বাহরাইন

এশিয়ার রাষ্ট্র
(বাহরাইনের রাজনীতি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

বাহরাইন মধ্যপ্রাচ্যের একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বীপ রাষ্ট্র। বাহরাইন পারস্য উপসাগরের পশ্চিম অংশের ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর পূর্বে কাতার ও পশ্চিমে সৌদী আরব। সবচেয়ে বড় দ্বীপটিও বাহরাইন নামে পরিচিত এবং এতে দেশটির বৃহত্তম শহররাজধানী মানামা অবস্থিত।

বাহরাইনের রাজ্য

مملكة البحرين
Mamlakat al-Bahrayn
জাতীয় সঙ্গীত:  بحريننا
Bahrainona
(আমাদের বাহরাইন)
বাহরাইনের অবস্থান
রাজধানীমানামা
সরকারি ভাষাআরবি
সরকারসাংবিধানিক রাজতন্ত্র
হামাদ বিন ঈসা আল খলিফা
সাবিকা বিনতে ইব্রাহিম
সালমান বিন হামাদ আল খালিফাহ্
স্বাধীন[] 
• তারিখ
১৫ই আগস্ট ১৯৭১
• পানি (%)
জনসংখ্যা
• ২০০৯ আনুমানিক
৭৯১,০০০[]
• আদমশুমারি
1,234,571[]
• ঘনত্ব
২,০০৭.১/কিমি (৫,১৯৮.৪/বর্গমাইল) (7th)
জিডিপি (পিপিপি)2018 আনুমানিক
• মোট
$100.922 billion[] (96th)
• মাথাপিছু
$51,956[] (13th)
জিডিপি (মনোনীত)2017 আনুমানিক
• মোট
$37.841 billion[] (98th)
• মাথাপিছু
$25,764[] (31st)
মানব উন্নয়ন সূচক (2015)বৃদ্ধি 0.824[]
অতি উচ্চ · 47th
মুদ্রাবাহারাইনী দিনার (BHD)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৩
কলিং কোড৯৭৩
ইন্টারনেট টিএলডি.bh
  1. Includes 235,108 non-nationals (July 2005 estimate).

প্রায় ৫,০০০ বছর আগেও বাহরাইন একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। সবসময়ই এটি শক্তিশালী প্রতিবেশীদের অধীনস্থ ছিল। ১৭শ শতকে এটি ইরানের দখলে আসে। ১৭৮৩ সালে মধ্য সৌদী আরবের আল-খলিফা পরিবার নিজেদেরকে বাহরাইনের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং তখন থেকে তারাই দেশটিকে শাসন করে আসছে। ১৯শ শতকের কিছু সন্ধিচুক্তির ফলে যুক্তরাজ্য দেশটির প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব পায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বাহরাইন ব্রিটিশ প্রভাবাধীন ছিল।

বাহরাইনের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি সেখানেই জন্ম-নেওয়া। এছাড়া বাহরাইনে শিয়া মুসলিমদের সংখ্যা সুন্নী মুসলিমদের প্রায় দ্বিগুণ। তবে সুন্নীরা বাহরাইনের সরকার নিয়ন্ত্রণ করেন।

১৯৩০-এর দশকে বাহরাইন পারস্য উপসাগরের প্রথম দেশ হিসেবে তেল-ভিত্তিক অর্থনীতি গঠন করে, কিন্তু ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকেই এর সমস্ত তেল ফুরিয়ে যায়। তবে দেশটি এই পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ করে রেখেছিল এবং দেশটির অর্থনীতি এখনও উন্নতি করে যাচ্ছে।বাহারাইনি দিনার বিশ্বের দ্বিতীয় সব থেকে দামি মুদ্রা।

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
আড়াদে আরাদ দুর্গ; পর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পূর্বে নির্মিত হয়েছিল।

বর্তমান বাহরাইন অঞ্চলে ব্রোঞ্জ যুগে দিলমুন নামক সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। ৫ হাজার বছর আগেও বাহরাইন সিন্ধু অববাহিকা ও মেসোপটেমিয়ার সভ্যতাগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০০ অব্দের দিকে ভারত থেকে বাণিজ্য আসা বন্ধ হয়ে গেলে দিলমুন সভ্যতার পতন ঘটা শুরু করে। ৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে আসিরীয় রাজার বাহরাইনকে ক্রমাগত নিজেদের বলে দাবী করতে শুরু করে। ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু পরে দিলমুন আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। এরপর অনেক দিন যাবৎ বাহরাইনের কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে পারস্য উপসাগরে মহাবীর আলেকজান্ডারের পদার্পণ ঘটলে আবার এর হদিস পাওয়া যায়। যদিও আরব গোত্র বনি ওয়াএল এবং পারসিক গভর্নরেরা অঞ্চলটি শাসন করতেন, খ্রিস্টীয় ৭ম শতক পর্যন্তও এটি গ্রিক নাম তিলোস (Tylos) নামে পরিচিত ছিল। ঐ শতকে এখানকার অধিবাসীরা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। বাহরাইন ছিল আঞ্চলিক বাণিজ্য ও মুক্তা আহরণ কেন্দ্র। ৭ম শতক থেকে বিভিন্ন পর্বে এলাকাটি সিরিয়ার উমাইয়া বংশীয় খলিফাগণ, বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফাগণ, পারসিক, ওমানি এবং পর্তুগিজদের দ্বারা শাসিত হয়। শেষ পর্যন্ত বনি উতবাহ গোত্রের আল খালিফা পরিবার ১৭৮৩ সালে ইরানীদের কাছ থেকে অঞ্চলটি দখল করে এবং তখন থেকে আজ পর্যন্ত তারা বাহরাইনের শাসক।

১৮৩০-এর দশকে আল খালিফা পরিবার একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাহরাইনকে একটি ব্রিটিশ প্রটেক্টোরেটে পরিণত করে, অর্থাৎ যুক্তরাজ্য বহিরাক্রমণ থেকে দেশটির সুরক্ষার দায়িত্ব নেয় এবং এর বিনিময়ে বাহরাইন যুক্তরাজ্যের অনুমতি ছাড়া অন্য কোন বিদেশী শক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ হারায়। বাহরাইনে বড় আকারে খনিজ তেলের উৎপাদন শুরু হবার কিছু পরেই ১৯৩৫ সালে পারস্য উপসাগর অঞ্চলে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটিটি বাহরাইনে নিয়ে আসা হয়।

১৯৬৮ সালে যুক্তরাজ্য সরকার পারস্য উপসাগরের শেখশাসিত রাজ্যগুলির সাথে ইতোমধ্যে করা চুক্তিগুলি রদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় বাহরাইন কাতার এবং বর্তমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭টি শেখরাজ্যের সাথে মিলে একটি বৃহৎ সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭১ সাল নাগাদ এই নয় রাজ্য সংযুক্তিকরণের বিভিন্ন ব্যাপারে একমত হতে পারেনি। ফলে ১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট বাহরাইন একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

নতুন রাষ্ট্র বাহরাইনের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা হয় এবং ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচিত হয়, কিন্তু মাত্র দুই বছর পরে ১৯৭৫ সালে বাহরাইনের আমির সংসদ ভেঙে দেন, কেননা নির্বাচিত সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আল-খলিফা শাসনের অবসান এবং মার্কিন নৌবাহিনীকে সেখান থেকে বিতাড়নের প্রচেষ্টা করছিল।

১৯৯০-এর দশকে বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়ের অসন্তুষ্টি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘাতের আকারে প্রকাশ পায়। এর প্রেক্ষিতে বাহরাইনের আমির প্রায় ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত, ১৯৯৫ সালে, বাহরাইনের মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনেন, এবং আইন পর্যালোচনাকারী কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৪০-এ বৃদ্ধি করেন। এর ফলে সংঘাতের পরিমাণ প্রথমে কিছু কমলেও ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ-তে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে এবং এতে অনেকে নিহত হয়। পুলিশ প্রায় ১ হাজার লোককে এর জের ধরে গ্রেফতার করে এবং কোন বিচার ছাড়াই এদের শাস্তি দেয়া হয়। সম্প্রতি বাহরাইন সরকার এদের অনেককে ছেড়ে দিয়েছে।

বাহরাইন ১৯৭১ সালে স্বধীনতা লাভ করে। বাহার শব্দের অর্থ সাগর আর বাহরাইন হচ্ছে দু'টি সাগর। এটি একটি দ্বীপ রাষ্ট্র এর চারদিকে সাগর I

রাজনীতি

সম্পাদনা

বাহরাইনের রাজনীতি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কাঠামোতে সংঘটিত হয়। রাজা শাইখ হামাদ বিন ইসা আল খালিফা সরকার চালানোর জন্য একজন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। বাহরাইনের আইনসভা দুই-কক্ষবিশিষ্ট। নিম্ন কক্ষের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেন। ঊর্ধ্বকক্ষ তথা শুরা কাউন্সিলের সদস্যদের রাজা নিয়োগ দেন। বর্তমানে খালিফা ইবন সুলমান আল-খালিফা দেশের প্রধানমন্ত্রী। রাজপুত্র শাইখ সালমান বাহরাইনের সেনাবাহিনীর কমান্ডার।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ:

সম্পাদনা

বাহরাইন রাষ্ট্রটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে ২৪ কিমি দূরে পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ৩২টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপটির নাম বাহরাইন দ্বীপ। দ্বীপটির বেশির ভাগ অংশ মরুময় ঊষর নিম্নভূমি। কেবল উত্তরের উপকূলে এক চিলতে সমভূমি আছে যেখানে রাজধানী মানামা অবস্থিত।

অর্থনীতি

সম্পাদনা

বাহরাইনের অর্থনীতি প্রধানত পেট্টোলিয়াম উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রিফাইনিং এর উপর নির্ভরশীল। এই খাত ৬০% রপ্তানিতে ও ৩০% জিডিপিতে অবদান রাখে। এদেশের শ্রমবাজারের ৫ ভাগের ৩ ভাগ দখল করে আছে বিদেশি শ্রমিকেরা। যোগাযোগব্যবস্থা ভাল হওয়ায় পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এখানে সদরদপ্তর স্থাপন করেছে। পর্যটন খাত অনেক উন্নতি সাধন করেছে। এই খাত জিডিপিতে ৯% অবদান রাখছে। শুধুমাত্র ১% ভূমি চাষযোগ্য হওয়ায় তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরা উৎপাদনে অক্ষম। তারা এক্ষেত্রে আমদানির উপর নির্ভর করে। তাদের মাথাপিছু আয়ও অনেক বেশি। প্রায় ৫১,৯৫৬ মা.ডলার(২০১৭ অনুযায়ী)

জনমিতি

সম্পাদনা
 
মানামায় নামাজরত বাহরাইনি শিয়া মুসলমানেরা

২০১০ সালে বাহরাইনের জনসংখ্যা ১.২ মিলিয়ন হয়ে দাঁড়ায় যার মধ্যে ৫৬৮,৩৯৯ জন বাহরাইনি নাগরিক এবং ৬৬৬,১৭২ জন অনাগরিক।[] ২০০৭ সালে তা ১.০৫ মিলিয়ন (৫১৭,৩৬৮ অনাগরিক) অতিক্রম করে।[] ২০২০ সালের জানুয়ারি নাগাদ বাহরাইনের জনসংখ্যা ১.৬৯ মিলিয়নেরও উপরে গিয়ে দাঁড়ায়।[] যদিও জনসংখ্যার অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের লোক, তথাপি বাহরাইনিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দক্ষিণ এশীয়। ২০০৮ সালে প্রায় ২৯০,০০০ ভারতীয় নাগরিক বাহরাইনে বসবাস করেন, যা তাদের দেশটির একক বৃহত্তম প্রবাসী জনগোষ্ঠীতে পরিণত করে। এদের বেশিরভাগই ভারতের কেরল রাজ্য থেকে আগত।[][১০] বাহরাইন বিশ্বের চতুর্থ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ যার জনসংখ্যার ঘনত্ব ২০১০ সালে ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,৬৪৬ জন।[] জনসংখ্যার একটি বড় অংশই দেশটির উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে, দক্ষিণাঞ্চল তুলনামূলক কম জনবহুল।[] দেশটির উত্তরাঞ্চল এতটাই নগরায়িত যে অনেকে একে একটি বৃহৎ মেট্রোপলিটন এলাকা বলে বিবেচনা করে।[১১]

জাতিগোষ্ঠী

সম্পাদনা

বাহরাইনিরা জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময়। শিয়া বাহরাইনিরা দুটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত: বাহরানা এবং আজম। বাহরানারা হল আরব শিয়া, অন্যদিকে আজমরা হল পারসিক শিয়া। মানামা ও মুহররকের জনসাধারণের বড় অংশই পারসিক শিয়া। শিয়া বাহরাইনিদের একটি ক্ষুদ্র অংশ হল আল-হাসা অঞ্চলের হাওয়াসি জনগোষ্ঠী।

সুন্নি বাহরাইনিরাও মূলত দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত: আরব ও হুওয়ালা। আরব সুন্নিরা বাহরাইনের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী, তারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত এবং বাহরাইনি রাজতন্ত্রও আরব সুন্নিদের নিয়ন্ত্রণাধীন। সুন্নি আরবেরা ঐতিহ্যগতভাবে জাল্লাক, মুহররক, রিফা ও হাওয়ার দ্বীপসমূহে বসবাস করে আসছে। হুওয়ালারা হল ইরানি সুন্নিদের বংশধর; তাদের কেউ কেউ পারসিক সুন্নি,[১২][১৩] আর বাকিরা আরব সুন্নি।[১৪][১৫] সুন্নিদের মধ্যে বেলুচি জাতিগোষ্ঠীর লোকেরাও রয়েছে। আফ্রিকান বাহরাইনিদের অধিকাংশই পূর্ব আফ্রিকা থেকে আগত এবং ঐতিহ্যগতভাবে মুহররক দ্বীপ ও রিফাতে বসবাস করে।[১৬]

বাহরাইনের ধর্মসমূহ[১৭]
[]
ইসলাম
  
৭০.৩%
খ্রিষ্টধর্ম
  
১৪.৫%
হিন্দুধর্ম
  
৯.৮%
বৌদ্ধধর্ম
  
২.২%
ইহুদিধর্ম
  
০.৩%
অন্যান্য ধর্ম
  
১%
অধার্মিক
  
১.৯%

বাহরাইনের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং অধিকাংশ বাহরাইনি মুসলমান। বাহরাইনি মুসলমানদের বেশিরভাগই শিয়া[১৮] এটি মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি শিয়াপ্রধান দেশের অন্যতম, অন্য দুটি দেশ হল ইরাকইরান[১৮] ২০১৭ সালের একটি আদমশুমারি অনুযায়ী বাহরাইনি জনগণের ৬২% শিয়া এবং ৩৮% সুন্নি[১৯]

বাহরাইনের মুসলিম জনগোষ্ঠী

  শিয়া (৬২%)
  সুন্নি (৩৮%)

শিয়ারা বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হলেও রাজপরিবার এবং অভিজাতদের বেশিরভাগই সুন্নি মতাবলম্বী।[১৯] দেশটির এই প্রধান দুই মুসলিম সম্প্রদায় কিছু ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তীব্র মতবিরোধ ধারণ করে।[১৯] শিয়ারা প্রায়শই রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক প্রান্তীকরণের অভিযোগ তুলেছে; ফলে ২০১১ সালের বাহরাইনি অভ্যুত্থানের অধিকাংশ বিক্ষোভকারীই ছিল শিয়া।[২০][২১][২২]

