসিয়া নামক নতুন রাজধানী স্থাপন করা হয়েছিল। মালিকি আইনবিদরা আগলাবি শাসকদের অনেক কাজকর্মকে ইসলাম বহির্ভূত হিসেবে দেখতেন এবং মুসলিম বার্বারদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাদের সমালোচনা থেকে দূরে থাকা নতুন রাজধানী করার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। আগলাবিরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সেচব্যবস্থা এবং সরকারি ভবন ও মসজিদ গড়ে তুলেছিলেন।[৩]
জিয়াদাতউল্লাহর অধীনে ৮২৪ সালে একটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ৮৩৬ সাল নাগাদ বার্বারদের সাহায্য ছাড়া এর সমাধান হয়নি। ৮২৭ সালে আসাদ ইবনুল ফুরাত সিসিলি জয় শুরু করেন। তবে এই জয় ধীরে সমাপ্ত হয়েছিল। ৯০২ সালে শেষ বাইজেন্টাইন আউটপোস্ট দখল করে নেয়া হয়। ইটালির মূল ভূখন্ডের অভিযানের সময় ৮৪৬ সালে রোম আক্রমণ করা হয়।[৫] ধীরে ধীরে আগলাবিরা সিসিলির আরব সেনাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং সেখানে কালবি রাজবংশের উত্থান ঘটে।
আহমেদ ইবনে মুহাম্মদ আল আগলাবির শাসনামলে সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌছায়। ইফ্রিকিয়া এসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল ছিল। উর্বর কৃষিজমি এবং রোমানদের সেচব্যবস্থার আরো উন্নয়ন করার ফলে উন্নতি সাধিত হয়। এই স্থান ইসলামি বিশ্ব এবং বাইজেন্টিয়াম ও ইটালির মধ্যে ব্যবসার মূল কেন্দ্র হয়ে উঠে। কাইরাওয়ান ছিল মাগরেবের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী শিক্ষাকেন্দ্র। অনেক কবিরা এখানে সমবেত হতেন। আগলাবি আমিররা উকবা মসজিদের সংস্কারসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে অর্থব্যয় করেছিলেন। এছাড়াও আগলাবি রাজ্যে আব্বাসীয় স্থাপত্য ও বাইজেন্টাইন স্থাপত্যের সমন্বয়ে নতুন স্থাপত্যশৈলীর জন্ম হয়।[৬]
আগলাবিদের অবনতি
সম্পাদনাইবরাহিম ইবনে আহমাদের শাসনের সময় আগলাবি রাজবংশের অবনতি শুরু হয়। মিশরের তুলুনিরা আগলাবিদের উপর আক্রমণ চালায়। এছাড়াও বার্বাররা বিদ্রোহ করে। ৮৯৩ সালে আগলাবিদের উৎখাত করার জন্য কুতামা বার্বারদের মধ্যে একটি শিয়া ফাতেমী আন্দোলন শুরু হয়। আবদুল্লাহ আল মাহদি বিল্লাহ কাইরাওয়ান ও রাকাদা দখল করেন এবং জনগণের কাছ থেকে আনুগত্যের শপথ আদায় করেন। ৯০৯ সাল নাগাদ আগলাবি রাজবংশ ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং ফাতেমীয়রা ক্ষমতায় আসে।[৭]
আগলাবি শাসকগণ
সম্পাদনা- ইবরাহিম ইবনুল আগলাব ইবনে সেলিম (৮০০-৮১২)
- আবদুল্লাহ ইবনে ইবরাহিম (৮১২-৮১৭)
- জিয়াদাতউল্লাহ ইবনে ইবরাহিম (৮১৭-৮৩৮)
- আল আগলাব আবু ইকাল ইবনে ইবরাহিম (৮৩৮-৮৪১)
- আবুল আব্বাস মুহাম্মদ ইবনে আল আগলাব আবি আফফান (৮৪১-৮৫৬)
- আহমেদ ইবনে মুহাম্মদ আল আগলাব (৮৫৬-৮৬৩)
- জিয়াদাতউল্লাহ ইবনে আবিল আব্বাস (৮৬৩)
- আবুল গারানিক মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ (৮৬৩-৮৭৫)
- আবু ইসহাক ইবরাহিম ইবনে আহমাদ (৮৭৫-৯০২)
- আবুল আব্বাস আবদুল্লাহ ইবনে ইবরাহিম (৯০২-৯০৩)
- আবু মুদার জিয়াদাতউল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ (৯০৩-৯০৯)
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ C.E. Bosworth, The New Islamic Dynasties, (Columbia University Press, 1996), 31.
- ↑ C.E. Bosworth, The New Islamic Dynasties, 31.
- ↑ ক খ Goldschmidt, Arthur (২০০২)। A concise history of the Middle East। Boulder, Colorado: Westview Press। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 0-8133-3885-9।
- ↑ El Hareir, Mbaye, Idris , Ravane (২০১১)। The Spread of Islam Throughout the World। UNESCO। পৃষ্ঠা 441। আইএসবিএন 9231041533।
- ↑ Barbara M. Kreutz, Before the Normans: Southern Italy in the Ninth and Tenth Centuries, (University of Pennsylvania Press, 1991), 57.
- ↑ "Aghlabids"। Dictionary of Islamic Architecture। Archnet। ২৯ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১১।
- ↑ Najeebabadi, Akbar (২০০১)। The History of Islam V.3। Riyadh: Darussalam। পৃষ্ঠা 235। আইএসবিএন 978-9960-89293-1।
- Georges Marçais, "Aghlabids," Encyclopedia of Islam, 2nd ed., Vol. I, pp. 699–700.
- Mohamed Talbi, Emirat Aghlabide, Paris: Adrien Maisonneuve, 1967.
- Madeleine Vonderheyden, La Berbérie orientale sous la dynastie des Benoû l-Aṛlab, 800-909, Paris: Geuthner, 1927.