কুমিল্লা জিলা স্কুল

১৮৩৭ সালে কুমিল্লা জেলায় প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যালয়

কুমিল্লা জিলা স্কুল বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত একটি বালক বিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি সুপ্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।[] ১৮৩৭ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। [] এটি কুমিল্লা জেলার প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের সন্নিকটে অবস্থিত। স্কুলটি প্রভাতি ও দিবা এই দুই শিফটে বিভক্ত। স্কুলটিতে ৫ম থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয়। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিক দিয়ে, এই স্কুলটি বেশ কয়েক বছর ধরে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে প্রথম স্থান ও সমগ্র বাংলাদেশে সেরা দশের মধ্যে অবস্থান করছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] স্কুলটিতে প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। বর্তমানে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক পদে অধিষ্ঠিত আছেন জনাব মোঃ আবদুল হাফিজ। তিনি ৮ নভেম্বর ২০২২ থেকে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।

কুমিল্লা জিলা স্কুল
অবস্থান
মানচিত্র
জিলা স্কুল রোড, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা

তথ্য
ধরনসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
নীতিবাক্যপড় তোমার প্রভুর নামে
প্রতিষ্ঠাকাল২০ জুলাই ১৮৩৭; ১৮৭ বছর আগে (20 July 1837) []
প্রতিষ্ঠাতাহেনরী জর্জ লেইসেস্টার
বিদ্যালয় বোর্ডকুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড
বিদ্যালয় জেলাকুমিল্লা
ইআইআইএন১০৫৭৭০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রধান শিক্ষকমোহাম্মদ আব্দুল হাফিজ
শ্রেণি৫ম – ১০ম
লিঙ্গবালক
ভর্তি২০০০
ভাষাবাংলা মাধ্যম
শিক্ষায়তন৫.৬৯ একর
ক্যাম্পাসের ধরনশহুরে
ওয়েবসাইটwww.czs.edu.bd
কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রবেশদ্বার

ইতিহাস (১৮৩৭-২০১৫)

সম্পাদনা

কুমিল্লা জিলা স্কুলের একটি গৌরবময় সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। ১৮৩৭ সালে এইচ জি লেজিস্টার নামে একজন ইংরেজ শিক্ষক স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই ছিলেন এই স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ভারত সরকার ইংরেজি সাহিত্য ও বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে স্কুলটিকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের রূপ প্রদান করে এবং "কুমিল্লা জিলা স্কুল" নামকরণ করে। ১৮৫০ সাল পরবর্তী সময়ে, স্কুলের ভবন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু হয় এবং শিক্ষা প্রদান পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটানো হয়। ১৯৩৭ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল এর প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদ্‌যাপন করে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর স্কুলটির শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটানো হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে, স্কুলটি শিক্ষা ও অন্যান্য দিক দিয়ে উন্নয়ন লাভ করতে থাকে। ২০০৯ সালে, স্কুলটি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের শ্রেষ্ঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ২০১২ সালের ২০ই জুলাই স্কুলটি তার প্রতিষ্ঠার ১৭৫তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করে। এ উপলক্ষে স্কুল প্রাঙ্গণ ও ভবনসমূহ আলোকসজ্জিত করা হয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বর্তমান অবস্থা

সম্পাদনা

স্কুলটি একটি বালক উচ্চ বিদ্যালয়। প্রাথমিকভাবে স্কুলটিতে একটি শিফট ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে, স্কুলে দুইটি শিফটে বিভক্ত হয়ঃ প্রভাতি ও দিবা। বর্তমানে স্কুলটিতে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। পঞ্চম শ্রেণীতে দুইটি শাখা বিদ্যমান।প্রভাতি ক ও দিবা ক।ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণীতে ছয়টি শাখা বিদ্যমান। এগুলো হল, প্রভাতি ক, খ, গ এবং দিবা ক, খ, গ। নবম ও দশম শ্রেণীতেও ৬টি করে শাখা বিদ্যমান। প্রভাতি ক, খ ওগ এবং দিবা ক, খ ও গ। বর্তমানে স্কুলটিতে প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থী এবং ৫৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সহযোগীতামূলক সম্পর্ক চোখে দেখার মত। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রদের নৈতিকতা শেখানোর ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী।

প্রতিবছর সকল জাতীয় ও ধর্মীয় উৎসব গভীর উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হয়।

এ বিদ্যালয়ে করোনাকালীন সময়ে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের ন্যায় ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের বিস্তৃতি সম্পন্ন হয়েছে। এবং সুগঠিত কমন-রুম ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা অবসর সময় যাপন করতে ইন-ডোর গেমস খেলে থাকে।

স্কুলের নির্দিষ্ট পোশাক হল সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট ও সাদা জুতো এবং কালো বেল্ট । শার্ট ফুল হাতা বা হাফ হাতা দুটোই গ্রহণযোগ্য। এছাড়া শীতকালে নীল রঙের সোয়েটারও ইউনিফরমের অন্তর্ভুক্ত। শার্টের পকেটে স্কুলের মনোগ্রামযুক্ত ব্যাজ থাকা আবশ্যক।

সাধারণত শিক্ষার্থীরা পঞ্চম ও ষষ্ঠ শেণীতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করে। এজন্য শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ভর্তি পরীক্ষা ডিসেম্বর মাসে সংঘটিত হয়।তবে করোনা মহামারী এর পর থেকে কেন্দ্রীয় আদেশে লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সহশিক্ষা কর্মসূচী

সম্পাদনা
  • বি এন সি সি (বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর)
  • স্কাউটিং
  • খেলাধুলা (অ্যাথলেটিক্স, ক্রিকেট ও ফুটবল)
  • কুমিল্লা জিলা স্কুল সাইন্স প্রজেক্ট ক্লাব
  • সাইন্স প্রজেক্ট ফেয়ার
  • সাইন্স রিসার্চ ল্যাব
  • বিতর্ক
  • সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
  • বার্ষিক সাময়িকী
  • গণিত ও ভাষা প্রতিযোগিতা
  • বিজ্ঞান মেলা
  • শিক্ষা সফর ইত্যাদি
  • সাইন্স ক্লাব
  • ছাত্র কেবিনেট

বিদ্যালয় ছাত্র কেবিনেট

সম্পাদনা

কুমিল্লা জিলা স্কুলের ছাত্র কেবিনেট হলো উক্ত বিদ্যালয়ের অত্যন্ত কার্যকরী সহশিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে, অন্যান্য সহশিক্ষার কার্যকম সুনিশ্চিত করা, বিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে ভূমিকা পালন করা, ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ও মান উন্নয়নের কাজে এ ছাত্র কেবিনেট কাজ করে থাকে। ৬ষ্ঠ হতে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতি শ্রেণি হতে কমপক্ষে ১জন করে মোট ৮জন কেবিনেট সদস্য হতে পারে। কেবিনেট সদস্যরা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হয়। কুমিল্লা জিলা স্কুলের ছাত্র কেবিনেট বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নানা অসুবিধা সমাধানে, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে, খেলাধুলা(House cup) আয়োজনে, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানে, সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনায়, শিক্ষাসফর ব্যবস্থা , টিফিনের খাদ্য মান উন্নয়ন, শান্তি বজায় রাখা, সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাড়ানো নিশ্চিত, কুমিল্লা জিলা স্কুল সাইন্স প্রজেক্ট ক্লাব গঠনের পাশাপাশি অন্যান্য ক্লাবগুলোর কার্যক্রম উন্নয়নসহ ইত্যাদি কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে ও সফলতা অর্জন করেছে। এসকল কাজে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকগণ সহায়তা করেছেন। বিশেষত ২০১৯ সাল হতে কেবিনেট কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে।

উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন ছাত্র

সম্পাদনা

চিত্রশালা

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "কুমিল্লা জিলা স্কুল - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১০ 
  2. "কুমিল্লা জিলা স্কুল"www.czs.edu.bd। ২০২০-০১-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৩ 
  3. "Cumilla Zilla School (কুমিল্লা জিলা স্কুল) | Nagorik Seba"www.nagorikseba.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১০ 
  • এখানে উল্লিখিত তথ্যসমূহ স্কুলটির বার্ষিক সাময়িকী থেকে সংগৃহীত।
  • http://www.czs.edu.bd/

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা