হনুমন্ত সিং
হনুমন্ত সিং (মারাঠি: हनुमंत सिंग; জন্ম: ২৯ মার্চ, ১৯৩৯ - মৃত্যু: ২৯ নভেম্বর, ২০০৬) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজপুতানা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, দল নির্বাচক, ব্যবস্থাপক ও আইসিসি ম্যাচ রেফারি ছিলেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
;ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | হনুমন্ত সিং | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | বাঁশওয়াড়া, রাজপুতানা, ব্রিটিশ রাজ | ২৯ মার্চ ১৯৩৯|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৯ নভেম্বর ২০০৬ মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স ৬৭)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | ছোট্টো | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | লেগ স্পিন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান, দল নির্বাচক, ব্যবস্থাপক, আইসিসি ম্যাচ রেফারি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | কেএস রণজিৎসিংজী (কাকা), সূর্যবীর সিং (ভ্রাতা), কেএস ইন্দ্রজিৎসিংজী (কাকাতো ভাই) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১০৮) | ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ বনাম নিউজিল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মধ্য ভারত | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মধ্য ভারত ও রাজস্থান দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, লেগ স্পিন বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন ‘ছোট্টো’ ডাকনামে পরিচিত হনুমন্ত সিং।
শৈশবকাল
সম্পাদনাবাঁশওয়াড়ার মহারাওয়াল চন্দ্রবীর সিংয়ের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন। ১৯৪৪ থেকে ১৯৮৫ সময়কালে বাঁশওয়ারার মহারাজকুমার ছিলেন। তার মাতা কুমার শ্রী দিলীপসিংজীর ভগ্নী হন। শুরুতে দেরাদুনের ওয়েলহাম বয়েজ স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর, ইন্দোরের ডালি কলেজে পড়াশোনা শেষ করেন। মধ্য ভারত ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন।
তার সম্মানার্থে ডানি কলেজের মাঠ হনুমন্ত ওভাল নামে নামাঙ্কিত হয়। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সূর্যবীর সিং প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেন। পুত্র সংগ্রাম সিং প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন। কাকাতো ভাই কেএস ইন্দ্রজিৎসিংজী ভারতের পক্ষে ৪ টেস্টে অংশ নিয়েছেন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
সম্পাদনা১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৭৮-৭৯ মৌসুম পর্যন্ত হনুমন্ত সিংয়ের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। রাজপুত্র হয়ে জন্ম নেন ও ব্যাটিংও অনেকাংশ রাজকীয় ঢংয়ের ছিল।
মধ্য ভারতের পর রাজস্থান ও মধ্য অঞ্চলের পক্ষে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছিলেন হনুমন্ত সিং। ছোটখাটো শারীরিক গড়নের কারণে ছোট্টো ডাকনামে পরিচিতি পান। পিছনের পায়ে ভর রেখে বেশ ভালো ব্যাটিং করেন। সচরাচর লেগ অঞ্চলের দিকেই বলকে ঠেলে দিতে পছন্দ করতেন অধিক।
রঞ্জী ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় তিনবার রাজস্থান দলকে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু, প্রত্যেকবারই তার দল পরাজিত হয়েছিল। এছাড়াও, ১৯৭১-৭২ মৌসুমে দিলীপ ট্রফিতে মধ্য অঞ্চলকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয় করান। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় বোম্বের বিপক্ষে ১০৮ ও অপরাজিত ২১৩ রান তুলেন। একই খেলায় তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সূর্যবীর সিং (৭৯ ও ১৩২) খেলেছিলেন। তারা ১৭৬ ও ২১৩ রানে জুটি গড়েন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সম্পাদনাসমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে চৌদ্দটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন হনুমন্ত সিং। হঠাৎ আলোকচ্ছটার ন্যায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৪ তারিখে দিল্লিতে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে মুম্বইয়ে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৪ সালে দিল্লিতে সিরিজের ৪র্থ টেস্টে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় হনুমন্ত সিংয়ের। ১০৫ রান তুলে পঞ্চম ভারতীয় হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। তার পূর্বে লালা অমরনাথ, দীপক শোধন, এ. জি. কৃপাল সিং ও আব্বাস আলী বেগ এ সাফল্য পেয়েছিলেন। এরপর তিনি আর এ সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটাতে পারেননি।
ঐ বছরের শেষদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে দলের ১৯৩ রানের মধ্যে তার সংগ্রহ ছিল ৯৪ রান। এছাড়াও, ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে সফরকারী নিউজিল্যান্ড ও ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হন। ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। তবে, অন্যান্য অনেক প্রতিশ্রুতিশীল ভারতীয় খেলোয়াড়ের ন্যায় তাকেও ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমন করা থেকে বিরত রাখা হয়। সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ সালে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে বোম্বে টেস্ট খেলার জন্যে তাকে পুনরায় ভারত দলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু, ১ ও ১৩ রান তুলে উভয় ইনিংসেই ডেল হ্যাডলি’র ফাস্ট বোলিংয়ের তোপে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ যেতে বাধ্য হন। এরপর আর তাকে টেস্ট খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। এছাড়াও, তিনি আর কোন টেস্ট সেঞ্চুরি পাননি।
বোম্বে টেস্টে সংরক্ষিত খেলোয়াড় হিসেবে অম্বর রায়কে রাখা হয়েছিল। এ পর্যায়ে হনুমন্ত সিং খেলার স্বাভাবিক ছন্দে ছিলেন না। অম্বর রায় তখন পূর্ব অঞ্চলের জাতীয় দল নির্বাচককে বলেছিলেন যদি হনুমন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হয় তাহলে তিনি পরের টেস্টে খেলবেন। পরবর্তীকালে অম্বর রায় বলেছিলেন যে, ‘আমি জানি হনুমন্ত সেরা খেলোয়াড় ও আমি তার পরিবর্তে খেলার চিন্তাধারাকে আমলে নেইনি। আমি তার সাফল্য কামনা করি। তিনি ৭৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।’
কোচিং
সম্পাদনা১৯৭৯ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটকে বিদেয় জানান হনুমন্ত সিং। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৮৩ সালে ভারত দলের ব্যবস্থাপক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন। রাজস্থান দলের প্রধান কোচসহ ১৯৯০ সালের শুরুরদিকে কেনিয়া দলেরপ্রধান কোচ ছিলেন। ১৯৯০ সালে নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে কেনিয়া দলের কোচ ছিলেন। তবে, সেমি-ফাইনালে দলটি পরাজিত হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে একই দলকে ফাইনালে নিয়ে গেলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে পরাজয়বরণ করে কেনিয়া দল। ১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে কেনিয়া দলের কোচ ছিলেন। তন্মধ্যে, গ্রুপ পর্যায়ের খেলায় শক্তিধর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পেয়ে ওডিআইয়ে বড় ধরনের অঘটন ঘটায় তার দল।[১]
প্রশাসনে অংশগ্রহণ
সম্পাদনাক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃক ম্যাচ রেফারির দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। মার্চ, ১৯৯৫ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি, ২০০২ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃক ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেন। এ পর্যায়ে ৯ টেস্ট ও ৫৪টি ওডিআই পরিচালনা করেছিলেন।[২] এছাড়াও, ব্যাঙ্গালোরভিত্তিক ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। রাজস্থান দলকে প্রশিক্ষণ দেন। ক্রিকেটের বাইরে ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের নির্বাহী ছিলেন।
দেহাবসান
সম্পাদনা২৯ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে ৬৭ বছর বয়সে মহারাষ্ট্রের মুম্বই এলাকায় হনুমন্ত সিংয়ের দেহাবসান ঘটে। ডেঙ্গু জ্বর ও হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হবার পর ফুসফুস ও কিডনীবৈকল্যের শিকার হয়েছিলেন তিনি।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "From import to export, the Indian coaching story"। ২১ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Royalty on the cricket field"। International Cricket Council। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৮।
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে হনুমন্ত সিং (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে হনুমন্ত সিং (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- "Former India batsman Hanumant Singh dies aged 67", Reuters, 29 November 2006
- Hanumant Singh - the tragic Prince of Indian cricket, CricketArchive, 29 November 2006
- Obituary[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The Daily Telegraph, 29 November 2006
- Obituary আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ৪ জুন ২০১১ তারিখে, The Times, 18 December 2006