২০১০ সালের আদমশুমারি মতে, বাহরাইনের মুসলিম জনসংখ্যা ৮৬৬,৮৮৮।

বাহরাইনে স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। ২০১০ সালের শুমারি অনুযায়ী অমুসলিম বাহরাইনিদের সংখ্যা ৩৬৭,৬৮৩, যাদের বেশিরভাগই খ্রিস্টধর্মাবলম্বী[২৩] বাহরাইনের খ্রিস্টানদের বড় অংশই প্রবাসী, স্থানীয় খ্রিস্টান বাহরাইনিরা সে তুলনায় সংখ্যালঘু। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সাবেক বাহরাইনি রাষ্ট্রদূত আলীদ সামান একজন স্থানীয় খ্রিস্টান। বাহরাইনে একটি ক্ষুদ্র স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায়ও রয়েছে যাদের সংখ্যা ৩৭।[২৪] বিভিন্ন সূত্রমতে বাহরাইনি ইহুদিদের সংখ্যা ৩৬ থেকে ৫০।[২৫] বাহরাইনি লেখিকা ন্যান্সি খেদুরির মতে, বাহরাইনের ইহুদি সম্প্রদায় পৃথিবীর অন্যতম নবীন জনগোষ্ঠী। ১৮৮০-র দশকে তৎকালীন ইরাক ও ইরান থেকে বাহরাইন দ্বীপে অভিবাসন করা কয়েকটি ইহুদি পরিবার থেকে এই জনগোষ্ঠীর উৎপত্তিলাভ করে।[২৬]

 
মানামার গুদাইবিয়া মসজিদ

সাএশীয় দেশসমূহ থেকে, বিশেষত ভারত, ফিলিপাইনশ্রীলঙ্কা থেকে, আগত অভিবাসী কর্মীদের ক্রমাগত আগমনের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাহরাইনের সামগ্রিক মুসলিম সংখ্যার হার হ্রাস পেয়েছে। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, বাহরাইনের জনসংখ্যার ৮১.২% মুসলমান, ১০% খ্রিস্টান এবং ৯.৮% হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।[][২৭] বাহরাইনের জনসংখ্যার ১% বাহাই ধর্মাবলম্বী[২৮]

শিক্ষা

সম্পাদনা

স্বাস্থ্য

সম্পাদনা

সংস্কৃতি

সম্পাদনা

ইসলাম মূল ধর্ম এবং বাহরাইনীরা অন্যান্য ধর্মের অনুশীলনের প্রতি সহনশীলতার জন্য পরিচিত।বাহরাইনি এবং প্রবাসীদের মধ্যে বিবাহ অস্বাভাবিক নয়। ফিলিপিনো শিশু অভিনেত্রী মোনা মারবেলা আল-আলাওয়ের মতো অনেক ফিলিপিনো-বাহরাইনি রয়েছে।

মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে বিধিগুলি সাধারণত আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের তুলনায় শিথিল করা হয়; মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক সাধারণত হিজাব বা আবায়ায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। যদিও ঐতিহ্যবাহী পুরুষদের পোশাকটি থোবে যাতে কেফিয়েহ, ঘুতরা, তবে পশ্চিমা পোশাকগুলিও এ দেশে প্রচলিত। যদিও বাহরাইন সমকামিতাকে বৈধতা দিয়েছে।

সঙ্গীত

সম্পাদনা

বাহরাইনের সঙ্গীত অনেকটা এর প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের মতই। খালিজি (Khaliji) , এক প্রকার লোক সঙ্গীত সমগ্র বাহরাইন জুড়ে জনপ্রিয়। এছাড়া শহুরে ঘরানার সাওত (sawt) সঙ্গীতও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

আলি বাহার বাহরাইনের বিখ্যাত গায়কদের মধ্যে একজন। Al Ekhwa (আরবি অনুবাদ- দ্যা ব্রাদার্স) তার সঙ্গীত দলের নাম।

অ্যারাবস গট ট্যালেন্ট কর্তৃক ২০১১ সালে নির্বাচিত ক্ষুদে সংগীত শিল্পী হালা আল তুরক বাহরাইনে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাহরাইন ছাড়াও সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়াও তার ইউটিউব মিউজিক ভিডিও সমূহ খুবই জনপ্রিয়।

উল্লেখ্য, পারসিয়ান গালফ স্টেটস সমূহের মধ্যে বাহরাইনেই সর্বপ্রথম recording studio স্থাপন করা হয়।

পরিবহন

সম্পাদনা

বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শহরের তথা দেশের প্রধান ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এটি অন্যতম হাব বিমানবন্দর।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Bahrain ends special pact"The Straits Times। ১৫ আগস্ট ১৯৭১। 
  2. Department of Economic and Social Affairs Population Division (2009). "World Population Prospects, Table A.1" (.PDF). 2008 revision. United Nations. Retrieved on 2009-03-12.
  3. "Bahraini Census 2010 – تعداد السكــان العام للبحريــن 2010"। ২০ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৮ 
  4. "Bahrain"। International Monetary Fund। 
  5. "Human Development Report 2015" (পিডিএফ)। United Nations। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; 2010-census নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. "Bahrain's population crossed 1m in December"। Gulfnews.com। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১২ 
  8. https://www.worldometers.info/world-population/bahrain-population/  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  9. "290,000 Indians in Bahrain"। Gulf-daily-news.com। ৫ জুলাই ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১০ 
  10. "Indian Community"। Indian Embassy। ৭ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১২ 
  11. "Bahrain: metropolitan areas"। World Gazetteer। ২৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০ 
  12. "Two ethnicities, three generations: Phonological variation and change in Kuwait" (পিডিএফ)Newcastle University। ২০১০। পৃষ্ঠা 11। ১৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  13. Dialect, Culture, and Society in Eastern Arabia: Glossary. Clive Holes. 2001. Page 135. আইএসবিএন ৯০-০৪-১০৭৬৩-০
  14. Rentz, "al- Baḥrayn.":
  15. Rentz, G. "al- Kawāsim." Encyclopaedia of Islam. Edited by: P. Bearman, Th. Bianquis, C.E. Bosworth, E. van Donzel and W.P. Heinrichs. Brill, 2008. Brill Online. 15 March 2008 [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  16. "Bahrain's Rainbow Nation in Manama"। HotelTravel.com। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  17. Pew Research Center's Religion & Public Life Project: Bahrain. Pew Research Center. 2020.
  18. "Sunnis and Shia in the Middle East"BBC News। Mapping the Global Muslim Population। ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩। 
  19. David Pollock (নভেম্বর ২০, ২০১৭)। "Sunnis and Shia in Bahrain: New Survey Shows Both Conflict and Consensus"Fikra ForumWashington Institute for Near East Policy 
  20. Andrew England (অক্টোবর ৩, ২০১৮)। "Shia complain of exclusion from Bahrain's political process"Financial Times 
  21. Andrew England & Simeon Kerr (অক্টোবর ১, ২০১৮)। "Bahrain's Shia loath to give Sunni rulers election credibility"Financial Times 
  22. "An unfair election in Bahrain will not satisfy the Shia majority"Economist। নভেম্বর ২২, ২০১৮। 
  23. "2010 Census Results"। ২০ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১২ 
  24. Chana Ya'ar (২৮ নভেম্বর ২০১০)। "King of Bahrain Appoints Jewish Woman to Parliament"। Arutz Sheva। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১০ 
  25. Habib Toumi (৪ এপ্রিল ২০০৭)। "Bahrain defends contacts with US Jewish body"gulfnews.com 
  26. Khedouri, Nancy Elly. (২০০৭)। From our beginning to present day--। Bahrain: Al Manar Press। আইএসবিএন 978-99901-26-04-4ওসিএলসি 164870788 
  27. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; CIA নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  28. "Roundup on status of Baha'is in Muslim-majority countries"। The Muslim Network for Baha'i Rights। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৩ 

4. http://www.everyculture.com/A-Bo/Bahrain.html

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা