নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে
নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে হল অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি জনপ্রিয় বাংলা উপন্যাস। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগ নিয়ে লেখা বাংলা উপন্যাসের মধ্যে অন্যতম সেরা উপন্যাস হিসাবে বিবেচিত। দেশভাগজনিত বহু সমস্যার অনবদ্য মানবিক দলিল এটি। রচনা কাল ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ। কলকাতার "করুণা প্রকাশনী" হতে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে প্রথম প্রকাশিত হয়।
লেখক | অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় |
---|---|
প্রচ্ছদ শিল্পী | পূর্ণেন্দু পত্রী |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
ধরন | উপন্যাস |
প্রকাশিত | এপ্রিল ১৯৭১ |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৪১২ |
পুরস্কারসমূহ | শরৎ পুরস্কার (২০০৫) সুরমা চৌধুরী আন্তর্জাতিক স্মৃতি পুরস্কার (আই.আই.পি.এম) (২০০৮) |
আইএসবিএন | ৯৭৮-৮১-৮৪৩৭-০১২-১ {{ISBNT}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম |
প্রেক্ষাপট
সম্পাদনাপূর্ব বাংলার বর্তমানে বাংলাদেশের এক গ্রাম এর কেন্দ্রীয় ভূগোল। সেখানকার সাধারণ মানুষ, হিন্দু মুসলমানের পারস্পরিক সম্পর্ক, জমিদার ও প্রজার সম্পর্ক আর সেই সঙ্গে সমস্ত গ্রাম্য প্রকৃতি, গাছপালা, পশুপাখি নিয়ে রূপায়িত হয়েছে গভীর মমতায়। বহু বিচিত্র চরিত্রের সন্নিবেশ, তাদের নানা বৃত্তির নানা মানসিকতা পরিস্ফুট হয়েছে। ঔপন্যাসিকের লুপ্ত অতীতের প্রতি বেদনা আর স্মৃতিমেদুর জগতের বিবরণ বর্ণিত হয়েছে চারশত বারো পৃষ্ঠার এই বইতে। [১]
নামকরণ
সম্পাদনাউপন্যাসের মাঝে কয়েকবার ঘুরে ফিরে এসেছে নীলকণ্ঠ এক পাখির কথা, অবশ্যই রূপক হিসাবে। মানুষের চিরকালের না-পাওয়ার আর্তি - ওই পাখি। মানুষ তার মনের গোপন কামনাবাসনার জন্য, সুখ-দুঃখে গড়া জীবনে সবসময় এক নীল রঙে গড়া পাখির সন্ধানে ঘুরে ফেরে। উপন্যাসের চরিত্রেরা কখনো সমুদ্রের অসীম নীলে, উদ্বাস্তু কলোনির বাঁশঝাড়ে, পুকুরপাড়ের অর্জুন গাছে ক্ষণিকের জন্য সেই নীল পাখির দেখা পান। মহেন্দ্রনাথও প্রতিনিয়ত সেই নীলকণ্ঠ পাখি খুঁজে চলেন। হাতের তালি বাজিয়ে সেই পাখিকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। পাখি ফেরে না ..... আকাশ নীল, স্বচ্ছ জল নীল, প্রকৃতির মাঝে এই রহস্যময় নীলে ঠাকুরদার আত্মাও নীল। নীলের অসীম গভীরতায়, বেদনাহত মুখও নীলবর্ণের। দেশভাগের যন্ত্রণা লেখকের সত্তাকে যে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল অনুভবী পাঠককে সেই 'নীল সত্য' কে উপলব্ধি করার অবসর দিয়েছে উপন্যাসটি।
অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও তিনটি মহতী উপন্যাস 'মানুষের ঘরবাড়ি', 'অলৌকিক জলযান' এবং 'ঈশ্বরের বাগান' - প্রত্যেকটি বিষয় বৈচিত্র্যে, লিখনশৈলীর ভঙ্গিতে এবং সেই বিশ্বময় ছড়ানো সেই রহস্যময় পাখিটি খুঁজে ফেরার এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসাবে বাংলা সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। এগুলি 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' সিরিজের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব হিসাবে বিবেচিত।
উপন্যাসটির প্রাপ্তি
সম্পাদনাউপন্যাসটি কেবল বাংলা সাহিত্য জগতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে তাই নয়,ভারতীয় সাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করেছে। ভারতের ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট-এর উদ্যোগে এটি ক্লাসিক পর্যায়ে উন্নীত এবং বারোটি মূল ভারতীয় ভাষায় এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে 'শরৎ পুরস্কার' এবং ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে এই উপন্যাসটির জন্য লেখক আই.আই.পি.এম প্রবর্তিত "সুরমা চৌধুরী আন্তর্জাতিক স্মৃতি পুরস্কার" লাভ করেন যার সাম্মানিক মূল্য দশ লক্ষ টাকা। [২]
বিদ্বজ্জনের প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনা- সাহিত্যিক বিমল কর লিখেছেন-
অতীনের সেরা লেখা, এর মধ্যে অতীনের সত্তা ডুবে আছে, আমরা যাকে বলি ভর পাওয়া লেখা।
- অশোক মিত্রের মতে -
পুতুলনাচের ইতিকথা'র পর এতটা আর অভিভূত হই নি।
- সমরেশ মজুমদার ও শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে -
এই সময়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ শিশিরকুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ১১৮ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-০০৭-৯ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম
- ↑ ক খ অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় করুনা প্রকাশনী, কলকাতা-৯, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, অক্টোবর ২০০৮ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৮৪৩৭-০১২-১ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম