ঋষি

Sage এর জন্য ব্যবহৃত সংস্কৃত শব্দ

প্রাচীন প্রার্থনাগাথা বেদ-এর প্রাচীন ঋক [] থেকে (বেদপঙ্‌ক্তির যজ্ঞীয় ব্যবহার-বিষয়ক ব্রাহ্মণ ও অরণ্যচারীদের প্রয়োজনীয় বেদপঙ্‌ক্তি-সংকলন আরণ্যক হয়ে ) জ্ঞানান্বেষী উপনিষদ পর্যন্ত বিস্তৃত হিন্দুশাস্ত্র রাশির দ্রষ্টা বা প্রবক্তা বা রচয়িতা সকলে ঋষি (সংস্কৃত: ऋषि) (ঋক+ঋচ) বা ঋষিকা (সংস্কৃত: ऋषिका) বলে পরিচিত।

প্রাচীন প্রার্থনাগাথা বেদ-এর প্রাচীন ঋক

তৈত্তিরীয় আরণ্যক[] এ বলা হয়েছে :

তপ বা গভীর ধ্যানের সাহায্যে যারা বৈদিক মন্ত্রার্থ বুঝতে পারে তাদেরকে সর্বশক্তিমানের কৃপায় ঋষি বলা যায়।

বেদের শব্দসংকলক যাস্ক তার নিরুক্ত গ্রন্থে বলেছেন যে,

ধর্মজ্ঞানী ব্যক্তিরাই (মন্ত্র)দ্রষ্টা বা ঋষি।[]
অথবা বৈদিক মন্ত্র যারা অনুধাবন করতে সক্ষম তারা ঋষি।[]

ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

‘ঋষ্’ ধাতু ‘ইন’ প্রত্যয় যোগে ঋষি শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে। ঋষ্ ধাতু গতি অর্থক। গতি অর্থ গমন, জ্ঞান, প্রাপ্তি ও পূজা, ইহ শ্রুতি, সত্য ও তপস্যাসূচক এরূপ সৎগুণন্বিত ব্যক্তি ঋষিপদবাচ্য। যাস্ক ঋষি শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন, তপস্যারত যতিগণের নিকট স্বয়ম্ভু ব্রহ্ম স্বয়ং গমন করেছিলেন, এরজন্য যতিগণকে ঋষি বলা হয়।

যাস্ক দর্শনার্থেও ঋষ্ ধাতু হতে ঋষি শব্দের নির্বচন করেছেন। ঋষি শব্দের অর্থ যিনি দর্শন করেছেন।[] ব্রাহ্মণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, তপস্যারত ব্রহ্মনিষ্ঠগণ বেদমন্ত্র দর্শন করেছেন বলে ঋষির ঋষিত্ব। এজন্য ঋষিদের বেদের মন্ত্রদ্রষ্টাও বলা হয়।

বেদ ও ঋষি

সম্পাদনা

বেদের প্রত্যেক সুক্তের শুরুতে ঋষির নাম উল্লেখ রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী ঋষিরা বেদ মন্ত্রের রচয়ীতা নয়, বরং তারা হচ্ছেন বেদমন্ত্রের দ্রষ্টা।[] স্বয়ং ব্রহ্ম তপস্যারত ঋষিদের মনে বেদমন্ত্রের দর্শন করিয়েছেন। বিশ্বাস করা হয়, এই বেদ মন্ত্র অপৌরুষেয় অর্থাৎ কারও রচনা নয় এবং মন্ত্রের নিত্যতা স্বীকার করা হয়।[] এবং পরম্পরাগত ভাবে বেদমন্ত্র পরবর্তী ঋষিদের নিকট প্রচারিত হয়। তাদের মধ্যে যারা মন্ত্রের পুনঃদ্রষ্টা হয়েছেন, তাদের নাম পরবর্তীতে বেদ সুক্তের শুরুতে লেখা হয়েছে।[]

বেদের এই নিত্যতা যারা স্বীকার করেন না, তাদের মত অনুযায়ী বেদমন্ত্র ঋষিপ্রণীত অর্থাৎ ঋষিরাই বেদের রচয়ীতা। এবং সেই প্রেক্ষাপটে বেদের কাল নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয়।

ঋষিদের মননশীল সুদীর্ঘ জ্ঞানযাত্রা

সম্পাদনা

প্রায় ছ'সহস্রাধিক বছরের সুদীর্ঘ যাত্রাটির শুরু হয়েছিল নক্ষত্রাদির প্রতি অগ্নিকে বাহক কʼরে ঋষিদের গোত্র বা বংশ-পরম্পরা অনুসরিত অজস্র পূরণমূলক আকাঙ্ক্ষা ও ধারণাশ্রয়ী অভিজ্ঞতার যৌথায়নে নির্মিত সূক্তমালা দিয়ে ।[]

অতঃপর সকল বৈপরীতাদিকে সমন্বয়এর গোলকধাঁধার মায়াবী চমকাদির সাহচর্য্যেই অবশেষে জ্ঞানান্বেষী উপনিষদসমূহের মননশীল চলমানতায় প্রাপ্ত একেশ্বরমুখী গন্তব্যে এসে একীভূত ও স্থিত । ঋষিদের মধ্যে প্রাচীনতম হচ্ছেন ঋগ্বেদীয় ঋষিরা , এদেরই একজন সংবনন ঋষি বলছেন :

আকূতিসব একই হোক

হৃদয়াদি একই হোক

মনেরা সব একই হোক []

[১০]

ঋগ্বেদীয় ঋষি/ঋষিকাদের প্রকারভেদ

সম্পাদনা

শৌণক তার বৃহদ্দেবতা নামক গ্রন্থে ঋগ্বেদ রচয়িতৃ ঋষি/ঋষিকাদেরকে তাদের রচিত ঋক ও সূক্তের ভাব ও বিষয় অনুযায়ী দেবোপাসক , দেববাচীআত্মস্তুতক - এ ৩ শ্রেণীতে বিন্যস্ত করেছেন ।

দেবোপাসক

সম্পাদনা
ক্রম ঋষি মন্ডল:সূক্ত:ঋক/পঙ্‌ক্তি প্রার্থ্য/আরাধ্য/উপাস্য
ঘোষা (কক্ষীবানকন্যা , রাজকন্যা) ১০:৩৯ ও ৪০ অশ্বিদ্বয়
গোধা ১০:১৩৪:৬ ও ৭ ইন্দ্র ও দেবতাসকল
বিশ্ববারা (অত্রিগোত্রজা) :২৮ অগ্নি
অপালা (অত্রিকন্যা) :৯১ ইন্দ্র
জূহু (বৃহস্পতিস্ত্রী) ১০:১০৯ বৃহস্পতি , সূর্য , বরুণ , বায়ু , অগ্নি , সোম , প্রজাপতি , মিত্র , সপ্তর্ষি
অগস্ত্যস্বষা (অগস্ত্যভগ্নী) ১০:৬০:৬ রাজন
অদিতি (দক্ষকন্যা) ১০:৭২ অদিতি ; দেবমাতা অদিতির ৮ সন্তান জন্মদান
সিক্তা :৮৬:(১১-২০) সোমরস
নিভাবরী :৮৬:(১১-২০) । সোমরস
১০ পৃশ্নি :৮৬:২১-৩০ । সোমরস
১১ শিখন্ডিণী (কাশ্যপী) ১০:১০৪.৬ সোমরস
১২ বসুক্রপত্নী (ইন্দ্রস্নুষা=পুত্রবধূ) ১০:২৮ঃ১ ইন্দ্র

দেব-ঋষিবাচী

সম্পাদনা
ক্রম ঋষি মন্ডল:সূক্ত:ঋক/পঙ্‌ক্তি প্রার্থ্য/আরাধ্য/উপাস্য
ইন্দ্রানী (ইন্দ্রপত্নী) (কক্ষীবানকন্যা , রাজকন্যা) ১০:৮৬ ও ১৪৫ রতি ও সপত্নীবধন
ইন্দ্রমাতাগণ ১০:১৫৩ ইন্দ্র
সরমা (ইন্দ্রদূতী) ১০:১০৮:২ , ৪ , ৬ , ৮ , ১০ ও ১১ ইন্দ্র , জল:২ , বৃহস্পতি:৬ , অযাস্য:৮ , অাঙ্গিরসগণ:৮ , নবগুগণ:৮ , ধর্ম:১১ সোম:১১ , সোমপ্রস্তুতকারী প্রস্তরগণ:১১ ঋষিগণ:১১ , মেধাবীগণ:১১
রোমাশা (বৃহস্পতিকন্যা , রাজা স্বনয় ভাবয়ব্যপত্নী) :১২৬:৭ পবমান সোম
ঊর্বশী ১০:(৯৫) কথোপকথন (পুরুরবার সাথে)
লোপামুদ্রা (অগস্ত্যপত্নী) :১৭৯:১ ও ২ পবমান
নদী :৩৩:৪,৬,৮,১০ ইন্দ্র
যমী (বিবস্বানকন্যা) ১০:১০:১ , ৩ , ৫ , ৭ , ৯ , ১১ ও ১৩ ; ১০:১৫৪ কথোপকথন ; পরলোকগত ব্যক্তি সম্পর্কিত বর্ণনা
শ্বশ্বতী (অঙ্গিরাকন্যা , অসঙ্গপত্নী) :১:৩৪ ; :(১০১) পবমান সোম

আত্মস্তুতক

সম্পাদনা
ক্রম ঋষি মন্ডল:সূক্ত:ঋক/পঙ্‌ক্তি প্রার্থ্য/আরাধ্য/উপাস্য
সার্পরাজ্ঞী ১০:১৮৯ ত্রিশস্থানী সূর্য
বাক /বাগম্ভৃণী (অম্ভৃণকন্যা) ১০:১২৫ (দেবীসূক্ত[১১]) আমি (বাক পরমাত্মা)
শ্রদ্ধা (কামায়ণী) ১০:১৫১ শ্রদ্ধাসূক্ত শ্রদ্ধা
দক্ষিণা (প্রজাপতিগোত্রীয়া) ১০:১০৭.১-১১ দক্ষিণা
রাত্রি (ভরদ্বাজগোত্রীয়া) ১০:১২৭ রাত্রি
সূর্যা (সূর্যকন্যা) ১০:৮৫ বিয়ের মন্ত্র দেবগণ
শচী (পৌলমী) ১০.১৫৯.৬ শচী

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. ঋগ্বেদ , সামবেদ , যজুর্বেদঅথর্ববেদএর পঙ্‌ক্তি বা মন্ত্র
  2. তৈত্তিরীয় আরণ্যক ২:৯:১
  3. যাস্ক, নিরুক্ত ১:১৬
  4. যাস্ক, নিরুক্ত। ২:১১
  5. যাস্ক, নিরুক্ত ০২।০১।১১।০৬
  6. বেদের পরিচয় - ডঃ যোগীরাজ বসু (এম. এ. (ট্রিপল), পি.এইচ.ডি.; প্রদান অধ্যাপক, স্নাতকোত্তর সংস্কৃত বিভাগ, গৌহাটী বিশ্ববিদ্যালয়); প্রকাশক: ফার্মা কে. এল. মুখোপাধ্যায়।
  7. সামবেদ পূর্বার্চিক - বাংলাদেশ অগ্নিবীর, স্বাধ্যেয় প্রকাশনী; ভূমিকা, পৃ: ৬১
  8. “ঋগ্বেদ ও নক্ষত্র” - বেলাবাসিনী ও অহনা গুহ , ১৯৬৯ , গোপা প্রকাশনী , কলকাতা ।
  9. ঋগ্বেদ ১০:১৯১
  10. ঋগ্বেদ সংহিতা , বাংলানুবাদ:রমেশচন্দ্র দত্ত (সায়ন , ম্যাক্স মুলারসহ অন্যান্যের ভাষ্যাদিকে টীকাকারারে উল্লেখকৃত) , হরফ প্রকাশনী এ-১২৬ কলেজ স্ট্রীট মার্কেট কলকাতা ৭ , ১৯৭৬ ।
  11. মূর্তোপাসকদের সংস্কৃতিতে