হরিপদ ভারতী
হরিপদ ভারতী ("মাস্টার মশাই" নামেও পরিচিত) ছিলেন একজন প্রথিতযশা ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিজ্ঞ এবং অধ্যাপক। তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রথম রাজ্যসভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[২] ১৯৭৭ সালে জোড়াবাগান বিধানসভা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু তিনি সেই পদে আসীন ছিলেন।[৩] যশোরের মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজে অধ্যাপকরূপে তিনি তাঁর কর্মজীবন প্রারম্ভ করে পরে হাওড়ার নরসিংহ কলেজে যোগ দেন। দর্শনের অধ্যাপক হিসাবে সেখানে তিনি কলেজের উপাধ্যক্ষ এবং পরবর্তীতে অধ্যক্ষ হয়েছিলেন।[৪]
হরিপদ ভারতী | |
---|---|
ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রথম সভাপতি | |
কাজের মেয়াদ ১৯৮০ – ১৯৮২ | |
পূর্বসূরী | দপ্তর গঠন |
উত্তরসূরী | ডাঃ বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী |
বিধায়ক | |
কাজের মেয়াদ ১৯৭৭ – ১৯৮২ | |
পূর্বসূরী | ইলা রায় |
উত্তরসূরী | সুব্রত মুখোপাধ্যায় |
নির্বাচনী এলাকা | জোড়াবাগান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | [১] যশোর জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলা) | ২৮ জুন ১৯২০
মৃত্যু | ১৯ মার্চ ১৯৮২ কলকাতা | (বয়স ৬১)
মৃত্যুর কারণ | হৃদরোগ |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জনতা পার্টি |
অন্যান্য রাজনৈতিক দল | জনতা পার্টি, ভারতীয় জনসঙ্ঘ |
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাহরিপদ ভারতী ছাত্রাবস্থাতেই ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতাদর্শে আকৃষ্ট হয়ে হিন্দু মহাসভাতে যোগ দেন। পরে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত ভারতীয় জনসঙ্ঘে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি এই দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি তথা সর্বভারতীয়স্তরে সহ-সভাপতির পদে অধিষ্ঠ থাকেন। হরিপদ ভারতী জনতা দল এর জন্মলগ্ন থেকেই ঐ দলের সদস্য হিসাবে যোগদান করেন।[৫] ১৯৭৭ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জনতা পার্টির টিকিটে সাবেক জোড়াবাগান বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি জয়লাভ করেন। ভারতীয় জনতা পার্টি স্থাপনের পর তিনি স্বভাবতই বিজেপিতে চলে আসেন ও দল কর্তৃক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হন।[৬]
নির্বাচনী ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে কলকাতা উত্তর পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রার্থী হিসাবে হরিপদ ভারতী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ৮২,৪৫৫টি (২১.০৮%) ভোট পান। ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আবারও একই আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দিতা করে প্রায় ৩৪,৯৭৭টি (২১.০৮%) ভোট গ্রহণ করতে সক্ষম হন। ১৯৭৭ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে সাবেক জোড়াবাগান বিধানসভা কেন্দ্রে জনতা পার্টির টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি বিজয়ী হন। ১৯৮০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জনতা পার্টির প্রার্থী হয়ে লড়েন এবং ৩১,৮৪৬টি ভোট পান।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাহরিপদ ভারতী ১৯২০ সনের ২৮শে জুন অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার প্রাচীনতম ও অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে তিনি দর্শনে স্নাতক হন তথা ১৯৪২ সালে কলিকাতা বিশ্বিবিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থানের অধিকারী হন।[৫] জরুরী অবস্থা চলাকালীন তিনি 'মিসা আইনে' কারারুদ্ধ হন। তাঁকে কলকাতা শহরের প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়। জেলের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি তাঁর স্ত্রী প্রগতি ভারতীকে চিঠিপত্র লিখতেন। আই.বি.-র শ্যেনদৃষ্টি এড়িয়ে গোপনে তাঁর স্ত্রী-র ব্যাগে ফেলে দেওয়া পত্রগুচ্ছই পরে সম্পাদনা করে 'জেলে মিসা বাইরে মিসা' গ্রন্থটি তিনি লিখেছিলেন যেটি প্রথম প্রকাশ পায় চৈত্র, ১৩৮৪ বঙ্গাব্দে। প্রেসিডেন্সি জেলের অভ্যন্তরে সুদৃশ্য বাগিচা ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের বর্ণনা এই গ্রন্থে তিনি দিয়েছেন।[৭]
মৃত্যু
সম্পাদনাহরিপদ ভারতী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ৬১ বছর বয়সে মারা যান। ১৯৮২ সনের ১৪ই জুন, অষ্টম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ৭৭তম অধিবেশনে স্পিকার সৈয়দ আবুল মনসুর হাবিবুল্লাহ হরিপদ ভারতী সম্পর্কে শোকপ্রস্তাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন যে
“ | বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সুবক্তা ও সংসদীয় গণতন্ত্রে অভিজ্ঞ এই জননেতার মৃত্যুতে দেশের প্রভূত ক্ষতি হলো। | ” |
— [৫] |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "জেনে নিন অধ্যাপক হরিপদ ভারতীর পরিচয়"। BAARTA TODAY। ২৮ জুন ২০২০।
- ↑ "BJP West Bengal - Our State PresidentsBJP West Bengal" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২২।
- ↑ "🗳️ Haripada Bharati, Jorabagan Assembly Elections 1977 LIVE Results | Election Dates, Exit Polls, Leading Candidates & Parties | Latest News, Articles & Statistics | LatestLY.com"। LatestLY (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৩-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২২।
- ↑ College129, Narasinha Dutta; Road, Belilious; Bengal, West। "Narasinha Dutt College"। Narasinha Dutt College (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২২।
- ↑ ক খ গ চক্রবর্তী, শ্রীমান (২৫ জুলাই ২০২০)। "শ্রী হরিপদ ভারতী - এক প্রামাণ্য বীক্ষণ"। কাঞ্জিক।
- ↑ "১৫ বছর পর বিধানসভায় পা, বিজেপির লক্ষ্য এবার ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচন"। Zee24Ghanta.com। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- ↑ "অধ্যাপক হরিপদ ভারতী জরুরি অবস্থায় কারারুদ্ধ হয়েছিলেন"। BAARTA TODAY। ২৫ জুন ২০২০।