হেরমান ব্রুক
হেরমান অ্যালেক্সান্ডার ব্রুক (১৫ আগস্ট, ১৯০৫-৪ মার্চ, ২০০০) একজন জার্মান বংশোদ্ভূত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি তার পেশাজীবনের অধিকাংশ সময় যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।
শিক্ষা
সম্পাদনাহেরমান ব্রুক বার্লিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নামে হেরমান হাইনরিখ ব্রুক এবং মায়ের নাম মার্গারেট ছিল।[১] তিনি বার্লিন-শার্লটেনবার্গের কায়সারিন অগাস্টা জিমনেসিয়ামে পড়াশোনা করেছিলেন। এটি ক্লাসিক (লাতিন এবং গ্রীক) বিষয়ের স্কুল ছিল। সেখানে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানেরও ভালো শিক্ষক ছিলেন।[২] হেরমান ব্রুক ১৯২৪ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, বন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিউনিখ লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। স্ফটিকের তরঙ্গ বলবিজ্ঞানের বিষয়ে তার ডক্টরাল গবেষণা আর্নল্ড সমারফেল্ডের তত্ত্বাবধানে ছিল। ছোটবেলা থেকেই তার জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ছিল। তিনি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বর্ণালীবীক্ষণের প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন। ১৯২৮ সালে তিনি মিউনিখ থেকে পিএইচডি অর্জন করেছিলেন।[৩][৪][৫]
পেশাজীবন
সম্পাদনামিউনিখ থেকে স্নাতক শেষ হওয়ার পরে, ব্রুক তার বন্ধু অ্যালব্রেক্ট আনসাল্ডের সাথে পটসডাম জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক অবজারভেটরি গিয়েছিলেন। আনসাল্ড তার এক বছর আগে আর্নল্ড সমারফেল্ডের অধীনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভন লু, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এবং জ্যোতির্বিদ ওয়াল্টার গ্রোট্রিয়ানের সাথে বার্লিনের হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। নাৎসিবাদের অধীনে ক্রমবর্ধমান অসুবিধার কারণে ব্রুক ১৯৩৬ সালে ভ্যাটিকান অবজারভেটরিতে অস্থায়ী গবেষণা সহায়ক হিসাবে কাজ করার জন্য জার্মানি ত্যাগ করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি আর্থার এডিংটন-এর আশেপাশে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দলে যোগ দিতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। কালক্রমে, ব্রুক অবজারভেটরিজের সহকারী পরিচালক হন। সেই সময়ে তিনি জ্যোতির্বিদ্যায় একটি কোর্স শিখিয়েছিলেন এবং ছাত্র জ্যোতির্বিজ্ঞানী সমাজ শুরু করেছিলেন। এখনে বহু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পেশাজীবনের ভিত্তি স্থাপিত হয়।[৫][৬]
১৯৪৭ সালে তিনি এইমন ডি ভ্যালেরার আমন্ত্রণে ডানসিন্ক অবজারভেটরির নির্দেশনা দেওয়ার জন্য ডাবলিনে চলে আসেন। এটি যা ডাবলিন ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের অংশ ছিল। সেখানে তিনি এরভিন শ্রোডিঙারের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫০ সালে অবজারভেটরিটি রয়্যাল আইরিশ একাডেমিসহ রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির প্রথম সভার আয়োজন করেছিল। ১৯৫৫ সালে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের ত্রিবার্ষিক সভা ডাবলিনে অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে অবজারভেটরি ফটোমিতির জন্য আলোকবৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করে। এগুলো কেমব্রিজে ব্রুকের ছাত্র, এম জে স্মিথ তৈরি করেছিলেন। এছাড়াও অতিবেগুনী সৌর বর্ণালীবীক্ষণ প্রদর্শিত হয়েছিল যা ব্রুকের স্ত্রী ডঃ ম্যারি ব্রুকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।[৫]
১৯৫৭ সালে ব্রুক স্কটল্যান্ডের অ্যাস্ট্রোনোমার রয়াল হওয়ার এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংকল্পের মাধ্যমে তিনি রয়েল অবজারভেটরিকে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছিলেন। তিনি প্রথমে ভিনসেন্ট রেডিশের নেতৃত্বে একটি জ্যোতির্বিদ এবং প্রকৌশলীদের দল গঠন করেছিলেন। এই দলটি নাক্ষত্রিক এবং আন্তঃছায়াপথীয় চিত্রগুলো স্ক্যান করার জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরি করেছে। এই প্রযুক্তিটি কয়েক মিনিটের মধ্যে বর্ণালী হ্রাস করতে সাহায্য করেছিল। এর ফলে জ্যোতির্বিদরা অন্যান্য ক্রিয়াকলাপে মনোনিবেশ করার সময় পেয়েছিল। দলটি দূরবীনগুলোর দূরবর্তী কাজের জন্য প্রযুক্তি উন্নত করেছিল। তার বৈজ্ঞানিক দায়িত্ব ছাড়াও, তিনি জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের একটি নতুন অনার্স ডিগ্রি শুরু করে জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিলেন। যা ১৯৬৭ সালে শুরু হয়েছিল। এডিনবরায় এসে তিনি ছাত্র জ্যোতির্বিজ্ঞানী সমাজ শুরু করেন। কিছু সময়ের জন্য, ব্রুক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[৫]
ব্রুক ১৯৭৫ সালে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। এই সময়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং সহকর্মী ডঃ ম্যারি ব্রুক[৭] উনিশ শতকের জ্যোতির্বিদ্যার একটি ঐতিহাসিক গবেষণা শুরু করেছিলেন। এর ফলস্বরূপ জ্যোতির্বিজ্ঞানী চার্লস পিয়াজি স্মিথের উপর একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। তাদের কাজের ফলে এডিনবরার জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কিত একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল।[৫]
হেরমান ব্রুক তার পুরো পেশাজীবন জুড়ে একাডেমি অফ সায়েন্সের সদস্য এবং কাউন্সিলর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[৫]
তিনি স্কটল্যান্ডের পেনিকুইকে তার বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।[৮]
সম্মাননা
সম্পাদনা- সেন্ট গ্রেগরির নাইট গ্র্যান্ড ক্রস
- ১৯৪৮ - রয়েল আইরিশ একাডেমির সদস্য
- ১৯৫৮ - এডিনবরার রয়েল সোসাইটির সদস্য। সেখানে তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কাউন্সিলের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
- ১৯৬৬ - কমান্ডার (সিবিই), অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার
বইসমূহ
সম্পাদনা- হেরমান ব্রুক, Die Sterne: Monatsschrift für alle Gebiete der Himmelskunde (Johann Ambrosius Barth Vlg., Leipzig, ১৯৩৩)
- হেরমান ব্রুক, The Story of Astronomy in Edinburgh from its beginning until 1975 (Edinburgh University Press, ১৯৮৩)
- হেরমান ব্রুক ও ম্যারি ব্রুক, Peripatetic Astronomer, The: Life of Charles Piazzi Smyth (Institute of Physics Publishing, Bristol, United Kingdom, ১৯৮৮)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Gunn, Alastair G. (২০০৭–২০১৪)। "Brück, Hermann Alexander"। Hockey, Thomas; Trimble, Virginia; Williams, Thomas R.। Biographical Encyclopedia of Astronomers। New York: Springer Publishing। আইএসবিএন 978-0-387-31022-0। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ Rees, Martin J. (২০০৪–২০০৭)। "Brück, Hermann Alexander"। Oxford Dictionary of National Biography। Oxford, England: Oxford University Press। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/73852। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ Rudolf Peierls Bird of Passage (Princeton, 1985) p. 25.
- ↑ Sommerfeld ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৩ তারিখে – Personal Data
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Brück ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে – Biography, Royal Society of Edinburgh
- ↑ Brück, Hermann A.; Brück, Mary T. (২০০০)। "Recollections of life as a student and a young astronomer in Germany in the 1920s"। Journal of Astronomical History and Heritage। 3 (2): 115–129। বিবকোড:2000JAHH....3..115B।
- ↑ "Mary Brück"। ২১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০০৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০২০।