কাশিম বাজার
কাশিম বাজার বা কাশীমবাজার বা কাসিমবাজার বা কাসিম বাজার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার একটি শহর।
কাশিম বাজার | |
---|---|
শহর | |
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°০৭′ উত্তর ৮৮°১৭′ পূর্ব / ২৪.১২° উত্তর ৮৮.২৮° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | মুর্শিদাবাদ |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ১০,১৭৫ |
ভাষা | |
• অফিসিয়াল | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনাভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে কাশিম বাজার শহরের জনসংখ্যা হল ১০,১৭৫ জন।[১] এর মধ্যে পুরুষ ৫২% এবং নারী ৪৮%। এখানে সাক্ষরতার হার ৭৮%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৩% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৭২%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে কাশিম বাজার এর সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ৯% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
ইতিহাস
সম্পাদনাসতেরো শতকের শুরুর আগে এই এলাকার ইতিহাস না পাওয়া গেলেও মুর্শিদাবাদ প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই এই স্থানটির গুরুত্ব ছিল। প্রথম ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা এখানে প্রথম বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেছিল এবং সরস্বতী নদীর মুখ বুঁজে যাওয়ার কারণে সপ্তগ্রামের পতনের পর এই স্থানটি বাংলার বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে একটি দারুণ অবস্থান অর্জন করে এবং কলকাতা প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।
ইংরেজ, ডাচ এবং ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিগুলির প্রতিটিই কাশিমবাজারে তাদের বাণিজ্যকুঠি পরিচালনা করত। এখানেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (ইআইসি) প্রথম ইংরেজ এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬৫৮ সালে। ১৬৫৮-৫৯ সালে ইংরেজরা কাশিমবাজারে দুটি কুঠি স্থাপন করে। ১৬৫৮ সালে এখানের কুঠিতে জব চার্নক তাঁর কার্যকালে চতুর্থ সহকারী হিসাবে প্রথম আগমন করেন। তার মাইনে ছিল কুড়ি পাউন্ড। ১৬৬৭ সাল থেকে এখানকার বাণিজ্য কুঠির প্রধান পদাধিকার বলে কাউন্সিলের সদস্য হতেন। এই সময়কালের ইংরেজি দলিলগুলিতে এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত হুগলি নদীকে "কাশিমবাজার নদী" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং হুগলি, পদ্মা এবং জলঙ্গীর মধ্যের ত্রিভুজাকার যে জমিতে শহরটি অবস্থিত তাকে দেখানো রয়েছে কাশিমবাজার দ্বীপ হিসাবে। এই কুঠির সান্নিধ্যে বাংলার নবাব-দের রাজধানী মুর্শিদাবাদ অবস্থিত হওযায় এবং এর সম্পদ ও সেটি রাজনৈতিক গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রধান উৎস হওযায় স্থানটি অনবরত আক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হয়ে ওঠে। এই কারণেই ১৭৫৭ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম কুঠি ছিল যেটিকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা আক্রমণ করেছিলেন এবং সেখানের সহকারী ওয়ারেন হেস্টিংস সহ বাসিন্দাদের বন্দী হিসাবে মুর্শিদাবাদে নিয়ে গিয়েছিলেন। [২]
শহরটি ছিল কাশিমবাজারের মহারাজাদের আবাসস্থল। এই মহারাজারা ছিলেন কান্ত বাবুর বংশধর। কান্ত বাবু ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস এর একজন মহাজন (বেনিয়া)। ওয়ারেন হেস্টিংস পরে ১৭৭৩ থেকে ১৭৮৫ সাল অবধি বাংলার গভর্নর-জেনারেল হয়ে ছিলেন। এই মহারাজারা কাশিমবাজারে একটি দারুণ প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন যার কিছু অংশ বেনারসের মহারাজা চৈত সিংহ-এর প্রাসাদ থেকে আনা খোদাই করা পাথর দিয়ে তৈরি ছিল। [৩] মহারাজা কৃষ্ণকান্ত নন্দী এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এই বংশের মহারাজা স্যার মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দী (১৮৬০-১৯২৯) ছিলেন একজন পরোপকারী এবং শিক্ষার পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তি এবং ছিলেন বাংলার নবজাগরণ খ্যাত একজন পুরুষ।
১৯ শতকের শুরুতেও শহরটির সমৃদ্ধি বজায় ছিল; ১৮১১ সালের শেষদিকেও একে রেশম, হোসিয়ারি, কোরা এবং হাতির দাঁতের সুন্দর কাজের জন্য বিখ্যাত স্থান হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। এখানকার বালুচরের সিল্কের শাড়ি ছিল জগদ্বিখ্যাত। তবে একসময়ে এর স্বাস্থ্যকর জলবায়ু সম্ভবত স্থানীয় ম্যালেরিয়া এর কারণে ধীরে ধীরে খারাপ হতে শুরু করে এবং এর চারপাশের চাষাবাদের জমিও একে খুব সঙ্কুচিত করে তোলে। জায়গাটি ঝোপ-জঙ্গলে ভরে যেতে থাকে এবং ১৮১৩ সালে হুগলির গতিপথের হঠাৎ পরিবর্তনের মাধ্যমে এর ধ্বংসযজ্ঞটি সম্পূর্ণ হয়। পুরানো শহর থেকে ৩ মাইল দূরে একটি নতুন চ্যানেল গঠিত হয় এবং প্রাচীন জাহাজ-ঘাটাটিকে চারপাশে একটি দুর্গন্ধযুক্ত গলা জলাবদ্ধতায় পরিণত করে। ১৮২৯ সালের একটি জনগণনায় এখানের জনসংখ্যা নথিবদ্ধ হয় ৩,৫৩৮। [৪] এর চমৎকার দালানগুলির মধ্যে একমাত্র কাশিমবাজারের মহারাজার সুন্দর প্রাসাদটি টিকে রয়ে যায়। বাকি অংশগুলি ধ্বংসস্তূপ রূপে বা কেবল বড় বড় ঢিবির আকারে সেই অতীত-দালানের প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে। ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রথম স্ত্রীকে কাশিমবাজারে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। এখানে শিলালিপি সহ তাঁর সেই সমাধি এখনও বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিক অবধি রয়ে গেছে। [২] ১৯০১ সালে এখানের জনসংখ্যা এসে দাঁড়ায় মাত্র ১,২৬২। এখানে বিদেশিদের কবরখানা এখনও বিদ্যমান। সফদাবাদে গড়ে উঠেছিল আর্মেনীয় কুঠি।
জৈন বণিকদের আদি বাসস্থল এই কাশীমবাজার। কাশীমবাজারের মহাজনটুলি মহল্লায় জৈন বণিকদের 'নেমিনাথ মন্দির' দর্শনীয় পুরাকীর্তি। এতে ২৪ জন জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি আছে, যার মধ্যে নেমিনাথ সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত। পাশে ছোট মন্দিরে জৈন যতিগণের পায়ের চিহ্ন দেখা যায়। মন্দিরের পূর্বদিকের বাগানে 'মধুগড়ে' নামে একটি পুরনো পুকুর আছে। মারাঠা বর্গীদের হাঙ্গামার সময় ধনী জৈন বণিকরা তাদের সব ধনদৌলত এই পুকুরে নিক্ষেপ করেছিলেন বলে কথিত আছে।[৫]
পরিবহন
সম্পাদনাকাশিমবাজার হল পূর্ব রেলওয়ে এর শিয়ালদহ–লালগোলা লাইন এ অবস্থিত কাশিমবাজারের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "ভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারি"। Archived from the original on ১৬ জুন ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৭,২০০৬। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ Chisholm 1911, পৃ. 218।
- ↑ "Cossimbazar" in Imperial Gazetteer of India, Oxford, Clarendon Press, 1908–1931 [v. 1, 1909]
- ↑ "Cossimbazar" in Imperial Gazetteer of India, Oxford, Clarendon Press, 1908–1931 [v. 1, 1909]
- ↑ ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খণ্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |