অপ্সরা

হিন্দুধর্ম অনুসারে স্বর্গের নর্তকী

অপ্সরা (সংস্কৃত: अप्सरा, আইএএসটি: Apsarā', পালি: अक्चरा, রুশ: Апсара, থাই: อัปสร, কন্নড়: ಅಪ್ಸರೆಯರು, তামিল: அரம்பையர், কোরীয়: 아프사라, জাপানি: アプサラス, চীনা: 飛天女神, আরবি: أبسارا, সিংহলি: අප්සරා, মৈথিলি: अप्सरा, মারাঠি: अप्सरा, পাঞ্জাবি: ਅਪਸਰਾ) হলো হিন্দু ও বৌদ্ধ পুরাণ অনুসারে মেঘ ও জলে যারা সরণ বা গমন করেন, ক্রীড়া করেন বা জন্মগ্রহণ করেন। তারা অনেক ভারতীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্কৃতির ভাস্কর্য, নৃত্য, সাহিত্য ও চিত্রকলায় বিশিষ্টভাবে স্থান পায়।[]

ভারতের মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা অপ্সরার ১২ শতকের বেলেপাথরের মূর্তি, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট

অপ্সরাদের সুন্দরী, যৌবনবতী ও মার্জিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং বলা হয় যে তারা ইচ্ছামত তাদের আকৃতি পরিবর্তন করতে সক্ষম। অপ্সরা দুই প্রকার— লৌকিক (জাগতিক) এবং দৈবিক (ঐশ্বরিক)। তারা নাচের শিল্পে দুর্দান্ত, এবং প্রায়শই গন্ধর্বদের (দেবতাদের রাজা ইন্দ্রের রাজসভার সঙ্গীতশিল্পী ) স্ত্রী। অপ্সরারা দেবতাদের প্রাসাদে বা অপ্সরালোকে বাস করে এবং গন্ধর্বদের তৈরি সঙ্গীতে নৃত্য করে তাদের আপ্যায়ন করে। একটি মত অনুযায়ী ইন্দ্রের সভায় ২৬ জন অপ্সরা রয়েছেন এবং ইন্দ্রের সভার এই ২৬ জন অপ্সরার প্রত্যেকেই এক একটি শিল্পকলায় পারদর্শিনী বা এদের প্রত্যেককে প্রতিপাদক কলার ভিন্ন দিকের প্রতীক বলা হয়, যা প্রাচীন গ্রিসের মিউজের সাথে তুলনীয়। ঋষিদের দৈবশক্তি অর্জন থেকে বিরত রাখার জন্য প্রলুব্ধ করার জন্যও তারা বিখ্যাত।

ঊর্বশীমেনকারম্ভাতিলোত্তমা ও ঘৃতাচী  অপ্সরাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত।[][] এছাড়াও অলম্বুষা, মিশ্রকেশী, জানপদী, বিদ্যুৎপর্ণা, অদ্রিকা, পঞ্চচূড়া, সোমা, মরীচি, শুচিকা, অম্বিকা, ক্ষেমা, অসিতা, সুবাহু, সুপ্রিয়া, সুগন্ধা, সুরসা, বিশ্বাচী, পূর্বচিত্তি, প্রম্লোচা, বর্গা, প্রমথিনী, কাম্যা, শারদ্বতী, গুণবরা, ঋতুস্থলা, বুদ্বুদা, সৌরভেয়ী, ইরা, চিত্রাসেনা, সমীচী, চারুনেত্রা, পুঞ্জিকস্থলা, শুচিস্মিতা, বিশালনয়নার নামও নানা স্থানে উল্লেখিত হয়েছে।

নৃত্য-গীতবিদ্যায় পারদর্শিতার কারণেই এদের ইন্দ্রের সভা গায়িকা ও নর্তকী হিসেবে দেখা যায়। অপ্সরাদের অধিপতি ছিলেন কামদেব। অপ্সরাদের সংখ্যা মোটামুটি ৬০ কোটি আবার কখনো বলা হয় ৬০ হাজার।

দেবাসুরের সমুদ্র মন্থনের সময়ে এরা সমুদ্রের ভিতর থেকে অসংখ্য নারীর সথে উঠে আসেন। কিন্তু কোন দেবদানবই তাদের গ্রহণ করতে রাজী হয় নি, তাই তারা সাধারণ নারী হিসেবেই গণ্য হতে থাকেন। এছাড়াও মনুসংহিতায় তাদের জন্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে যে - সাতজন মনুর সৃষ্টি তারা।

অপ্সরাদের সৌন্দর্য ও যৌন আবেদনের কথা সব সময়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। অপ্সরারা মায়ারূপিণী, সেইজন্য নিজেদের দেহের পরিবর্তন করতে পারতো। অথর্ববেদে আছে, এরা পাশা খেলতে খুব ভালোবাসতো এবং পাশা খেলায় খুব পারদর্শী ছিল।

কম্বোডিয়ার একটি বিখ্যাত নৃত্যকলা রয়েছে যা পশ্চিমে ‘অপ্সরা ডান্স’ নামে পরিচিত। চিনের বিখ্যাত বৌদ্ধ গুহাগুলি যেমন মোগাও কেভ, ইউলিন কেভ, ইয়ুংগাং এবং লংমেন গ্রোটোস ইত্যাদির গুহাচিত্রে বহু অপ্সরা অঙ্কিত রয়েছে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী অপ্সরারা ইচ্ছে মতো রূপ ধারণ করতে পারেন এবং তারা জুয়া খেলায় ভাগ্য নির্ধারণ করেন।

দেবরাজ ইন্দ্র প্রায়ই অপ্সরাদের মর্তে পাঠাতেন মুনি-ঋষিদের প্রলোভিত করে ধ্যান-ভঙ্গ করার জন্য। কারণ ধ্যান সমাপ্ত হলে তারা প্রবল পরাক্রান্ত হয়ে ইন্দ্রের ইন্দ্রত্ব দাবী করে বসতে পারেন, এটিই ইন্দ্রের ভয়।

ব্যুৎপত্তিগত অর্থ

সম্পাদনা
 
বেনারসে হিন্দু মন্দিরে অপ্সরা, ১৯১৩

অপ্সরা এর উৎপত্তি হল সংস্কৃত অপ্সরস্ (अप्सरस्) থেকে। অপ্সরা শব্দের ইংরেজি অনুবাদ 'জলপরী, স্বর্গীয় জলপরী, এবং স্বর্গীয় কুমারী' অন্তর্ভুক্ত করে থাকে।[] সংস্কৃত শব্দ অপ্ ( বাংলা অর্থ জল বা পানি) হতে এদের উৎপত্তি তাই এদের অপ্সরা বলা হয়। যাস্কাচার্য বলেছেন, ”অপ্সরা অপ্সারীনী” অর্থাৎ অপ্সরা অর্থ জলচারিণী। গোল্ড স্টকের এর মতে, মেঘরূপ জলীয়বাস্পই অপ্সরা। মনিয়ার -উইলিয়ামস ডিকশনারি (১৮৯৯) অপ্সরা শব্দের ব্যুৎপত্তি প্রদান করেছে, যেমন অপ্+√সৃ (अप् + √सृ) , "মেঘরূপী জলীয়বাষ্প বা জলে গমন"। [] আবার অপ্সরা অর্থ সূর্যরশ্মি বুঝায়। মহাকাশকে ঋষিগণ সমুদ্র বলে উল্লেখ করেছেন। আকাশ সমুদ্রে বিচরণকারী সূর্যরশ্মিকেও অপ্সরা বলা হয়।

অপ্সরারা খ্‌মের ভাষায় অপ্সরা (អប្សរា Âbsâréa) নামে পরিচিত, এবং পালি ভাষায় অকসর (अक्चरा); মালয় ও মারানাও ভাষায় বিদদরী; তৌসুগ ও সিনামা ভাষায় বিরদ্দলী; জাভাই, সুদানিজবালিনিজ ভাষায় হপসরী/অপসরী বা উইদদরী/বিদ্যদরী (ទេពអប្សរ); মৈতৈ ভাষায় হ্যালোই এবং থাই ভাষায় অপ্সন (อัปสร) নামেও ডাকা হয়।

সাহিত্য

সম্পাদনা
 
অপ্সরা, ভারতের মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহোতে দেবী জগদম্বী মন্দির

ঋগ্বেদ একজন অপ্সরার কথা বলে যিনি গন্ধর্বের স্ত্রী; তবে ঋগ্বেদ একাধিক অপ্সরার অস্তিত্বের তথ্য দেয় বলেও মনে হয়।[] ঋগ্বেদে একমাত্র অপ্সরার নাম ঊর্বশী। একটি সম্পূর্ণ স্তোত্র ঊর্বশী এবং তার নশ্বর প্রেমিক পুরূরবা এর মধ্যে কথোপকথন নিয়ে কাজ করে।[] পরবর্তীকালে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলি অসংখ্য অপ্সরার অস্তিত্বের তথ্য দেয়, যারা ইন্দ্রের স্বর্গীয় সভায় নর্তকী হিসেবে কাজ করে।[]

 
ভারতের উত্তরপ্রদেশে প্রাপ্ত ১২শ শতকের অপ্সরার বেলেপাথর মূর্তি।

মহাভারত সম্পর্কিত অনেক গল্পে অপ্সরাদের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকায় দেখা যায়। মহাকাব্যে প্রধান অপ্সরাদের বেশ কয়েকটি তালিকা রয়েছে, যে তালিকাগুলি সবসময় অভিন্ন নয়। দেবতাদের সভায় স্বর্গীয় নর্তকীরা স্বর্গের বাসিন্দাদের ও অতিথিদের কাছে কীভাবে উপস্থিত হয়েছিল তার বর্ণনা সহ এখানে এমন একটি তালিকা রয়েছে।

যাদের নয়নগুলি পদ্মের তুল্য এবং কটি ও নিতম্ব বিশাল, আর যারা সিদ্ধগণেরও চিত্তবিনোদনে সমর্থ, সেই ঘৃতাচী, মেনকা, রম্ভা, পূর্বচিত্তি, স্বয়ম্প্রভা, উর্বশী, মিশ্রকেশী, বপুগৌরী, বরূথিনী, গোপালী, সহজন্যা, কুম্ভযোনী, প্রজাগরা, চিত্রসেনা, চিত্রলেখা, সহা ও মধুরস্বরা—এই সকল অপ্সরা এবং অন্য সহস্র সহস্র অপ্সরা তাদের স্তনগলি আস্ফালিত করে এবং চিত্ত, বুদ্ধি ও মন হরণ করে এমন কটাক্ষ ও হাবভাবের মাধুর্য প্রদর্শনপূর্বক নৃত্য করল।[]

মহাভারত পৃথক অপ্সরাদের কীর্তিকলাপ নথিভুক্ত করেছে, যেমন তিলোত্তমা, যিনি অসুর ভাই সুন্দ ও উপসুন্দ এর তাণ্ডবের হাত থেকে বিশ্বকে উদ্ধার করেছিলেন, এবং ঊর্বশী, যিনি নায়ক অর্জুনকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন।

মহাভারতে বারবার আবির্ভূত একটি গল্পের ধরন বা বিষয়বস্তু হল একজন অপ্সরাকে পাঠানো হয়েছে একজন ঋষি বা আধ্যাত্মিক গুরুকে তার তপস্যা অনুশীলন থেকে বিরত করে তাকে বিভ্রান্ত করার জন্য। এই বিষয়কে মূর্ত করে তোলা একটি গল্প হল মহাকাব্যের নায়িকা শকুন্তলার তার নিজের পিতামাতার ব্যাখ্যা করা।[] এক সময়, ঋষি বিশ্বামিত্র তার তপস্যা দ্বারা এমন তীব্র শক্তি উৎপন্ন করেছিলেন যে ইন্দ্র নিজেই ভয় পেয়েছিলেন। ঋষিকে তার তপস্যা থেকে বিক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে, তিনি অপ্সরা মেনকাকে তার মনোমুগ্ধকর কাজ করার জন্য পাঠালেন। এত শক্তিশালী তপস্বীকে রাগানোর কথা ভেবে মেনকা কেঁপে উঠল, কিন্তু সে ইন্দ্রের আদেশ মানল। তিনি যখন বিশ্বামিত্রের কাছে গেলেন, বায়ুর অধিপতি দেবতা বায়ু তার পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন। তাকে এইভাবে পরিচ্ছন্ন দেখে, ঋষি নিজেকে লালসার কাছে সমর্পণ করেন এবং তারা পূর্ণতা লাভ করেন, এই সময় বিশ্বামিত্রের তপস্যা বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, মেনকা একটি কন্যার জন্ম দেন, যাকে তিনি নদীর তীরে পরিত্যাগ করেন। সেই কন্যা ছিলেন গল্পের কথক শকুন্তলা নিজেই।

প্রধান অপ্সরাগণ

সম্পাদনা

উর্বশী

সম্পাদনা

ঊর্বশীকে সমস্ত অপ্সরার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী ও বিশেষজ্ঞ নর্তকী বলে মনে করা হয়। হিন্দুধর্মের অনেক বৈদিকপুরাণ শাস্ত্রে ঊর্বশীর উল্লেখ আছে। ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে, অপ্সরা ঊর্বশী নামে পরিচিত কারণ তিনি দিব্য-ঋষি নারায়ণের উরু থেকে জন্মগ্রহণ করেছেন।[] ভারতবিদ মোনিয়ার মোনিয়ার-উইলিয়ামস ভিন্ন ব্যুৎপত্তির প্রস্তাব করেছেন যেখানে নামের অর্থ 'ব্যাপকভাবে বিস্তৃত' এবং তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে বৈদিক গ্রন্থে ঊর্বশী প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল ভোরের মূর্তি হিসেবে।[১০]

দেবতাঅসুরদের দ্বারা সমুদ্রমন্থনের সময় মেনকার জন্ম হয়েছিল। তিনি দ্রুত বুদ্ধিমত্তা ও সহজাত প্রতিভা সহ তিন জগতের সবচেয়ে মন্ত্রমুগ্ধ অপ্সরার (স্বর্গীয় জলদেবী) একজন, কিন্তু পরিবার চান।

বিশ্বামিত্র দেবতাদের ভয় দেখিয়েছিলেন এবং এমনকি অন্য স্বর্গ তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। ইন্দ্র, বিশ্বামিত্রের ক্ষমতার দ্বারা ভীত হয়ে, মেনকাকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তাকে প্রলুব্ধ করতে এবং তার ধ্যান ভঙ্গ করতে। মেনকা বিশ্বামিত্রের সৌন্দর্য দেখে তার লালসা ও আবেগকে সফলভাবে ত্বরান্বিত করেছিলেন। তিনি বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ করতে সফল হন। যাইহোক, তিনি তার সাথে অকৃত্রিম প্রেমে পড়েছিলেন এবং তাদের একটি শিশুর জন্ম হয়েছিল, যেটি পরে ঋষি কণ্বের আশ্রমে বেড়ে ওঠে এবং তাকে শকুন্তলা নামে ডাকা হয়। পরে, শকুন্তলা রাজা দুষ্মন্তের প্রেমে পড়েন এবং ভরত নামে একটি সন্তানের জন্ম দেন, যিনি হিন্দু ঐতিহ্য অনুসারে ভারত দেশের নাম দেন।[১১]

কালিকা পুরাণ অনুসারে, দক্ষ কন্যা সতী যখন হিমালয়ে মহাদেব অর্থাৎ শিবের সাথে হিমালয়ে বসবাস করতেন তখন মেনকা ছিলেন সতীর সখী। কিন্তু সতী যখন মারা যান তখন মেনকা কঠোর তপস্যা করতে আরম্ভ করলেন- যেন সতী তার কন্যা হয়ে আবার জন্ম গ্রহণ করেন। তার তপস্যায় ভগবতী সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বর দেন- তার একশত পুত্র সন্তান ও একটি কন্যা সন্তান হবে। বর লাভের পর মৈনাক প্রভৃতির জন্ম হয় এবং সতী পুনরায় পার্বতী নামে জন্ম গ্রহণ করেন। যদিও অপ্সরা মেনকা ও পার্বতীর মাতা মেনকা বা মেনা ভিন্ন চরিত্র বলে মনে হয়।

মহাভারত অনুসারে, গন্ধর্বরাজ বিশ্বাবসু ও মেনকার মিলনে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। মেনকা তাকে মহর্ষি স্থুলকেশ এর আশ্রমের পাশে নদীর তীরে রেখে চলে যায়। মহর্ষি সে কন্যাকে আশ্রমে রেখে বড় করে এবং নাম রাখে প্রমদ্বরা। এই প্রমদ্বরাই মহাভারতের বিখ্যাত রাজা রুরুর স্ত্রী।

রম্ভা হল হিন্দু পুরাণে দেবলোকের জাদুকারিনী, সুন্দরী নারী এবং অপ্সরার রাণী। রম্ভা হল কুবেরের পুত্র নলকুবেরের স্ত্রী। [১২] মহাভারত অনুসারে, রম্ভা ঋষি কশ্যপ ও তাঁর স্ত্রী প্রাধার কন্যা।[১২] ভাগবত পুরাণ অনুসারে, তার মায়ের নাম মুনি।[১৩] কিছু পুরাণ অনুসারে, সমুদ্রমন্থন এর সময় ক্ষীরসাগর (দুধের সাগর) থেকে রম্ভা এবং অন্যান্য অপ্সরাদের উদ্ভব হয়েছিল।[১৪]

দেব ইন্দ্র রাজা তাকে ঋষিদের তপস্যার প্রলোভনের বিরুদ্ধে তপস্যার বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করার জন্য রম্ভাকে তাদের তপস্যা ভঙ্গ করতে বলতেন।[১৪][১৫] ঋষি বিশ্বামিত্রর তপস্যায় বিরক্ত করার জন্য বিশ্বামিত্র তাকে ১০,০০০ বছরের জন্য পাথর হয়ে থাকার অভিশাপ দেন, যে পর্যন্ত না একজন ব্রাহ্মণ তাকে মুক্ত করে।[১৪]

মহাকাব্য রামায়ণ মধ্যে, লঙ্কার রাজা রাবণ রম্ভাকে ধর্ষণ করে।[১৬] যারা ফলে ব্রহ্মা রাবণ অভিশাপ দেন, যদি সে আবার অন্য মেয়েকে ধর্ষণ করে তাহলে তার মস্তক খণ্ড-বিখণ্ড হবে।

তিলোত্তমা

সম্পাদনা

তিলোত্তমা হিন্দু পুরাণে বর্ণিত অপ্সরা। সংস্কৃত তিলোত্তমা মানে শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষুদ্রতম কণা বা যার শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ গুণাবলী স্থিরীকৃত।

মহাভারত অনুসারে, ব্রহ্মার অনুরোধে ঐশ্বরিক স্থপতি বিশ্বকর্মা কর্তৃক তিলোত্তমা সৃষ্ট হয়েছে যাবতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ উপাদানসমূহের সমন্বয়ে। তিনি অসুর, সুন্দ ও উপসুন্দ, এই তিনজনের পারস্পরিক ধ্বংসের জন্য দায়ী।[১৭] এমনকি শিবইন্দ্রের মতো দেবতারা নিজেদের তিলোত্তমার প্রেমমুগ্ধ বর্ণনা করেন।

কিছু কিংবদন্তি রচনায় তিলোত্তমাকে প্রাক্-জন্মে কুশ্রী বিধবা হিসেবে ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি, অন্য বর্ণনাকারী রলেছেন যে কীভাবে তিনি ঋষি দুর্বাসা দ্বারা অসুর রাজকন্যা উষা হিসাবে পুনর্জন্মলাভ করতে অভিশপ্ত হয়েছিলেন।

ঘৃতাচী

সম্পাদনা

ঘৃতাচী হিন্দু পুরাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপ্সরাদের মধ্যে একজন। তিনি তার সৌন্দর্য এবং স্বর্গীয় প্রাণী ও মানব সহ বহু পুরুষকে প্রলুব্ধ করা এবং তাদের সন্তানদের মা হওয়ার জন্য পরিচিত। মহর্ষি ভৃগুর পুত্র চ্যবন মুনির স্ত্রীর নাম সুকন্যা। তাদের পুত্র প্রমতির স্ত্রী ছিল স্বর্গের অপ্সরা ঘৃতাচী। ঘৃতাচীর গর্ভে জন্ম লাভ করে মহাভারতের অন্যতম রাজা কুরু।

মহাকাব্য, রামায়ণমহাভারত, সেইসাথে পুরাণ সহ অনেক হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্রে ঘৃতচীর আবির্ভাব রয়েছে। তাকে অপ্সরাদের দৈবিক (অর্থাৎ 'দিব্য') শ্রেণীর অন্তর্গত বলে বর্ণনা করা হয়েছে,[১৮] এবং তিনি হিন্দু পঞ্জিকার একটি মাস কুম্ভের সভাপতিত্ব করেন।[১৯] ধর্মগ্রন্থগুলি প্রমাণ করে যে তিনি ঋষি, গন্ধর্বগণ (আকাশীয় সঙ্গীতজ্ঞ), দেবগণ এবং রাজাগণ সহ পুরুষদের প্রলুব্ধ করেন।[২০][২১][২২]

স্কন্দপুরাণ অনুসারে, অপ্সরাগণ বাস করেন অপ্সরালোকে। স্কন্দপুরাণে শিবশর্মার নিকট বিষ্ণুপার্ষদগণ ইন্দ্রলোক, অপ্সরালোক, ব্রহ্মলোক প্রভৃতি লোকের বর্ণনা করেছেন। [২৩]

শিল্পকলা

সম্পাদনা

বহু ভারতীয় অপ্সরাদের নাম দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং পুরাণে কেন্দ্রীয় ছিল। যেহেতু তাদের প্রতি নির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্যাবলী বা লক্ষণ আরোপিত করা হয়নি, তাই শৈল্পিক চিত্রগুলি তাদের পৃথক করে না। [২৪]

নাট্যশাস্ত্র

সম্পাদনা

সংস্কৃত নাটকের নাটকোচিত তত্ত্বের প্রধান কাজ নাট্যশাস্ত্র নিম্নলিখিত অপ্সরাদের তালিকাভুক্ত করেছে : মঞ্জুকেশী, সুকেশী, মিশ্রকেশী, সুলোচনা, সৌদামিনী, দেবদত্তা, দেবসেনা, মনোরমা, সুদতি, সুন্দরী, বিদগ্ধা, বিবিধা, বুদ্ধা, সুমালা, সুনন্দা, শান্তা সুমুখী, মাগধী, অর্জুনী, সরলা, কেরালা, ধৃতি, নন্দা, সুপুষ্কলা, সুপুষ্পমালা এবং কালভা।

কম্বোডিয়া

সম্পাদনা
 
ইন্দোচীনের ১৯৩১ সালের একটি ডাকটিকিটে অপ্সরা
 
আঙ্কোর ওয়াট মন্দিরের দেওয়ালে দেবতার কারুশিল্প ভাস্কর্য

অপ্সরারা কম্বোডিয়ার আঙ্কোরিয়ান মন্দিরের (৮ম-১৩ম শতাব্দী খ্রিস্টাব্দ) পাথরের ভিত্তি-উপস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোটিফের প্রতিনিধিত্ব করে, তবে সমস্ত নারীর ছবিকে অপ্সরা বলে মনে করা হয় না। অপ্সরাদের ভারতীয় নৃত্যসংঘের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, খেমার নারী ব্যক্তিত্ব যারা নৃত্য করছে বা নৃত্য করতে প্রস্তুত তাদের অপ্সরা বলে মনে করা হয়; নারী মূর্তিগুলিকে, স্বতন্ত্রভাবে বা দলবদ্ধভাবে চিত্রিত করা হয়েছে, যারা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং মন্দিরের অভিভাবক বা রক্ষকদের ভঙ্গিতে সামনের দিকে মুখ করে আছে তাদের দেবতা বলা হয়। [২৫]

আংকর বাটের বৃহত্তম আংকর মন্দিরে (১১১৩-১১৫০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত) অপ্সরা এবং দেবতা উভয়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যাইহোক, বর্তমান গবেষণার তালিকায় ১,৭৯৬-এরও অধিক সহ দেবতার ধরন সবচেয়ে বেশি। [২৬] আঙ্কোর ওয়াট স্থপতিরা স্তম্ভ এবং দেয়ালে আলংকারিক মোটিফ হিসাবে ( ৩০-৪০ সে.মি নীচে দেখা যায় ) এমন ছোট অপ্সরা চিত্রগুলি প্রযুক্ত করেছিলেন।   তারা বৃহত্তর দেবতা চিত্রগুলিকে (আনুমানিক ৯৫-১১০ সে.মি পরিমাপের সমস্ত পূর্ণ দৈহিক প্রতিকৃতি) প্রবেশ মণ্ডপ থেকে উঁচু টাওয়ারের শীর্ষ পর্যন্ত মন্দিরের প্রতিটি স্তরে আরও স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ১৯২৭ সালে, স্যাফো মার্চাল তাদের চুল, কলগী, পোশাক, ভঙ্গি, গহনা এবং আলংকারিক ফুলের উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য তালিকাভুক্ত করে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন, যেখানে মার্চাল সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন সেগুলো আঙ্কোর আমলের প্রকৃত অনুশীলনের উপর উদিত। কিছু দেবতা একে অপরের চারপাশে অস্ত্র নিয়ে হাজির এবং দর্শককে অভিবাদন জানাচ্ছে বলে মনে হয়। মার্শাল লিখেছেন "দেবতাদের একটি পরিমার্জিত কমনীয়তার সমস্ত উপাদানের প্রতীক বলে মনে হয়"। [২৭]

 
খেমার অপ্সরা নৃত্যশিল্পী

আঙ্কোরিয়ান মন্দিরের বাস-কারুশিল্পগুলি খেমার শাস্ত্রীয় নৃত্যের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। কম্বোডিয়ার আদিবাসী ব্যালে-সদৃশ পরিবেশন শিল্পকলাকে প্রায়শই " অপ্সরা নৃত্য " বলা হয়। কম্বোডিয়ার রানী সিসোওয়াথ কোসামাকের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০শ শতাব্দীর মাঝামাঝি কম্বোডিয়ার রয়্যাল ব্যালে এই নৃত্যটি তৈরি করেছিল। অপ্সরা চরিত্রে একজন নারী অভিনয় করেন, যিনি আঙ্কর ভিত্তিক-কারুশিল্পের অনুকরণে নকশাকৃত সোনার গহনা এবং মাথার পোশাকের সাথে একটি আঁটসাঁট চোস্ত ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেছিলেন, যার মার্জিত, সর্পিল অঙ্গভঙ্গি শাস্ত্রীয় পৌরাণিক কাহিনী বা ধর্মীয় গল্পগুলি বর্ণনা করার জন্য সংহিতাবদ্ধ করা হয়েছে।[২৮]

জাভা এবং বালি, ইন্দোনেশিয়া

সম্পাদনা
 
বোরোবুদুরের অপ্সরা, ৯ম শতাব্দীর বোরোবুদুর মন্দির, জাভা, ইন্দোনেশিয়ার একটি বাস-কারুশিল্পে চিত্রিত উড়ন্ত স্বর্গীয় কন্যা

মধ্যযুগে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায়, অপ্সরারা 'বিদাদরি' নামেও পরিচিত ছিল, যা 'বিদ্যাধরী' ( সংস্কৃত শব্দ বিদ্যাধরী থেকে উদ্ভুত। বিদ্যা, 'জ্ঞান'; ধার্য, 'ধারণ, ধারক, বা আনয়নকারী') শব্দের সাথে মিলে যায় এবং বিদাদরি নামে পরিচিত হয়। আধুনিক ইন্দোনেশীয় ভাষায়, [২৯] নারী বিদ্যাধর (ভারতীয় ভাষায় বিদ্যাধরী ) ভারতীয় পুরাণে স্বর্গীয় প্রাণীর আরেকটি শ্রেণী। 'বিদ্যাধর' শব্দটি আক্ষরিক অর্থে 'বিজ্ঞান বা মন্ত্রের অধিকারী', এবং মনিয়ার-উইলিয়ামস অভিধান অনুসারে 'এক ধরনের অতিপ্রাকৃত সত্তা... অলৌকিক শক্তির অধিকারী' বা 'পরী' বোঝায়। বিদাদরিরা স্বর্গীয় কুমারী, [২৯] যারা স্বর্গলোকে বা ইন্দ্রের স্বর্গীয় প্রাসাদে বাস করে। তারা বালিনী দেদারী (বিদাদরি বা অপ্সরা) নৃত্যে বর্ণিত।

ঐতিহ্যগতভাবে অপ্সরাদেরকে ইন্দ্রের স্বর্গে (কইন্দ্রান) বসবাসকারী স্বর্গীয় কুমারী হিসাবে বর্ণনা করা হয়। তারা তাদের বিশেষ কাজের জন্য সুপরিচিত, যেমন ইন্দ্র কর্তৃক পৃথিবীতে তাদের পাঠানো হয় তপস্বীদের প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে, কারণ তপস্বীরা তাদের কঠোর তপস্যা দ্বারা দেবতাদের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হতে পারে। এই বিষয়টি প্রায়শই জাভানিজ ঐতিহ্যে দেখা যায়, যার মধ্যে রয়েছে কাকাউইন অর্জুনাভিওয়াহা যা ১০৩০ সালে রাজা এয়ারলাঙ্গার শাসনামলে এমপিউ কানওয়া লিখেছিলেন। গল্পটি বর্ণনা করে যে অর্জুন যখন নিবাতকবচ দৈত্যদের পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে ধ্যান ও তপস্যায় ব্যাপৃত, তখন ইন্দ্র তাকে প্রলুব্ধ করার জন্য অপ্সরাদের প্রেরণ করেন। অর্জুন অবশ্য তার কামনাকে জয় করতে সক্ষম হন এবং তারপর দৈত্যদের পরাজিত করার জন্য দেবতাদের কাছ থেকে চূড়ান্ত অস্ত্র জয় করতে সক্ষম হন।

 
বালিনী লেগং নৃত্যে চিত্রিত স্বর্গীয় কুমারী, বালি, ইন্দোনেশিয়া

পরবর্তীকালে জাভানিজ ঐতিহ্যে অপ্সরাকে হাপসারিও বলা হয়, যা বিইদোদরি ( সংস্কৃত শব্দ বিদ্যাধরী থেকে উৎপন্ন) নামেও পরিচিত। জাভানিজ হিন্দু-বৌদ্ধ ঐতিহ্যও বালিকে প্রভাবিত করেছিল। বালিনিজ নৃত্যে, স্বর্গীয় কুমারীদের আখ্যানবস্তু প্রায়শই অনুষ্ঠিত হয়। সাংখ্যাং দেদারি এবং লেগং-এর মতো নৃত্যগুলি ঐশ্বরিক কুমারীদের নিজস্ব উপায়ে চিত্রিত করেছে। মাতরম সালতানাতের দরবারে নৃত্যে স্বর্গীয় কুমারীদের চিত্রিত করার ঐতিহ্য এখনও জীবিত এবং চমৎকার। বেধায়ার জাভানি সভার নৃত্য অপ্সরাদের চিত্রিত করে।

ইসলামের আগমনের পর, বিদাদরীকে হুরীর সমকক্ষরূপে গণ্য করা হয়, যা কুরআনে উল্লিখিত স্বর্গীয় কুমারী এবং যেখানে ঈশ্বর বলেছেন স্বর্গের 'প্রতিষিদ্ধ মুক্তা' সেই সমস্ত পুরুষদের জন্য থাকবে যারা প্রলোভনকে প্রতিরোধ করেছে এবং জীবনের পরীক্ষাসমূহে উত্তীর্ণ হয়েছে। যখন আরবের ব্যবসায়ীরা মালয়দের সাথে মশলার ব্যবসা করতে আসে, মালয় দ্বীপপুঞ্জে ইসলামের বিস্তার ঘটেছিল; সেই সময়ে, হিন্দুধর্ম মালয় সংস্কৃতির ভিত্তি তৈরি করেছিল, কিন্তু ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে সমন্বয়বাদ বিদাদরি ধারণার জন্ম দেয়। একে সাধারণত তাদের জন্য প্রদত্ত একটি পুরস্কার হিসাবে দেখা হয় যারা ঈশ্বরকে সেবা এবং খুশি করার জন্য জীবনযাপন করে; মৃত্যুর পরে, ব্যক্তির চরিত্রের উপর নির্ভর করে বিদাদরী ছিলেন সেই ব্যক্তির স্ত্রী বা দয়িতা। প্রদত্ত বিদাদরি একজন ব্যক্তির যোগ্যতা ও তার পবিত্রতার উপর নির্ভর করে: তিনি কতবার প্রার্থনা করেছিলেন, কতটা তিনি 'বাহ্যিক জগৎ' থেকে দূরে সরেছিলেন এবং কতটা কম সময় তিনি পার্থিব আকাঙ্ক্ষার প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন।

 
দুটি অপ্সরা দ্বারা সংলগ্ন একজন পুরুষ দেবতা, বিষ্ণু মন্দির, প্রম্বানন, জাভা

শৈলেন্দ্র রাজবংশের যুগ থেকে মাজাপাহিত সাম্রাজ্য পর্যন্ত প্রাচীন জাভার বিভিন্ন মন্দিরে অপ্সরাদের ছবি পাওয়া যায়। অপ্সরা স্বর্গীয় কুমারীগুলি আলংকারিক মোটিফ হিসাবে বা বাস-কারুশিল্পের গল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পাওয়া যেতে পারে। অপ্সরাদের ছবি বোরোবুদুর, মেন্ডুত, প্রম্বানান, প্লাওসান এবং পেনাটারনে পাওয়া যাবে।

বোরোবুদুরে অপ্সরাদেরকে ঐশ্বরিক সুন্দরী স্বর্গীয় কুমারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে, যাদের দাঁড়ানো বা উড়ন্ত অবস্থায় চিত্রিত করা হয়েছে। তারা সাধারণত পদ্মফুল ধারণ করে, ফুলের পাপড়ি ছড়ায়, বা স্বর্গীয় বস্ত্র এমনভাবে আন্দোলিত করে যেন তারা তাদের ডানাগুলিকে উড়ার উদ্দেশ্যে সক্রিয় করছে। বোরোবুদুরের কাছে মেন্ডুতের মন্দিরে দেবতাদের দলকে চিত্রিত করা হয়েছে যারা স্বর্গে উড়ন্ত স্বর্গীয় প্রাণী, এবং তাদের মধ্যে রয়েছে অপ্সরাগণ। প্রম্বানন মন্দির প্রাঙ্গণে, বিশেষ করে বিষ্ণু মন্দিরে, গ্যালারির মধ্যে, পুরুষ দেবতার কিছু মূর্তি দুটি অপ্সরার পাশে পাওয়া যায়।

মণিপুর, ভারত

সম্পাদনা

উত্তর-পূর্ব ভারতের মেইতেই জনগোষ্ঠীর প্রাচীন মণিপুর সংস্কৃতিতে, অপ্সরাদেরকে স্বর্গীয় জলপরী বা হেলোই হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ মানব নারীদেহের মতো এই উড়ন্ত প্রাণীরা পুরুষ ভবঘুরে বা বনে পথ হারানো অভিজাতদের আকর্ষণ করে। তারা তাদের সৌন্দর্য, আকর্ষণীয়ত্ব, ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা এবং মায়াবী অতিপ্রাকৃত আকর্ষণশক্তি এবং পুরুষদের আকৃষ্ট করার জন্য বিখ্যাত ছিল। তারা সংখ্যায় সাত এবং তাদের আকাশ দেবতা বা সোরারেন দেবতার কন্যা বলে বিশ্বাস করা হয়।

বর্তমানে মধ্য ভিয়েতনামের উপকূল বরাবর পূর্বে মধ্যযুগীয় আঙ্কোরের প্রতিবেশী চম্পার শিল্পেও অপ্সরারা একটি গুরুত্বপূর্ণ মোটিফ বা প্রধান প্রসঙ্গ ছিল। চাম শিল্পের ট্রা কিউ শৈলীতে অপ্সরাদের চিত্রণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি একটি শৈলী যা খ্রিস্টীয় ১০ম এবং ১১শ শতাব্দীতে বিকাশ লাভ করেছিল।

 
অপ্সরা (ফেইটিয়ান), চীন, উত্তর বা পূর্ব ওয়েই রাজবংশ, ৫০০-৫৫০ খ্রি.।

অপ্সরাদের প্রায়ই পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ শিল্পে চিত্রিত করা হয়। [৩০] চীনা ভাষায় এদেরকে বলা হয় ফেইটিয়ান ( ) । [৩০]

চীনের বৌদ্ধ গুহা স্থানের দেয়ালচিত্র এবং ভাস্কর্যে যেমন মোগাও গুহা, [৩১] [৩২] ইউলিন গুহা, [৩১] তিয়ানলংশান গ্রোটোস, [৩১] ইউনগাং, [৩৩] এবং লংমেন গ্রোটোস-এ তারা চিত্রিত। [৩৪] এগুলিকে প্যাগোডার টাইলস্ বা টালিতে, যেমন জিউডিং-সি প্যাগোডায়, চিত্রিত করা হয়েছে।

তাদের বাঁশি, পিপা বা সেং-এর মতো বাদ্যযন্ত্র ধারণকারী নর্তকী বা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও চিত্রিত করা যেতে পারে। [৩১] অপ্সরাদের একাধিক আত্মা হিসেবে চিত্রিত করা যেতে পারে যারা বুদ্ধদের জন্য সঙ্গীত বাজিয়েছিলেন। [৩৫] সাধারণত, তাদের বাতাসে একটি দীর্ঘ ঘাঘরাসহ উড়ন্ত অবস্থায় চিত্রিত করা হয়।[৩১]

অপ্সরাকে কখনও কখনও একক শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী আত্মা [৩৫] বা ঈশ্বর হিসাবে চিত্রিত করা হয় যিনি "প্রবাহিত আস্তিন" সহ একটি বস্ত্র পরিধান করেন এবং তিয়ানে বাস করেন। অপ্সরার এই সংস্করণটি চীনা লোকধর্মে উপাসনার বস্তু হিসেবে তথা চীনা লোককাহিনীতে ব্যবহৃত হয়।

চিত্রসম্ভার

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Apsara | Indian religion and mythology"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৫ 
  2. Gopal, Madan (১৯৯০)। K.S. Gautam, সম্পাদক। India through the ages। Publication Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। পৃষ্ঠা 68 
  3. চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Apsaras"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ2 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 231। 
  4. Monier-Williams, Sir Monier; Leumann, Ernst; Cappeller, Carl (১৮৯৯)। A Sanskrit-English Dictionary: Etymologically and Philologically Arranged with Special Reference to Cognate Indo-European Languages (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publishing House। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 978-81-208-3105-6 
  5. Monier-Williams, Monier, Sir; Leumann, Ernst; Cappeller, Carl (১৮৯৯)। "apsara"A Sanskrit-English Dictionary: Etymologically and philologically arranged with special reference to cognate Indo-European languages (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publishing House। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 978-81-208-3105-6 
  6. Rig Veda, Book X, Hymn 95.
  7. মহাভারত,বন পর্ব, অধ্যায় ৪৩। হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ
  8. Mahabharata, Book I: Adi Parva, Section 71-72.
  9. Vemsani, Lavanya (২০২১)। "Urvashi: Celestial Women and Earthly Heroes"। Feminine Journeys of the Mahabharata। পৃষ্ঠা 229–241। আইএসবিএন 978-3-030-73164-9ডিওআই:10.1007/978-3-030-73165-6_12 
  10. Monier-Williams, Sir Monier; Leumann, Ernst; Cappeller, Carl (১৮৯৯)। A Sanskrit-English Dictionary: Etymologically and Philologically Arranged with Special Reference to Cognate Indo-European Languages (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publishing House। আইএসবিএন 978-81-208-3105-6 [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  11. Sattar, Arshia (২০১৭-০৬-২২)। "The ultimate male fantasy"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৫ 
  12. Mani, Vettam (১৯৭৫)। "Rambhā"Puranic encyclopaedia : a comprehensive dictionary with special reference to the epic and Puranic literature। Robarts - University of Toronto। Delhi : Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 641-642। আইএসবিএন 978-0-8426-0822-0 
  13. Handique, Krishnakanta (২০০১)। Apsarases in Indian Literature and the Legend of Urvaśī and Purūravas (ইংরেজি ভাষায়)। Decent Books। আইএসবিএন 978-81-86921-16-6 
  14. Walker, Benjamin (২০১৯-০৪-০৯)। Hindu World: An Encyclopedic Survey of Hinduism. In Two Volumes. Volume II M-Z (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 978-0-429-62419-3 
  15. Kulaśreshṭha, Sushamā (১৯৯৭)। Erotics in Sanskrit & English Literature-I with Special Reference to Kālidāsa & Shakespeare (ইংরেজি ভাষায়)। Eastern Book Linkers। আইএসবিএন 978-81-86339-48-0 
  16. www.wisdomlib.org (২০২০-০৯-২৮)। "Nalakuvara curses Ravana [Chapter 26]"www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-১৩ 
  17. ওয়াগনার ও পারিখ ১৯৯৩, পৃ. ১০৪৪।
  18. Dalal, Roshen (২০১০)। Hinduism: An Alphabetical Guide (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin Books India। আইএসবিএন 978-0-14-341421-6 
  19. www.wisdomlib.org (২০১৫-০৮-২৫)। "Ghritaci, Ghṛtācī: 14 definitions"www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৭ 
  20. Walker, Benjamin (২০১৯-০৪-০৯)। Hindu World: An Encyclopedic Survey of Hinduism. In Two Volumes. Volume I A-L (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 978-0-429-62421-6 
  21. Kapoor, Subodh (২০০৪)। A Dictionary of Hinduism: Including Its Mythology, Religion, History, Literature, and Pantheon (ইংরেজি ভাষায়)। Cosmo Publications। আইএসবিএন 978-81-7755-874-6 
  22. Williams, George M. (২০০৮-০৩-২৭)। Handbook of Hindu Mythology (ইংরেজি ভাষায়)। OUP USA। আইএসবিএন 978-0-19-533261-2 
  23. পঞ্চানন তর্করত্ন। স্কন্দ পুরাণ। নবভারত পাবলিশার্স। 
  24. Cohen, Simona (২০২১)। "The Indian Hair-Wringing Apsaras and her Discriminating Goose: Meanings and Migrations" (ইংরেজি ভাষায়): 157। আইএসএসএন 1751-2697ডিওআই:10.1558/rosa.20975 
  25. Maurice Glaize, Monuments of the Angkor Group, p.37.
  26. Angkor Wat devata inventory - February 2010 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ এপ্রিল ২০১০ তারিখে
  27. Sappho Marchal, Khmer Costumes and Ornaments of the Devatas of Angkor Wat.
  28. Di Giovine, Michael A. The Heritage-Scape. 2008, pages 293–4
  29. "Bidadari"KBBI 
  30. "Flying Celestial Apsara (Feitian 飛天) 7th century"www.metmuseum.org। ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৩ 
  31. The global connections of Gandharan art : proceedings of the Third International Workshop of the Gandhāra Connections Project, University of Oxford, 18th-19th March, 2019। Archaeopress। ২০২০। পৃষ্ঠা 239–241। আইএসবিএন 978-1-78969-695-0ওসিএলসি 1197810642 
  32. Collection of ancient Chinese cultural relics. Volume 5, Sui, Tang and Five Dynasties : 581-960। ২০১৯। পৃষ্ঠা 223। আইএসবিএন 978-1-925371-44-4ওসিএলসি 1176321935 
  33. "Other Divinities"depts.washington.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৩ 
  34. "Feitian – flying Apsaras in Longmen Grottoes[1]"www.chinadaily.com.cn। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৩ 
  35. Meyer, Michael (২০০৮)। The Bedford Introduction to Literature: Reading, Thinking, Writing (8th সংস্করণ)। St. Martin/Bedford। পৃষ্ঠা 1311। আইএসবিএন 978-0-312-47200-9 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা