দারুল উলুম দেওবন্দের প্রশাসন

দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস

দারুল উলুম দেওবন্দ ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলায় অবস্থিত একটি মাদ্রাসা, যা ১৮৬৬ সালের ৩০ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি অনুসারে পরামর্শমূলক নীতির উপর ভিত্তি করে দারুল উলুম দেওবন্দ পরিচালনার জন্য একটি অনুমোদিত উচ্চ পরিষদ রয়েছে, যা মজলিসে শূরা নামে পরিচিত। এটি দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে গঠিত হয়েছিল। বছরে অন্তত দুবার মজলিসে শূরার অধিবেশন আবশ্যক। পদাধিকারবলে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম ও সদরুল মুদাররিস এই মজলিসে শূরার সদস্য পদ পেয়ে থাকেন। সাধারণত দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম বা পরিচালক মজলিসে শূরার সভাপতি হন। ২০২২ পর্যন্ত ১০ জন ব্যক্তি বিভিন্ন মেয়াদে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেছেন। মজলিসে শূরার অধীনে ১৯২৭ সাল থেকে ৯ সদস্য বিশিষ্ট মজলিসে আমেলা বা নির্বাহী পরিষদ নামে একটি পরিষদ বিদ্যমান রয়েছে। মজলিসে শুরা এবং মজলিসে আমেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিধান থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরিবর্তে তাদের সিদ্ধান্ত সাধারণত ঐক্যমতের দ্বারা নেওয়া হয়। মতের ঐকমত্য না থাকার ঘটনা খুব কম।

দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম
দায়িত্ব
আবুল কাসেম নোমানী

২৪ জুলাই ২০১১ (2011-07-24) থেকে
দারুল উলুম দেওবন্দ
নিয়োগকর্তামজলিসে শুরা
গঠন৩১ মে ১৮৬৬ (1866-05-31)
প্রথমসৈয়দ মুহাম্মদ আবেদ
সর্বশেষগোলাম মুহাম্মদ বাস্তনভি
ওয়েবসাইটdarululoom-deoband.com

মজলিসে শূরা

সম্পাদনা

তৎকালীন ভারতের জনগণ সাধারণত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে পরিচিত ছিল না। দারুল উলুম ইসলামি শৈলীতে মজলিসে শুরা প্রতিষ্ঠা করে এবং এই ব্যবস্থা সফলভাবে পরিচালনা করে, সম্প্রদায়ের সামনে একটি উদাহরণ স্থাপন করে। কাসেম নানুতুবি দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতির তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলেছেন,

দারুল উলুমের মজলিসে শুরা একদিকে অবদানকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং অন্যদিকে দারুল উলুমের আয় ও ব্যয় এবং এর গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভেটের সাথে তার সিদ্ধান্ত জারি করে। মজলিসে শুরা প্রশাসনিক বিধি ও প্রবিধান তৈরি করে। দারুল উলুমের সমস্ত দান ও সম্পত্তি তার ট্রাস্টিশিপ এবং তত্ত্বাবধানে থাকে। এটি দারুল উলুমের ট্যাক সংরক্ষণ এবং কর্মচারীদের নিয়োগ ও বরখাস্তের জন্য দায়ী। বছরে অন্তত দুবার মজলিসে শূরার অধিবেশন আবশ্যক। দেশের বিশিষ্ট ও প্রভাবশালী ওলামাদের মধ্য থেকে মজলিসে শুরার সদস্যদের নির্বাচিত করা হয়। ভাইস চ্যান্সেলর এবং অধ্যক্ষ হলেন মজলিসে শুরার পদাধিকারবলে সদস্য। কোরাম গঠনের জন্য সভায় কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত থাকতে হবে।[]

প্রথম মজলিসে শূরা

সম্পাদনা

দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার সময় সাত সদস্যের সমন্বয়ে প্রথম মজলিসে শূরা গঠিত হয়েছিল:[]

১৯৮০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের শতবার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মজলিসে শূরার সদস্য সংখ্যা ছিল ১৮ জন। যথা:[]

নং নাম পরিচিতি
কারী মুহাম্মদ তৈয়ব মুহতামিম, দারুল উলুম দেওবন্দ
সৈয়দ ফখরুল হাসান সদরুল মুদাররিস, দারুল উলুম দেওবন্দ
আতিকুর রহমান উসমানি পরিচালক, নাদওয়াতুল মুসান্নিফীন
মিন্নাতুল্লাহ রহমানি সাধারণ সম্পাদক, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড
মনজুর নোমানী সদস্য, বিশ্ব মুসলিম লীগ
জয়নুল আবেদিন সাজ্জাদ মিরাটী বিভাগীয় প্রধান, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া
সাইদ আহমদ আকবরাবাদী ডিন, ধর্মতত্ত্ব অনুষদ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়
আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী মুহতামিম, দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা
মারগুবুর রহমান বিজনুরি অধ্যাপক, দারুল উলুম দেওবন্দ
১০ হামিদ আল-আনসারি গাজি সহ-প্রতিষ্ঠাতা, নাদওয়াতুল মুসান্নিফীন
১১ আব্দুল কাদির মালেগাঁও, নাশিক, মহারাষ্ট্র
১২ মোস্তফা হাসান আলাভী মৌলভী গঞ্জ, লখনউ
১৩ সৈয়দ রাযিআল্লাহ লেবেল মঞ্জিল, দিগ্গী রোড, আলীগড়
১৪ হাকিম মুহাম্মদ জামান কলোটোলা স্ট্রীট, কলকাতা
১৫ মুফতি আবু সাউদ আরবি কলেজ, সাবিল আল-রিশাদ, ব্যাঙ্গালোর
১৬ হাকিম ইফহামুল্লাহ আনোনা হাউস, সিভিল লাইনস, আলিগড়
১৭ আবদ আল-হালিম মাদ্রাসা জিয়াউল উলুম, মানি কালান, জৌনপুর
১৮ মুহাম্মদ সাঈদ বুজুর্গ সিমলাক, দাবেল, সুরাট

বর্তমান

সম্পাদনা

বর্তমান মজলিসে শূরার সদস্য: আবুল কাসেম নোমানী,বদরুদ্দিন আজমল,রাবে হাসানী নদভী, গোলাম মুহাম্মদ বাস্তনভি, রহমতুল্লাহ মীর কাসেমি, আবদুল আলিম ফারুকি, আনোয়ারুর রহমান বিজনূরী, শফিক বেঙ্গুলুরী, আনযার হুসাইন মিয়া দেওবন্দী, মাহমুদ রাজস্থানী, ইসমাঈল মালিগাও, মুহাম্মাদ আকিল, মালিক ইবরাহীম, হাকিম কালিমুল্লাহ আলিগড়, হাবিব আহমদ, নিযামুদ্দিন খামোশ।[]

মুহতামিম

সম্পাদনা

দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১০ জন ব্যক্তি বিভিন্ন মেয়াদে মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দের বর্তমান মুহতামিম আবুল কাসেম নোমানী[][]

নং চিত্র নাম কার্যকাল
সৈয়দ মুহাম্মদ আবেদ ১৮৬৬ ১৮৬৭
রফিউদ্দিন দেওবন্দি ১৮৬৭ ১৮৬৮
সৈয়দ মুহাম্মদ আবেদ ১৮৬৯ ১৮৭১
রফিউদ্দিন দেওবন্দি ১৮৭২ ১৮৮৮
সৈয়দ মুহাম্মদ আবেদ ১৮৮৮ ১৮৯৩
ফজল হক দেওবন্দি ১৮৯৩ ১৮৯৪
মুহাম্মদ মুনির নানুতুবি ১৮৯৪ ১৮৯৫
হাফেজ মুহাম্মদ আহমদ ১৮৯৫ ১৯২৮
হাবিবুর রহমান উসমানি ১৯২৮ ১৯২৯
১০   কারী মুহাম্মদ তৈয়ব ১৯৩০ ১৯৮০
১১   মারগুবুর রহমান বিজনুরি ১৯৮২ ২০১০
১২ গোলাম মুহাম্মদ বাস্তনভি ১০ জানুয়ারি ২০১১ ২৪ জুলাই ২০১১
১৩ আবুল কাসেম নোমানী ২০১১ বর্তমান

নির্বাহী পরিষদ

সম্পাদনা

মজলিসে শূরার অধীনে ১৯২৭ সাল থেকে মজলিসে আমেলা (নির্বাহী পরিষদ) নামে একটি পরিষদ বিদ্যমান রয়েছে। এর সদস্য সংখ্যা ৯। তিন মাস অন্তর এর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরিষদের কাজ হল মজলিসে শুরার কাজে সহযোগিতা করা এবং মজলিসে শূরা কর্তৃক প্রদত্ত কর্তৃপক্ষের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দারুল উলুমের প্রশাসনিক বিষয়গুলিকে বাস্তবে প্রয়োগ করা।[]

উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত

সম্পাদনা

শতবার্ষিকী সম্মেলন

সম্পাদনা

দারুল উলুম দেওবন্দের শতবার্ষিকী সম্মেলন পরবর্তী সময়ে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম কারী মুহাম্মদ তৈয়ব এবং মজলিসে শূরার মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়। মতবিরোধের এক পর্যায়ে কারী মুহাম্মদ তৈয়ব দিল্লির এক সাধারণ সভায় দারুল উলুম দেওবন্দের সংবিধান ও মজলিসে শূরার বিলুপ্তি ঘোষণা করে একটি এডহক কমিটি গঠন করে দেন। অপরদিকে ১৯৮২ সালের ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি দেওবন্দে অনুষ্ঠিত সভায় মজলিসে শূরা কারী মুহাম্মদ তৈয়বকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে একজন নতুন মুহতামিম নির্বাচন করে সাথে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারীকে অব্যাহতি দেয়। তার বিপরীতে কারী মুহাম্মদ তৈয়বের কয়েকজন অনুসারী দেওবন্দের জামে মসজিদে একটি সমান্তরাল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে, যা বর্তমানে দারুল উলুম ওয়াকফ দেওবন্দ নামে পরিচিত। দারুল উলুমের সঞ্চিত অর্থ ফ্রিজ করে দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালের ১৭ জুলাই কারী মুহাম্মদ তৈয়ব মৃত্যুবরণ করেন।[]

গোলাম মুহাম্মদ বাস্তনভি

সম্পাদনা

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করার কারণে ২০১১ সালে মজলিসে শূরা দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিমের পদ থেকে গোলাম মুহাম্মদ বাস্তনভিকে অব্যাহতি প্রদান করে।[][১০]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. রিজভী, সৈয়দ মেহবুব (১৯৮০)। History of Darul Uloom Deoband [দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস]। । এফ. কুরাইশি, মুরতাজ হুসাইন কর্তৃক অনূদিত। দেওবন্দ: ইদারায়ে এহতেমাম। পৃষ্ঠা ২৩৫। ওসিএলসি 20222197 
  2. রিজভী ১৯৮০, পৃ. ২৩৬।
  3. রিজভী ১৯৮০, পৃ. ২৩৭।
  4. "দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শূরায় নতুন শাইখুল হাদীস ও সদরুল মুদাররিসীন মনোনীত"ইসলামটাইমস২৪.কম। ১৪ অক্টোবর ২০২০। 
  5. রিজভী, সৈয়দ মেহবুব (১৯৮১)। History of Darul Uloom Deoband [দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস]। । এফ. কুরাইশি, মুরতাজ হুসাইন কর্তৃক অনূদিত। দেওবন্দ: ইদারায়ে এহতেমাম। পৃষ্ঠা ১৬৪–১৭৮। ওসিএলসি 20222197 
  6. "দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম"দারুল উলুম দেওবন্দ। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০২২ 
  7. রিজভী ১৯৮০, পৃ. ২৩৮।
  8. নদভী, আবুল হাসান আলী (২০১৫)। কারওয়ানে যিন্দেগী। বাংলাবাজার, ঢাকা: মুহাম্মদ ব্রাদার্স। পৃষ্ঠা ২৮৯। আইএসবিএন 978-984-91840-1-0 
  9. ব্যানার্জি, ঋষি (২৫ জুলাই ২০১১)। "Majlis-e-Shura votes Vastanvi out as Deoband seminary vice chancellor"ডিএনএ ইন্ডিয়া 
  10. সুব্রহ্মণ্যম, বিদ্যা (১৭ নভেম্বর ২০২১)। "Deoband awaits Majlis-e-Shura'sdecision on Mohammad Vastanvi"দ্যা হিন্দু 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা