বিউটি বোর্ডিং
বিউটি বোর্ডং বাংলাদেশের ঢাকার পুরনো অংশের বাংলা বাজারে ১নং শ্রীশদাস লেনে অবস্থিত একটি দোতলা পুরাতন বাড়ি যার সাথে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাস জড়িত এবং বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির গুণী মানুষদের আড্ডার একটি কেন্দ্র বা ইতিহাসের ভিত্তিভূমি বলে মনে করা হয়।[১][২][৩][৪]
বিউটি বোর্ডিং | |
---|---|
সাধারণ তথ্যাবলী | |
অবস্থান | বাংলা বাজার |
শহর | পুরান ঢাকা |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৪২′২৩″ উত্তর ৯০°২৪′৪৭″ পূর্ব / ২৩.৭০৬৩৩° উত্তর ৯০.৪১৩১০° পূর্ব |
ইতিহাস
সম্পাদনাবিউটি বোর্ডিং বাড়িটি ছিল নিঃসন্তান জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে সেখানে ছিল সোনার বাংলা পত্রিকার অফিস।[৫] কবি শামসুর রহমানের প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয়েছিল এ পত্রিকায়। দেশভাগের সময় পত্রিকা অফিসটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে দুই ভাই প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও নলিনী মোহন সাহা এই বাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলেন বিউটি বোর্ডিং।[৬] বাড়িটি ১১ কাঠা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। নলিনী মোহনের বড় মেয়ে বিউটির নামেই এর নামকরণ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বিউটি বোর্ডিংয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহাসহ ১৭ জন। পরবর্তীতে প্রহ্লাদ চন্দ্রের পরিবার ভারত গমন করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে প্রহ্লাদ চন্দ্রের স্ত্রী শ্রীমতী প্রতিভা সাহা দুই ছেলে সমর সাহা ও তারক সাহাকে নিয়ে বিউটি বোর্ডিং আবার চালু করেন।[৭] বিউটি বোর্ডিংয়ের মুখর আড্ডা আগের মতো না থাকলেও খাবার ঘরে এখনো খদ্দেরের ভিড় লেগেই থাকে। নগরের ভোজনরসিকরা এখানে ছুটে আসেন। আর নিয়মিত খান পুরোনো ঢাকার বইয়ের মার্কেটের নানা শ্রেণির মানুষ।[৮][৯][১০]
বিউটি বোর্ডিং এর জন্মলগ্ন থেকেই এখানে আড্ডা দিতেন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, চিত্রপরিচালক, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, অভিনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।[১১] এখানে যারা আড্ডার আসরে আসতেন এদের মধ্যে কবি শামসুর রাহমান, রণেশ দাশগুপ্ত, ফজলে লোহানী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, ব্রজেন দাস, হামিদুর রহমান, বিপ্লব দাশ, আবুল হাসান, মহাদেব সাহা, আহমেদ ছফা, হায়াৎ মাহমুদ, সত্য সাহা, এনায়েত উল্লাহ খান, আল মাহমুদ, আল মুজাহিদী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, ড. মুনতাসীর মামুন, ফতেহ লোহানী, জহির রায়হান, খান আতা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ শামসুল হক, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, নির্মল সেন, ফয়েজ আহমদ, গোলাম মুস্তাফা, খালেদ চৌধুরী, সমর দাস, ফজল শাহাবুদ্দিন, সন্তোষ গুপ্ত, আনিসুজ্জামান, নির্মলেন্দু গুণ, বেলাল চৌধুরী, শহীদ কাদরী, ইমরুল চৌধুরী, সাদেক খান, ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, শফিক রেহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আসাদ চৌধুরী, ভাষাসৈনিক ও পুস্তক প্রকাশক মোহাম্মদ সুলতান, সিকদার আমিনুর হক, জুয়েল আইচ প্রমুখ।[১২]
স্থাপনাশৈলী
সম্পাদনাএটি একটি দ্বিতল ভবন। এর সাথে একটি উন্মুক্ত আঙ্গিনা রয়েছে। বোর্ডিং কক্ষগুলির সামনে দীর্ঘ বারান্দা রয়েছে।
চিত্রশালা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সেই বিউটি বোর্ডিং..."। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "কালের সাক্ষী বিউটি বোর্ডিং"। বাংলা ট্রিবিউন। ২২ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "বোর্ডিং আছে, বিউটি নেই"। সমকাল। ২২ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "প্রাণ পেল বিউটি বোর্ডিং"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "চলুন যাই বিউটি বোর্ডিংয়ে"। এনটিভি। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "ইতিহাসের গন্ধমাখা বিউটি বোর্ডিং"। বণিক বার্তা। ২০১৯-০৩-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "পুরানো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং"। প্রিয় নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "ঐতিহাসিক আড্ডার প্রাণকেন্দ্র বিউটি বোর্ডিং"। মানবকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সাহিত্য-সংস্কৃতির সূতিকাগার বিউটি বোর্ডিং"। জনকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "আজও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী বিউটি বোর্ডিং!"। সময় নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা"। ইত্তেফাক। ২২ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "বিউটি বোর্ডিং এর অন্দর বাহির"। ঢাকা টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯।