চার্লি ম্যাককার্টনি

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

চার্লস জর্জ চার্লি ম্যাককার্টনি (ইংরেজি: Charlie Macartney; জন্ম: ২৭ জুন, ১৮৮৬ - মৃত্যু: ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮) নিউ সাউথ ওয়েলসের মেইটল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯০৭ থেকে ১৯২৬ সময়কালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

চার্লি ম্যাককার্টনি
১৯২০-এর দশকের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে চার্লি ম্যাককার্টনি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
চার্লস জর্জ ম্যাককার্টনি
জন্ম(১৮৮৬-০৬-২৭)২৭ জুন ১৮৮৬
মেইটল্যান্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮(1958-09-09) (বয়স ৭২)
লিটল বে, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনাম"দ্য গভর্নর-জেনারেল"
উচ্চতা৫ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৬০ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেফট-আর্ম অর্থোডক্স স্পিন
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৯০)
১৩ ডিসেম্বর ১৯০৭ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৪ আগস্ট ১৯২৬ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯০৫/০৬–১৯২৬/২৭নিউ সাউথ ওয়েলস
১৯০৯/১০ওতাগো
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩৫ ২৪৯
রানের সংখ্যা ২১৩১ ১৫০১৯
ব্যাটিং গড় ৪১.৭৮ ৪৫.৭৮
১০০/৫০ ৭/৯ ৪৯/৫৩
সর্বোচ্চ রান ১৭০ ৩৪৫
বল করেছে ৩৫৬১ ২৫০২১
উইকেট ৪৫ ৪১৯
বোলিং গড় ২৭.৫৫ ২০.৯৫
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৭
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭-৫৮ ৭-৫৮
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৭/– ১০২/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কর্তৃত্বমূলক ব্যাটিংশৈলীর সুন্দর উপস্থাপনার জন্য তিনি ‘গভর্নর-জেনারেল’ ডাকনামে ভূষিত হন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস ও ওতাগো দলের পক্ষে খেলেছেন চার্লি ম্যাককার্টনি

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

কৈশোরে তার ক্রীড়া প্রতিভা রাজ্যদল নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।[] ১৯০৫-০৬ মৌসুমে নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষে তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়। কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় তিনি প্রথম ইনিংসে ৫৬ রান তোলেন ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩/৮০ সহ একটি ক্যাচ নেন।

খেলোয়াড়ী জীবন

সম্পাদনা

বোলিং অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন। ছোটখাঁটো গড়নের ১৬০ সেমি. উচ্চতার অধিকারী ম্যাককার্টনি’র ১৯০৭ সালে টেস্ট অভিষেক ঘটে। মূলতঃ বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার হিসেবে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হন। পাশাপাশি নিচের-মাঝারি সারিতে কার্যকরী ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে ভূমিকা রাখেন। শুরুর দিকে তাকে বিভিন্ন অবস্থানে থেকে ব্যাটিং করতে হয়েছে।

১৯০৭-০৮ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল অস্ট্রেলিয়া সফরে আসে। প্রস্তুতিমূলক খেলায় অস্ট্রেলিয়া একাদশের পক্ষে ৪২ ও ৪/৩৬ পান। ফলশ্রুতিতে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে তার অভিষেক ঘটে। ব্যাটিংয়ের অবস্থান ও বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনে তাকে দলের উপযুক্ত খেলোয়াড় হিসেবে ধরা হয়েছিল। প্রথম ইনিংসে উইকেটবিহীন থাকলেও ৭নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৫ রান তোলেন।[] দ্বিতীয় ইনিংসে উইলফ্রেড রোডসের উইকেট পান। ২৭৪ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দলনায়ক মন্টি নোবেল তাকে ট্রাম্পারের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে পাঠান। কিন্তু তিনি মাত্র নয় রান তুলতে পেরেছিলেন। তা সত্ত্বেও দল দুই উইকেটে জয় পায়।

এছাড়াও ১৯০৯ সালে হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত টেস্টে দশ উইকেট নিয়ে দলকে জয়লাভে সাহায্য করেন। এরপর ১৯১০-১১ মৌসুমে দল থেকে বাদ পড়েন। পরবর্তীতে রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হন। টেস্টে অংশ নিয়ে সেঞ্চুরি করেন ও দলের শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান বনে যান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে সকল ধরনের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকে। ঐ সময়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ইম্পেরিয়াল ফোর্সে যোগ দেন।[][] বিশ্বযুদ্ধের পর খেলা পুনরায় শুরু হলে ম্যাককার্টনি নিজেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে উপস্থাপন করেন। ১৯২১ মৌসুমের অ্যাশেজ সফরে নটিংহামশায়ারের বিপক্ষে রেকর্ডসংখ্যক ৩৪৫ রান তোলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে একদিনে দ্রুততম সময়ে ত্রি-শতক লাভের গৌরব অর্জন করেন। ৩০০ রান তুলতে ২০৫ মিনিট খরচ করেন ও পূর্ণাঙ্গ ইনিংসটি চার ঘণ্টার কম ছিল। কিন্তু ১৯২৪-২৫ মৌসুমে মানসিক অসুস্থতা ও যুদ্ধকালীন আঘাতের কারণে ক্রিকেট খেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখেন।

সেঞ্চুরি করার পরপরই তিনি ব্যাট পরিবর্তনে যান। সর্বাপেক্ষা ভারী ব্যাট নেন ও বলেন যে, আমি এখন বলকে মাঠের বাইরে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত।[] রান ও বাউন্ডারির সংখ্যাও ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

অ্যাশেজ সিরিজ, ১৯২৬

সম্পাদনা

১৯২৬ সালের অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড গমন করেন। হেডিংলিতে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের জন্যে অনিয়মিত খেলোয়াড় জর্জ ম্যাকাউলিকে মনোনীত করা হয়। ইংরেজ অধিনায়ক আর্থার কার বোধহয় ধারণা করেছিলেন যে, পিচ হয়তোবা স্পিনারদের সহায়তা করবে। অস্ট্রেলীয়রা জর্জ ম্যাকাউলি সম্পর্কে সচেতন ছিল ও তাদের ব্যাটিংয়ে প্রভাব বিস্তার করার কথা ভাবে। তবে, খেলায় বোলার হিসেবে ম্যাকাউলি তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। খেলার শুরুতেই চার্লি ম্যাকার্টনি আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান। উইজডেনের মতে, তিনি তার খেলোয়াড়ী জীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস উপহার দিয়েছেন। নির্দয়ভাবে ইংরেজ বোলিং আক্রমণের উপর চড়াও হন। মধ্যাহ্নবিরতির পূর্বেই সেঞ্চুরি করার ন্যায় বিরল অর্জনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান তার অধিনায়ককে জিজ্ঞেস করেন যে, যদি তিনি ম্যাকাউলিকে পেটাতে থাকেন তাহলে ইয়র্কশায়ারীয় বোলারের উপর দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবেন। এক পর্যায়ে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। তবে, শর্ট বলে শূন্যে বল মারলে কট আউটে বিদায় নেন ম্যাকার্টনি। এটিই ঐ ইনিংসে ম্যাকাউলির সফলতা ছিল। ম্যাকাউলি ৩২ ওভারে ১২৩ রান খরচ করে ফেলেন। অস্ট্রেলিয়া দল ৪৯৪ রানে ইনিংস শেষ করে।[][][] দশ নম্বরে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন জর্জ ম্যাকাউলি। ইংল্যান্ডের সংগ্রহ তখন ১৮২/৮ ও পরাজয়ের সমূহ আশঙ্কায় ধুকছিল। আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেন ও দশটি চারের মারে ৭৬ রান তুলেন। এ পর্যায়ে জর্জ গিয়েরি’র সাথে ১০৮ রান তুলে ড্র করান।[][]

খেলার ধরন

সম্পাদনা

অন্যতম প্রথিতযশা ক্রিকেটার ভিক্টর ট্রাম্পারের সাথে তার তুলনা করা হতো।[১০] তার লক্ষ্যভেদী চিন্তাধারা ডন ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিংয়ে প্রবহমান ছিল। এ প্রসঙ্গে উইজডেন মন্তব্য করে যে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি দূর্দান্ত ছিলেন যা তাকে অনুকরণ করা দুষ্কর ছিল। এছাড়াও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা প্রতিভাধর ও আকর্ষণীয় ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি।[১০][১১] চোখ, হাত ও পায়ের চমৎকার সমন্বয়েই তিনি ব্যাপকভাবে সফলতা পেয়েছেন।[১০] কর্তৃত্বমূলক, যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও ধ্বংসাত্মক স্ট্রোকের কারণে কেন্টের ক্রিকেটার কেনেথ হাচিংস তাকে ‘গভর্নর-জেনারেল’ নামে ডাকতেন।[]

সম্মাননা

সম্পাদনা

১৯২১ মৌসুমে ব্যাটিং গড়রান সংগ্রহে তিনি শীর্ষস্থানে অবস্থান করেন। এরফলে উইজডেন কর্তৃপক্ষ তাকে ১৯২২ সালে বর্ষসেরা ক্রিকেটাররূপে ঘোষণা করে। উইজডেন এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করে যে, অনেক দিক দিয়েই তিনি বর্তমানকালের অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানের তুলনায় তিনি সর্বাপেক্ষা প্রতিভাধর ছিলেন।[১০]

টেস্টের প্রথম অধিবেশনেই দ্বিতীয় অস্ট্রেলীয় হিসেবে সেঞ্চুরি করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে ভিক্টর ট্রাম্পারের পর মধ্যাহ্নবিরতীর পূর্বেই তিনি এ রেকর্ড গড়েন।[১২] অন্যরা হচ্ছেন - ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান (১৯৩০), মজিদ খান (১৯৭৬) এবং ডেভিড ওয়ার্নার (২০১৬)।

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

ক্রিকেটের স্বর্ণযুগে ট্রাম্পারকে ‘মুকুটধারী রাজপুত্র’ নামে ডাকা হতো। তার সাথে ম্যাককার্টনি’র বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ছিল। ট্রাম্পারের প্রভাবে ম্যাককার্টনি আরও কৌতূহলোদ্দীপক ভঙ্গীমায় খেলতেন। তাদের মনোমুগ্ধকর খেলায় অস্ট্রেলীয়রা গর্ববোধ করতো।[১৩] ১৯১৫ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ট্রাম্পারের দেহাবসান ঘটলে তিনি শবযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ম্যাককার্টনি নিঃসন্তান ছিলেন। ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের লিটল বে এলাকায় কর্মরত অবস্থায় হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হন। ৭২ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে।[১৪][১৫]

ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ সালে রিচি বেনো’র সাথে তাকেও মরণোত্তর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকায় তাদের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ২৬তম ও ২৭তম।[১৬]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Perry, p. 114.
  2. Piesse, p. 74.
  3. Cashman; Franks; Maxwell; Sainsbury; Stoddart; Weaver; Webster (১৯৯৭)। The A-Z of Australian cricketers। পৃষ্ঠা 178–179। 
  4. Haigh, p. 264.
  5. Pollard, Jack (১৯৬৯)। Cricket the Australian Way। পৃষ্ঠা 192–193। 
  6. "England v Australia 1926"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯২৭। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১০ 
  7. Cardus, Neville (১৯৫৯)। "Charles Macartney and George Gunn"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১০ 
  8. Perry, Roland (২০০২)। Bradman's best Ashes teams: Sir Donald Bradman's selection of the best ashes teams in cricket history। Milsons Point, New South Wales: Random House Australia। পৃষ্ঠা 110–12। আইএসবিএন 1-74051-125-5 
  9. "England v Australia in 1926"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১০ 
  10. "Wisden 1922 - Charles Macartney"। -Wisden। ১৯২২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-৩১ 
  11. Pollard, p. 66.
  12. "Hundred before lunch"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৭ 
  13. Haigh, p. 94.
  14. Perry, p. 119.
  15. "Macartney, Charles George (1886 - 1958)"Australian Dictionary of Biography। ১৯৮৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০৪ 
  16. Coverdale, Brydon (২০০৭-০২-০৪)। "Benaud and Macartney join Hall of Fame"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১৬ 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জী

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা