জ্যাক ফিঙ্গলটন

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

জন জ্যাক হেনরি ওয়েব ফিঙ্গলটন, ওবিই (ইংরেজি: Jack Fingleton; জন্ম: ২৮ এপ্রিল, ১৯০৮ - মৃত্যু: ২২ নভেম্বর, ১৯৮১) নিউ সাউথ ওয়েলসের ওয়াভার্লি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ও প্রথিতযশা লেখক ছিলেন। এছাড়াও, সাংবাদিকতা, রাজনৈতিক জীবন ও ক্রিকেট ধারাভাষ্যে তার বিস্তৃত পদচারণা ছিল। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৮ সময়কালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন জ্যাক ফিঙ্গলটন

জ্যাক ফিঙ্গলটন
১৯৩৮ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জ্যাক ফিঙ্গলটন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
জন হেনরি ওয়েব ফিঙ্গলটন
জন্ম(১৯০৮-০৪-২৮)২৮ এপ্রিল ১৯০৮
ওয়াভার্লি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু২২ নভেম্বর ১৯৮১(1981-11-22) (বয়স ৭৩)
সেন্ট লিওনার্ডস, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাব্যাটসম্যান, ধারাভাষ্যকার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৪২)
১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট২৪ আগস্ট ১৯৩৮ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২৮ – ১৯৪০নিউ সাউথ ওয়েলস
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৮ ১০৮
রানের সংখ্যা ১,১৮৯ ৬,৮১৬
ব্যাটিং গড় ৪২.৪৬ ৪৪.৫৪
১০০/৫০ ৫/৩ ২২/৩১
সর্বোচ্চ রান ১৩৬ ১৬৭
বল করেছে ৯১
উইকেট
বোলিং গড় ২৭.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ১/৬
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৩/– ৮১/৪
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১২ মার্চ ২০১৭

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষাবলম্বন করতেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

জ্যাক ফিঙ্গলটন সিডনির উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াভার্লি এলাকায় বসবাসকারী জেমস ফিঙ্গলটন ও বেলিন্ডা মে ওয়েব দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন।[][] বাবা জেমস ট্রাম চালক ও ইউনিয়ন সংগঠক ছিলেন। পরবর্তীকালে ফিঙ্গলটনের ৫ বছর বয়স থাকাকালীন বাবা জেমস মধ্য বামপন্থী দল অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির পক্ষে নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজ্য সংসদের সদস্য মনোনীত হন। এরফলে পরিবারটি বড় ধরনের গৃহে স্থানান্তরিত হয়। সেখানেই ফিঙ্গলটন স্ট্রিট ক্রিকেটে খেলা শিখতে থাকেন।[] রোমান ক্যাথলিক সেন্ট ফ্রান্সিসেস স্কুলে ভর্তি হন ফিঙ্গলটন।[] এ পরিবারটি আইরিশ ক্যাথলিক বংশোদ্ভূত ছিল। ফিঙ্গলটনের পৈতৃক সম্পর্কীয় দাদা ১৮৭০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসিত হন।[]

ফিঙ্গলটনের শৈশবকাল বেশ দুরূহ ছিল। পিতার মৃত্যুতে পরিবারকে সহায়তাকল্পে তাকে মাত্র ১২ বছর বয়সেই পড়াশোনা ত্যাগ করতে হয়। ১৯১৭ সালে তার পরিবার গভীর সঙ্কটে নিপতিত হয়। বাবা তার সদস্যপদ হারান ও চালকের চাকরি থেকেও বিতাড়িত হন। ১৯১৮ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন তার বাবা। ১৯২০ সালে বাবা মৃত্যুমুখে পতিত হন।[][] অস্ট্রেলীয় টেস্ট উইকেট-রক্ষক স্যামি কার্টার তার শবানুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন।[] এরপর তাকে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে অনেক ধরনের কাজে অংশ নিতে হয়েছে।[] ১৫ বছর বয়সে গণমাধ্যমে জড়িত হয়ে পড়েন।[] সংবাদপত্রে সফলতা লাভের পাশাপাশি ক্রিকেটেও উন্নতি করতে থাকেন তিনি।[১০] ১৬ বছর বয়সে সিডনি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেটে প্রথম স্তরের ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন।[]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

১৯২৮-২৯ মৌসুমে নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় অধিনায়ক টমি অ্যান্ড্রুজের আমন্ত্রণে ৬ষ্ঠ উইকেটে ডন ব্র্যাডম্যানের সাথে জুটি গড়ে অপরাজিত ১১১ রান তোলেন। ঐ ইনিংসে তিনি অপরাজিত ছিলেন ২৫* রানে। এ জুটিতে অধিকাংশ সময়ই ফিঙ্গলটনকে বল মোকাবেলা করতে হয়েছিল।[১১] খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।[১২] পরের খেলায় শূন্য রান করলে তাসমানিয়া দল ইনিংসের ব্যবধানে জয় পায়। পরের মৌসুমে কোন টেস্টও হয়নি এবং দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে কোন খেলায় অংশগ্রহণ করতে দেয়নি।[১২][১৩]

কিন্তু প্রথম তিন মৌসুমে তাকে বেশ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এ সময়ে তিনি দলে অনিয়মিতভাবে খেলেন ও মাত্র সাত খেলায় অংশ নেন।

খেলোয়াড়ী জীবন

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি পাঁচটি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজের চূড়ান্ত ও পঞ্চম টেস্টে বিল পন্সফোর্ড অসুস্থ এবং ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের গোড়ালিতে আঘাতজনিত কারণে শূন্যতা পূরণ করতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষে তার টেস্ট অভিষেক হয়।[][১৪] এই টেস্টে লরি ন্যাশের অভিষেকসহ স্পিন বোলার বার্ট আইরনমঙ্গারের অস্ট্রেলীয় দলে পুনরায় অন্তর্ভূক্তি ঘটেছিল।[১৫] বৃষ্টিস্নাত পীচে ফিঙ্গলটন ৪০ রান তুলেন যা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের চেয়েও বেশি ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ৩৬ ও ৪৫ রান তুলতে সক্ষম হয়।[১৬] খেলাটি ছয় ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো শেষ হয়।[১৭] ঐ খেলায় তার দল ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়। নিজ রাজ্য দলের পক্ষে মাত্র দশ খেলায় অংশগ্রহণের পর তার এ অন্তর্ভুক্তি ঘটে।[] দ্বিতীয় টেস্টে অন্তর্ভুক্তি ঘটলেও পরবর্তী তিন টেস্টে দ্বাদশ ব্যক্তির মর্যাদা পান তিনি।

বৃষ্টিস্নাত পীচে তিনি দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন যাতে দল ইনিংস বিজয় পায়।[][১৮] পরের মৌসুমে বডিলাইন আক্রমণের বিপক্ষে নিজেকে পরিচালিত করে অপরাজিত সেঞ্চুরি করেছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টে নিম্নমূখী দলীয় রানে কার্যকর ৮৩ রান তুলেন যাতে সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দল একমাত্র জয় পেয়েছিল। পরের টেস্টে অবশ্য জোড়া শূন্য লাভ করেন।[১৮][১৯] ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় বোলারদের সাথে ওয়ার্নারের ইংল্যান্ডের জয়ের কৌশল অবলম্বনে কথোপকথন ফাঁসের বিষয়ে নিজেকে বিতর্কে জড়ান। ঐ সময়ে ফিঙ্গলটনকে এ ফাঁসের সাথে জড়িত থাকাকে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু, তিনি এ বিষয়টি অস্বীকার করেন ও ব্র্যাডম্যানের উপর দোষারোপ তুলেন।[২০] সময়ের সাথে সাথে ফিঙ্গলটনের দৃষ্টিভঙ্গীই পরবর্তীকালে গ্রহণ করা হয়েছিল।

খেলার ধরন

সম্পাদনা

স্ট্রোকের তুলনায় রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় খেলার জন্য তিনি পরিচিতি পেয়েছেন।[২১] দ্রুতগতির হাফ-ভলি বা ইয়র্কার খুব কমই মোকাবেলা করতেন। কিন্তু বডিলাইনে তার ব্যাটিং বেশ দৃষ্টিনন্দন ছিল।[] দ্রুতগতিতে দৌঁড়ানোর অধিকারী ফিঙ্গলটন সহজাত প্রকৃতির ফিল্ডার ছিলেন ও কভারে তার ভূমিকা বেশ কার্যকর ছিল। ১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বিল ও’রিলি’র লেগ-ট্রাপে ভিক রিচার্ডসনবিল ব্রাউনের সাথে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন।[২২]

অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বিল উডফুলইংল্যান্ডের দলীয় ম্যানেজার পাম ওয়ার্নারের মধ্যকার বডিলাইন সিরিজ চলাকালে বাক্য বিনিময়ের বিষয়টি প্রকাশ পাবার পর তিনি ক্রিকেটীয় কূটনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়াও, প্রটেস্ট্যান্ট ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলে আইরিশ ক্যাথলিক কিছুসংখ্যক খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধাচরণেও তিনি ভূমিকা রাখেন।

খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের সাথে সখ্যতার মাধ্যমে ক্যানবেরায় রাজনৈতিক জীবন গড়ে তুলেন। তাকে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ক্রিকেট লেখক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি ক্রিকেট সম্পর্কীয় অনেকগুলো পুস্তক রচনা করে গেছেন যাতে ব্র্যাডম্যানের সমালোচনা করেছেন বিস্তরভাবে।

সম্মাননা

সম্পাদনা

ম্যানুকা ওভালের স্কোরবোর্ডে তার স্মৃতিকে চিরজাগরুক রাখতে ‘জ্যাক ফিঙ্গলটন স্কোরবোর্ড’ নামে পরিচিতি ঘটায়।[২৩][২৪]

পরিসংখ্যান

সম্পাদনা
  ব্যাটিং[২৫] বোলিং[২৬]
প্রতিপক্ষ খেলা রান গড় সর্বোচ্চ ১০০/৫০ রান উইকেট গড় সেরা
  ইংল্যান্ড ১২ ৬৭১ ৩১.৯৫ ১৩৬ ২/২
  দক্ষিণ আফ্রিকা ৫১৮ ৭৪.০০ ১১৮ ৩/১
সর্বমোট ১৮ ১১৮৯ ৪২.৪৬ ১৩৬ ৫/৩

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Wisden 1982 - Obituary - Jack Fingleton"Wisden। ১৯৮২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২১ 
  2. Growden, p. 17.
  3. Growden, pp. 18–19.
  4. Growden, pp. 15–16.
  5. Cashman, pp. 92–93.
  6. Growden, pp. 20–21.
  7. Growden, pp. 21–22.
  8. Growden, p. 23.
  9. Growden, p. 24.
  10. Growden, pp. 24–25.
  11. Growden, pp. 36–37.
  12. "Player Oracle JHW Fingleton"CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-১৪ 
  13. "Australian First-Class Season 1929/30: Batting - Most Runs"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-৩১ 
  14. Growden, p. 36.
  15. "Changes in the Australian Team", The Times, 4 February 1932, p. 4.
  16. "Australia v South Africa Fifth Test"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০০৮ 
  17. Piesse (2003), p. 126.
  18. "Statsguru - Australia - Tests - Results list"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-২১ 
  19. "Statsguru - JHW Fingleton - Test matches - All-round analysis"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-১৫ 
  20. Pollard, Jack (১৯৬৯)। Cricket the Australian Way 
  21. Growden, p. 35.
  22. Frith, David (১৯৮৭)। "'What did you do at Lord's, Grandpa?'"Wisden Cricket MonthlyCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-০৬ 
  23. "Manuka Oval - History"। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১১ 
  24. Growden, Greg (২০০৮)। Jack Fingleton : the man who stood up to Bradman। Crows Nest, New South Wales: Allen & Unwinআইএসবিএন 978-1-74175-548-0 
  25. "Statsguru – JHW Fingleton – Test matches – Batting analysis"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০০৮ 
  26. "Statsguru – JHW Fingleton – Test Bowling – Bowling analysis"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০০৮ 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা