জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া

দিল্লির সরকারি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়

জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া (উর্দু: جامعہ ملیہ اسلامیہ‎‎, হিন্দি: जामिया मिलिया इस्लामिया, বাংলা: জাতীয় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়) হল দিল্লীতে অবস্থিত একটি সরকারি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯২০ সালে ব্রিটিশ আমলে ভারত, মার্কিন প্রভিন্সেস এর মধ্যে আলিগড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে ভারতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আইন এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা হয়। ২০১১ সালে এটি সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পায়।[]

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া
جامیہ ملیہ اسلامیہ
নীতিবাক্য"আল্লামাল ইনসান মা লাম্ ইয়া'লাম" (মানুষ যা জানতো না আল্লাহ তা শিখিয়েছেন)
ধরনপাবলিক
স্থাপিত১৯২০
প্রতিষ্ঠাতাগণমাহমুদ হাসান দেওবন্দি
মুহাম্মদ আলি জওহর
হাকিম আজমল খান
মুখতার আহমদ আনসারি
আব্দুল মাজিদ খাজা
জাকির হুসাইন
আচার্যনাজমা হেপতুল্লা
উপাচার্যনাজমা আখতার
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ
১২০০+
শিক্ষার্থী২৩০০০
স্নাতক১২০০০+
স্নাতকোত্তর৪০০০+
১০০০+
অবস্থান, ,
110025
,
শিক্ষাঙ্গনশহর
ভাষাইংরেজি, উর্দু, হিন্দি
সংক্ষিপ্ত নামজামিয়া (JMI)
অধিভুক্তিইউজিসি, এসএএসি, এআইইউ
ওয়েবসাইটhttp://jmi.ac.in/
মানচিত্র

২০২০ সালে, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ভারতের শিক্ষা মন্ত্রকের দ্বারা প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিং-এ দেশের সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১ম স্থানে ছিল। 2021 সালের ডিসেম্বরে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল থেকে একটি "A++" রেটিং পেয়েছে

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
ডাঃ জাকির হুসেন এর সমাধি
 
মাওলানা মাহমুদ হাসান গেইট, মাহমুদ হাসান দেওবন্দির স্মরণে নির্মিত

বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯২০ সালে মুসলিম নেতাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল।[] প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নেতাদের মধ্যে আলী ব্রাদার্স, অর্থাৎ মাওলানা মুহাম্মদ আলি এবং মাওলানা শওকত আলি ছিলেন। প্রথমে একটি মাদ্রাসা হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। এটি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন :

  • মাহমুদ হাসান দেওবন্দি: তিনি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং জামিয়ার সকল প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ছিলেন। তিনি আলিগড়ে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন, যা ১৯২০ সালের ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। তার সভাপতির ভাষণ পাঠ করেন তার ছাত্র শাব্বির আহমদ উসমানি
  • মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, একজন বিশিষ্ট ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী। তিনি মৌলানা আবুল কালাম আজাদ নামেই অধিক পরিচিত। মৌলানা আজাদ ইসলামি ধর্মশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন।
  • ডাঃ জাকির হুসেন - প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবী হুসেইন ছিলেন দেশের প্রথম মুসলিম রাষ্ট্রপতি
  • ডঃ মুখতার আহমেদ আনসারী - যিনি পরে সহকারী উপাচার্য এর দায়িত্ব পান
  • রাজনীতিবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী শাইখূল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান
  • আব্দুল মজিদ খাজা
  • আবিদ হুসাইন
  • প্রখ্যাত চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী হাকিম আজমল খান
  • মোহাম্মদ মুজিব, যার নেতৃত্বে জামিয়া একটি গণ্য বিশ্ববিদ্যালয় এর মর্যাদা লাভ করে

প্রায় ২০০ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এই সুপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে একাধিক প্রকান্ড ভবন।

ফ্যাকাল্টি

সম্পাদনা

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার মোট ১১টি অনুষদ, ৪৪টি বিভাগ, ৩০টি কেন্দ্র এবং ৭টি স্কুল রয়েছে।

  • মানবিক ও ভাষা অনুষদ
  • প্রাকৃতিক বিজ্ঞান অনুষদ
  • সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ
  • শিক্ষা অনুষদ
  • প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ
  • স্থাপত্য এবং একিস্টিক অনুষদ
  • আইন বিভাগ
  • দন্তচিকিৎসা অনুষদ
  • চারুকলা অনুষদ
  • জীবন বিজ্ঞান অনুষদ
  • ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ অনুষদ

এগারোটি অনুষদ ছাড়াও, জামিয়ার বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে যেমন AJK-গণযোগাযোগ গবেষণা কেন্দ্রr (MCRC) , একাডেমি অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, সেন্টার ফর ন্যানোসায়েন্স অ্যান্ড ন্যানোটেকনোলজি, সেন্টার ফর ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সায়েন্সেস, সেন্টার ফর উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা, উন্নত গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টার, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা কেন্দ্র, ভারত – আরব সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ইত্যাদি।

ছাত্রাবাস

সম্পাদনা

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে প্রায় ১০ টি উন্নত মানের পরিষেবা ও সুবিধাযুক্ত ছাত্রাবাস। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য খেলার মাঠ ও জিমের সুবিধাও আছে।

প্রাক্তনী

সম্পাদনা

জন্মলগ্ন থেকে এই পর্যন্ত অসংখ্য জ্ঞানী ও বিদগ্ধ পন্ডিতের জন্ম দিয়েছে জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া । এছাড়া রয়েছে অসংখ্য ব্যক্তিত্ব যাঁরা তাঁদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষ সফলতার পরিচয় দিয়েছেন ও দিচ্ছেন। জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ার উল্লেখযোগ্য প্রাক্তনীরা হলেন []

সর্বভারতীয় স্তরে জামিয়ার অবস্থান

সম্পাদনা

সর্বভারতীয় স্তরে সুপ্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সর্বজনবিদিত। ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ বডি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (NIRF) কর্তৃক আয়োজিত সার্ভে অনুযায়ী ভারতের সকল ইউনিভার্সিটি এবং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মধ্যে জামিয়া অবস্থান যথাক্রমে দ্বাদশষষ্ঠ[] এছাড়া, অতি সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডের আয়োজিত এক জরিপে জামিয়ার ল' ডিপার্টমেন্ট সারা ভারতের সকল প্রতিষ্ঠানের ল' বিভাগের মধ্যে ১ম স্থান দখল করেছে।[]

জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ার Mass Communication & Research Center ও সর্বভারতীয় স্তরে ব্যপক সুনাম অর্জন করেছে।

গ্রন্থাগার

সম্পাদনা
 
ড. জাকির হোসেন লাইব্রেরীর সামনের অংশ

ড. জাকির হোসেন লাইব্রেরী হল জামিয়ার সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ইসলামি ধর্মশাস্ত্র থেকে শুরু করে কলাবিভাগ, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবস্থাপনা প্রতিটি একক বিষয়ের জন্য বিভিন্ন বই সংগৃহীত আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টের সংশ্লিষ্ট লাইব্রেরি ও রয়েছে । শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ৪০০০০০ এর অধিক । []

২০০৬ সালে সৌদি আরবের বাদশা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ জামিয়া ভ্রমণে আসেন এবং লাইব্রেরির উন্নতি অল্পে ৩০ মিলিয়ন US Dollar প্রদান করেন। []

গেমস ও স্পোর্টস

সম্পাদনা

জামিয়ার একমাত্র স্টেডিয়াম নবাব মনসুর আলী খান পতৌদি স্টেডিয়াম।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Short History of Jamia Millia Islamia"Jamia Millia Islamia। Jamia Millia Islamia। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৭ 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৯ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১৪ 
  3. "Jamia - Alumni - Eminent Alumni"www.jmi.ac.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৫ 
  4. "MHRD's NIRF Ranks Jamia Millia Islamia 12th Among Universities"NDTV.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৩ 
  5. "Jamia Millia Islamia's Faculty of Law ranked at No.1 by India Today" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৩ 
  6. "Jamia - Dr Zakir Husain Library(Central Library) - Zakir Husain Library"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৩ 
  7. "Abdullah Donates $30m to Jamia Millia Islamia"Arab News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৬-০৬-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৩ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা