সমরেশ মজুমদার
সমরেশ মজুমদার (১০ মার্চ ১৯৪২ – ৮ মে ২০২৩)[১] একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক। উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ সহ বহু জনপ্রিয় উপন্যাসের স্রষ্টা। তিনি বেশ কিছু টেলিভিশন ধারাবাহিকের কাহিনিকার। শহরকেন্দ্রিক জীবনের আলেখ্য বারবার উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। যে কারণে তাকে আপাদমস্তক ‘আরবান’ লেখক বলে অনেক সময় বর্ণনা করা হয়।[২] তিনি ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বঙ্গবিভূষণ সহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।[৩]
সমরেশ মজুমদার | |
---|---|
জন্ম | গয়েরকাটা, জলপাইগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | ১০ মার্চ ১৯৪২
মৃত্যু | ৮ মে ২০২৩ বাইপাস, কলকাতা, ভারত | (বয়স ৮১)
পেশা | লেখক, ঔপন্যাসিক, কাহিনিকার |
ভাষা | বাংলা |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
শিক্ষা | বাংলা সাহিত্য |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | স্কটিশ চার্চ কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
উল্লেখযোগ্য রচনা | নিচে দেখুন |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | নিচে দেখুন |
স্বাক্ষর |
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
সম্পাদনাসমরেশ মজুমদার ১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ (বাংলা ১৩৪৮ সনের ২৬শে ফাল্গুন) পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্মগ্রহণ করেন।[২] পিতা কৃষ্ণদাস মজুমদার ও মাতা শ্যামলী দেবী। তার শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। ভবানী মাস্টারের পাঠশালায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। [১] এরপর বিদ্যালয়ের পাঠ জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে । তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
কর্মজীবন ও সাহিত্য চর্চা
সম্পাদনাকর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারএর প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিলো। তার প্রথম গল্প “অন্যমাত্রা” লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। তার লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে। সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস “দৌড়” ছাপা হয়েছিলো দেশেই ১৯৭৫ সালে। তিনি শুধু তাঁর লেখনী গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি; ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাস লেখনীতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসের বিষয় ভিন্ন, রচনার গতি এবং গল্প বলার ভঙ্গি পাঠকদের আন্দলিত করে। চা বাগানের মদেসিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষেরা তাঁর কলমে উঠে আসেন রক্ত-মাংস নিয়ে। সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি 'উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ' বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে। তার সৃষ্ট গোয়েন্দা অর্জুন পাঠকমহলে জনপ্রিয়।[৪]
অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড। সমরেশ কলকাতা ও বাংলাদেশএর সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখক হিসাবে পাঠকমন জয় করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মৃত্যু
সম্পাদনাশেষ জীবনে সিওপিডিতে ভুগছিলেন লেখক। সাথে ছিল স্লিপ অ্যাপনিয়াও (ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা)। ২০২৩ সালের ২৫ই এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যার কারণে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই ৮ই মে তিনি প্রয়াত হন।[৫]
গ্রন্থ তালিকা
সম্পাদনা
|
|
|
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- আনন্দ পুরস্কার -১৯৮২
- বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, দিশারী ও চলচ্চিত্র প্রসার সমিতি - শ্রেষ্ঠ স্ক্রিপ্ট রাইটার - ১৯৮২
- সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ১৯৮৪
- বঙ্কিম পুরস্কার - ২০০৯
- বঙ্গবিভূষণ - ২০১৮, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "দীর্ঘ দিন রোগভোগের পর সমরেশ মজুমদার প্রয়াত! 'কালবেলা'র স্রষ্টা বিলীন কালপুরুষের জগতে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০৮। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "abp" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ ক খ সংবাদদাতা। "সমরেশ মজুমদার আর নেই"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০৮।
- ↑ "'কালবেলা'র স্রষ্টা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণ"। বিবিসি বাংলা। ২০২৩-০৫-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০৮।
- ↑ Bharat, E. T. V. (২০২৩-০৫-০৮)। "Samaresh Majumdar Passes Away: প্রয়াত সমরেশ মজুমদার, সোমের 'কালবেলা'য় বাঙালি হারাল তার প্রিয় সাহিত্যিককে"। ETV Bharat News। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-১৯।
- ↑ সংবাদদাতা, আনন্দবাজার অনলাইন। "দীর্ঘ দিন রোগভোগের পর সমরেশ মজুমদার প্রয়াত! 'কালবেলা'র স্রষ্টা বিলীন কালপুরুষের জগতে"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০৮।