বরোবুদুর

ইন্দোনেশিয়া স্থিত নবম শতাব্দীর বৌদ্ধ মন্দির

বরোবুদুর বা বরবুদুর হল ইন্দোনেশিয়া রাষ্ট্রের মধ্য জাভার মাগেলাঙে অবস্থিত একটি ৯ম শতাব্দীর মহাযান বৌদ্ধ মন্দির। এই স্মারকস্থলে নয়টি সারিবদ্ধ মঞ্চ রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বর্গাকার ও তিনটি গোলাকার। এগুলির উপরে একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ রয়েছে। বরোবুদুর মন্দিরে ২,৬৭২টি খোদাইচিত্রের প্যানেল ও ৫০৪টি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। কেন্দ্রীয় গম্বুজটির চারদিকে ৭২টি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। প্রত্যেকটি মূর্তি একটি স্তুপের গায়ে ছিদ্রাকার গর্তে উপবিষ্ট অবস্থায় স্থাপিত।[] বরোবুদুর বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির,[][] তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ স্মারক।[]

বরোবুদুর
স্থানীয় নাম
জাভানীয়: ꦧꦫꦧꦸꦝꦸꦂ
অবস্থানমাগেলাংর , মধ্য জাভা
স্থানাঙ্ক৭°৩৬′২৯″ দক্ষিণ ১১০°১২′১৪″ পূর্ব / ৭.৬০৮° দক্ষিণ ১১০.২০৪° পূর্ব / -7.608; 110.204
নির্মিতOriginally built in the 9th century during the reign of the Sailendra Dynasty
পুনরুদ্ধার১৯১১
পুনরুদ্ধারকারীTheodoor van Erp [nl]
স্থপতিGunadharma
ধরনসাংস্কৃতিক
মানদণ্ডi, ii, vi
মনোনীত১৯৯১ (১৫শ সভা)
এর অংশবোরোবুদুর মন্দির যৌগিক
সূত্র নং৫৯২
স্টেট পার্টি ইন্দোনেশিয়া
অঞ্চলদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
বরোবুদুর জাভা দ্বীপ-এ অবস্থিত
বরোবুদুর
জাভার অবস্থান
বরোবুদুর ইন্দোনেশিয়া-এ অবস্থিত
বরোবুদুর
জাভার অবস্থান

শৈলেন্দ্র রাজবংশের শাসনকালে খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দীতে বরোবুদুর নির্মিত হয়। মন্দিরটি জাভা বৌদ্ধ স্থাপত্যশৈলী অনুসারে নির্মিত। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বপুরুষ পূজার আদিবাসী সংস্কৃতি ও নির্বাণ লাভের বৌদ্ধ ধারণার একটি মিশ্রণ লক্ষিত হয়।[] এই মন্দিরে গুপ্ত শিল্পকলারও একটি প্রভাব লক্ষিত হয়। এটি এই অঞ্চলে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবের প্রতিফলন। তবে এই মন্দিরে যথেষ্ট পরিমাণে স্থানীয় দৃশ্যাবলি ও উপাদান সংযোজিত হয়েছে। তার ফলে বরোবুদুর স্বতন্ত্রভাবে ইন্দোনেশীয় স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনে পরিণত হয়েছে।[][] বরোবুদুরের স্মারকস্থলে গৌতম বুদ্ধের একটি পূজাবেদী ও একটি বৌদ্ধ তীর্থস্থান রয়েছে। তীর্থযাত্রার পথটি শুরু হয়েছে স্মারকস্থলের পাদদেশ থেকে। এরপর পথটি তিনটি ধাপে সমগ্র স্মারকস্থলটিকে ঘিরে ঘিরে শীর্ষদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই তিনটি ধাপ বৌদ্ধ বিশ্বতত্ত্বের তিনটি ‘ধাতু’ বা জগতের প্রতীক। জগত তিনটি হল: কামধাতু (কামনার জগত), রূপধাতু (সাকারের জগত) ও অরূপধাতু (নিরাকারের জগত)। এই স্মারকস্থলে তীর্থযাত্রীরা প্রসারিত সিঁড়ি ও অলিন্দের মাধ্যমে শীর্ষদেশে পৌঁছান। অলিন্দগুলির দেওয়ালে ও সূক্ষ্মাগ্র ক্ষুদ্র স্তম্ভশ্রেণির গায়ে ১,৪৬০টি খোদাইচিত্রের প্যানেলে বিভিন্ন কাহিনি প্রদর্শিত হয়েছে। বরোবুদুর বিশ্বের বৃহত্তম ও সামগ্রিক বৌদ্ধ খোদাইচিত্রের সমাহার।[]

প্রাপ্ত প্রমাণ থেকে জানা যায়, বরোবুদুর নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দীতে। খ্রিস্টীয় ১৪শ শতাব্দীতে জাভা জাতি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হলে জাভার হিন্দু রাজ্যগুলির পতন ঘটে। এই সময় বরোবুদুর পরিত্যক্ত হয়।[] ১৮১৪ সালে জাভার তৎকালীন ব্রিটিশ শাসক স্যার টমাস স্ট্যামফোর্ড র্যাoফলস স্থানীয় ইন্দোনেশীয়দের কাছ থেকে এই মন্দিরের অবস্থানের কথা জানতে পারলে সারা বিশ্বে এই মন্দিরের অস্তিত্বের কথা ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে বেশ কয়েকবার সংস্কারের মাধ্যমে বরোবুদুর সংরক্ষিত হয়েছে। বৃহত্তম সংস্কার প্রকল্পটি চালানো হয় ১৯৭৫ ও ১৯৮২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। এই সংস্কার প্রকল্পটি পরিচালনা করেছিল ইন্দোনেশিয়া সরকারইউনেস্কো। এরপর বরোবুদুর মন্দির চত্বর ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত হয়।[]

বরোবুদুর এখনও একটি তীর্থস্থল হিসেবে পরিগণিত হয়। ইন্দোনেশিয়ার বৌদ্ধরা বছরে একবার এখানে বেশাখ উৎসব উদ্‌যাপন করেন। বরোবুদুর ইন্দোনেশিয়ার একক সর্বাধিক পরিদর্শিত পর্যটন কেন্দ্র[][][১০]

অবস্থান

সম্পাদনা

ত্রি-মন্দির

সম্পাদনা
 
বড়বুদুর, পাওন এবং মেন্দুত এর স্ট্রেইট লাইন বিন্যাস

যোগাকার্তা থেকে ৪০ কিলোমিটার (২৫ মা) উত্তর-পশ্চিম এবং সুরাকার্তা থেকে ৮৬ কিলোমিটার (৫৩ মা) পশ্চিমে এক বিশাল চড়াই এলাকায় বড়বুদুর অবস্থিত, যার দুইদিকে দুইটি জোড়া-আগ্নেয়গিরি এবং দুইদিকে দুই নদী বিদ্যমান। জোড় আগ্নেয়গিরিগুলো হল “সুনদোরো-সামবিং” এবং “মেরবাবু-মেরাপি এবং নদীগুলো হল “প্রগো” ও “এলো”।

প্রাচীন হ্রদ

সম্পাদনা

বড়বুদুর পাহাড়ের উপরে বিশাল সমতল পাথরের অবস্থিত, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ২৬৫ মি (৮৬৯ ফু) এবং এই এলাকার শুকিয়ে যাওয়া হ্রদ “পালো হ্রদ” থেকে উচ্চতা ১৫ মি (৪৯ ফু)। এই হ্রদ নিয়ে বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদদের মধ্যে মতবাদ লক্ষ্য করা যায়। ডাচ শিল্পী এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপনা বিশেষজ্ঞ W.O.J. Nieuwenkamp একটি তত্ত্ব প্রবর্তন করেন।[১১] তত্ত্বটি হল, “কেদু প্লেইন” এক সময় হ্রদ ছিল এবং বড়বুদুর প্রধানত প্রতিনিধিত্ব করত হ্রদে ভাসমান পদ্ম ফুল[১২]

ইতিহাস

সম্পাদনা

নির্মাণ

সম্পাদনা
 
G.B. Hooijer ( ১৯১৬—১৯১৯) এর একটি চিত্রকর্ম, বড়বুদুরের পুনঃনির্মাণ

এই মন্দিরটি কে অথবা কি উদ্দেশ্য স্থাপিত হয়েছিল, সে বিষয়ে কোন লিখিত দলিল পাওয়া যায় না। কিন্তু এই মন্দিরের ভূগর্ভস্থে নির্মিত পাথরের মূর্তি ও ৮ম ও ৯ম শতকে নির্মিত রাজকীয় চত্বরে মূর্তির কারুকাজের ধরন অনুযায়ী এই মন্দিরের নির্মাণকাল ধারণা করা যায়। এই অনুযায়ী বড়বুদুর ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে নির্মিত হয় বলে ধারণা করা যায়।[১৩] এই স্থাপনাটি ৭৬০ থেকে ৮৩০ খ্রিষ্টাব্দ মধ্য জাভার সাইলেন্দ্রা সাম্রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে।[১৪] এই মন্দিরটি নির্মাণ করতে আনুমানিক ৭৫ বছর অতবাহিত হয় এবং এই মন্দিরটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় ৮২৫ সালে সামারতুঙ্গার শাসনামলে।[১৫][১৬] বুদ্ধ স্থাপনা, বড়বুদুরসহ, দেখতে অনেকটা হিন্দু শিব প্রমবন মন্দিরের মত। ৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে শিভাইত রাজা সঞ্জয় বড়বুদুর মন্দির কমপ্লেক্স থেকে মাত্র ১০ কিমি. পূর্বে ওকির পর্বতে শিবলিঙ্গ মন্দির স্থাপনের জন্য একটি কমিশন গ্রহণ করেন।

পরিত্যাগ

সম্পাদনা
 
বড়বুদুরের প্রধান বৌদ্ধ স্তুপ

বড়বুদুর কয়েক শতাব্দী ধরে ক্রমবর্ধমান বনজঙ্গল ও আগ্নেয়গিরির ছায়ের স্তরে ঢাকা পড়ে। এই স্থাপনাটি পরিত্যক্ত হওয়ার পেছনের কারণ রুহস্যময়। ৯২৮ থেকে ১০০৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যকার যে কোন সময়ে, আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরনের কারণে তৎকালীন রাজা এম্পু সিন্দক মেদাং রাজ্যের রাজধানী পূর্ব জাভায় স্থানান্তর করেন[১৭] কিন্তু এই কারণে যে মন্দিরকটি যে পরিত্যক্ত হয় তা সঠিকভাবে বলা যায় না, কিন্তু অনেক উৎসে মন্দিরটি পরিত্যাগের কারণ হিসেবে উক্ত ঘটনাটকে দায়ী করেন। সোয়েকামো (১৯৭৬) তিনি উল্লেখ করে যে, একটি প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে, ১৫ শতকে জনসংখ্যার অধিকাংশ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ফলে এই মন্দিরটি পরিত্যাগ করা হয়।

পুনঃআবিষ্কার

সম্পাদনা
 
১৮৬৬ সালের দিকে বড়বুদুর
 
১৮৯৫ সালে বড়বুদুরে মূর্তি খোদাইকাজ

১৮১১ থেকে ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জাভা ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে থাকে। ব্রিটিশ সরকারের নিয়োগোপ্রাপ্ত গভর্নর লেফটেন্যান্ট গভর্নর-জেনারেল থমাস স্ট্যামফোর্ড র্যা ফলস, যিনি জাভার ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি জাভা’র ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত অনেক দুষ্প্রাপ্য জিনিস সংগ্রহ করেন এবং দ্বীপ তার পরিভ্রমণে তিনি স্থানীয় অনেক অধিবাসীর সাথে কথা বলে তা নোট করেন। ১৮১৪ সালের সেমারাং দ্বীপের এই পরিদর্শনে, তিনি বুমিসেগ্রো গ্রামের সন্নিকটে একটি বিশাল স্থাপনা সন্ধান পান, যা ঘন বনজঙ্গলে আবৃত। তিনি একা এই আবিষ্কারে সমর্থ ছিলেন না, তাই তিনি অনুসন্ধানের জন্য ডাচ প্রকৌশলী এইচ.সি.কর্নেলিয়াস’কে উক্ত স্থানে প্রেরণ করেন। দুই মাসের মধ্যে কর্নেলিয়াস এবং তার অধীনস্থ ২০০ জন লোক বন জঙ্গল কেটে, উদ্ভিদ আগুনে পুড়ে এবং মাটি খুড়ে এই স্থাপনাটি উদ্ধার করেন। ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় তিনি স্থাপনার সব অংশ মাটি খুড়ে বের করতে পারেন নি। তিনি র্যানফলস’কে কারুকাজ সহ তার আবিষ্কারের প্রতিবেদন পেশ করেন। যদিও প্রতিবেদনটি কয়েক লাইনের, তবু র্যা ফলস এই স্থাপনাটি আবিষ্কারের সব কৃতিত্ব তাকে দেন, যা তাকে বিশ্ববাসীর নজরে আনে।[১৩] এই স্থাপনাটির অনেক কারুশিল্প, উল্লেখযোগ্য হল সিংহ, কালা, মাকারা যা এখন ব্যাংককের জাতীয় যাদুঘরের জাভা শিল্পকলা কক্ষে প্রদর্শিত আছে।

পুনরুদ্ধার

সম্পাদনা

১৮৮৫ সালে জেরমান যখন যোগিয়াকর্তা’র (জগজা) প্রত্নতত্ত্ব সোসাইটির সভাপতি ছিলেন তখন বড়বুদুর তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৯০২ সালে ব্রান্ডেস-একজন শিল্প ইতিহাসবিদ; দ্যডোর ভ্যান এর্প-ডাচ সেনাবাহিনী প্রকৌশলী কর্মকর্তা এবং ভ্যান ডি কামের-নির্মাণ প্রকৌশলী এর পুনরুদ্ধার কাজ পরিচালনা করেন। এই পুনরুদ্ধার কাজে অংশ নেয় ৪৮,৮০০ ডাচ লোক। তারপর পুনরুদ্ধার কাজ ১৯০৭-১৯১১ সাল পর্যন্ত স্থগিত থাকে।[১৮] এই পুনরুদ্ধার কাজে ভ্যান এর্প আরেকটি প্রস্তাবনা দেন এবং যা সংগৃহীত হয় অতিরিক্ত ৩৪,৬০০ লোকের ব্যয়সহ। এর ফলে প্রথম দর্শনে বড়বুদুর তার সোনালী খ্যাতি পুনরুদ্ধার করে। অর্থ সংকটের কারণে এই মন্দিরের পুনরুদ্ধার কাজে শুধুমাত্র এর পরিষ্কারকরণের কাজে গুরুত্ব দেয়া হয়।

 
১৯৭৩ সালের পুনরুদ্ধার কাজের সময় বড়বুদুরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা

১৯৬০ সালের শেষভাগে এই স্থাপনাটি বিশাল আকারে পুননির্মাণের জন্য ইন্দোনেশিয়ার সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানায়।

১৯৭৩ সালে বড়বুদুর পুনরুদ্ধারের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গৃহীত হয়।[১৯] ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া সরকার ও ইউনেস্কো বিশাল পুনরুদ্ধারের কাজ পরিচালনা করে।[১৮] এই স্থাপনাটি পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয় এবং এর ১৪৬০ প্যানেলের সবগুলোই পরিষ্কার করা হয়। এই কাজে অংশ নেয় ৬০০ মানুষ এবং এই কাজে মোট ব্যয় হয় $৬৯,০১,২৪৩।[২০] পুননির্মাণ শেষ হলে ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো বড়বুদুর’কে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে তালিকাভূক্ত করে।[]

স্থাপত্যশৈলী

সম্পাদনা

ডিজাইন

সম্পাদনা

বড়বুদুর বৃহৎ একক বৌদ্ধস্তূপ হিসেবে স্থাপিত হয়। এই মন্দিরটির ভিত্তি বর্গাকৃতির, যার প্রত্যেকদিকের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ মিটার (৩৮৭ ফু)। এটির নয়টি প্লাটফর্ম বা স্তর আছে। যার নিচের তিনটি বর্গাকৃতির এবং উপরের তিনটি গোলাকৃতির। উপরের স্তরটি বাহাত্তরটি ছোট বৌদ্ধস্তূপ দ্বারা বেষ্টিত একটি বৃহৎ বৌদ্ধস্তূপ যা উপরের স্তরকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। প্রত্যেকটি বৌদ্ধস্তূপ ঘণ্টাকৃতির এবং কারুকার্যমণ্ডিত।

প্রধান স্থাপনার গঠন

সম্পাদনা
 
অর্ধেক অনুপাত ৪:৬:৯ যথাক্রমে ভিত্তি, প্রধান ভবন ও চূড়া
 
সিংহ তৌরণ
 
বড়বুদুরের সিড়ি
 
কারুকাজ খচিত সরু করিডর

আশেপাশের বিভিন্ন উৎস থেকে প্রায় ৫৫,০০০ ঘনমিটার (৭২,০০০ cu yd) পাথর সংগ্রহ করা হয়, এই মন্দিরটি তৈরী করতে। এই পাথরগুলো হাতুরী ছাড়াই মাপ অনুযায়ী কাটা হয়। শক্ত গাট, পাথরের খাজ নিখুতভাবে মিলেভাবে মিল করে এইসব পাথর পরস্পর জোড়া লাগান হয়। এই পাথরের ভিত্তি তৈরী পর এখানকার মূর্তিগুলো তৈরী হয়।.[২১] এই স্থাপনাটির চারপাশে সুসংবদ্ধভাবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বিদ্যমান, যা উচ্চভূমির ঝড়ে সৃষ্ট পানি নিষ্কাশন করে। প্রত্যেক কোনার ১০০ টি করে খাজকাটা নলমুখ স্থাপিত আছে, যা বন্যার পানি নিষ্কাশন করে। প্রধান স্থাপনাটি তিনটি অংশে বিভক্ত করা যায়ঃ ভিত্তি, প্রধান ভবন ও চূড়া।[২২] ৪ মিটার (১৩ ফু) দেয়ালসহ ভিত্তিটির ক্ষেত্রফল ১২৩×১২৩ m (৪০৩.৫× ৪০৩.৫ ft)। এর স্থাপনার প্রধান ভবনটি পাচটি বর্গাকৃতির স্তরের সমন্বয়ে গঠিত, যা উচ্চতা আস্তে আস্তে উপরের দিকে কমে গেছে। ভিত্তির কোনা থেকে প্রথম স্তরটি ৭ মিঃ (২৩ ফুট)। প্রত্যেক স্তরে বিদ্যমান সরু করিডর ব্যতীত প্রধান ভবনের প্রত্যেকটির স্তরের উচ্চতা ২ মিটার (৬.৬ ফু) করে হ্রাস পেয়েছে। তিনটি গোলাকৃতির স্তর দ্বারা মন্দিরটির চূড়া গঠিত। যার প্রত্যেকটি স্তরে ছিদ্রযুক্ত স্তপের সারি বিদ্যমান, যা বৃত্তাকারভাবে অবস্থিত। মন্দিরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় কেন্দ্রে একটি প্রধান গম্বুজ বিদ্যমান, যার উচ্চতা ভিত্তি থেকে ৩৫ মিটার (১১৫ ফু)। [২৩] মধ্যভাগে অবস্থিতি সিড়ির মাধ্যমে এই মন্দিরের চারপাশ থেকে চূড়ায় পৌছান যায়, যাতে ৩২ টি সিংহ মূর্তিসহ অনেকগুলো তৌরণ বিদ্যমান।

কারূশিল্প

সম্পাদনা
 
বর্ণনামূলক কারুকাজের অবস্থান

বড়বুদুরে প্রায় ২,৬৭০ আলাদা প্রধান কারূশিল্প বিদ্যমান (১,১৬০ টি বর্ণনামূলক এবং ১,২১২টি কারুকাজ মণ্ডিত শ্রেণী)। যা প্রায় সম্পূর্ণ মন্দিরে ছড়িয়ে আছে। এই কারুকাজ গুলো মন্দিরের ২,৫০০ বর্গমিটার (২৭,০০০ ফু) ফুট স্থান দখল করে রেখছে। বর্ণনামূলক কারুকাজ, যাতে সুধানা ও মানোহারা গল্প বর্ণিত আছে, যা ১১ টি দলে বিভক্ত এবং মোট দৈর্ঘ্য ৩,০০০ মিটার (৯,৮০০ ফু)।[২৪]

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গল্পগুলো হলঃ

  • The law of karma (Karmavibhangga)
  • The story of Prince Siddhartha and the birth of Buddha (Lalitavistara)
  • The stories of Buddha's previous life (Jataka) and other legendary persons (Avadana)
  • Sudhana's search for the Ultimate Truth (Gandavyuha)

বর্ণনামূলক প্যানেলের বন্টন

সম্পাদনা
বর্ণনামূলক প্যানেলের বণ্টন[২৫]
অংশ অবস্থান গল্প #শ্রেনী
ভূগর্ভস্থ দেয়াল Karmavibhangga ১৬০
প্রথম গ্যালারী প্রধান দেয়াল Lalitavistara ১২০
Jataka/Avadana ১২০
বালুস্ট্রেড Jataka/Avadana ৩৭২
Jataka/Avadana ১২৮
দ্বিতীয় গ্যালারী স্তম্ভশ্রেণী Jataka/Avadana ১০০
প্রধান দেয়াল Gandavyuha ১২৮
তৃতীয় গ্যালারী প্রধান দেয়াল Gandavyuha ৮৮
স্তম্ভশ্রেণী Gandavyuha ৮৮
চতুর্থ গ্যালারী প্রধান দেয়ালl Gandavyuha ৮৪
স্তম্ভশ্রেণী Gandavyuha ৭২
Total ১,৪৬০

বুদ্ধ মূর্তি

সম্পাদনা
 
একটি বুদ্ধ মূর্তি ধরমচক্র অবস্থায়
 
বৌদ্ধ স্তুপের মধ্যে একটি বুদ্ধ মূর্তি

নিম্নে বড়বুদুরের মূর্তিগুলো প্রদক্ষিণ (ঘড়ির কাটা অনুযায়ী) পূর্বদিক থেকে “মুদ্রাস” থেকে শুরুঃ

মূর্তি (Statues) (মুদ্রা) Mudra (প্রতীকী অর্থ) Symbolic meaning (ধ্বনী বুদ্ধ) Dhyani Buddha (অক্ষর বাচক বিন্দু) Cardinal Point (মূর্তির অবস্থান) Location of the Statue
  ভুমিসপার্‌স মুদ্রা (Bhumisparsa mudra) পৃথিবীর সাক্ষী Calling the Earth to witness অক্ষোভ্য (Aksobhya) পূর্ব ”রূপাধাতু” পূর্বদিকের স্তম্ভশ্রেণী
  ভারু মুদ্রা (Vara mudra) জনহিতৈষিতা রত্নসম্ভাবভা (Ratnasambhava) দক্ষিণ ”রূপাধাতু” দক্ষিণদিকের স্তম্ভশ্রেণী
  ধন্য মুদ্রা (Dhyana mudra) মনোযোগ ও ধ্যান (Concentration and meditation০ আমিতাভ (Amitabha) পশ্চিম ”রূপাধাতু” পশ্চিমদিকের স্তম্ভশ্রেণী
  অভয় মুদ্রা (Abhaya mudra) সাহসী ও নির্ভীক (Courage, fearlessness) আমোঘাসিদ্ধি (Amoghasiddhi) উত্তর '”রূপাধাতু” উত্তরদিকের স্তম্ভশ্রেণী
  ভিতার্ক মুদ্রা (Vitarka mudra) নৈতিক উৎকর্ষতা (Reasoning and virtue) ভিরোচনা (Vairochana) সর্বোচ্চ চূড়া ”রূপাধাতু” উপরের পঞ্চম স্তম্ভশ্রেণী
  ধরমচক্র মুদ্রা (Dharmachakra mudra) ধরমচক্র ঘুরানো (আইন) Turning the Wheel of dharma (law) ভিরোচনা (Vairochana) চূড়া ”অরূপধাতু” তিনটি গোলাকার ভিত্তিতে ৭২টি ছিদ্রযুক্ত বৌদ্ধ স্তুপ

কারুকাজের গ্যালারী

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  1. Soekmono (1976), page 35–36.
  2. "Largest Buddhist temple"Guinness World Records। Guinness World Records। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ 
  3. Purnomo Siswoprasetjo (৪ জুলাই ২০১২)। "Guinness names Borobudur world's largest Buddha temple"। The Jakarta Post। ৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ 
  4. "Borobudur Temple Compounds"UNESCO World Heritage CentreUNESCO। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ 
  5. "Borobudur : A Wonder of Indonesia History"। Indonesia Travel। ১৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১২ 
  6. Le Huu Phuoc (এপ্রিল ২০১০)। Buddhist Architecture। Grafikol। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১২ 
  7. Soekmono (1976), page 4.
  8. Mark Elliott ... (নভেম্বর ২০০৩)। Indonesia। Melbourne: Lonely Planet Publications Pty Ltd। পৃষ্ঠা 211–215। আইএসবিএন 1-74059-154-2 
  9. Mark P. Hampton (২০০৫)। "Heritage, Local Communities and Economic Development"Annals of Tourism Research32 (3): 735–759। ডিওআই:10.1016/j.annals.2004.10.010 
  10. E. Sedyawati (১৯৯৭)। "Potential and Challenges of Tourism: Managing the National Cultural Heritage of Indonesia"। W. Nuryanti। Tourism and Heritage Management। Yogyakarta: Gajah Mada University Press। পৃষ্ঠা 25–35। 
  11. Murwanto, H.; Gunnell, Y; Suharsono, S.; Sutikno, S. and Lavigne, F (২০০৪)। "Borobudur monument (Java, Indonesia) stood by a natural lake: chronostratigraphic evidence and historical implications"। The Holocene14 (3): 459–463। ডিওআই:10.1191/0959683604hl721rr 
  12. J.G. de Casparis, "The Dual Nature of Barabudur", in Gómez and Woodward (1981), page 70 and 83.
  13. Soekmono (1976), page 9
  14. Miksic (1990)
  15. Dumarçay (1991).
  16. Paul Michel Munoz (২০০৭)। Early Kingdoms of the Indonesian Archipelago and the Malay Peninsula। Singapore: Didier Millet। পৃষ্ঠা 143। আইএসবিএন 981-4155-67-5 
  17. ।Soekmono (1976), page 4.
  18. "UNESCO experts mission to Prambanan and Borobudur Heritage Sites" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। UNESCO। ৩১ আগস্ট ২০০৪। 
  19. Caesar Voute; Voute, Caesar (১৯৭৩)। "The Restoration and Conservation Project of Borobudur Temple, Indonesia. Planning: Research: Design"। Studies in Conservation18 (3): 113–130। জেস্টোর 1505654ডিওআই:10.2307/1505654 
  20. "Cultural heritage and partnership; 1999" (PDF) (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। UNESCO। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০০৮ 
  21. "Kebudayaan Megalithikum Prof. Dr. Sutjipto Wirgosuparto"। E-dukasi.net। ২০১২-০৭-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-২৮ 
  22. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৪ 
  23. Atmadi (1988).
  24. Jaini, P.S. (১৯৬৬)। "The Story of Sudhana and Manohara: An Analysis of the Texts and the Borobudur Reliefs"। Bulletin of the School of Oriental and African Studies29 (3): 533–558। আইএসএসএন 0041-977Xজেস্টোর 611473ডিওআই:10.1017/S0041977X00073407 
  25. Soekmono (1976), page 20.

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  • Parmono Atmadi (১৯৮৮)। Some Architectural Design Principles of Temples in Java: A study through the buildings projection on the reliefs of Borobudur temple। Yogyakarta: Gajah Mada University Press। আইএসবিএন 979-420-085-9 
  • Jacques Dumarçay (১৯৯১)। Borobudur। trans. and ed. by Michael Smithies (2nd সংস্করণ)। Singapore: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-588550-3 
  • Luis O. Gómez and Hiram W. Woodward, Jr. (১৯৮১)। Barabudur: History and Significance of a Buddhist Monument। Berkeley: Univ. of California। আইএসবিএন 0-89581-151-0 
  • John Miksic (১৯৯০)। Borobudur: Golden Tales of the Buddhas। Boston: Shambhala Publicationsআইএসবিএন 0-87773-906-4 
  • Soekmono (১৯৭৬)। "Chandi Borobudur: A Monument of Mankind" (পিডিএফ)। Paris: The Unesco Press। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০০৮ 
  • R. Soekmono, J.G. de Casparis, J. Dumarçay, P. Amranand and P. Schoppert (১৯৯০)। Borobudur: A Prayer in Stone। Singapore: Archipelago Press। আইএসবিএন 2-87868-004-9 

আরো পড়ুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা