নিকট প্রাচ্যে ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা
নিকট প্রাচ্যে ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা [ক] (ইউএনআরডব্লিউএ, উচ্চারিত /ˈʌnrə/ UN-rə) [খ] হলো জাতিসংঘের একটি সংস্থা যা ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের ত্রাণ সহায়তা ও মানবিক উন্নয়নে কাজ করে। ইউএনআরডব্লিউএ নাকবা, ১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ এবং পরবর্তী সংঘাতের সময় পালিয়ে যাওয়া বা বাস্তচ্যুত হওয়া ফিলিস্তিনিদের জন্য কাজ করে। এটি তাদের পরিবার, তাদের বংশধর [৩] [৪] এবং আইনত দত্তক নেওয়া শিশুদেরকেও সহায়তা করে থাকে। [৫] ২০১৯ সাল পর্যন্ত, ৫.৬ মিলিয়নেরও (৫৬ লাখ) বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসাবে ইউএনআরডব্লিউএ-তে নিবন্ধিত হয়েছেন। [৬]
গঠিত | ৮ ডিসেম্বর ১৯৪৯ |
---|---|
ধরন | জাতিসংঘের সংস্থা |
উদ্দেশ্য | ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের সরাসরি ত্রাণ ও কর্মসংস্থান প্রদান করা |
সদরদপ্তর | আম্মান, জর্ডান এবং গাজা, ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ |
যে অঞ্চলে | শাম অঞ্চল |
পরিষেবা | শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক পরিষেবা, গণপূর্ত কার্যক্রম, ক্ষুদ্রঋণ এবং জরুরি পরিষেবা[১] |
ক্ষেত্রসমূহ | মানবহিতৈষী সাহায্য |
কমিশনার জেনারেল | ফিলিপ লাজারিনি |
ডেপুটি-কমিশনার জেনারেল | লেনি স্টেনসেথ |
প্রধান প্রতিষ্ঠান | জাতিসংঘ |
বাজেট (২০২০) | ৮০৬ মিলিয়ন ডলার[২] |
স্টাফ | ৩০,০০০ |
ওয়েবসাইট | unrwa |
ইউএনআরডব্লিউএ ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ) দ্বারা ১৯৪৮ সালের সংঘাতের ফলে সমস্ত উদ্বাস্তুদের ত্রাণ প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ১৯৫২ সালে ইসরায়েলি সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত ১৯৪৮ সালের সংঘাত পরবর্তী সময়ে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ইহুদি ও আরব ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের ত্রাণ প্রদান করেছিল। [৭] [৮] [৯] ইউএনজিএ-এর একটি সহায়ক সংস্থা হিসেবে, ইউএনআরডব্লিউএ-এর স্থায়িত্ব প্রতি তিন বছরে পর্যায়ক্রমিক পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে বাড়ানো হয়। এটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে, যা অতি সম্প্রতি ৩০ জুন ২০২৬ পর্যন্ত করা হয়েছে। [১০]
ইউএনআরডব্লিউএ-এর ৩০,০০০ জনেরও বেশি লোকবল রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু এবং অল্প সংখ্যক আন্তর্জাতিক কর্মী। [১১] মূলত কর্মসংস্থান এবং প্রত্যক্ষ ত্রাণ প্রদানের উদ্দেশ্যে এটি কাজ করে। এটির উদ্দেশ্য মানুষকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক পরিষেবা প্রদানের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করা। ইউএনআরডব্লিউএ পাঁচটি এলাকায় কাজ করে: জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীর (পূর্ব জেরুজালেম সহ); [১২] এই পাঁচটি এলাকার বাইরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য সহায়তা প্রদান করা হয় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর)-এর মাধ্যমে, যা ১৯৫০ সালে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য সকল শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য প্রধান সংস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। [১৩] ইউএনআরডব্লিউএ হলো জাতিসংঘের একমাত্র সংস্থা যা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সংঘাতের কারণে উদ্বাস্তুদের সাহায্য করার জন্য নিবেদিত। [১৪] ইউএনআরডব্লিউএ এর বিপরীতে, বর্তমান দেশে স্থানীয় একীকরণ, তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন বা সম্ভব হলে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে শরণার্থীদের বাস্তচ্যুত অবস্থা দূর করতে সহায়তা করার জন্য ইউএনএইচসিআর-এর একটি নির্দিষ্ট সংগঠন রয়েছে। [১৫]
সাম্প্রতিক দশকগুলিতে, ইউএনআরডব্লিউএ-এর বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় এর ভূমিকা, হামাসের সাথে সম্পর্ক এবং পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত বিতর্কিত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ২০২৩ সালে ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলায় ইউএনআরডব্লিউএ-এর ১২ জন কর্মচারীর জড়িত থাকার অভিযোগ করে এবং এ বিষয়ে বিষয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন জাপান, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, আইসল্যান্ড, রোমানিয়া এবং এস্তোনিয়া এই সংস্থায় সাময়িকভাবে অর্থায়ন স্থগিত করে। [১৬] [১৭] [১৮] [১৯] [২০] তবে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, সুইডেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৪ সালের মার্চ থেকে পুনরায় ইউএনআরডব্লিউএ-এ অর্থায়ন শুরু করে। [২১] ২৮ অক্টোবর ২০২৪-এ, ইসরায়েলের পার্লামেন্ট 'নেসেট' একটি বিল পাশ করে, যেটিতে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ সিদ্ধান্তটি "ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে শরণার্থীদের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে" বলে মন্তব্য করেন। [২২][২৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ UNRWA (n.d.)। "What We Do"। UNRWA। United Nations। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ UNRWA (আগস্ট ২০২০)। "HOW WE SPEND FUNDS"। UNRWA। United Nations। ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০২০।
- ↑ Dowty, Alan (২০১২), Israel/Palestine, Polity, পৃষ্ঠা 243, আইএসবিএন 9780745656113
- ↑ UNRWA in Figures ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে.
- ↑ "Consolidated Eligibility and Registration Instructions" (পিডিএফ)। UNRWA। ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
Persons who meet UNRWA's Palestine Refugee criteria These are persons whose regular place of residence was Palestine during the period 1 June 1946 to 15 May 1948, and who lost both home and means of livelihood as a result of the 1948 conflict. Palestine Refugees, and descendants of Palestine refugee males, including legally adopted children, are eligible to register for UNRWA services. The agency accepts new applications from persons who wish to be registered as Palestine Refugees. Once they are registered with UNRWA, persons in this category are referred to as Registered Refugees or as Registered Palestine Refugees.
- ↑ "Frequently asked questions"। UNRWA (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০৯।
- ↑ Bartolomeusz, Lance (২০০৯)। "The mandate of UNRWA at sixty": 452–474। ডিওআই:10.1093/rsq/hdp033।
- ↑ UN General Assembly, Annual Report of the Director of the United Nations Relief and Works Agency for Palestine Refugees in the Near East, covering the period 1 July 1951 to 30 June 1952.
- ↑ Howard Adelman, Elazar Barkan (২৮ জুন ২০১১)। No Return, No Refuge: Rites and Rights in Minority Repatriation। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 978-0-231-15336-2।
- ↑ Heaney, Christopher। "UN General Assembly Renews UNRWA Mandate - Press Release"। Question of Palestine (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-৩০।
- ↑ "Working at UNRWA"। UNRWA। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০২০।
- ↑ UNRWA ও UNHCR 2007, পৃ. 2,4।
- ↑ UNRWA ও UNHCR 2007, পৃ. 3,11: "The vast majority of Palestinian refugees fall under the UNRWA mandate, but there is still a large number living in other countries of the region, such as the Gulf States, Egypt, Iraq or Yemen, or further afield in Australia, Europe and America."
- ↑ Refugees, United Nations High Commissioner for। "UNHCR - The UN Refugee Agency"। ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ Miller, Elhanan (জুন ২০১২)। "Palestinian Refugees and the Israeli-Palestinian Peace Negotiations" (পিডিএফ)। International Centre for the Study of Radicalisation and Political Violence। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৫।
To use a trite image, while UNHCR strives to give its refugees fishing rods, UNRWA is busy distributing fish
- ↑ Burke, Jason (২০২৪-০১-২৬)। "UN agency investigates staff suspected of role in 7 October attack on Israel"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। ২০২৪-০১-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৭।
- ↑ Salama, Vivian; Luhnow, David (২০২৪-০১-২৬)। "U.S. Halts Funding for U.N. Agency Amid Claims Staff Took Part in Oct. 7 Attacks"। The Wall Street Journal। ২০২৪-০১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৭।
- ↑ "Serious allegations against UNRWA staff in the Gaza Strip: Statement by Philippe Lazzarini, UNRWA Commissioner-General"। UNRWA। ২৬ জানুয়ারি ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০২৪।
- ↑ "UNRWA claims: UK halts aid to UN agency over allegation staff helped Hamas attack" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০১-২৬। ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২৮।
- ↑ Pelaez, Luis (২০২৪-০১-২৯)। "UPDATED: List of Countries Suspending UNRWA Funding"। UN Watch (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০৪।
- ↑ Hadjicostis, Menelaos (৯ মার্চ ২০২৪)। "Another top donor says it will resume funding the UN agency for Palestinians as Gaza hunger grows"। AP News (ইংরেজি ভাষায়)। AP। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০২৪।
- ↑ রয়টার্স (২০২৪-১০-২৯)। "নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করল ইসরায়েল, গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৯।
- ↑ "ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএকে নিষিদ্ধ করায় জাতিসংঘসহ বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৯।
টীকা
সম্পাদনা- ↑ আরবি: وكالة الأمم المتحدة لإغاثة وتشغيل لاجئي فلسطين في الشرق الأدنى, প্রতিবর্ণীকৃত: wikālat al-Umam al-Muttaḥida li-iġāṯa wa-tašġīl lājiʾī Filasṭīn fī š-Šarq al-Adnā; ইংরেজি: United Nations Relief and Works Agency for Palestine Refugees in the Near East.
- ↑ আরবি: الأونروا, প্রতিবর্ণীকৃত: al-Ūnarwā or al-Ūnurwā.