উলপাহাড়ী
উলপাহাড়ী হলো পূর্ব ভারতে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান বিভাগের বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমার মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত একটি উপজাতিপ্রধান গ্রাম।
উলপাহাড়ী | |
---|---|
গ্রাম | |
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে উলপাহাড়ীর অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°০৫′১৮″ উত্তর ৮৭°৩৯′৫১″ পূর্ব / ২৪.০৮৮২৪০৫° উত্তর ৮৭.৬৬৪২৮০° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | বীরভূম |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা, সাঁওতালি, ইংরাজী |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন | ৭৩১২১৬ |
টেলিফোন কোড | ০৩৪৬২ |
লোকসভা নির্বাচনকেন্দ্র | বীরভূম |
বিধানসভা নির্বাচনকেন্দ্র | রামপুরহাট |
ওয়েবসাইট | birbhum |
গ্রাম সম্বন্ধ্যে
সম্পাদনাবিগত প্রায় দুশত বছর ধরে সাঁওতাল জনজাতির লোকেরা এই গ্রামে বসবাস করছেন। বর্তমানে গ্রামটিতে মোটামুটিভাবে ৭৬টি পরিবার বসবাস করছে। গ্রামটি জঙ্গল পরিবৃত এবং বসবাসকারী সাঁওতালদের প্রচেষ্টায় তারা শালপাতা ব্যবহার করে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রসাধনী তথা থালা, বাটি, গ্লাস ইত্যাদি তৈরীর কাজে নিজেদের নিযুক্ত করেছেন।[১]
শিক্ষা
সম্পাদনাউলপাহাড়ী গ্রামটিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, যা "উলপাহাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়" নামে পরিচিত। বিদ্যালয়টি "বীরভূম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিষদ"-এর রক্ষনাবেক্ষণাধীন।[২][৩] গ্রামটিতে কোনো মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় নেই।
ভাষা
সম্পাদনাউলপাহাড়ী গ্রামটি জঙ্গল পরিবৃৃৃত হওয়ার কারণে বহুবছর এটি বহির্জগৎ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিলো। উলপাহাড়ীর প্রায় প্রত্যেক অধিবাসীই সাঁওতালভাষী। গ্রামটির সাথে সংযোগ স্থাপনের ভাষা স্থানীয়ভাবে সাঁওতালি হওয়ার উলপাহাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় সাঁওতালির সাথে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়ও শিক্ষা দেওয়া হয়।
সংস্কৃতি
সম্পাদনাসাঁওতালরা মূলত অস্ট্রিক জনজাতির অন্তর্গত যদিও বেশকিছু ক্ষেত্রে জনজাতির মিশ্রণ ঘটে থাকাটা স্বাভাবিক। তারা নিজেদের গ্রামে একে-অপরের সাথে কথ্য ভাষা সাঁওতালির ব্যবহার করে থাকেন। তারা "হোড়" থেকে "দিকু" গ্রামগুলিতে গেলে তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বাংলা ভাষাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তারা নিজেদের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে "হোড়" এবং অসাঁওতালদেরকে "দিকু" বলে চিহ্নিত করেন। উলপাহাড়ী গ্রামটির জনসংখ্যা যেমন কম, গ্রামটি তেমনই নিম্নবিত্ত। তাদের সংস্কৃতিতে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া আছে। তাদের উদযাপিত কিছু অনুষ্ঠান হলো, মকর পরব, বাহা পরব, বাঁদনা পরব, করমা পরব ইত্যাদি। নিত্যদিনে মূলত তারা ঘরে তৈরী মদ্য পানীয় হাঁড়িয়া পান করেন, যা মহুয়া, চাল, ইস্ট, গুড় ইত্যাদি ব্যবহার করে তৈরী করা হয়ে থাকে।
শিবপাহাড়ী
সম্পাদনাউলাপাহাড়ী গ্রামেরই একটি অঞ্চলের নাম শিবপাহাড়ী। এখানেই জয়দ্রথের প্রাচীন শিবলিঙ্গটি রয়েছে, যা মহাভারতের সমসাময়িক। ইতিহাস কুখ্যাত কালাপাহাড় এই শিবলিঙ্গটিকে একাধিক খণ্ডে খণ্ডিত করেন।[৪] এখানেই জয়দ্রথ মাসের পর মাস চতুষ্পদযুক্ত শিবলিঙ্গের সম্মুখে ধ্যানমগ্ন হয়ে শিবের আরাধনা করেছিলেন। জয়দ্রথের রণে মৃত্যুর ভবিষ্যৎ বাণী শুনে তার পিতা অভিসম্পাত দিয়ে বলেছিলেন যে, যে তার পুত্রের মস্তক ভূলুণ্ঠিত করবে তার মস্তক শতধা বিদীর্ণ হবে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের অর্ধচন্দ্রাকৃতি বাণে জয়দ্রথের মস্তক উড়ে এসে এই স্থানে তার পিতা সন্ধ্যাবন্দনারত বৃদ্ধক্ষত্রের কোলে এসে পড়ে। রাজা বৃদ্ধক্ষত্র না বুঝে বা পুত্রের ছিন্নমুণ্ড দেখে উঠে দাঁড়ান। ফলে এই মাথা মাটিতে পতিত হওয়ায় তার নিজের মাথাও শত ভাগে বিদীর্ণ হয়।[৫]
সামাজিক ও ধর্মীয় জীবন
সম্পাদনাউলাপাহাড়ীতে বসবাসকারী প্রত্যেকেই সাঁওতাল। গ্রামটিতে কোনো মন্দির না থাকলেও পূজা করার একটি বেদী রয়েছে। তারা হিন্দু দেব-দেবী সরস্বতী, কালী প্রভৃতির পূজার্চনা করে থাকেন। হিন্দু ধর্ম ছাড়াও তারা সরনা ধর্ম অনুসরণ করেন। তারা মারাঙবুরু, যাহেরায়েরা ও মাঁঝিতে বিশ্বাস রাখেন। সাঁওতালিরা কালসিং, লকছেরা, বেউদরং প্রভৃতি ভৌতিক ও আধ্যাত্মিক চরিত্রগুলির চর্চাও করেন। গ্রামের ধর্মযাজক হলেন নাইকী বা শমন ওঝা। দেব-দেবীকে তুষ্ট করতে পশুবলি দেওয়ার প্রথা সাঁওতালদের মধ্যে অতি প্রচলিত।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Birbhumer Bon Udbhidjo O Banyapran, Paschim Banga, Birbhum Special Issue,
- ↑ [১] [অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ [২] [অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Archived copy"। ২৭ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৮।
- ↑ "Ganpur forest"। Telegraphindia.com। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৯।