ইজ্জউদ্দিন আল-কাসসাম
ইজ্জউদ্দিন আবদুল কাদির ইবনে মুস্তাফা ইবনে ইউসুফ ইবনে মুহাম্মদ আল-কাসসাম (১৮৮১[১] বা ১৮৮২ [২][৩] – ১৯৩৫) (আরবি: عز الدين بن عبد القادر بن مصطفى بن يوسف بن محمد القسام) ছিলেন ১৯২০ ও ১৯৩০ এর দশকের একজন সিরিয়ান মুসলিম প্রচারক, লেভান্টে ব্রিটিশ ও ফরাসি মেন্ডেট শাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রতিরোধে নেতৃত্বদানকারী এবং জায়নবাদের সশস্ত্র প্রতিরোধকারী নেতা।
ইজ্জউদ্দিন আল-কাসসাম | |
---|---|
عز الدين القسام | |
জন্ম | ১৯ ডিসেম্বর ১৮৮২ |
মৃত্যু | ২০ নভেম্বর ১৯৩৫ | (বয়স ৫২)
মাতৃশিক্ষায়তন | আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | বিদ্রোহী নেতা, মুসলিম কর্মী, শিক্ষক, ইমাম |
প্রতিষ্ঠান | জামিয়াত আল-শুব্বান আল-মুসলিমিন, আল-কাফ আল-আসওয়াদ |
আল-কাসসাম মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। উসমানীয় শাসনের শেষের দিকে সিরিয়ায় নিজ শহর জাবলাহতে তিনি একজন ইসলামি পুনর্জাগরণবাদি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখানে আসার পর তিনি লিবিয়ায় ইতালীয় শাসনের বিরুদ্ধে লিবিয়ান প্রতিরোধের একজন সমর্থক হয়ে উঠেন। তিনি লিবিয়ানদের সাহায্যের জন্য তহবিল ও যোদ্ধা সংগ্রহ করেছেন। তিনি তাদের জন্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। পরবর্তীতে ১৯১৯-২০ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর সিরিয়ায় ফরাসি মেন্ডেটরি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার তিনি ইবরাহিম হানানুর সাথে নিজ বিদ্রোহী দলকে নিয়ে যোগ দেন।
বিদ্রোহীরা পরাজিত হওয়ার পর তিনি ফিলিস্তিনে অভিবাসী হন।[৪][৫][৬][৭] এখানে তিনি একজন মুসলিম ওয়াকফ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। ফিলিস্তিনি আরব কৃষকদের দুর্দশার ব্যপারে তিনি তাদেরকে সচেতন করেছিলেন। ১৯৩০ এর দশকে তিনি স্থানীয় যোদ্ধাদের নিয়ে দল গঠন করেন এবং ব্রিটিশ ও ইহুদি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেন। একজন ব্রিটিশ পুলিশ নিহত হওয়াতে তার ভূমিকার রয়েছে সন্দেহ হওয়ায় গ্রেপ্তার অভিযানে তিনি নিহত হন। ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ টম সেগেভ তাকে আরব জোসেফ ট্রাম্পেলডোর বলে অবিহিত করেছেন।[৮] ১৯৩৬-৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনের আরব বিদ্রোহে তার মৃত্যু ও অভিযান ভূমিকা রেখেছে।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাআল-কাসসাম উসমানীয় সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমে জাবলাহ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার বাবা আবদুল কাদির ছিলেন উসমানীয় যুগে শরিয়া আদালতের একজন কর্মকর্তা এবং কাদেরিয়া তরিকার একজন স্থানীয় নেতা। তার দাদা কাদেরিয়া তরিকার একজন প্রধান শাইখ ছিলেন এবং তিনি জাবলাহ থেকে ইরাক চলে এসেছিলেন। আল-কাসসাম ফিকহের ক্ষেত্রে হানাফি মাজহাব অণুসরণ করতেন। তিনি স্থানীয় ইস্তাম্বুলি মসজিদে খ্যাতনামা আলেম শাইখ সালিম তাইয়ারাহর তত্ত্বাবধানে লেখাপড়া করেছেন।[৯]
১৯০২ থেকে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে আল-কাসসাম আল-আজহার মসজিদে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে কায়রো গমন করেন। সেখানে তিনি কাদের সাথে লেখাপড়া করেছেন তা নিয়ে সূত্রভেদে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। কিছু সূত্র অনুযায়ী আল-কাসসাম মুসলিম সংস্কারবাদী আলেম মুহাম্মদ আবদুহর ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা করেছেন এবং এখানে তিনি আবদুহর ছাত্র সালাফিপন্থি রশিদ রিদার সংস্পর্শে আসেন।[৯] তবে অন্য কিছু সূত্রে এই দুইজনের সাথে আল-কাসসামের সম্পর্ক ছিল কিনা তা নিয়ে সঠিক জানা যায় না। তবে পরবর্তীতে আরব বিশ্বের রাজনীতিতে আল-কাসসামের কর্মকাণ্ডে কারণে তিনি আবদুল ও রিদা উভয়ের চিন্তাধারা গ্রহণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়।[১০] আল-আজহারে তিনি তিনি তার ভবিষ্যত কাজের ব্যাপারে চিন্তাধারা গঠন করেছিলেন। তিনি ইসলামের স্থবির ব্যাখ্যার বিপক্ষে ছিলেন। কৃষক ও অন্যান্য স্থানীয় জনতার কাছে তিনি জিহাদের মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম ইসলামের এমন সমকালীন ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তার কথা প্রচার করেছেন।[১১] ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আলেম হিসেবে জাবলাহ ফিরে আসেন এবং একটি কাদেরিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি কাদেরিয়া তরিকা এবং কুরআনের আইনতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা শিক্ষা দিতেন। শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি ইবরাহিম ইবনে আদহাম মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১২]
জাবলাহ প্রত্যাবর্তনের পর আল-কাসসাম নৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ইসলামি পুনর্জাগরণ কর্মসূচি শুরু করেন। নিয়মিত নামাজ ও রোজা পালন এবং জুয়া ও মদ্যপান বন্ধ করা তার কার্যক্রমের অংশ ছিল। আল-কাসসামের কার্যক্রম জাবলাহতে প্রভাব ফেলে এবং স্থানীয় জনগণ তার সংস্কার গ্রহণ করে। তিনি স্থানীয় উসমানীয় পুলিশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। তিনি তাদের প্রতি শরিয়া আইন প্রয়োগের আহ্বান জানান। কখনো কখনো তিনি তার শিষ্যদেরকে মদ পরিবহনকারী ক্যারাভেন রোধ করার জন্য পাঠাতেন। আল-আজহারে তার কিছু সতীর্থ এবং সিরিয়ান অভিজাত ব্যক্তিবর্গ আরব জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করলেও আল-কাসসাম উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতি অণুগত ছিলেন। উসমানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে তার সম্পর্ক তাই ইঙ্গিত করে।[১৩] জাবালাহতে তিনি তার ধার্মিকতা, উত্তম আচরণ ও বুদ্ধিমত্তার জন্য পরিচিত ছিলেন।[১২]
লিবিয়ান প্রতিরোধে সমর্থনদান
সম্পাদনা
Ya Rahim, Ya Rahman
Unsur Maulana as-Sultan
Wa ksur aadana al-Italiyan
হে দয়ালু, হে পরম করুণাময়
আমাদের অভিভাবক সুলতানকে বিজয়ী কর
এবং শত্রু ইতালীয়দের পরাজিত কর
ইজ্জউদ্দিন আল-কাসসাম, উসমানীয়-লিবিয়ান প্রতিরোধ সঙ্গীত, ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ[১৩]
১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে ইতালি কর্তৃক লিবিয়া আগ্রাসনের পর উসমানীয়-লিবিয়ান প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য আল-কাসসাম জাবলাহতে তহবিল সংগ্রহ করেন এবং একটি বিজয় সঙ্গীত রচনা করেন। জাবলাহ জেলার গভর্নর তহবিল সংগ্রহের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় জনতা আল-কাসসামের কাছে অর্থ প্রেরণ বহাল রাখায় গভর্নর তাকে কারাগারে প্রেরণের চেষ্টা করেছিলেন। গভর্নর আল-কাসসামের বিরুদ্ধে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ আনেন। তবে সরকারি তদন্তে আল-কাসসাম নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং এরপর গভর্নরকে পদচ্যুত করা হয়।[১৩]
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে একটি জুমার খুতবার সময় আল-কাসসাম ইতালীয়দের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।[১৩] ইতিপূর্বে উসমানীয় সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ রয়েছে এমন কয়েক ডজন স্বেচ্ছাসেবীদের আল-কাসসাম সংগ্রহ করেন এবং লিবিয়া অভিযান ও স্বেচ্ছাসেবীদের অবর্তমানে তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। সেই বছরের শেষের দিকে তিনি ৬০ থেকে ২৫০ জনের মত স্বেচ্ছাসেবী মুজাহিদিন নিয়ে আলেক্সান্দ্রেটা পৌছান। সমুদ্রপথে উসমানীয় সহায়তা পাওয়ার জন্য তিনি অণুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তার অণুরোধ ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং তাকে জাবলাহ ফিরে আসতে বলা হয়। এসময় ইস্তানবুলে নতুন সরকার স্থাপিত হয়েছিল। এই সরকার লিবিয়ার প্রতিরোধ বাদ দিয়ে বলকান যুদ্ধক্ষেত্রে দৃষ্টি দিয়েছিল। সংগৃহীত অর্থের কিছু অংশ দিয়ে জাবলাহতে একটি মাদ্রাসা স্থাপিত হয় এবং বাকি অর্থ ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেয়া হয়।[১৪]
সিরিয়ায় ফরাসি-বিরোধী প্রতিরোধ
সম্পাদনাপরবর্তীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আল-কাসসাম উসমানীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনাবাহিনীতে তিনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন। দামেস্কের নিকটে একটি ঘাঁটিতে তিনি হামলা চালিয়েছিলেন।[১৫] যুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্বে তিনি জাবলাহ ফিরে আসেন এবং লিবিয়ার জন্য সংগৃহীত অর্থের বাকি অংশ দিয়ে ফরাসি আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করেন। জাবালাহর মিলিশিয়াদের অস্ত্র সংগ্রহের জন্য অর্থ সরবরাহ করা তার প্রধান দায়িত্ব ছিল। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ ফরাসিরা উত্তর সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবেশ করে। প্রথম ফয়সাল স্বাধীন আরব রাষ্ট্র হিসেবে রাজতান্ত্রিক সিরিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এসময় আল-কাসসামের জাবলাহ মিলিশিয়া বাহিনী স্থানীয় ফরাসি মদদপুষ্ট আলাউয়ি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আলাউয়িদেরকে প্রতিহত করা সম্ভব হয় তবে ফরাসিরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সংহত করার পর শীঘ্রই সামনের দিকে অগ্রসর হয়। এদিকে আল-কাসসাম ও তার অণুসারীরা জাবলাহ ত্যাগ করে জাবাল আল-আকরাদের পার্বত্য অঞ্চলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ফরাসিদের বিরুদ্ধে গেরিলা হামলার জন্য সেখানে তিনি জানকুফা গ্রামের নিকটে ঘাটি স্থাপন করেন।[১৪]
পার্বত্য অঞ্চল ভিত্তিক আরেকটি মিলিশিয়া সংগঠনের কমান্ডার উমর আল-বিতার মারা যাওয়ার পর তার দল আল-কাসসামের সাথে যোগ দেয়। ফলে আল-কাসসামের মিলিশিয়া বাহিনী সংখ্যায় ভারি হয়। এদিকে ফরাসিরা এই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার পর স্থানীয় ভূসম্পদের অধিকারী অধিকাংশকে আল-কাসসামের জন্য তাদের সাহায্য পাঠানো বন্ধ এবং ফরাসি মেন্ডেট সরকারের জন্য কর প্রদান করাতে সক্ষম হয়। এর ফলে আল-কাসসাম কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তিনি আলেপ্পোর উদ্দেশ্যে জাবাল আল-আকরাদ ত্যাগ করেন। সেখানে তিনি তার দল নিয়ে ইবরাহিম হানানুর সাথে যোগ দেন। ইবরাহিম হানানু ফরাসিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পরে জুলাই মাসে তিনি জিসর আশ-শুগুরে ধরা পড়েন। ফরাসিদের এই সাফল্য ও আলেপ্পোর আসন্ন পতনের কারণে আল-কাসসাম ও তার দলের সদস্যরা তারতুসে পালিয়ে যান।[১৬]
ফিলিস্তিনে কর্মকাণ্ড
সম্পাদনাহাইফার প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনাআল-কাসসাম তারতুস থেকে নৌকাযোগে বৈরুত চলে আসেন। এরপর তিনি হাইফা[১৬] ও এরপর মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইনে যান, পরে তার স্ত্রী ও কন্যারা এখানে তার কাছে আসে।[১৫] ১৯২০ এর দশকের প্রথম দিকে আল-কাসসাম ইসলামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। শহরের মুসলিমদের তরফ থেকে পরিচালিত জামিয়াত ইসলামিয়া ওয়াকফ কর্তৃক এই মাদ্রাসার অর্থ সহায়তা প্রদান করা হত।[১৬] আল-কাসসাম জনসাধারণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। পরামর্শের জন্য পথচারীরা প্রায়ই তাকে থামাতো বলে অনেকসময় শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত হতে তার দেরি হত। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে সময়ের ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করার পর তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।[১৭] তিনি পুনর্জাগরণে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ফিলিস্তিনের স্থানীয় কিছু প্রথার বিরোধিতা করতেন। এর মধ্যে রয়েছে ইসলাম বহির্ভূত মৃত্যুপরবর্তী প্রথা, সন্তানদের মঙ্গল বা অর্জনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে কারমাল পর্বতের নিকটে খিজিরের মাজারে মায়েদের জিয়ারত এবং ধর্মীয় স্থানে গোত্রীয় নৃত্য। এসব প্রথাকে তিনি কুসংস্কার হিসেবে দেখতেন।[১৮]
আল-কাসসাম নিম্ন শ্রেণীর মানুষের উপর তার কার্যক্রম কেন্দ্রীভূত করেন। তিনি শ্রমিকদের জন্য নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন এবং ইমাম হিসেবে প্রথমে জেরিনি মসজিদ ও পরে ইসতিকলাল মসজিদে তাদের শিক্ষা প্রদান করেছেন।[১৫][১৭] তাদের তিনি রাস্তা, পতিতালয় ও হাশিশের আড্ডায় খোঁজ করতেন।[১৫] ইহুদিদের কৃষিজমি ক্রয়ের ফলে উচ্চ গ্যালিলি থেকে উদ্বাস্তু হয়ে হাইফা আসা ভূমিহীন কৃষকদের মধ্য থেকে তার অধিকাংশ অণুসারী উঠে আসে।[১৯][২০] উত্তর ফিলিস্তিনের দরিদ্র মুসলিমদের মধ্যে আল-কাসসাম দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। মিলাদুন্নবীর অণুষ্ঠানে তাকে প্রায়ই ডাকা হত।[২১]
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে আল-কাসসাম সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল কর্তৃক হাইফার শরিয়া আদালতে বিয়ে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিযুক্ত হন।[২২] এই দায়িত্বের কারণে তাকে উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে সফরে যেতে হত। তিনি সেখানকার বাসিন্দাদেরকে কৃষি সমবায় গড়তে উৎসাহিত করেন। আমেরিকান ইতিহাসবিদ এডমন্ড বার্কের মতে আল-কাসসাম ছিলেন:
ইসলামি সামাজিক মূল্যবোধে গভীরভাবে অণুপ্রাণিত এক ব্যক্তি এবং যিনি ফিলিস্তিনি কৃষক ও উদ্বাস্তুদের দুরবস্থার কারণে তাড়িত হয়েছিলেন। ব্রিটিশ মেন্ডেটরি ফিলিস্তিনে প্রাচীন সামাজিক ব্যবস্থার লঙ্ঘনের সাথে মুসলিম হিসেবে আল-কাসসামের প্রধান ধর্মীয় উদ্বেগ জড়িয়ে ছিল। এই ক্রোধ রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে যা তাকে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য করে এবং ফিলিস্তিনের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিকদের কাছ থেকে পৃথক করেছে।[২৩]
তার সফরের সময় তিনি গ্রামবাসীদেরকে তার জ্বালাময়ী রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বক্তব্যের মাধ্যমে ব্রিটিশ ও ইহুদিদের প্রতিরোধ করতে উৎসাহিত করতেন।[১৫] তিনি দামেস্কের মুফতি শাইখ বদরউদ্দিন আল-তাজি আল-হাসানির কাছ থেকে ব্রিটিশ ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অণুমতি বিষয়ে ফতোয়া আদায় করেছিলেন।[২৪]
স্থানীয় নেতাদের সাথে সাক্ষাত
সম্পাদনাইসরায়েলি ইতিহাসবিদ শাই লাকমেনের মতে ১৯২১ থেকে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে আল-কাসসাম প্রায় জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি মুহাম্মদ আমিন আল-হুসাইনিকে সহযোগিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। আল-কাসসামের বিভিন্ন দাপ্তরিক নিয়োগে মুফতির অণুমতি প্রয়োজন হত। লাকমেনের মতে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের দাঙ্গার পর তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। একটি সূত্র অনুযায়ী এতে আল-কাসসামের লোকেরা সক্রিয় ছিল। ১৯৩০ এর দশকের মধ্যভাগে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। সম্ভবত আল-কাসসামের স্বাধীন রাজনৈতিক চিন্তাধারার কারণে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল।[২৫] ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে আল-কাসসাম আল-হুসাইনির কাছে একজন দূত পাঠিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য আহ্বান জানান। আল-হুসাইনি এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং রাজনৈতিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হন।[২৬]
১৯২৮ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল-কাসসাম হাইফায় জামিয়াত আল-শুব্বান আল-মুসলিমিন দলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিম্নশ্রেণীর মানুষকে নিয়ে কাজ করতে চাইলেও তার পদের কারণে আরব জাতীয়তাবাদি রাজনৈতিক দল হিযব আল-ইসতিকলাল আল-ফিলিস্তিনের প্রতি আকৃষ্ট শহরের মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত সমাজের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন।[২৭] তিনি দলের অন্যতম প্রধান সদস্য ও হাইফা জামিয়াতের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রশিদ আল-হাজ ইবরাহিমের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ফিলিস্তিনে জায়নবাদি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা মূলত একই - এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদি আল-ইসতিকলাল এবং আল-কাসসামের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পায়। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আল-কাসসাম এবং আল-ইসতিকলালকে তৎকালীন ফিলিস্তিনের মূল রাজনৈতিক ধারা থেকে দূরে রাখে। আল-ইসতিকলাল ও জামিয়াতের সদস্যরা তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাকে রক্ষা করেছে।[২৮] তার বর্ধিত জনপ্রিয়তার কারণে আল-ইসতিকলালের সাথে যুক্ত অনেক ব্যবসায়ী তাকে আর্থিক দিক থেকে সহায়তা করেছেন।[১৫]
সশস্ত্র সংগ্রাম সংগঠন
সম্পাদনা১৯৩০[২৯] বা ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে[৩০] আল-কাসসাম সযত্নে বেশ কিছু সদস্য সংগ্রহ করে তাদেরকে প্রায় ডজনের মত ভিন্ন অংশে ভাগ করে দেন। এদের এক অংশ অন্য অংশের সম্পর্কে জানত না। অধিকাংশ লোকই ছিল কৃষক ও শহরের শ্রমিক।[২১] অধিকাংশ অংশ উত্তর ফিলিস্তিনে অবস্থান করছিল। তবে গাজাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও তার অনেক অণুসারী ছিল।[২৭] সাধারণ ফিলিস্তিনি নেতারা জায়নবাদি বসতিস্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু আল-কাসসাম উভয়ের বিরুদ্ধে লড়াইকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। অধিকাংশ ফিলিস্তিনি নেতা ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের সমর্থক হলেও আল-কাসসাম ফিলিস্তিনের সংঘাতকে ধর্মীয় সংগ্রাম হিসেবে দেখতেন। ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ শাসন এবং জায়নবাদিদের আধিপত্য উৎখাতের জন্য আল-কাসসাম নৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক জিহাদের পক্ষে ছিলেন।[৩১]
যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের সময় আল-কাসসাম উন্নত চরিত্রের উপর জোর দিতেন। তাদেরকে অসহায়, অসুস্থদের সেবা, পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা এবং নিয়মিত নামাজ পড়তে বলা হত। শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সাহসী যোদ্ধা হতে এসকল গুণের প্রয়োজন বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। পরিবার থেকে দূরে থাকা এবং ইসলামে অনৈতিক বলে বিবেচিত কাজে জড়িত থাকা হাইফার শ্রমিকদের বস্তির বাসিন্দাদের জন্য তিনি নৈতিক শিক্ষা প্রদানে ব্রতী হয়েছিলেন।[৩১] তিনি বিয়েকে তরুণদের নৈতিক অধঃপতন বন্ধের উপায় হিসেবে দেখতেন। অনেক সহায়হীন সমর্থকদের বিয়েতে তিনি খরচ জুগিয়েছেন। জিহাদের প্রতি আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসেবে তিনি পুরুষদের দাড়ি রাখা ও সবসময় সঙ্গে কুরআন রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন।[৩২] তার অনেক অণুসারী নিরক্ষর হওয়ায় তিনি কুরআনের সাহায্যে তাদের পড়তে ও লিখতে শিখিয়েছিলেন।[২১] এছাড়া তিনি তার যোদ্ধাদেরকে কাদেরিয়া তরিকার বিভিন্ন চর্চা অণুশীলনের উপদেশ দিতেন।[৩২]
তার গেরিলা দল আল-কাফ আল-আসওয়াদ (কালো হাত) নামে পরিচিতি পায়। এটি জায়নবাদ বিরোধী ও ব্রিটিশ বিরোধী সামরিক সংগঠন ছিল।[২৯] এই ধরনের সংগঠনের ধারণা ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের দাঙ্গার পর থেকে ঘনীভূত হচ্ছিল। শুরুতে দলের মধ্যে কিছুটা বিভক্তি দেখা দেয়। আবু ইবরাহিম আল-কবিরের নেতৃত্বাধীন অংশ ব্রিটিশ ও ইহুদি লক্ষ্যবস্তুর উপর তৎক্ষণাৎ আক্রমণের পক্ষপাতী ছিল, অন্যদিকে আল-কাসসামের নেতৃত্বাধীন অংশ এসময় আক্রমণ ফলপ্রসূ হবে না বলে মনে করত। তিনি তার অংশের পরিকল্পনা তাদের সামনে প্রকাশের ঝুকি নিয়েছিলেন। আল-কাসসামের সহযোদ্ধা সুবহি ইয়াসিনের মতে আল-কাসসামের প্রতিদ্বন্দ্ব্বীরা উত্তরাঞ্চলে আক্রমণ চালিয়েছিল। তবে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আবু ইবরাহিম এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ এপ্রিল তিনজন ইয়াগুর সদস্যকে হত্যা, ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমদিকে হাইফার ইহুদি বসতির সীমানায় ব্যর্থ বোমা হামলা এবং এবং আরো কিছু অপারেশনে উত্তরের ইহুদি বসতির চারজন সদস্য নিহত বা আহত করার মাধ্যমে আল-কাফ আল-আসওয়াদের হামলা শুরু হয়। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর বোমা হামলায় নাহালালে এক ইহুদি ব্যক্তি ও তার ছেলে নিহত হওয়ার মাধ্যমে এই অভিযান শেষ হয়।[৩৩]
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ আল-কাসসাম ২০০ থেকে ৮০০ এর মত সদস্য সংগ্রহ করেন এবং তাদের পাঁচজনের একেকটি সেলে বিভক্ত করেন। কৃষকদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।[২৯][৩৪] সেলগুলো বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা সজ্জিত থাকত। ইহুদি বসতিতে ও ব্রিটিশদের নির্মিত রেললাইনে আক্রমণের জন্য এসব অস্ত্র ব্যবহার হত।[১৫] গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ও শহরের নিম্নশ্রেণীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেও তার আন্দোলনকে শহুরে অভিজাতগোষ্ঠী সুবিধার দৃষ্টিতে দেখত না। তারা একে ব্রিটিশ মেন্ডেটরি কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের রাজনৈতিক ও পৃষ্ঠপোষকতার সম্পর্কের প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে।[৩৫] ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে হাইফার বন্দরে ইহুদি আধাসামরিক বাহিনী হাগানাহর জন্য পাঠানো একটি গোপন অস্ত্রের সরবরাহ ধরা পড়ার পর ক্রুদ্ধ ফিলিস্তিনিরা দুইটি ধর্মঘটে নামে।[৩৬] অস্ত্র সরবরাহের এই ঘটনা "সিমেন্ট ঘটনা" বলে পরিচিত। এই ঘটনা আল-কাসসামকে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।[৩৭]
মৃত্যু
সম্পাদনা৮ নভেম্বর ব্রিটিশ কনস্টেবল মোশে রোসেনফেল্ডের লাশ আইন হারুদে খুজে পাওয়া যায়।[৩৮][৩৯] আল-কাসসাম ও তার অণুসারীদেরকে এর জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হয়েছিল। এরপর তাকে প্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর ফলে আল-কাসসাম ও তার বারো জন অণুসারী আত্মগোপনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা জেনিন ও নাবলুসের মধ্যের পাহাড় দিয়ে হাইফা ত্যাগ করেন।[৩৯] তারা দশদিন ধরে পথ চলেছিলেন। এসময় স্থানীয় গ্রামবাসীরা তাদের খাবার দিয়েছিল। শাইখ জাইদের গ্রামে ইয়াবাদের নিকটে একটি গুহায় ব্রিটিশ পুলিশ আল-কাসসামকে ঘিরে ফেলে।[৩৮] ২০ নভেম্বর এখানে সংঘটিত দীর্ঘ লড়াইয়ে আল-কাসসাম ও তার তিন অণুসারী নিহত হন এবং পাঁচজন বন্দী হন।[১৫][৩৮]
আমেরিকান ইতিহাসবিদ আবদুল্লাহ স্কেলিফার বলেছেন যে তার শেষ প্রতিরোধ তৎকালীন ফিলিস্তিনিদেরকে প্রেরণা যুগিয়েছিল। তার মতে:[৯]
ঘেরাও হওয়ার পর তিনি তার লোকদের শহীদের মত মৃত্যুবরণ করতে বলে গুলি বর্ষণ শুরু করেন। তার প্রতিরোধ ও মৃত্যুর ধরন (যা প্রথাগত নেতাদের স্তব্ধ করে দিয়েছিল) ফিলিস্তিনি জনগণকে উদ্দীপিত করে। হাইফায় হাজারো জনতা জানাজার পথে পুলিশ লাইনের সামনে দিয়ে যায় এবং ধর্মনিরপেক্ষ আরব জাতীয়তাবাদি দলগুলো তার স্মৃতিকে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে। এটি ছিল মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ।[৯]
জেরিনি মসজিদে আল-কাসসামের জানাজায় ৩,০০০ এর বেশি মানুষ সমবেত হয়, এদের অধিকাংশ ছিল কৃষক ও শ্রমজীবী।[৩৮] তিনি ও তার নিহত সহযোদ্ধাদের কফিন ইয়েমেন, সৌদি আরব ও ইরাকের পতাকা দিয়ে আবৃত করা হয়। আরব বিশ্বে সেসময় শুধুমাত্র এই তিনটি রাষ্ট্র স্বাধীন ছিল। আল-কাসসামের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় হাইফাসহ বেশ কিছু ফিলিস্তিনি ও সিরিয়ান শহরে ধর্মঘট পালিত হয়।[৪০] আল-কাসসামকে সাবেক ফিলিস্তিনি গ্রাম বালাদ আল-শাইখের মুসলিম কবরস্থানে (বর্তমানে হাইফার ইহুদি শহরতলী নেশের) দাফন করা হয়।[৪১] ২২ নভেম্বর মিশরের আল-আহরাম পত্রিকায় প্রকাশিত শোকবার্তায় তাকে শহীদ উল্লেখ করে এই বিবৃতি দেয়া হয়: "আমি আপনাকে মিম্বর থেকে তলোয়ারের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি ... মৃত্যুর মাধ্যমে আপনি জীবনকালের চেয়েও বেশি বাগ্মী হয়ে উঠেছেন।"[৪২]
স্মরণ
সম্পাদনাআল-কাসসামের আন্দোলনের সদস্যরা "কাসসামিয়ুন" নামে পরিচিত ছিল। তার মৃত্যুর পাঁচ মাস পরে তার আধ্যাত্মিক উত্তরসুরি ফারহান আল-সাদির নেতৃত্বে তারা দুইজন ইহুদি বাসযাত্রীকে গুলি করে হত্যা করেন।[৯][৪৩] ১৯৩৬-৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনে আরব বিদ্রোহে এই ঘটনা অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।[৪৩] কাসসামিয়ুনদের নেতৃত্বে কৃষক ও শহুরে গেরিলারা (ফাসাইল) দেশজুড়ে বিদ্রোহ শুরু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[৯] বিদ্রোহের শুরুতে আল-কাসসামের ঘনিষ্ঠ অণুসারী আল-সাদি, আবু ইবরাহিম আল-কবির ও আতিয়াহ আহমাদ আওয়াদ ফাসাইলদেরকে যথাক্রমে জেনিন, উচ্চ গ্যালিলি ও বালাদ আল-শাইখ অঞ্চলে নেতৃত্ব দিয়েছেন।[৪৩]
ফিলিস্তিনি আমেরিকান রশিদ খালিদি আল-কাসসাম সম্পর্কে বলেছেন,
ব্রিটিশদের সাথে দরকষাকষির রাজনীতি করা অভিজাতদের নিকট থেকে জনতার সমর্থন আদায় এবং ব্রিটিশ ও জায়নবাদিদের বিরুদ্ধে জনপ্রিয় সশস্ত্র আন্দোলনের "সঠিক" পথ দেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।[৪৪]
ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিওন আল-কাসসামকে আরবদের সাথে যুদ্ধে নিহত জায়নবাদি জোসেফ ট্রাম্পেলডোরের সাথে তুলনা করেছেন। ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ টম সেগেভ এই ঘটনা স্মরণ করে বলেছেন যে "আল-কাসসামের নেতৃত্ব দেয়া সন্ত্রাসবাদী ও সাম্প্রতিককালের ইন্তিফাদা যোদ্ধাদেরকে মেনাখেম বেগিনের সন্ত্রাসবাদীদের সাথে সম্পর্কিত করা যায়।"[৪৫]
আল-কাসসামের বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও তার কারণে সশস্ত্র সংগঠনগুলো অণুপ্রাণিত হয়। তার জানাজায় হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়েছিল যা জাতীয় ঐক্যের প্রদর্শনে রূপ লাভ করে[১৫] ১৯৬০ এর দশকে সৃষ্ট ফিলিস্তিনি ফেদাইনরা আল-কাসসামকে নিজেদের উৎস হিসেবে দেখত। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র আন্দোলন ফাতাহের প্রতিষ্ঠাতারা প্রথমে নিজেদের দলকে "কাসাসামিয়ুন" বলে ডাকতেন। পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইনের পরিচিত সদস্য লাইলা খালিদ তার সংগঠন সম্পর্কে বলেছেন যে আল-কাসসামের সমাপ্তির স্থান থেকে তার সংগঠন শুরু হয়েছে এবং আল-কাসসামের প্রজন্ম বিপ্লব শুরু করেছিলেন ও তাদের প্রজন্ম তা সমাপ্ত করতে সংকল্পবদ্ধ[৪৬] ফিলিস্তিনের সশস্ত্র আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জউদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড নিজেদের প্রস্তুতকৃত ও ব্যবহৃত স্বল্পপাল্লার রকেটের নামও কাসসাম রকেট রেখেছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Abū ʻAmr, 1994, p. 98.
- ↑ Krämer, 2011, p. 260
- ↑ Guidère, 2012, p. 173
- ↑ Bloomfield, 2010, p. 149.
- ↑ Fleischmann, 2003, p. 292.
- ↑ Kayyali, 1978, p. 180.
- ↑ Lozowick, 2004, p. 78.
- ↑ Segev, 2001, pp. 362-363.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 166.
- ↑ Milton-Edwards, 1999, p. 14.
- ↑ Milton-Edwards, 1999, p. 17.
- ↑ ক খ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 167.
- ↑ ক খ গ ঘ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 168.
- ↑ ক খ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 169.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ Segev, 1999, pp.360-362
- ↑ ক খ গ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 170.
- ↑ ক খ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 171.
- ↑ Schleifer, ed. Burke, 1993, pp. 170-171.
- ↑ Rashid Khalidi, citing Abdullah Schleifer's essay "Palestinian Peasant Resistance to Zionism before World War I" in Edward Said and Christopher Hitchens (eds.) Blaming the Victims: Spurious Scholarship and the Palestinian Question, Verso, London 2001 ch. 11 pp. 207–234 p. 229.
- ↑ Rashid Khalidi, Palestinian Identity: The Construction of Modern National Consciousness,Columbia University Press, 2009 p.115.
- ↑ ক খ গ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 172.
- ↑ Milton-Edwards, 1999, p.16.
- ↑ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 164
- ↑ Milton-Edwards, 1999, p. 18.
- ↑ Lachman 1982, পৃ. 75–76.
- ↑ Mattar, 1992, p. 67.
- ↑ ক খ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 175.
- ↑ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 176.
- ↑ ক খ গ Baruch Kimmerling, Joel S. Migdal, The Palestinian People: A History,Harvard University Press, 2003 p.65.
- ↑ Judis, 2014, p. 108.
- ↑ ক খ Schleifer, ed. Burke, 1993 p. 173.
- ↑ ক খ Schleifer, ed. Burke, 1993, p. 174.
- ↑ Lachman 1982, পৃ. 65–66
- ↑ Beverly Milton-Edwards, 1999, p. 18.
- ↑ Baruch Kimmerling, Joel S. Migdal, The Palestinian People: A History, p. 66.
- ↑ Matthews, 2006, p. 237.
- ↑ Johnson, p. 44.
- ↑ ক খ গ ঘ Milton-Edwards, 1999, p. 19.
- ↑ ক খ Laurens, 2002, p. 298.
- ↑ Moubayed, 2006, p. 392.
- ↑ Benvenisti, 2000, p. 97.
- ↑ Johnson, 2013, p. 45.
- ↑ ক খ গ Kedourie, Elie (২০১৫), "Qassamites in the Arab Revolt, 1936–39", Zionism and Arabism in Palestine and Israe, Routledge, আইএসবিএন 978-1-317-44272-1
- ↑ Rashid Khalidi, Palestinian Identity: The Construction of Modern National Consciousness, p. 195.
- ↑ Tom Segev, "Back to school: Ben-Gurion for beginners," Haaretz, 22 June 2012.
- ↑ Swedenberg, p. 105.
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Abū ʻAmr, Ziyād (১৯৯৪), Islamic Fundamentalism in the West Bank and Gaza: Muslim Brotherhood and Islamic Jihad, Indiana University Press
- Benvenisti, Meron (২০০০)। Sacred Landscape: The Buried History of the Holy Land Since 1948। University of California Press। আইএসবিএন 9780520211544।
- Fleischmann, Ellen (২০০৩)। The Nation and Its New Women: The Palestinian Women's Movement, 1920-1948। University of California Press। পৃষ্ঠা 292। আইএসবিএন 0520237900।
- Bloomfield, Jonathan (২০১০)। Palestine। AuthorHouse। পৃষ্ঠা 149। আইএসবিএন 9781452067841।
- Judis, John B. (২০১৪)। Genesis: Truman, American Jews, and the Origins of the Arab/Israeli Conflict। Macmillan। আইএসবিএন 9781429949101।
- Guidère, Mathieu (২০১২), Historical Dictionary of Islamic Fundamentalism, Scarecrow Press
- Johnson, Nels (২০১৩)। Islam and the Politics of Meaning in Palestinian Nationalism। Routledge। পৃষ্ঠা 43। আইএসবিএন 9781134608584।
- Kayyali, Abdul-Wahhab Said (১৯৭৮)। Palestine: A Modern History। Croom Helm। পৃষ্ঠা 180। আইএসবিএন 0856646350।
- Krämer, Gudrun (২০১১), A History of Palestine: From the Ottoman Conquest to the Founding of the State of Israel, Prineton University Press
- Lachman, Shai (১৯৮২)। "Arab Rebellion and Terrorism in Palestine 1929-1939"। Kedourie, Elie; Haim, Sylvie G.। Zionism and Arabism in Palestine and Israel। Frank Cass। আইএসবিএন 978-0-714--63169-1।
- Laurens, Henry। La Question de Palestine। 2। Paris year=2002: Fayard।
- Lozowick, Yaacov (২০০৪)। Right to Exist: A Moral Defense of Israel's Wars। Random House। পৃষ্ঠা 78। আইএসবিএন 9781400032433।
- Mattar, Phillip (১৯৯২)। The Mufti of Jerusalem: Al-Hajj Amin Al-Husayni and the Palestinian National Movement। Columbia University Press। আইএসবিএন 9780231064637।
- Matthews, Weldon C. (২০০৬)। Confronting an Empire, Constructing a Nation: Arab Nationalists and Popular Politics in Mandate Palestine। I B Tauris। আইএসবিএন 978-1-84511-173-1।
- Milton-Edwards, Beverley (১৯৯৯)। Islamic Politics in Palestine। I.B. Tauris।
- Moubayed, Sami M. (২০০৬)। Steel and Silk: Men and Women Who Shaped Syria 1900-2000। Cune Press। আইএসবিএন 9781885942418।
- Nafi, Basheer M. (১৯৯৭)। "Shaykh Izz al-Din al-Qassam: A Reformist and a Rebel Leader" (পিডিএফ)। Journal of Islamic Studies। 8 (2): 185-215।
- Sanagan, Mark (২০১৩)। "Teacher, Preacher, Soldier, Martyr: Rethinking 'Izz al-Din al-Qassam"। Die Welt des Islams। 53 (3-4): 315-352।
- Schleifer, Abdallah (১৯৯৩)। "Palestinian Peasantry in the Great Revolt"। Edmund Burke। Struggle and Survival in the Modern Middle East। University of California Press। আইএসবিএন 0-520-07988-4।
- Segev, Tom (১৯৯৯)। One Palestine, Complete। Metropolitan Books। আইএসবিএন 0-8050-4848-0।