ডগ রাইট
ডগলাস ভিভিয়ান পারসন রাইট (ইংরেজি: Doug Wright; জন্ম: ২১ আগস্ট, ১৯১৪ - মৃত্যু: ১৩ নভেম্বর, ১৯৯৮) কেন্টের সিডকাপ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৮ থেকে ১৯৫১ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ডগলাস ভিভিয়ান পারসন রাইট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | সিডকাপ, কেন্ট, ইংল্যান্ড | ২১ আগস্ট ১৯১৪|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১৩ নভেম্বর ১৯৯৮ ক্যান্টারবারি, কেন্ট, ইংল্যান্ড | (বয়স ৮৪)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি লেগ-ব্রেক ডানহাতি মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বোলার, কোচ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৩০২) | ১০ জুন ১৯৩৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৮ মার্চ ১৯৫১ বনাম নিউজিল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৩২ - ১৯৫৭ | কেন্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৪ নভেম্বর ২০১৭ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ১৯৩২ থেকে ১৯৫৭ সময়কালে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ লেগ স্পিনার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন ডগ রাইট।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাকেন্টের বোলার টিচ ফ্রিম্যানের সম্মানার্থে তার শুরুরদিকের খেলোয়াড়ী জীবন বাঁধাগ্রস্থ হয়। তবে, ১৯৩৬ সালে টিচ ফ্রিম্যানের বোলিংশৈলী দূর্বলতম হতে থাকলে ডগ রাইট তার স্থান দখল করেন। ১৯৩৭ সালে দুইবার হ্যাট্রিক করেন। ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন। হেডিংলির নির্জীব উইকেটেও বেশ ভালো বোলিং করেন। তবে ত্রুটিপূর্ণ ফিল্ডিংয়ের কারণে তেমন সফলতা পাননি। ঐ মৌসুমের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন তিনি।
১৯৩৯ সালে রাইটের অগ্রযাত্রা আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। তন্মধ্যে দুইবার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। সমারসেটের বিপক্ষে ১৬/৮০ ও ব্রিস্টলে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে নির্জীব উইকেটে ৯/৪৭ পান। ব্যাট হাতেও অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। ৪৯০ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ১৯৩৬ সালে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন। তবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার ব্যাটিং নিম্নগামী হয়ে পড়ে। তাস্বত্ত্বেও নিচেরসারিতে অবস্থান করে বেশ ভালো করতেন। তন্মধ্যে, ১৯৫৫ সালে ১১ নম্বরে ব্যাটিং করে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ৬৬ রান তুলেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধে অনেক বোলারের দেহাবসান ঘটে। ফলশ্রুতিতে ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্যতম পছন্দের বোলার ছিলেন।
টেস্ট ক্রিকেট
সম্পাদনাঅস্ট্রেলিয়ায় অবতরণের পর রাইটকে ইংল্যান্ডের তুরুপের তাস হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু, দৌড়ানোর ভঙ্গীমায় তাকে সমস্যায় পড়তে হয় ও নো বল শুনতে হয়। কমপক্ষে চারবার ডন ব্র্যাডম্যানকে আউট করার সুযোগ পেলেও এ কারণে আউট করতে পারেননি। তাস্বত্ত্বেও, ২৩ উইকেট নিয়ে উভয় দলের মধ্যে শীর্ষস্থানে আরোহণ করেন যা নিকটতম বোলারের চেয়ে পাঁচটি বেশি ছিল। তবে, এজন্য তাকে উইকেট পিছু ৪৩.০৪ রান গুণতে হয়। এছাড়াও, ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে ৩৩.৩১ গড়ে ৫১ উইকেট নিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বাগ্রে ছিলেন।
ব্রিসবেনের প্রথম টেস্টে নিস্প্রাণ উইকেটে ৫/১৬৭ লাভ করলেও অস্ট্রেলিয়া ৬৪৫ রান তুলে। পরবর্তী তিন টেস্টে ইংরেজ অধিনায়ক ওয়ালি হ্যামন্ড রক্ষণাত্মক ফিল্ডিংয়ে অগ্রসর হন। সিডনির দ্বিতীয় টেস্টে ১/১৬৯ পান। সর্বাপেক্ষা দূর্ভাগ্যের শিকার হন তিনি। এক ওভারেই চারবার হ্যামন্ডের হাত ফসকে যায়।
মেলবোর্নের তৃতীয় টেস্টে লেগের দিক দিয়ে আসা বলকে সোজা মারার চেষ্টা চালান ব্র্যাডম্যান। প্যাডের শীর্ষে লাগে। ডগ রাইট ও গডফ্রে ইভান্স আবেদন জানালেও ডন ব্র্যাডম্যান অপরাজিত থাকেন। তবে, এক আলোকচিত্রশিল্পী একগুচ্ছ স্থিরচিত্রে ভিন্ন বিষয় চলে আসে।[১]
অ্যাশেজ সিরিজ
সম্পাদনা১৯৫০-৫১ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে পুনরায় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। এবারও দূর্ভাগ্য ও নো বল তার পিছু ছাড়েনি। ব্রিসবেনের প্রথম টেস্টে নীল হার্ভের বিপরীতে অপূর্ব বোলিং করেন। স্কয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে হার্ভে ছক্কা হাঁকালেও গুগলিতে ব্যাট ও স্ট্যাম্প উভয়ই পরাস্ত হয়।[২] চূড়ান্ত ইনিংসে ৭৭/৯ থাকাবস্থায় জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের আরও ১১৫ রানের দরকার পড়ে। শেষ উইকেটে লেন হাটনের সাথে ৪৫ রান যুক্ত করেন।
মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বে জ্যাক আইভারসনের শেষ চার বল সোজা ব্যাট দিয়ে ঠেকান। প্রথম তিন বল আটকালেও রে লিন্ডওয়ালের বলে স্কয়ার লেগ অঞ্চলে ২ রানে আউট হন। সিডনির তৃতীয় টেস্টে কেন্টের দলীয় সঙ্গী গডফ্রে ইভান্সের কারণে শূন্য রানে বিদায় নেন তিনি। মাংসপেশীতে টান পড়ায় সিরিজের একমাত্র স্পিন উপযোগী পিচে মাত্র কয়েক ওভার বোলিং করার পর শুধুই ফিল্ডিংয়ে অংশ নিতে হয় তাকে। রে লিন্ডওয়ালের বলে ট্রেভর বেইলির বৃদ্ধাঙ্গুলে আঘাত হানলে ইংল্যান্ড মাত্র তিনজন বোলার নিয়ে আক্রমণে নামে। খেলায় ইংল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে পরাভূত হয়।[৩][৪]
সুস্থ হবার পর অ্যাডিলেডের চতুর্থ টেস্টে রাইট মাঠে নামেন। ৪/৯৯ লাভ করেন রাইট। স্পিনের বিপক্ষে পারদর্শী আর্থার মরিসই কেবলমাত্র তাকে মোকাবেলায় সমর্থ হন।[৫][৬] ইংল্যান্ডের ইনিংসে ২১৯/৯ থাকা অবস্থায় লেন হাটনের সাথে যোগ দেন। শেষ উইকেটে ৫৩ রানের জুটি গড়েন। ইয়র্কশায়ারের ব্যাটসম্যান লেন হাটন অপরাজিত ১৫৬ রান তুলেন ও তিনি করেন ১৪ রান। সিরিজটিতে ৪৫.৪৫ গড়ে ১১ উইকেট পান। নিউজিল্যান্ডে তিনি আরও ৭ উইকেট তুলে নেন ২৫.৫৭ রান খরচায়।
কাউন্টি ক্রিকেট
সম্পাদনাআগস্ট, ১৯৫৩ সালে রাইটকে কেন্টের প্রথম পেশাদার অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। ১৯৫৬ সালে রাইট পঞ্চাশ উইকেটও তুলতে পারেননি। তবে, মিডলসেক্সের বিপক্ষে নিজস্ব সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। উইজডেন মন্তব্য করে যে, আট উইকেট শিকারে পরিণত হওয়া ব্যাটসম্যানদের অধিকাংশই রাইটের চব্বিশ বছরের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবনের সূচনায় জন্মগ্রহণ করেননি। তার লেগ-ব্রেক ও গুগলি বোলিংয়ে তারা যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হননি।
অবসর
সম্পাদনা১৯৫৭ সালের শুরুতে ডগ রাইট মন্তব্য করেন যে, দ্বিতীয়বারের মতো আর্থিক সুবিধা গ্রহণে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে অপারগ তিনি। মধ্য-জুলাইয়ে খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে উইজডেন তার খেলোয়াড়ী জীবন নিয়ে পর্যালোচনা করে ‘গুগলি বোলার্স এন্ড ক্যাপটেন রিটায়ার’ শিরোনামে নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চার্টারহাউজ স্কুলে কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
মূল্যায়ন
সম্পাদনাউইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন তিনি।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে রেকর্ডসংখ্যক সাতবার হ্যাট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছেন তিনি।[৭] কেন্টের পক্ষে ১৯ মৌসুম খেলেছেন। ১৯৫৩ সালের শেষদিক থেকে শুরু করে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ক্লাবের প্রথম পেশাদার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডন ব্র্যাডম্যানের মতে, অস্ট্রেলিয়া সফরে আসা সিডনি বার্নসের[৮] পর তিনি সেরা লেগ স্পিনার ছিলেন। অন্যদিকে কিথ মিলারের অভিমত, বিল ও’রিলি’র পর তিনি সেরা লেগ স্পিনার ছিলেন।[৯] ১৯৪৬-৪৭ ও ১৯৫০-৫১ মৌসুমে দুইবার অস্ট্রেলিয়া সফরে যান তিনি। তবে দূর্ভাগ্যের শিকার হন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে দূর্ভাগ্যজনক বোলার হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়।[১০][১১]
১৩ নভেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে ৮৪ বছর বয়সে কেন্টের ক্যান্টারবারি এলাকায় ডগ রাইটের দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনাআরও পড়ুন
সম্পাদনা- Clif Cary, Cricket Controversy, Test matches in Australia 1946-47, T. Werner Laurie Ltd, 1948
- J.H. Fingleton, Brown and Company, The Tour in Australia, Collins, 1951
- Bill O'Reilly, Cricket Task-Force, The Story of the 1950-1951 Australian Tour, Werner Laurie, 1951
- E.W. Swanton, Swanton in Australia with MCC 1946–1975, Fontana/Collins, 1975
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে ডগ রাইট (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে ডগ রাইট (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
ক্রীড়া অবস্থান | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী উইলিয়াম মারে-উড |
কেন্ট ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯৫৪–১৯৫৬ |
উত্তরসূরী কলিন কাউড্রে |