ধর্ষণের প্রকারভেদ
ধর্ষণ বা বলাৎকারকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়। যেমনঃ ঠিক কোন পরিস্থিতিতে তা হচ্ছে, বা যিনি ভিক্টিম (নির্যাতিতা)- তার বৈশিষ্ট্য কী ছিল, যে অপরাধী তার পরিচয় বা বৈশিষ্ট্য কী, এইসবের উপর ধর্ষণের নানাবিধ শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এই যে ধর্ষণের নানান শ্রেণি, একেই বলা হচ্ছে ধর্ষণের প্রকারভেদ বা ধরন। নিচে উল্লেখ করা শ্রেনীবিভাগ শুধুমাত্র একটি ধর্ষণের জন্য প্রযোজ্য হবে, এমনটা নয়। বরং একটি ধর্ষণ একই সাথে শিশু ধর্ষণ, দলবেঁধে ধর্ষণ, কারাগারে ধর্ষণ ও হেফাজতকালীন ধর্ষণের ও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
ডেট ধর্ষণ
সম্পাদনাডেট ধর্ষণ (date rape) হচ্ছে এমন এক ধরনের ধর্ষণ, যেখানে ধর্ষিত অপরাধীকে পূর্ব থেকেই চিনে এবং এ ধর্ষণ সাধারণত নিজ গৃহে হয় না। ডেটিং ধর্ষণ দুই প্রকার, Acquaintance rape (এখানে একে অপরকে চিনে ও এখানে কোনো ড্রাগের ব্যবহার করা হয় না) [১] এবং আরেকটি হলো: drug facilitated sexual assault (DFSA) যা ডেটিং রেপের মত আরেকটি ধর্ষণ, যেখানে শিকারকে ধর্ষক ইচ্ছে করে ড্রাগ দিয়ে অচেতন বা তার শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে বলাৎকার করে। এক্ষেত্রে ধর্ষিতা ধর্ষণের পূর্বে সম্মতি দেওয়ার পরিস্থিতিতে থাকে না।
Acquaintance rape সংগঠিত যে দুইজন মানুষের মধ্যে, তারা মুলত একে অপরকে চিনে। তারা নিজেদের শুধুই বন্ধু হিসেবে হয়তো সমাজে পরিচয় দেয়, বা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়,[২] এই সমস্যাটি পশ্চিমা সমাজব্যবস্থায় ব্যাপকহারে বাড়ছে এবং একে লুকায়িত ধর্ষণ হিসেবে বর্তমানে উল্লেখ করা হয়।[৩] যুক্তরাষ্ট্রের National Victim Center একটি কলেজে জরিপ চালিয়ে দেখে প্রতি চারজন নারীর একজন হয় ধর্ষণের শিকার অথবা তাদের উপর ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।[৪] এই ফলাফলটি এটাই দেখায় কলেজে অবস্থানরত নারী শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের শিকার হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকিতে আছেন। কলেজগুলোতে Clery Act এর বিধান রাখা হয়েছে।[৫][৬]
গণধর্ষণ
সম্পাদনাকয়েকজন মিলে (ন্যূনতম তিনজন) একজনের উপর চড়াও হয়ে যদি ধর্ষণ করা হয়, তবে তাকে গণধর্ষণ বলে। এটা প্রায় সমগ্র বিশ্বেই দেখা যায়[৭]।
একটি পরিসংখ্যান বলছে, এই ধরনের ধর্ষণে যারা জড়িত থাকে, তারা প্রায় সবাই যুবক বয়সের এবং প্রায় সবাই বেকার। গণধর্ষণে সাধারণত মাদক ব্যবহার করা হয়, সাধারণত রাত্রিবেলা করা হয়, এবং যৌন নির্যাতন একক ধর্ষণের তুলনায় গণধর্ষণে তীব্র হয়[৮]। আরেকটি গবেষণা বলছে, গণধর্ষণ একক ধর্ষণের তুলনায় অনেক বেশি হিংস্র হয়, এবং ধর্ষিতা এককের তুলনায় প্রতিরোধ বেশি করতে চায়। দেখা যায়, ধর্ষিতা আত্মহত্যার মনস্থির করে, পুলিশের সাহায্য কামনা তুলনামূলকভাবে বেশি করে এবং তার চিকিৎসার ও প্রয়োজন বেশি হয়। তবে দুই গবেষণাই বলছে, যারা দলবেঁধে ধর্ষণ করে, তাদের মদ্যপান বা মাদকদ্রব্য গ্রহণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত থাকে[৯]।
বৈবাহিক ধর্ষণ
সম্পাদনাএকে বৈবাহিক ধর্ষণ হিসেবে, স্ত্রী ধর্ষণ হিসেবে, স্বামীর ধর্ষণ হিসেবে, পার্টনারের ধর্ষণ হিসেবে অথবা অন্তরঙ্গ সঙ্গীর যৌন আক্রমণ হিসেবে (intimate partner sexual assault (IPSA)) জানা যায়। গবেষকরা দেখিয়েছেন, অপরিচিত মানুষের দ্বারা বলাৎকারের চেয়ে স্বামী/পার্টনারের দ্বারা বলাৎকার হলে মানসিক ভাবে ক্ষতির পরিমাণ (মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত/ স্নায়ুরোগ) অনেক বেশি সময় থাকে।[১০]
শিশুর ধর্ষণ
সম্পাদনাশিশুর ধর্ষণ শিশুর যৌন নির্যাতনেরই একটা অংশ। যদি কোনো শিশুর দ্বারা (সচরাচর দেখা যায়, বয়সে বড় অথবা নির্যাতিতের তুলনায় শক্তিশালী) অথবা কিশোর দ্বারা (যার যৌন বয়ঃসন্ধি চলছে) কাজটা করা হয়, তাহলে একে বলা হয় শিশুর প্রতি শিশুর যৌন নির্যাতন। যদি পিতামাতা, দাদু, চাচী অথবা চাচার দ্বারা এ ঘৃণ্যকাজটি করা হয়, তবে একে বলা হয় অজাচার এবং দেখা গেছে এর ফলে নির্যাতিত শিশু মনস্ত্বাত্তিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।[১১] যদি কোনো শিশু তার পারিবারিক সদস্য নয়, কিন্তু এমন কারো দ্বারা ধর্ষিত হয়,যার উপর সে নির্ভর করে, যেমন খেয়াল রাখে এরকম কাজের লোক, স্কুল শিক্ষক, ধর্ম শিক্ষক, চিকিৎসক তাহলেও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য অযাচার বৃত্তির মতই একইরুপ ঝুঁকিত পড়ে।
সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণ
সম্পাদনাজাতীয় ও আঞ্চলিক সরকার, "তরুণ জনগোষ্ঠী" কে যৌননিগ্রহ থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন সময় প্রচার-প্রচারণা চালায়।
একটা ধারণা সবসময় প্রচলিত যে, যারা নির্দষ্ট বয়স সীমার নিচে, তাদের যৌন সঙ্গমের সম্মতির দেওয়ার সক্ষমতা নেই (ইনম্যাচিউর্ড)। যে বয়সে ব্যক্তি সম্মতি দিতে সক্ষম, সে বয়সকে বলা হয় সম্মতি দানের বয়সসীমা। বিভিন্ন রাষ্ট্র ও অঞ্চলভেদে এই বয়সের পার্থক্য হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এই বয়সের সীমা ১৬ থেকে ১৮ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, কেও যদি নির্দিষ্ট বয়স হবার পূর্বেও বলপ্রয়োগ বা হিংস্রতা ব্যতিরেকে যৌনকর্ম করে, তাহলে তা বয়সসীমার আইনকে লঙ্ঘন করে এবং একে বলা হবে "সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণ ।" তবে, অনেক রাষ্ট্র, বয়সসীমা লঙ্ঘন করে যৌনকর্ম করার(বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিবাহ) অনুমতি দেয়, যদি উভয়ের মাঝে বয়সের পার্থক্য কম হয়। এই বিষয়টিকে বলা হয় 'কাছাকাছি বয়স হলে অব্যাহতি' (close-in-age exemptions) অথবা রোমিও জুলিয়েটে অব্যাহতি।
কারাগারে ধর্ষণ
সম্পাদনাযুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট অনুসারে তাদের কারাগারে ধর্ষণের শতকরা পরিমাণ ৩ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে।[১২] যদিও কারাগারে যে ধর্ষণ হয়, তা সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। (কারণ, কারাগারে পুরুষ এবং নারীকে অবশ্যই আলাদা করেই রাখা হয়) তারপরেও তাদের সমকামী বলা যাবে না।[১৩] এই বিষয়টা পশ্চিমা বিশ্বের অন্যত্র খুব একটা দেখা যায় না।। এটা আংশিকভাবে একারণে যে, যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারের যে গঠন, তা কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের চেয়ে আলাদা।
যারা আক্রমণকারী (ধর্ষক) হয়, তারা সাধারণত দেখা যায় কারাগারের অন্য কক্ষের বাসিন্দা।[১৪]
ধারাবাহিক ধর্ষণ
সম্পাদনাএকজন ব্যক্তির দ্বারা ক্রমানুযায়ী যে ধর্ষণ হয়, তা তুলনামুলকভাবে অনেক বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, এবং তার শিকারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এরকম ধর্ষণকে ধারাবাহিক ধর্ষণ (serial rape) বলা হয়। বেশিরভাগ সময় এই ধরনের সিরিয়াল (ধারাবাহিক) ধর্ষকরা, যাদের ধর্ষণ করে, তাদের চেনেও না। তারা তাদের শিকারকে নিজেদের জালে ফেলে যৌন নির্যাতন করার জন্য সুনির্দিষ্ট পন্থা অনুসরণ করে।
পরিশোধকৃত ধর্ষণ
সম্পাদনা""পরিশোধকৃত বলাৎকার" কে "শাস্তিমুলক ধর্ষণ" অথবা "প্রতিশোধকৃত ধর্ষণ" হিসবে বলা যেতে পারে। এটা সুনির্দিষ্ট সংস্কৃতি বিশেষ করে প্যাসিফিক দ্বীপে এটি দেখা যায়। কেও যদি কোনো পরিবারের পুরুষদের উপর প্রতিশোধপরায়ণ থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে কয়েকজন পুরুষ মিলিত হয়ে ওই পরিবারের নারীকে ধর্ষণ করা হয়। যার ফলে নির্যাতিতার বাবা অথবা ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে বলে ধরা হয়। দুষ্কর্মকারীদের সাথে পূর্বে কখনো খারাপ ব্যবহার করলে পরিবারের নারী সদস্যদের ধর্ষণ করে, ধর্ষিতার পিতা অথবা ভাইকে সমাজের চোখে ছোট করা হয়।[১৫] উপজাতীদের মধ্যে যুদ্ধ হলে বদলা নিতেও অনেকসময় এ ঘৃণ্য কাজটি করা হয়।[১৬]
যুদ্ধকালীন ধর্ষণ
সম্পাদনাযুদ্ধে ধর্ষণ হচ্ছে এমন একপ্রকার ধর্ষণ যেখানে শারীরিক ভাবে যুদ্ধ কালীন সময়ে বিজয়ী সৈনিক, যোদ্ধা অথবা সাধারণ নাগরিক দ্বারা পরাজিত শিবিরের মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়। এখানে নারী অথবা বালিকাকে; জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তিতে বা যৌন দাসত্বে বাধ্য করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
যুদ্ধের সময়ে ধর্ষণ একটি স্নায়ুবিক যুদ্ধ হিসেবে পরিগণিত হয়। এটি শত্রুপক্ষকে হতাশায় নিমজ্জিত করার হীন কৌশল মাত্র। এমনকি মিলিটারীর যিনি প্রধান থাকেন, তিনিও শত্রুপক্ষের সাধারণ নাগরিকদের ধর্ষণ করতে তার সৈনিকদের উৎসাহিত করেন। সিস্টিমিক ধর্ষণ ethnic cleansing এর একটি অংশ[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
যুদ্ধকালীন ধর্ষণ ১৯৪৯ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত। ফোর্থ জেনেভা কনভেনশনের ২৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন ধর্ষণ এবং বলপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি, সম্পুর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ১৯৭৭ সালে জেনেভা কনভেনশনের ১৯৪৯ সালের এই নিষেধাজ্ঞা Additional Protocols এ প্রবেশ করানো হয়।[১৭] যুদ্ধের পরে Nuremberg Trials এবং Tokyo Trials এ যে গণধর্ষণ ঘটেছে, তাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় নি।।
