হেসেন

(হেসে থেকে পুনর্নির্দেশিত)

হেসেন (জার্মান: Hessen [ˈhɛsn̩], হেসিয়ান কথ্যভাষা: Hesse [ˈhɛzə]) জার্মানির ষোলটি রাজ্যের অন্যতম। হেসেন বলতে জার্মানির একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক অঞ্চলকেও বোঝায়। এই সাংস্কৃতিক অঞ্চল হল, হেসেন রাজ্য এবং পার্শ্ববর্তি রিনেল্যান্ড-প্যালাটিনাটা রাজ্যের রেনিশ হেসেন অঞ্চলের চমন্বয়ে গঠিত। এই সাংস্কৃতিক অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন শহর হল মাইন্স, যা রিনেল্যান্ড-প্যালাটিনাটাতে অবস্থিত। অপরদিকে হেসেন রাজ্যটি এই সাংস্কৃতিক অঞ্চলের অন্তর্গত একটি রাজ্য যার আয়তন ২১,১১০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ছয় মিলিয়নের কিছু বেশি। এই রাজ্যের রাজধানী ভিসবাডেন এবং সবচেয়ে বড় শহর[] ফ্রাঙ্কফুর্ট আম মেইন। ইংরেজি হেসেন শব্দটি হেসেন নামক উপভাষা থেকে উৎপত্তি হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন জার্মান শব্দ হেসেন ব্যবহার করে, কারণ কমিশনের নীতিমালা হল আঞ্চলিক নামগুলোকে ভাষান্তর না করা।[] সামগ্রিকভাবে, হেসেন শব্দটির উৎপত্তি জার্মানির একটি উপজাতির নাম থেকে, যারা জার্মানিতে খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে বসতি স্থাপন করে। হেসেন অধিবাসীদের বলা হেসেনইয়ান বা হেসিন

হেসেন
Hessen
জার্মানির রাজ্য
হেসেনের পতাকা
পতাকা
হেসেনের প্রতীক
প্রতীক
স্থানাঙ্ক: ৫০°৩৯′৫৮″ উত্তর ৮°৩৫′২৮″ পূর্ব / ৫০.৬৬৬১১° উত্তর ৮.৫৯১১১° পূর্ব / 50.66611; 8.59111
দেশ জার্মানি
রাজধানীভিসবাডেন
সরকার
 • Minister-PresidentVolker Bouffier (CDU)
 • শাসক দলসমূহCDU / Greens
 • বুনডেসরাটে ভোট5 (of 69)
আয়তন
 • মোট২১,১০০ বর্গকিমি (৮,১০০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (2013-12-31)[]
 • মোট৬০,৪৫,৪২৫
 • জনঘনত্ব২৯০/বর্গকিমি (৭৪০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলসিইটি (ইউটিসি+১)
 • গ্রীষ্মকালীন (দিসস)সিইডিটি (ইউটিসি+২)
আইএসও ৩১৬৬ কোডDE-HE
জিডিপি/নামমাত্র€ ২৩৫.৬৮৫ বিলিয়ন (২০১৩) []
জিডিপি মাথাপিছু€ ৯৩,০২১ (২০১৩)
বাদাম অঞ্চলDE7
ওয়েবসাইটwww.hessen.de

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্যালিওলিথিক সময় থেকে হেসেন অঞ্চলে মানুষের বসবাস ছিল। স্থানটির অনুকূল জলবায়ুর জন্য ৫০০০০ বছর আগেও মানুষ সেখানে বাস করতো। ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাগৈতিহাসিক মেগালিথিক (একাধিক পাথরখন্ডের সমন্বয়ে গঠিত সৌধ) সমাধি ‘জুসান সমাধি’ হেসেনতে অবস্থিত। হেসেনতে সেল্টিক সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এছাড়া রোমান সাম্রাজ্যের কিছু মিলিটারি ক্যাম্পছিল হেসেনতে।

