একনাথ
একনাথ ছিলেন একজন বিশিষ্ট মারাঠি সন্ত, পণ্ডিত ও বারকরী সম্প্রদায়-ভুক্ত সন্তকবি। মারাঠি সাহিত্যের বিকাশের ক্ষেত্রে তাকে তার পূর্বসূরি ধ্যানেশ্বর ও নামদেব এবং উত্তরকালের তুকারাম ও সমর্থ রামদাসের মধ্যে সংযোগ-সাধনকারী মনে করা হয়। অধুনা ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের অন্তর্গত পৈঠনে একনাথ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম সূর্যনারায়ণ ও মাতার নাম রুক্মিণী। কথিত আছে, বাল্যকালে একদিন একনাথ একটি শিব মন্দিরের বাইরে বসে ছিলেন। এমন সময় তিনি একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পান। ঐ কণ্ঠস্বর তাকে গৃহত্যাগ করে দেওঘরে গিয়ে গুরু জনার্দন স্বামীর সন্ধান করতে বলে। একনাথ গৃহত্যাগ করে দেওঘর চলে যান। পৈঠনে ফিরে এসে তিনি তার ঠাকুরদা ও ঠাকুরমার ইচ্ছানুসারে গিরিজা বাইকে বিবাহ করেন। পরবর্তীকালে তাদের সংসারে তিনটি সন্তানের জন্ম হয়েছিল। এঁরা হলেন গোদাবরী, হরি পণ্ডিত ও গঙ্গা। বহু বছর পরে যখন একনাথের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে, তখন তিনি দেহত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার শিষ্য গব্বকে দায়িত্ব দেন, যেখানে তিনি রামায়ণ পাঠ শেষ করেছিলেন, সেখান থেকে রামায়ণ পাঠ করার। গোদাবরী নদীর তীরে শেষ ধর্মোপদেশ দানের পর, নদীতে প্রবেশ করে তিনি দেহত্যাগ করেন।[১]
পরিচয়
সম্পাদনাএকনাথের জীবৎকালের সঠিক তারিখ জানা যায় না। তবে প্রথাগত বিশ্বাস অনুসারে, তিনি খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীর মধ্য থেকে শেষার্ধের ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কিংবদন্তি অনুসারে, তিনি পৈঠনের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই তিনি পিতৃমাতৃহীন হন। তার ঠাকুরদা ভানুদাস তাকে লালনপালন করেন। ভানুদাস ছিলেন বারকরী সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।[২] কোনও কোনও সূত্র অনুসারে, ভানুদাস ছিলেন একনাথের প্রপিতামহ।[৩] সম্ভবত (তবে নিশ্চিত নয়) একনাথের গুরু জনার্দন ছিলেন একজন সুফি।[৪]
রচনা
সম্পাদনাএকনাথ ভাগবত পুরাণ গ্রন্থের একটি পাঠান্তর রচনা করেছিলেন। এটি একনাথী ভাগবত নামে পরিচিত।[৫] এছাড়া তিনি ভাবার্থ রামায়ণ নামে রামায়ণ গ্রন্থের একটি পাঠান্তরও রচনা করেন। একনাথ রুক্মিণী স্বয়ম্বর হস্তমালক রচনা করেন। এটি ৭৬৪টি ওবীতে নিবদ্ধ এবং আদি শঙ্কর রচিত একই নামের একটি ১৪-শ্লোকী সংস্কৃত স্তোত্রের ভিত্তিতে লিখিত।
তার অন্যান্য রচনাগুলি হল শুকাষ্টক (৪৪৭ ওবী), স্বাত্মা-সুখ (৫১০ ওবী), আনন্দ-লহরী (১৫৪ ওবী), চিরঞ্জীব-পদ (৪২ ওবী), গীতা-সার ও প্রহ্লাদ-বিজয়। মারাঠি ভাষায় তিনি ভারুদ নামে এক নতুন ধরনের ভক্তিগীতি প্রচলন করেন। তিনি নিজে ৩০০টি ভারুদ রচনা করেছিলেন।[৫] এগুলি তিনি বারকরী সম্প্রদায়ে গাইতেন। তিনি অন্যান্য ভাষাতেও ভারুদ রচনা করেন। এছাড়া তিনি অভঙ্গ নামক গীতিকবিতার আকারেও ৩০০টি ভক্তিগীতি রচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রচারক। অনেক জায়গায় তিনি প্রকাশ্যে ধর্মোপদেশ দান করেছিলেন।
একনাথ মহারাষ্ট্র অঞ্চলে ‘বাসুদেব সংস্থা’ নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন স্থাপন করেন। এই সংস্থার সদস্যদের বাসুদেব বলা হত। তারা বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনে যেতেন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভজন গানের মাধ্যমে ধর্মীয় বার্তা প্রচার করতেন।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Amar Chitra Katha/Poet and Thinkers/Ekanath
- ↑ Novetzke (2013), pp. 141-142
- ↑ Schomer & McLeo (1987), p. 94
- ↑ Novetzke (2013), p. 142
- ↑ ক খ Keune, Jon Milton (২০১১)। Eknāth Remembered and Reformed: Bhakti, Brahmans, and Untouchables in Marathi Historiography। New York, NY, USA: Columbia University press। পৃষ্ঠা 32। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Novetzke, Christian Lee (২০১৩), Religion and Public Memory: A Cultural History of Saint Namdev in India, Columbia University Press, আইএসবিএন 9780231512565
- Schomer, Karine; McLeo, W. H. (১৯৮৭), The Sants: Studies in a Devotional Tradition of India, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 9788120802773