১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের International Criminal Tribunal for Rwanda একটি কালজয়ী সিদ্ধান্ত নেয়। যেখানে বলা হয় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ধর্ষণ গণহত্যার ন্যায় একটি অপরাধ। Navanethem Pillay তার বিচারে বলেনঃ "আবহমানকাল ধরে, ধর্ষণ যুদ্ধের যেন এক আনুসঙ্গিক অঙ্গে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখন একে বিবেচনা করা হবে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে। আমরা কঠোভাবে সবাইকে এই বার্তাই দিতে চাই, ধর্ষণ কোনোভাবেই যুদ্ধের পুরস্কার হতে পারে না।"[১৮]
এই "ধর্ষণ" শব্দটি ১৫ শতকে শুধুমাত্র যৌন নির্যাতন অর্থেই ব্যবহৃত হত। তবে আধুনিক যুগের আগ পর্যন্ত অপহরণ এবং ডাকাতি হিসবেই এই শব্দের ব্যবহার হত। যার মধ্যে কোনো যৌনহামলার ব্যাপার নেই, আধুনিক যুগের আগ পর্যন্ত। বহু উচ্চমানের সাহিত্যে, যুদ্ধকালীন ধর্ষণকে ধর্ষণ হিসেবে সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। বরং তারা যুদ্ধকালীন ধর্ষণ বলতে শত্রুর সম্পদ ও নারী অপহরণকে বুঝিয়েছে।[১৯]
প্রতারণার দ্বারা ধর্ষণ
সম্পাদনাপ্রতারণার দ্বারা ধর্ষণ বলতে বোঝায়, যদি ধোঁকাবাজির মাধ্যমে ভিক্টিমের (শিকারের) সম্মতি আদায় করে উভয়ের যৌন মিলন হয় তাকে। একটি কেসের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একজন ব্যক্তি সরকারী আমলা বলে নিজেকে মিথ্যে দাবী করে, মহিলাকে যৌন মিলনে বাধ্য (প্রেসার দেওয়া) করতে থাকে, তার কথা না শুনলে, সে তার স্বীয় ক্ষমতাবলে (সরকারী ক্ষমতা) মহিলার ক্ষতি করার হুমকি দেয়। আদালত, এ ঘটনাটিকে 'লোকটির মিথ্যাচারের মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করেছে বলে', পর্যবেক্ষণে বলেন। আদালত লোকটিকে- প্রতারণার মাধ্যমে মহিলাকে ধর্ষণ করেছে বলে, দোষী সাব্যস্ত করেন।
সংশোধনী ধর্ষণ
সম্পাদনাসংশোধনী ধর্ষণ মূলত লৈঙ্গিক ভূমিকাকে লঙ্ঘন করার শাস্তিস্বরুপ সমকামীদের লক্ষ্য করে করা হয়।[২০][২১] এটা এলজিবিটি মানুষদের উপর বিশেষ করে লেসবিয়ানদের উদ্দেশ্যে একটি ঘৃণ্য অপরাধ (hate crime)। এটা করে ধর্ষিতাকে জোর করে বোঝানোর চেষ্টা করানো হয়, জন্মগতভাবে তার যৌন অভিমুখিতা কী।[২০][২১] তাদের মনে যৌন অভিমুখিতা নিয়ে যে তথাকথিত বিভ্রান্তি আছে, তাকে সংশোধন করার জন্য ধর্ষণ করা হয় বলেই, একে সংশোধনী ধর্ষণ বলে।[২০][২১][২২] সাউথ আফ্রিকার বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ ইউডি সিমেলেন এর ঘটনা জনসম্মুখে আসার পরেই এই বিষয় সম্পর্কে বিশ্ব প্রথম জানতে পারে।[২৩]
হেফাজতগত ধর্ষণ
সম্পাদনাহেফজতে ধর্ষণ বলতে মুলত বুঝায়, কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীর হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে (যেমন: হাসপাতাল কর্মী, পুলিশ, সরকারী কর্মী) ধর্ষণ।[২৪][২৫][২৬] কোনো প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধান কেন্দ্র যেমনঃ এতিমখানাতে ধর্ষণকেও হেফাজতকালীন ধর্ষণ হিসেবে ধরা হয়।[২৭]
হেফাজতকালীন ধর্ষণের রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে ভারত, পাকিস্তান,[২৮] বাংলাদেশ,[২৯] মালয়েশিয়া,[৩০] শ্রীলঙ্কা,[৩১] ইরান,[৩২] কম্বোডিয়া,[৩২] নাইজেরিয়া,[৩২] কেনিয়া,[৩২] জাম্বিয়া[৩৩] এবং যুক্তরাষ্ট্রে।[৩৩]
ভারতে হেফাজতকালীন ধর্ষণ নারী মানবাধিকার কর্মীদের জন্য এক মাথাব্যথার বিষয়। তা ১৯৮৩ সালের পর আইনত ধর্ষণের তালিকাভুক্ত হয়। ভারতীয় আইন বলছে, এই ধরনের ক্ষেত্রে অপরাধীরা নিজেদের বাঁচাবার জন্য তার প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা পায়।[৩৪][৩৫]
হেফাজতকালীন ধর্ষণের এই প্রক্রিয়া সংগঠিত হতে পারে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মী, ঠিকাদার, মহাজন দ্বারা। কিন্তু ভারতীয় আইন অনুসারে কোনো ধর্ষণকে হেফাজতকালীন ধর্ষণ বলতে হলে ধর্ষককে সরকারী কর্মচারী হতে হবে।[৩৬] এই ধরনের হেফাজতকালীন ধর্ষণের শিকার হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, কর্ম হিসেবে নিচু শ্রেণির মানুষ জন।[৩২] গবেষকরা বলছেন, হেফাজত কালীন ধর্ষণ ব্যাপক অর্থে হেফাজতকালীন নির্যাতন যেমনঃ টর্চার এবং খুনের একটি অংশ।[৩৭]
আইন-লঙ্ঘনকারীর প্রকারভেদ
সম্পাদনামুল নিবন্ধ ধর্ষকের ধরন
নিকোলাস গ্রোথ ধর্ষকের লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে, তিন ধরনের ধর্ষণের বর্ণনা দিয়েছেন। যার একটি হলো; রাগী ধর্ষক, একটি শক্তিধর ধর্ষক(অস্ত্র বা বাহু দ্বারা বল প্রয়োগকারী) এবং অপরটি ধর্ষকামী ধর্ষক।[৩৮]Kingston, Ontario এর কুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী হাওয়ার্ড বারবারে বলেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্ষণে, ধর্ষকের আবেগপ্রবণতা এবং সুবিধাবাদিতা দেখা যায়। যারা আবেগপ্রবণতা থেকে ধর্ষণ করে, তাদের মধ্যে ধর্ষণ করার সময়, ধর্ষিতার প্রতিরোধের সময়, ক্রোধ প্রকাশ না করার প্রবণতা দেখা যায়, এবং তারা খুবই অল্প বল প্রয়োগ করে তাকে বাধ্য করে।
অন্যান্য শ্রেণিবিভাগ
সম্পাদনাউপরে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তাই ধর্ষণের একমাত্র শ্রেণিবিন্যাস নয়। নতুন নতুন গবেষণা, মানুষের কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে ধর্ণের নতুন নতুন সংজ্ঞা আসতে পারে। কিছু ঘটনা হয়তো কয়েকটা বিভাগেই পড়ে যেতে পারে। আবার কিছু হয়তো কোনো বিভাগেই পরবে না। আমেরিকান গবেষক প্যাটরিচিয়া রোজে একটি উপশ্রেণিবিভাগ করেছেন, তা হলোঃ[৩৯][৪০]
- বিনিময় ধর্ষণ (Exchange rape): পুরুষদের মধ্যে দরকষাকষি বা সংহতি প্রকাশের ফলাফল হিসেবে যে ধর্ষণ সংঘটিত হয়।
- দণ্ডমুলক ধর্ষণ (punitive rape)- মুলত কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এই বলাৎকার সংগঠিত হয়।
- চৌর্যবৃত্তিমুলক ধর্ষণ - নারী অথবা পুরুষকে অপহরণ করে এ ধর্ষণ করা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের যৌনদাসত্বে অথবা দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়।
- আনুষ্ঠানিক ধর্ষণ - defloration ধর্মীয় রীতিতে ধর্ষণ করা হয়
- মর্যাদা ধর্ষণ (Status rape): সামাজিক পদমর্যাদা ও সামাজিক শ্রেণীর পার্থক্যজনিত কারণে যে ধর্ষণ সংঘটিত হয়।
কিছু কিছু ধর্ষণ বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগে পড়তে পারে। (যেমন: যুদ্ধকালীন বন্দি অবস্থায় ধর্ষিত হলে তা; যুদ্ধকালীন ধর্ষণ, হেফাজতকালীন ধর্ষণ, কারাগারে ধর্ষণ ইত্যাদি শ্রেণিবিভাগে পড়তে পারে)
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Humphreys, Terence Patrick (1993). Gender differences in the perception of rape: The role of ambiguity (M.A. thesis) Wilfrid Laurier University
- ↑ "Cambridge Police 97 crime report"। ২৯ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৭।
- ↑ "Perspectives on Acquaintance Rape"। ২০১১-০৭-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২৫।
- ↑ Office of Justice Programs (১৯৯৬)। "National Victimization Survey, U.S. Department of Justice"।
- ↑ "Feds launch investigation into Swarthmore's handling of sex assaults"। Philadelphia Inquirer। ২০১৩-০৭-১৬।
- ↑ "Annual campus crime report may not tell true story of student crime"। Daily Nebraskan। ২০১৩-০৭-১৬।
- ↑ Neumann, Stephani. Gang Rape: Examining Peer Support and Alcohol in Fraternities. Sex Crimes andParaphilia. Hickey, Eric W., 397-407
- ↑ Ullman, S.E. (১৯৯৯)। "A Comparison of Gang and Individual Rape Incidents"। Violence and Victims। 14 (2): 123–133। পিএমআইডি 10418766। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-২১।
- ↑ Gidycz, C.A.; Koss, M.P. (১৯৯০)। "A Comparison Of Group And Individual Sexual Assault Victims"। Psychology of Women Quarterly। 14 (3): 325–342। ডিওআই:10.1111/j.1471-6402.1990.tb00023.x।
- ↑ Finkelhor and Yllo (1985) and Bergen (1996)
- ↑ Courtois, Christine A. (১৯৮৮)। Healing the Incest Wound: Adult Survivors in Therapy। W. W. Norton & Company। পৃষ্ঠা 208। আইএসবিএন 0-393-31356-5।
- ↑ Struckman-Johnson, C. & Struckman-Johnson, D. (২০০৬)। "A Comparison of Sexual Coercion Experiences Reported by Men and Women in Prison"। Journal of Interpersonal Violence। 21 (12): 1591–1615। ডিওআই:10.1177/0886260506294240। পিএমআইডি 17065656।
- ↑ No Escape: Male Rape in U.S. Prisons - IV. Predators and Victims hrw.org
- ↑ Beck, Allen J. & Harrison, Paige M., July 2006, "Sexual Violence Reported by Correctional Authorities, 2005", Bureau of Justice Statistics, Special Report ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ অক্টোবর ২০১২ তারিখে
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১০ জুন ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৭।
- ↑ Askin, Kelly Dawn (1997). War Crimes Against Women: Prosecution in International War Crimes Tribunals. Martinus Nijhoff Publishers. p. 17 আইএসবিএন ৯০-৪১১-০৪৮৬-০..
- ↑ Quoted in citation for honorary doctorate, Rhodes University, April 2005 accessed at [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে 2007-03-23
- ↑ Oxford Etymological Dictionary, "Rape".
- ↑ ক খ গ Bartle, EE (২০০০)। "Lesbians And Hate Crimes"। Journal of Poverty (pdf) । 4 (4): 23–44। ডিওআই:10.1300/J134v04n04_02। সাইট সিয়ারX 10.1.1.196.9177 ।
- ↑ ক খ গ Di Silvio, Lorenzo. "Correcting Corrective Rape: Carmichele and Developing South Africa’s Affirmative Obligations To Prevent Violence Against Women." Georgetown Law Journal 99 (2011): 1469–515.
- ↑ Mieses, A (২০০৯)। "Gender inequality and corrective rape of women who have sex with women" (pdf)। GMHC Treatment Issues। asylumlaw.org।
- ↑ Fihlani, P (২০১১-০৬-২৯)। "South Africa's lesbians fear 'corrective rape'"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৪-১৬।
- ↑ Kumbhare, Arun R. (২০০৯)। Women of Inia: Their Status Since the Vedic Times। iUniverse। পৃষ্ঠা 136। আইএসবিএন 144015600X।
- ↑ Desai, A.R. (১৯৯১)। Expanding Governmental Lawlessness and Organized Struggles। South Asia Books। পৃষ্ঠা 107। আইএসবিএন 8171545297।
- ↑ Gonsalves, Lisa (২০০১)। Women and HumanRights। APH Publishng Corporation। পৃষ্ঠা 151–152। আইএসবিএন 8176482471।
- ↑ Thukral, Enakshi Ganguly (২০০৮)। Still Out of Focus: Status of India's Children, 2008। HAQ Centre for Child Rights।
- ↑ Hey, H. (১৯৯৪)। Human Rights in Developing Countries - Yearbook (Human Rights in Development Yearbook)। Springer। পৃষ্ঠা 331। আইএসবিএন 9065448454।
- ↑ Mittra, Sangh (২০০৪)। Encyclopaedia of Women in South Asia: Bangladesh। Gyan Publishing House। পৃষ্ঠা 225। আইএসবিএন 8178351900।
- ↑ Ng, Cecilia (২০০৬)। Feminism and the Women's Movement in Malaysia: An Unsung (R)evolution। Routledge। পৃষ্ঠা 46। আইএসবিএন 0415374790।
- ↑ Bhandare, Justice Sunanda (২০১০)। Struggle for Gender Justice: Memorial Lectures। Chaman Offset Printers। পৃষ্ঠা 83। আইএসবিএন 0670084263।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Freedom in the World 2011: The Annual Survey of Political Rights and Civil Liberties। Rowman & Littlefield Publishers। ২০১১। পৃষ্ঠা 304, 321, 126, 495, 360। আইএসবিএন 1442209941।
- ↑ ক খ Human Rights Watch World Report 1999। Human Rights Watch। ১৯৯৯। পৃষ্ঠা 86, 434-434। আইএসবিএন 1564321908।
- ↑ Bhardwaj, A.P. (২০০৯)। Legal Apptitude And Legal Reasoning For The Clat। New Delhi: Dorling Kindersley (India) Pvt. Ltd.। পৃষ্ঠা 38। আইএসবিএন 9788131727171।
- ↑ Mathur, Kanchan (২০০৪)। Countering Gender Violence: Initiatives Towards Collective Action in Rajasthan। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 60–61। আইএসবিএন 0761932445।
- ↑ Edwards, Louise (২০০০)। Women in Asia: Tradition, Modernity and Globalisation। University of Michigan Press। পৃষ্ঠা 97। আইএসবিএন 0472087517।
- ↑ Bergner, Jeffrey T. (২০০৮)। Country Reports on Human Rights Practices for 2008: Vols. I and II: Joint Committee Print, U. S. House of Representatives and U. S. Senate। DIANE Publishing। পৃষ্ঠা 2297–2304।
- ↑ "Center for Sex Offender Management Lecture Content & Teaching Notes Supervision of Sex Offenders in the Community: An Overview"। Center for Sex Offender Management। ২০১৮-০১-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-২৬।
- ↑ Horvath, Miranda A.H (২০১৩)। Routledge। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 0415500443। অজানা প্যারামিটার
|ttle=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য);|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - ↑ Nardos, Rahel (২০০৩)। Overcoming Violence against Women and Girls: The International Campaign to Eradicate a Worldwide Problem। Rowman & Littlefield Publishers। পৃষ্ঠা 54–55। আইএসবিএন 0742525007।