হাসান জেলা
হাসান জেলা হলো দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত কর্ণাটক রাজ্যের মধ্যস্থলে অবস্থিত একটি জেলা৷ এটি কর্ণাটকের চারটি প্রশাসনিক বিভাগের মহীশূর বিভাগের অন্তর্গত৷ জেলাটির জেলাসদর হাসান শহরে অবস্থিত, যা কর্ণাটকের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর বেঙ্গালুরু এবং মাঙ্গালুরুর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত৷
হাসান জেলা ಹಾಸನ | |
---|---|
কর্ণাটকের জেলা | |
স্থানাঙ্ক: ১৩° উত্তর ৭৬° পূর্ব / ১৩° উত্তর ৭৬° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ভারত |
রাজ্য | কর্ণাটক |
সদর | হাসান |
তালুক | হাসান, হোলেনরসিপুর, আর্কলগুড়ু, চান্নরায়পত্তন, সকলেশপুর, বেলুরু, আলুর, আর্সিকেরে |
সরকার | |
• ডেপুটি কমিশনার | রোহিণী সিন্ধুরি |
আয়তন | |
• মোট | ৬,৮৪৫ বর্গকিমি (২,৬৪৩ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১৭,৭৬,৪২১ |
• জনঘনত্ব | ২৬০/বর্গকিমি (৬৭০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | কন্নড়, ইংরাজী |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৫৭৩২০১ |
টেলিফোন কোড | ০৮১৭২ |
যানবাহন নিবন্ধন | KA-13 (কেএ-১৩), KA-46 (কেএ-৪৬) |
ওয়েবসাইট | www |
হাসান জেলাতে দুটি বড় শহর রয়েছে, সেগুলি হলো হাসান এবং আর্সিকেরে৷ এছাড়াও চারটি ছোট শহর রয়েছে, সেগুলি হলো চান্নরায়পত্তন, বেলুরু, হোলেনরসিপুর এবং সকলেশপুর৷
প্রশাসন
সম্পাদনাহাসান আসন থেকে বর্তমান সাংসদ হলে শ্রী প্রজ্বল রেবন্না, তিনি ভারতের একাধিক কনিষ্ঠতম সাংসদের মধ্যে একজন এবং ভারতের ১১তম প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেবেগৌড়ার দৌহিত্র।
ইতিহাস
সম্পাদনাহাসান জেলা হৈসল সাম্রাজ্যের একটি পট্ট ছিল। কোন এককালে এই রাজবংশ দক্ষিণ ভারতের একটি বিরাট অংশকে নিজের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ১০০০ থেকে ১৩৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের মধ্যে এই সাম্রাজ্যের আধিপত্য ছিল। প্রাক্কালে তাদের তাদের রাজধানী বেলুরুতে থাকলেও পরবর্তীকালে তা হালেবিড়ুতে স্থানান্তরিত করা হয়। [১]
জেলাটির নাম হাসান এসেছে স্থানীয় দেবী "হাসনাম্বা" বা হাসন অম্বা থেকে। তাকে ঐ শহরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীও বলা হয়ে থাকে। হাসান রাজ্যের ইতিহাস বলতে প্রাথমিক ভাবে যে দুটি সাম্রাজ্যের কথা উঠে আসে সেগুলি হল কর্ণাটকের তালকাড়ের পশ্চিম গঙ্গ রাজবংশ (৩৫০ - ৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ) এবং তৎপরবর্তী হৈসল সাম্রাজ্য (১০০০ - ১৩৩৪ খ্রিস্টাব্দ)৷ পরবর্তীকালে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসকগণ পঞ্চোদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে বেলুরুতে তাদের কুলদেবতা চেন্নাকেশবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন৷ বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের পরে হাসানে বিজাপুর (বিজয়পুর)-এর আদিলশাহী ও মোঘল সাম্রাজ্য নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলো৷ সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে হাসান জেলা মহীশূর সাম্রাজ্য ও শিবমোগ্গার কেলাদির নায়কদের মধ্যে একটি বিতর্কিত অঞ্চলে পরিণত হয়৷ অন্তিমে এটি স্বাধীন মহীশূর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলে বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে।
আধুনিক কাল
সম্পাদনাচতুর্দ্দশ শতাব্দীতে দিল্লী সালতানাতের বারংবার আক্রমণের ফলে হৈসল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এই সুযোগে হৈসল রাজ্য সহ হাসান জেলা বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়৷ [২] ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে মহীশূরের শাসকগণ বিজাপুরের সুলতানের সহিত চান্নরায়পত্তন দুর্গে একটি সন্ধি সাক্ষরিত করেন৷ কেলাদি নায়ক এবং মহীশূর শাসকদের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তিও সাক্ষরিত হয়৷ [২] ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের পরিণতি হিসাবে হাসান জেলা মহীশূর রাজ্যের অংশ হিসাবে রয়ে যায়৷
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে জেলা হিসাবে হাসান জেলা পূর্ণ মর্যাদা পায় এবং মহীশূর রাজ্যের হাসান সহ অন্যান্য সাতটি জেলাকে প্রশাসনিকভাবে একাধিক তালুকে বিভক্ত করা হয়৷ [৩] ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে এই জেলার জনসংখ্যা ছিলো ৫,১৮,৯৮৭ জন কিন্তু ১৮৭৬ থেকে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুই বছর যাবৎ দুর্ভিক্ষের কারণে এই অঞ্চলে জনসংখ্যা কমতে শুরু করে এবং ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনায় তা ৪,২৮,৩৪৪ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীকালে ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দ ও ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এই জেলার জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫,১১,৯৭৫ এবং ৫,৬৮,৯২৯ জন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে জনগণনা অনুসারে জেলাটিতে ৫,৪১,৫৩১ জন হিন্দু, ১৬,৬৬৮ জন মুসলিম, ৫,০৩৫ জন সর্বপ্রাণবাদী, ৩,৭৯৫ জন খ্রিষ্টান, ১,৮৭৪ জন জৈন এবং ১৬ জন অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ বাস করতেন। বিরাটি তে ১৪ টি শহর এবং ২৫৪৬ টি গ্রাম ছিল। [৪]
ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই জেলাতে সর্বপ্রথম সংরক্ষিত বন সরকারিভাবে উদ্বোধন করা হয়, যা সমগ্র জেলার ১৮৫ বর্গমাইল ক্ষেত্রফল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। বনাঞ্চল গুলি যে সমস্ত স্থানে ছিল তার তালিকা নিম্নরূপ (বন্ধনীতে বর্গমাইল এককে ক্ষেত্রফল নির্দেশিত):
- কেম্পুহোলঘাট (১৬),
- কাগনেরিঘাট (২),
- কাব্বিনালেঘাট (২৩),
- বিসলেঘাট (২৩),
- বিজয়পুর (৫),
- হিরিকলগুড্ডা (৯২),
- দোডাবেতা (৩),
- বুরদলবোর (৩),
- হগারে (৩),
- ব্যাবা (২),
- সিগেগুড্ডা (৮),
- বাইসুর (১),
- মলপ্পানবেতা (১),
- বন্তিগুড্ডা (১)
পরবর্তীকালে রাজ্যটি পাঁচটি চন্দন কাঠের বনাঞ্চল সংস্থাপিত করেন। [৫]
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতার পর মহীশূর সাম্রাজ্য মহীশূর রাজ্যে পরিণত হয় এবং ১৯৭৩ এরপর এটিকে কর্ণাটক রাজ্যে নামান্তরিত করা হয়।
ভূগোল
সম্পাদনাজেলাটির উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে তুমকুর জেলা, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে মাণ্ড্য জেলা, দক্ষিণ দিকে রয়েছে মহীশূর জেলা, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রয়েছে কোড়গু জেলা, পশ্চিম দিকে রয়েছে দক্ষিণ কন্নড় জেলা এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে রয়েছে চিকমাগালুর জেলা৷
হাসান এবং বেলুরু শহর দুটি সমুদ্রতল থেকে যথাক্রমে ৩,২১৫ ফুট (৯৮০ মি) ও ৩,২১০ ফুট (৯৮০ মি) উচ্চতায় অবস্থিত৷
জেলাটির অধিকারংশই কৃষ্ণা নদীর একটি উপনদী হেমবতী নদীর জলবিভাজিকাতে অবস্থিত৷ হাসান জেলার ভূমির ঢাল হেমবতী নদীর গতিপথের মতোই পশ্চিমঘাট পর্বতমালা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঢালু৷ যগচি নদী উৎসস্থল থেকে বেলুরু তালুকের মধ্য দিয়ে দক্ষিণমুখে প্রবাহিত হয়ে গোরুরের নিকট হেমবতী নদীতে মিলিত হয়েছে৷ এই নদীমিলনে ৮০০০ হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে হেমবতী বাঁধ৷ [৭] হেমবতী নদী হোলেনরসিপুর তালুকে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে মহীশূর জেলার হাসান সীমান্তে হাম্পপুরার নিকট কাবেরী নদীতে মিলিত হয়েছে৷
জেলাটির পশ্চিমদিকের অংশের মূল নদী নেত্রবতী, যা জেলাটির উত্তর পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগর মুখে ধাবিত হয়েছে৷ আর্সিকেরে তালুকের একটি অংশে রয়েছে তুঙ্গভদ্রার উপনদী হোগারি নদী৷ বেলুরু, আর্সিকেরে এবং হাসান তালুকে অবস্থিত কম উচ্চ গ্রানাইটের পাহাড় কাবেরী ও তুঙ্গভদ্রা নদীর মধ্যে জলবিভাজিকা গঠন করেছে৷
জনতত্ত্ব
সম্পাদনা২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনগণনা অনুসারে হাসান জেলার জনসংখ্যা ১৭,৭৬,৪২১ জন,[৮] যা গাম্বিয়া রাষ্ট্রের [৯] বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা রাজ্যের জনসংখ্যার সমতুল্য৷ [১০] ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ৬৪০ টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যার বিচারে জেলাটি ২৭০তম স্থান অধিকার করেছে৷ [৮] জেলাটির জনঘনত্ব ২৬১ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৬৮০ জন/বর্গমাইল)৷ [৮] ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ৩.১৭ শতাংশ৷ [৮] হাসান জেলায় প্রতি হাজার পুরুষে ১০০৫ জন মহিলা বাস করেন৷ [৮] জেলাটির সর্বমোট সাক্ষরতার হার ৭৬.০৭ শতাংশ যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৮৩.৬৪ শতাংশ এবং নারী সাক্ষরতার হার ৬৮.৬০ শতাংশ৷ [৮][১১]
বছর | জন. | ব.প্র. ±% |
---|---|---|
১৯০১ | ৫,৬৮,৯১৯ | — |
১৯১১ | ৫,৭৮,০৯৭ | +০.১৬% |
১৯২১ | ৫,৮১,৭৫০ | +০.০৬% |
১৯৩১ | ৫,৯৬,৯৩৭ | +০.২৬% |
১৯৪১ | ৬,২৭,৭১৮ | +০.৫% |
১৯৫১ | ৭,১৫,১৩৫ | +১.৩১% |
১৯৬১ | ৮,৯৫,৮৪৭ | +২.২৮% |
১৯৭১ | ১১,০২,৩৭০ | +২.১% |
১৯৮১ | ১৩,৫৭,০১৪ | +২.১% |
১৯৯১ | ১৫,৬৯,৬৮৪ | +১.৪৭% |
২০০১ | ১৭,২১,৬৬৯ | +০.৯৩% |
২০১১ | ১৭,৭৬,৪২১ | +০.৩১% |
উৎস:[১২] |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Hassan"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ। 13 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 51।
- ↑ ক খ Meyer, Sir William Stevenson. The Imperial Gazetteer of India. Oxford, Clarendon Press, 1908-1931. v. 13, p. 64.
- ↑ Meyer, Sir William Stevenson, et al. The Imperial Gazetteer of India. Oxford, Clarendon Press, 1908-1931. v. 18, p. 228.
- ↑ Meyer, Sir William Stevenson. The Imperial Gazetteer of India. Oxford, Clarendon Press, 1908-1931. v. 13, pp 64-65.
- ↑ Rice, B. Lewis. Mysore: A Gazetter Compiled by the Government. Revised Edition 1897; reprinted 2001 by Asian Educational Services, New Delhi. p. 327
- ↑ 10 lesser known sites in India that you should add to your bucket list India Today
- ↑ Sugunan, V. V. (1995). Reservoir Fisheries of India Issue 345 of FAO fisheries technical paper, Food and Agriculture Organization. ISSN 0429-9345. p. 155
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "District Census 2011: Hassan"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০।
- ↑ US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২০১১-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০১।
Gambia, The 1,797,860 July 2011 est.
- ↑ "2010 Resident Population Data"। U. S. Census Bureau। ২০১১-০৮-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০।
Nebraska 1,826,341
- ↑ "City census 2011"। Census-2011।
- ↑ Decadal Variation In Population Since 1901