ঊনবিংশ শতাব্দী

সম্পাদনা

ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুণ্য রোমান সাম্রাজ্যের রাজ্য হেসেন-কালেসকে ইলেক্টোরেট মর্যাদা দেয়া হয়। ভেস্টফালিয়া রাজ্য ১৮০৬ সালে এই হেসেন-কাসেলকে দখল করে যা আবার ১৮১৩ সালে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এসময়ে যখন অন্যান্য রাজ্যের ইলেক্টোরেটরা রাজা বা গ্র্যান্ড ডিউকের মর্যাদা লাভ করলো, তখন হেসেন-কাসেল এর ইলেক্টোরেট তার রাজ্যে একক ক্ষমতার অধিপতি হয়ে একই মর্যাদায় রইলো। ১৮৬৬ সালে প্রুশিয়া হেসেন-হোমবুর্গ এবং ফ্রি সিটি অফ ফ্রাঙ্কফুর্টের সাথে এই রাজ্যে দখল করে। এসময় হেসেন-নাসাউ প্রদেশ স্থাপিত হয়।

১৮০৬ সালে হেসেন-ডার্মস্টাটকে গ্র্যান্ড ডাচি মর্যাদায় উন্নীত করে হেসেন গ্র্যান্ড ডাচি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৬৬-এর জার্মান গৃহযুদ্ধে হেসেন অস্ট্রিয়ার পক্ষে অবস্থান করে। যুদ্ধে জার্মান কনফেডারেশনের পরাজয় হলেও হেসেন তার স্বায়ত্বশাসন বজায় রাখে। এর কারণ জার্মান কনফেডারেশনের বড় একটি অংশ মাইন নদীর দখিণে অবস্থিত এবং প্রুশিয়া মাইন নদী পেরিয়ে তার রাজ্যশাসন বৃদ্ধি করতে চায়নি। কিন্তু মাইন নদীর উত্তরে অবস্থিত হেসেনর অংশ নর্দডয়শে বুন্ড এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নর্দডয়শে বুন্ড ছিল কতকগুলো জার্মান রাজ্যের ফেডারেশন। প্রুশিয়া ১৮৬৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৭১ সালে ফ্রান্স-প্রুশিয়া যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয়ের পরে হেসেন গ্র্যান্ড ডাচি জার্মান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ডার্মস্টাট ছিল আর্ট নোভিউ-এর (১৮৯০-১৯১০ এর মধ্যে প্রচলিত শিল্প, স্থাপত্যের এক নতুন ধারা) অন্যতম প্রভাবশালী কেন্দ্র।

বিংশ শতাব্দী

সম্পাদনা

১৯১৮ সালের বিপ্লবের ফলে হেসেন-ডার্মষ্টাট রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে পরিবর্তিত হয় এবং অনুষ্ঠানিকভাবে নাম পরিবর্তন করে ফোকস্টাট হেসেনন করা হয়। রাইনহেসেনন প্রদেশের পশ্চিমের অবস্থিত হেসেন-ডার্মস্টাটের অংশ ১৯৩০ সাল অবধি ভার্সেইলিস শান্তি চুক্তির শর্ত অনুসারে ফ্রান্সের দখলে ছিল। অবশেষে ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এই চুক্তি অকার্যকর হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে হেসেন অঞ্চলের একটা অংশ আবার ফ্রান্স দখল করে। অবশিষ্ট অংশ মার্কিন শাসন-বেষ্টিত পশ্চিম জার্মানির অধীনে ছিল। ফ্রান্স তাদের দখলকৃত অংশ জার্মানি থেকে পৃথক করে এবং নতুন প্রতিষ্ঠিত রিনেল্যান্ড-প্যালাটিনাটা রাজ্যের অন্তর্গত করে। অপরপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাবেক প্রুশিয়ান প্রদেশ হেসেন-নাসাউ-এর অধিকাংশ অংশ এবং হেসেন-ডার্মস্টাট সমন্বয়ে নতুন রাজ্য গ্রেটার হেসেন বা বৃহত্তর হেসেন (জার্মান ভাষায় Groß-Hessen) প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বরে এই বৃহত্তর হেসেন-কে আনুষ্ঠানিকভাবে হেসেন নামকরণ করা হয়।[]

হেসেন জার্মানির পশ্চিমে অবস্থিত। হেসেনর সীমান্তে জার্মান রাজ্য লোয়া জ্যাক্সোনি, থুরিনগিয়া, বাভারিয়া, বাডেন-ভুর্টেমবার্গ, রিনেল্যান্ড-প্যালাটিনাটা এবং নর্থ রিনে-ভেস্টফালিয়া। হেসেনর প্রধান শহরগুলো হল ফ্রাঙ্কসুর্ট, ভিসবাডেন, ডার্মস্টাট, ওফেনবাখ, হানাউ, গিসেন, লিমবুর্গ, কাসেন। হেসেনর গুরুত্বপূর্ণ নদী হল রাজ্যের মধ্যাঞ্চলে ফুলডা, ইডার এবং দক্ষিণাঞ্চলে মাইন ও রিনে। হেসেনর পল্লী অঞ্চল পর্বতময়। হেসেনর অধিকাংশ মানুষ দক্ষিণাঞ্চলের রিনে মাইন এলাকায় বাস করে। রিনে নদী দক্ষিণ-পশ্চিমে হেসেনর সীমান্ত নির্দেশ করে। মাইন ও নেকার নদীর মধ্যবর্তী পার্বত্য অঞ্চল ওডেনভাল্ড নামে পরিচিত। মাইন, রিনে ও নেকার নদী এবং ওডেনভাল্ড-এর মধ্যবর্তী সমতলভূমিকে বলা হয় রিড। হেসেন জার্মানির সবচেয়ে সবুজ রাজ্য, কারণ রাজ্যটির ৪২% স্থান বন দ্বারা আবৃত।[]

অর্থনীতি

সম্পাদনা

হেসেনর অর্থনীতি জার্মানির রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম বলিষ্ঠ। ২০১২ সালে এর জিডিপি ২৩০ বিলিয়ন ইউরো অতিক্রম করে। এককভাবে হেসেন ইউরোপেরও অন্যতম বড় অর্থনীতি এবং বিশ্বের ৩৮তম বৃহৎ অর্থনীতি। মাথাপিছু জিডিপির দিক থেকে হামবুর্গ ও ব্রেমেন-এর পরেই হেসেনর অবস্থান। হেসেনর মাথাপিছু জিডিপি ৪৮৫০০ মার্কিন ডলার।

নরথ রিনে-ভেস্টফালিয়ার রুর এলাকার পরে হেসেনর রিনে-মাইন অঞ্চল জার্মানির সবচেয়ে বড় শিল্প এলাকা। গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ক্ষেত্রগুলো হল কেমিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যাল, যন্ত্রকৌশল, ইলেকট্রনিক, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত। স্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হল ওপেল। ফ্রাঙ্কসুর্ট ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যতম বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং ডয়েশে বুন্দেসব্যাংকের সদর দপ্তর ফ্রাঙ্কসুর্টে অবস্থিত। এছাড়া, ডয়েশে ব্যাংক, কমার্সব্যাংক, ডিজেড ব্যাংকসহ অনেক মাঝারি ও ছোট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এবং বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকের অফিস ফ্রাঙ্কসুর্টে অবস্থিত। জার্মানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টক মার্কেট ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জ। হেসেনর রাজধানী ভিসবাডেনে বিভিন্ন বীমা কোম্পানি রয়েছে। এই শহরের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান হল আর+ভি ফেরশেরুং এবং ডিভিবি-ভিনটারথুর। চামড়া শিল্প প্রধানত ওফেনবাখ ভিত্তিক। ফ্রাঙ্কসুর্ট এয়ারপোর্ট জার্মানির সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান যেখানে ৭০,০০০-এরও বেশি মানুষ কাজ করে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Die Bevölkerung der hessischen Gemeinden"Hessisches Statistisches Landesamt (German ভাষায়)। সেপ্টেম্বর ২০১৪। 
  2. (জার্মান) "Bruttoinlandsprodukt"Volkswirtschaftliche Gesamtrechnungen। Hessisches Statistisches Landesamt। ২০১৩। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৪ 
  3. European Commission English Style Guide, http://ec.europa.eu/translation/writing/style_guides/english/style_guide_en.pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে
  4. "Hessen - 60 stolze Jahre - Zeittafel 1945/1946"। ২০০৬-১০-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-০১ 
  5. "Our State"। State of Hesse। ৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১১ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা