দিগম্বর মিত্র

বাঙালি শেরিফ বা বিচারক

রাজা দিগম্বর মিত্র (১৮১৭–১৮৭৯) একজন রাজনীতিবিদ, লেখক এবং কলকাতার প্রথম বাঙালি শেরিফ ছিলেন। তিনি কলকাতার অন্যতম প্রধান ডিরোজিওপন্থী ছিলেন।

রাজা দিগম্বর মিত্র
জন্ম১৮১৭
মৃত্যু২০ এপ্রিল ১৮৭৯(1879-04-20) (বয়স ৬১–৬২)
পেশাশিক্ষক, ব্যবসায়ী

জন্ম ও বংশপরিচয়

সম্পাদনা

বাবু দিগম্বর মিত্র ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোন্নগরে কুলিন কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি রাজা দিগম্বর মিত্র নামে পরিচিত হন। কোন্নগরের এই ধনী ও সম্মানিত পরিবারটি স্থানীয়ভাবে মন্দির-বাটি-মিত্র পরিবার নামে পরিচিত ছিল।[] রাজা দিগম্বর মিত্রের পিতামহ রামচন্দ্র মিত্র কলকাতাভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর তিন পুত্র: শিবচন্দ্র মিত্র, শম্ভুচন্দ্র মিত্র এবং রাজকৃষ্ণ মিত্রের মধ্যে শিবচন্দ্র তিনজনের জ্যেষ্ঠ ছিল। তাঁরা সবাই তাঁদের বাবার মতো একই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। শিবচন্দ্র মিত্রের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলের নাম রাজা দিগম্বর মিত্র। পরবর্তী বছরগুলিতে, শিবচন্দ্র উত্তর কলকাতার শোভাবাজারে একটি বাড়ি কেনেন। রাজা দিগম্বর মিত্র সেখানেরই তাঁর শৈশবজীবন অতিবাহিত করেন।[]

শিক্ষা ও কর্মজীবন

সম্পাদনা

দিগম্বর মিত্র কলকাতার হেয়ার স্কুল এবং হিন্দু কলেজে তাঁর শিক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন করেন। তিনি হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর অন্যতম প্রধান শিষ্য ছিলেন।

কলেজের শিক্ষাগ্রহণ শেষ হলে, ১৮৩৪ সালে তিনি মুর্শিদাবাদে শিক্ষকতা করতেন। পরে রাজশাহীর ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের হেড ক্লার্ক হিসেবে কিছুদিন চাকরি করেছিলেন। চাকরিতে অসন্তুষ্ট থাকার কারণে তিনি আবার মুর্শিদাবাদে ফিরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তহশীলদার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে কাশিমবাজারের রাজা কৃষ্ণনাথ রায়ের ম্যানেজার নিযুক্ত হন। তিনি তাঁর উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার দ্বারা জমিদারীর উন্নতিসাধন করে রাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি সেই অর্থ রেশম ও নীল ব্যবসায় বিনিয়োগ করে ধনী হন। শেয়ার ব্যবসা থেকে ভাল উপার্জন করেন পরবর্তীকালে তিনি জমিদার হয়েছিলেন। []

তিনি ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সচিব হন এবং পরবর্তীতে ১৮৬৯-এ সহ-সভাপতি ও সভাপতি হন।[] তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল টাউন হলের সভায় ভারতীয় বিচারকদের ইংরেজদের বিচারাধিকার সংক্রান্ত আইনবিষয়ে বক্তৃতা দেন। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে আয়কর সম্মেলনের ভারতসভার প্রতিনিধি, অবৈতনিক বিচারক, জাস্টিস অফ দ্য পীস এবং ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে এপিডেমিক ফিভার কমিশনের একমাত্র ভারতীয় সদস্য ছিলেন।[] এপিডেমিক ফিভার কমিশনের সদস্য থাকাকালীন তিনি বলেন যে অপরিচ্ছন্ন-বদ্ধ নিষ্কাশন ব্যবস্থাই জ্বরের প্রধান লক্ষণ। তিনি তিনবার বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাঙালি হিসেবে কলকাতার শেরিফ নির্বাচিত হন।[]

তিনি তৎকালীন সময়ে একজন গোঁড়া ব্যক্তির মতো বহুবিবাহ-রদ আইন প্রচলন ও বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের বিরোধিতা করেছিলেন।[][]

রাজা দিগম্বর মিত্র ও তাঁর পরিবার ঝামাপুকুর রাজবাড়ীতে থাকতেন। তাঁর পৌত্র, মন্মথনাথ মিত্র রায় বাহাদুর, ঝামাপুকুর ছেড়ে শ্যামপুকুরে নিজের বড়ো বাড়ি তৈরি করেন, আজ সেটি শ্যামপুকুর মিত্রবাড়ি নামে বিখ্যাত। মন্মথনাথ মিত্র ইউরোপীয় শিল্পকলা ও হিরে জহরতের ব্যবসায়ী এবং প্রকৃত সমঝদার ছিলেন। তাঁর শ্যামপুকুর রাজবাড়ীতে ইউরোপীয় বোহেমিয়ান কাঁচের বড় ঝাড়বাতি ছিল।

১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি অর্ডার অব দ্যা স্টার অব ইন্ডিয়া পুরস্কারে ভূষিত হন এবং ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে রাজা উপাধি দেওয়া হয়। তিনি ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. চন্দ, ভোলানাথ (১৮৯৩)। Raja Digambar Mitra, C.S.I., His Life and Career (ইংরেজি ভাষায়)। কলকাতা: হেয়ার প্রেস। পৃষ্ঠা ২–৩। 
  2. চন্দ, ভোলানাথ (১৮৯৩)। Raja Digambar Mitra, C.S.I., His Life and Career (ইংরেজি ভাষায়)। কলকাতা: হেয়ার প্রেস। পৃষ্ঠা ৪। 
  3. সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র; বসু, অঞ্জলি, সম্পাদকগণ (মে ১৯৭৬)। সংসদ বাংলা চরিতাবিধান। ৩২এ, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, কলিকাতা-৭০০০০৯: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ১৯৯–২০০। 
  4. বাকল্যান্ড, সি. ই. (১৯৯৯)। Dictionary of Indian Biography (ইংরেজি ভাষায়)। নতুন দিল্লি, ভারত: কসমো পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ২৯২। আইএসবিএন 978-81-7020-897-6 
  5. সেন, জলধর (১৯৯২)। বঙ্গ গৌরব। ১ম খণ্ড। কলকাতা: ম্যাকমিলান এন্ড কোম্পানি লিমিটেড। পৃষ্ঠা ১৯৩।