তুঙ্গভদ্রা নদী

ভারতের নদী

তুঙ্গভদ্রা ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবাহিত একটি প্রধান নদী, যা কর্ণাটক-এর মধ্যে দিয়ে অধিকাংশ সময় প্রবাহিত এবং অবশেষে কর্ণাটক,অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নূল জেলা এর কাছে কৃষ্ণা নদীতে মিলিত হয়।মহাকাব্য রামায়ণে তুঙ্গভদ্রা পম্পা নদী নামে পরিচিত ছিল। 

তুঙ্গভদ্রা নদী
নদী
হাম্পিতে তুঙ্গভদ্রা নদী
হাম্পিতে তুঙ্গভদ্রা নদী
দেশ  ভারত
রাজ্যসমূহ কর্নাটক, তেলেঙ্গনা, অন্ধ্রপ্রদেশ
উপনদী
 - বাঁদিকে তুঙ্গ নদী, কুমুদবতী নদী, ভদ্রা নদী
 - ডানদিকে ভদ্রা নদী, বেদবতী নদী, হান্দ্রী নদী
নগরসমূহ হরিহর, হসপেট, হাম্পি, মন্ত্রালয়ম, কুর্নুল
উৎস কুদলী (যেখানে তুঙ্গ এবং ভদ্রা নদী মিলেছে
 - অবস্থান কুদলীi, ভদ্রাবতী, কর্নাটক, ভারত
 - উচ্চতা ৬১০ মিটার (২,০০১ ফিট)
মোহনা কৃষ্ণা নদী
 - অবস্থান সঙ্গমেশ্বরম, কুর্নুল জেলা, ভারত
 - উচ্চতা ২৬৪ মিটার (৮৬৬ ফিট)
দৈর্ঘ্য ৫৩১ কিলোমিটার (৩৩০ মাইল)
অববাহিকা ৭১,৪১৭ বর্গকিলোমিটার (২৭,৫৭৪ বর্গমাইল)
A map featuring the river
একটি মানচিত্রে দর্শিত নদীটি

প্রবাহ

সম্পাদনা

কর্ণাটকে কুডলির কাছে তুঙ্গ নদী এবং ভদ্রা নদীর সঙ্গমস্থলের কাছে তুঙ্গভদ্রা নদীর উৎস যা এর পরে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পূর্ব ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়। দুটি নদী কর্ণাটকের চিকমগালুর জেলায় উৎপাদিত হয়,পশ্চিমপ্রবাহী নদী নেত্রবতীর পাশাপাশি (যা ম্যাঙ্গালোরের কাছাকাছি আরব সাগরের সাথে মিলিত); তুঙ্গ এবং ভদ্রা পশ্চিমঘাটের বরাহ পর্বতে ১১৯৮মিটার উচ্চতার গঙ্গামুলার কাছে মিলিত হয়। ভদ্রা নদীটি ভদ্রাবতী শিল্পকেন্দ্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১০০ টিরও বেশি উপনদী, নদী, খাল এবং সমতুল্য জলপ্রবাহ এই দুটি নদীতে মিলিত হয়। শিবমোজ্ঞাতে থেকে ১৫ কিমি ( ৯.৩ মা) দূরে কুডলিতে প্রায় ৬১০ মিটার উচ্চতায় হোলেহান্নুর কাছে মিলিত হবার পূর্বে তুঙ্গ এবং ভদ্রার যাত্রাপথ যথাক্রমে ১৪৭ কিমি (৯১ মাইল) এবং ১৭১ কি.মি. (১০৬ মাইল)।   সেখান থেকে তুঙ্গভদ্রা ৫৩১ কিলোমিটার (৩৩০ মাইল) সমভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কৃষ্ণার সাথে মিলিত হয়।শিমোগা জেলা, উত্তর কন্নড় জেলা এবং হাবেরী জেলা দিয়ে প্রবাহিত বরদা ও  চিত্রদুর্গ জেলা, বেলারি জেলা , কোপ্পাল জেলা ও রায়চুর জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হাগেরি এবং কুর্নূল জেলা র মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হান্দ্রি তুঙ্গভদ্রার প্রধান উপনদীসমূহ। এছাড়াও অনেক উপনদী রয়েছে এই প্রধান উপনদী গুলির।  নদীর তীরে অনেকগুলি পবিত্র স্থান আছে: প্রধানত ভদ্রা নদীর তীরে শৈব ধারার মন্দির এবং তুঙ্গ নদীর তীরে অন্যান্য সমস্ত বিশ্বাসের মন্দির গুলি। আদি শঙ্করাচার্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্গেরির, সারদাপেঠম তুঙ্গার বামদিকে সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দির যা তার উৎপত্তির প্রান্তের থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরে অবস্থিত । কর্ণুল জেলার মন্ত্রালয় শ্রী রাঘবেন্দ্র স্বামী মঠ এবং মহাবুবনগর জেলার আলামপুর যেখানে জোগুলাম্বা হল প্রধান পূজিতা দেবী, যা দক্ষিণা কাশী নামেও পরিচিত -একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান কেন্দ্র।এছাড়াওপ্রথম চালুক্য দ্বারা নির্মিত একটি নল ব্রহ্মা মন্দিরের চত্বর ও আছে নদীর তীরে । 

নদীর তীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নদী বরাবর বন্যা সুরক্ষা দেওয়ালগুলি যা শ্রী কৃষ্ণদেবরায় দ্বারা নির্মিত ১৫২৫ এবং ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে।যে সমস্ত স্থানে, বন্যার সময় ভূমি ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেখানেই পাওয়া যায়। এটি শৃঙ্গেরি তে শুরু হয় এবং কয়েক কিলোমিটার দূরে কুরনুল-এ শেষ হয়। এইগুলি পাথরের তৈরি এবং এখনও অক্ষত। ৩ 'x ৪' x ৫ 'এর খুব বড় বোল্ডারো এই দেওয়ালের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়।

 
তুঙ্গভদ্রা নদীতে দুটি ভেলা

ধূসর, গোলাপী ইত্যাদি রঙের গ্রানাইট পাথর দ্বারা মূলত তুঙ্গভদ্রার আশেপাশের ভূ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। নদীটি হাম্পিতে আড়াআড়ি দুর্বল খাড়া পাথর উপসর্গের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছে এবং একটি সংকীর্ণ গর্ত তৈরি করেছে যেখানে গ্রানাইট পাহাড় একটি গভীর খাঁজে নদীকে আবদ্ধ করে[]

বিজয়নগর সাম্রাজ্য-এর ক্ষমতার কেন্দ্র বিজয়নগর এবং হাম্পি-এর ধ্বংসাবশেষ এবং এই পবিত্র নদীকে কেন্দ্র করে বহু পৌরাণিক কাহিনী সৃষ্টি হুয়েছে যা অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ দেবতাদের বিষয়ে পবিত্র ঐতিহ্যকে একত্রিত করে[]

মন্দির সমূহ

সম্পাদনা
  • কর্ণাটকে চিকমাগালুর জেলাতে তুঙ্গা নদীর তীরে শৃঙ্গেরি সারাদাম্বা মন্দির
  • তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে অনেক প্রাচীন ও পবিত্র স্থান রয়েছে। হরিহর-এ হরিহরেশ্বর-এর জন্যে নিবেদিত একটি মন্দির রয়েছে। আধুনিক শহর হাম্পি-এর আশেপাশে রয়েছে বিজয়নগর সাম্রাজ্য-এর ধ্বংসাবশেষ যা ছিল শক্তিশালী বিজয়নগর সাম্রাজ্য-এর রাজধানী শহর এবং এখন একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটবিজয়নগর মন্দির সমাধিস্থলের ধ্বংসাবশেষ সহ সাইট পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে।
  • মহাবোবনেগর জেলার আলমপুর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যা তুঙ্গভদ্রার উত্তর তীরে অবস্থিত এবং দক্ষিণ কাশি নামেও পরিচিত, কুরনুল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে প্রথম চালুক্য সম্রাটদের দ্বারা নির্মিত একটি নব ব্রহ্ম মন্দির চত্বর রয়েছে যা ভারতের মন্দিরের স্থাপত্যের প্রাচীনতম মডেলগুলির একটি। এখানকার মুখ্য দেবী জোগুলাম্বা।
  • গুরু রাঘবেন্দ্র-এর মূল বৃন্দাবন অন্ধ্র প্রদেশের মন্ত্রালয়ে তুঙ্গভদ্রার তীরে অবস্থিত।

তুঙ্গ নদী র উপরে শিমোগার থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উপরে গজানুর কাছে একটি বাঁধ নির্মিত হয়েছে। একই ভাবে, ভদ্রা নদীর তীরে ভদ্রাবতী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উপরে লাক্কাভালিতে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধ দুটি শিমোগা, চিকমাগালুর, দেভাঙ্গেরে এবং হাভেরী এলাকায় সেচের জল প্রদান করে।

সমস্যা

সম্পাদনা

ব্যাপক শিল্প দূষণ তুঙ্গভদ্রা নদীকে বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।কর্ণাটকের চিকমাগালু্র, শিমোগা, দেভাঙ্গেরে, হাবেরী, বেল্লারী, কোপ্পাল ও রাইচকুর জেলার এবং অন্ধ্র প্রদেশের কর্নুল এবং মেহবুবনগর জেলায় (নদীর প্রবাহে প্রায় সব জেলা) নদীর তীরে গড়ে ওঠা বিপুল শিল্পকেন্দ্র এবং নদীর তীরে খনিজ উত্তোলন এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে দূষণের সৃষ্টি করেছে। এম শঙ্করের মতানুযায়ী, শুধুমাত্র শিমোগা থেকেি বছরে ৩ কোটি লিটার বর্জ্য নির্গত হয় তুঙ্গা নদীতে, যা তুঙ্গভদ্রাকে দেশের অন্যতম দূষিত নদীর মর্যাদা দিয়েছে[]। শিল্পআঞ্চল থেকে নির্গত জল গাঢ় বাদামী এবং একটি তীব্র গন্ধ যুক্ত। সামগ্রিকভাবে, তুঙ্গভদ্রা নদী দূষণ উপকূলের ১,০০০,০০০ লোককে প্রভাবিত করেছে কারণ নদীতীরের অধিকাংশ গ্রামগুলি নদীর জল ব্যবহার করে, যা প্রাচীন সেচ ট্যাঙ্ক সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রামগুলিতে আসে এবং গ্রামবাসীরা পান করা, স্নান, ফসল, মাছ ধরার এবং গবাদি পশুর জলের জন্য এই জল ব্যবহার করে। গ্রামের জেলেদের নিয়মিত জীবিকা মৎস্য হত্যা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে তুঙ্গভদ্রার মৎস্যসম্পদ শেষ হয়ে গেছে[]

গ্যালারি

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  • তালিকা বাঁধ ও জলাধার ভারত
  • Tungabhadra Pushkaralu
  • Kishkindha
  • Tungabhadra Pushkaralu

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Physical landscape of Vijayanagara"। ২৯ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ 
  2. "Vijayanagara Site"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৪ 
  3. The Hindu, 6 June 2008
  4. "River Krishna"। ২৭ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৬ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা