স্বজাত্যবোধ
স্বজাত্যবোধ বা স্বজাত্যকেন্দ্রিকতা (ইংরেজি: ethnocentrism) নৃবিজ্ঞানে একটি বহুল ব্যবহৃত প্রত্যয়। প্রতিটি মানুষই স্বাভাবিকভাবেই স্বজাত্যকেন্দ্রিক হয়। একমাত্র মানুষই সমাজে আপন বা নিজের সংস্কৃতি বহন করে থাকে। এজন্য সে অন্যান্য জীব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। জন্মের পর থেকে মানুষ তার নিজস্ব গোষ্ঠী থেকে কথাবার্তা,চলাফেরা,সমাজের প্রচলিত মূল্যায়ন,রীতিনীতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে এবং নিজস্ব সংস্কৃতি লালন-পালন করে। এভাবে গড়ে ওঠে প্রতিটি মানুষের নিজের সংস্কৃতি। মানুষের এই সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করা নৃবিজ্ঞানীদের অন্যতম প্রধান কাজ। আর এই গবেষণা করতে গিয়ে তারা খুঁজে পায় মানুষের ভিতরে স্বজাত্যবোধ খুব প্রবল।
স্বজাত্যকেন্দ্রিকতার সংজ্ঞা ও উৎপত্তি
সম্পাদনাস্বজাত্যকেন্দ্রিকতা বলতে সাধারণভাবে বোঝায় কোন ব্যক্তির আপন বা নিজের সংস্কৃতিকে যেমনঃ রীতিনীতি,মূল্যবোধ,আইন,প্রথা,বিধি-নিষেধ ইত্যাদি অন্য যেকোন সমাজ ব্যবস্থা থেকে উৎকৃষ্ট মনে করা বা ধরে নেওয়া। অর্থাৎ তার সংস্কৃতি বাদে পৃথিবীর অন্য সকল সংস্কৃতি নিকৃষ্ট। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি সামজিক বা সাংস্কৃতিক গোষ্টী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অন্য যেকোন সংস্কৃতি থেকে উৎকৃষ্টতর বলে মনে করে এবং নিজস্ব সংস্কৃতির মূল্যবোধ ও ধারণাসমূহের প্রেক্ষিতেই নিজেদের সংস্কৃতির বিশিষ্টতা এবং একধরনের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে। এটাকেই মানববিজ্ঞানীরা বলেছেন স্বজাত্যবোধ বা Ethnocentrism Feelings. Ethnocentrism শব্দটি গ্রীক শব্দ “Ethnos” এবং ইংরেজি শব্দ “Centra”- এই দুটি শব্দের সমন্বয়ের মাধ্যমে।[১][২]
কিছু নৃবিজ্ঞানীদের ব্যক্তিগত সংজ্ঞা
সম্পাদনাবিভিন্ন নৃবিজ্ঞানী স্বজাত্যবোধকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেনঃ- L.M. Lewis – “Ethnocentrism is the natural condition of mankind”.[৩]
E.B. Tylor – “Judging alien custom and culture to be inferior to one’s own.[৪]
স্বজাত্যবোধ এবং তাঁর প্রকারভেদ
সম্পাদনাস্বজাত্যবোধ হচ্ছে একধরনের মানসিক অবস্থা। স্বজাত্যবোধ একরৈখিক বা দ্বিপাক্ষিকভাবেও ঘটে থাকতে পারে। যেমনঃ কোন জনগোষ্ঠী বা সংস্কৃতির মাঝে গবেষণা করতে গিয়ে গবেষক নিজে যেমনি ঐ জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির চেয়ে তার নিজের সংস্কৃতিকে উৎকৃষ্টতর মনে করতে পারে, তেমনি ঐ জনগোষ্টীও গবেষকের সংস্কৃতির চেয়ে তাদের নিজের সংস্কৃতিকে উৎকৃষ্ট বলে মনে করতে পারে।[৫]
কেন মানুষ স্বজাত্যকেন্দ্রিক হয়
সম্পাদনামানুষের স্বজাত্যকেন্দ্রিক হওয়ার কিছু কারণ আছে। কারণগুলো হলো-
- শেখার ভিন্নতার কারণে,
- সীমাবদ্ধ জ্ঞান,
- অর্থের ভিন্নতার কারণে,
- অসচেতনার কারণে,
- অনুমানের কারণে ।
এছাড়া একজন মানুষ যখন জন্মের পর তার চারপাশের পরিবেশ,পরিবার,সমাজ ব্যবস্থা,রীতিনীতি,ধর্ম,প্রথা,আইন ইত্যাদি দেখে দেখে বড় হয় তখন সে মনের অজান্তেই নিজের সংস্কৃতিকে উৎকৃষ্ট হিসেবে মেনে নেয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Butler, Judith (২০০৪)। Precarious Life: The Powers of Mourning and Violence। New York: Verso। পৃষ্ঠা 145–146। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ William A. Haviland; Harald E. L. Prins; Dana Walrath; Bunny McBride (২০০৯)। The Essence of Anthropology। Cengage Learning। পৃষ্ঠা 159। আইএসবিএন 978-0-495-59981-4।
- ↑ Howard, Cultural anthropology(1986:13)
- ↑ Cultural Anthropology(1980:37)
- ↑ Richard Dawkins (2006). The selfish gene. Oxford University Press. p. 99. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৯২৯১১৫-১.