স্ট্যান নিকোলস

ইংরেজ ক্রিকেটার

মরিস স্ট্যানলি স্ট্যান নিকোলস (ইংরেজি: Stan Nichols; জন্ম: ৬ অক্টোবর, ১৯০০ - মৃত্যু: ২৬ জানুয়ারি, ১৯৬১) এসেক্সের স্টনডন ম্যাসে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন।[] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৯ সময়কালে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

স্ট্যান নিকোলস
১৯৩৪ সালে ভারত গমনকালীন সংগৃহীত স্থিরচিত্রে স্ট্যান নিকোলস
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৯০০-১০-০৬)৬ অক্টোবর ১৯০০
স্টনডন ম্যাসে, এসেক্স, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৬ জানুয়ারি ১৯৬১(1961-01-26) (বয়স ৬০)
নিউয়ার্ক, নটিংহ্যামশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৪৯)
১০ জানুয়ারি ১৯৩০ বনাম নিউজিল্যান্ড
শেষ টেস্ট২২ আগস্ট ১৯৩৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৪ ৪৮৩
রানের সংখ্যা ৩৫৫ ১৭,৮২৩
ব্যাটিং গড় ২৯.৫৮ ২৬.৫৬
১০০/৫০ ০/২ ২০/৯২
সর্বোচ্চ রান ৭৮* ২০৫
বল করেছে ২,৫৬৫ ৮৩,৬০৪
উইকেট ৪১ ১,৮৩৩
বোলিং গড় ২৮.০৯ ২১.৬৩
ইনিংসে ৫ উইকেট ১১৮
ম্যাচে ১০ উইকেট ২৩
সেরা বোলিং ৬/৩৫ ৯/৩২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১১/০ ৩২৫/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন মরিস নিকোলস নামে পরিচিত স্ট্যান নিকোলস

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

তরুণ বয়সে ফুটবল খেলায় গোলরক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। কুইন্স পার্ক র‌্যাঞ্জার্সের পক্ষে বেশ কয়েকটি খেলায় অংশ নিয়েছেন। স্ট্যান নিকোলসের ক্রিকেট খেলায় দক্ষতা থাকায় ১৯২০-এর দশকের শুরুর দিকে এসেক্স কর্তৃপক্ষের নজর কাড়তে বেশি সময় লাগেনি। ১৯৩০-এর দশকের অধিকাংশ সময় ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে শীর্ষস্থানীয় অল-রাউন্ডারের মর্যাদা লাভ করেছেন।

এসেক্স ক্লাবে বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নামেন। ১৯২৪ সালে দলের সাথে যুক্ত হলেও ঐ বছর প্রথম একাদশে নিয়মিত খেলোয়াড়ের মর্যাদা পাননি। পরের বছর উদীয়মান ফাস্ট বোলার হিসেবে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পান। এছাড়াও, বেশ নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ঐ মৌসুমে তেমন সুবিধে করতে না পারলেও জুলাইয়ের শেষদিকে অত্যন্ত ব্যাটিং অনুপযোগী পিচে কেন্টের সংগৃহীত ৪৩ রানে অল-আউট করার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন স্ট্যান নিকোলস।

১৯২৬ সালে দূর্দান্ত প্রতাপে খেলেন স্ট্যান নিকোলস। ঐ মৌসুমে ১১৪টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভে সক্ষমতা দেখান। এক পর্যায়ে তিনি খুবই দ্রুততার সাথে ফাস্ট বোলিং করতেন। কখনোবা বেশ দূরত্ব দিয়ে বল ছুঁড়তেন। শক্তিশালী গড়নের কারণে কোনরূপ বিরতি ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে বোলিং করতে পারতেন। কেন্টের বিপক্ষে দশ উইকেট লাভের পাশাপাশি এগারো নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৭ রান তুলেছিলেন। ১৯২৭ সালে উইকেট প্রতি ২৩ রান খরচায় ১২৪ উইকেট দখল করেন। ঐ মৌসুমে চেমসফোর্ডে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে ৯/৫৯, সাউথএন্ডে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৮/৪৬ এবং কোলচেস্টারে সমারসেটের বিপক্ষে ৪/১২ ও ৫/২০ পেয়েছিলেন। ঐ বছর ৯৪০ রান তুলেন।

১৯২৮ সালে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। তবে, ৭০ উইকেট লাভের পিছনে উইকেট প্রতি ৩৫ রান খরচ করতে হয়েছিল স্ট্যান নিকোলসকে। ১৯২৯ সালে তিনি নিজেকে আদর্শ অল-রাউন্ডার হিসেবে গড়ে তুলেন। উইকেট বরাবর বামহাতে মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তবে, তার বোলিং বেশ স্থিতিশীল হয় ও অধিক কার্যকরী হয়ে উঠে।

টেস্ট ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১৪ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় তার। ১০ জানুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে স্ট্যান নিকোলসের। ১৯২৯ সালের শেষদিকে ১৯৩০ সালের অ্যাশেজ সিরিজকে সামনে রেখে ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন। তবে, ঐ সিরিজেতিনি খুব কমই নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিলেন। তবে, দুইটি প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ সফলতার মুখ দেখেন। পরবর্তীতে খেলাগুলো টেস্টের মর্যাদা লাভ করেছিল।

হ্যারল্ড লারউড, বিল বোসগাবি অ্যালেনের ন্যায় প্রথিতযশা পেস বোলারের কারণে পরবর্তী বছরগুলোয় নিজ দেশে কিংবা অ্যাশেজ সফরের জন্য খুব কমই খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তবে, কাউন্টি ক্রিকেটে খেলার গতিধারা ঠিকই অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। ১৯৩৪ সালে আঘাত লাভ স্বত্ত্বেও যথেষ্ট দৃঢ়তাপূর্ণ ছিল। ফলশ্রুতিতে উইজডেন কর্তৃক ১৯৩৪ সালের সংস্করণে অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে তাকে মনোনীত করে।[] ঐ মৌসুমে ১৮৯৭ সালের পর এসেক্স দল সেরা সময় অতিবাহিত করে। ব্যাটিং ও বোলিং উভয় বিভাগেই সমান ক্রীড়ানৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন স্ট্যান নিকোলস।

ভারতের ম্যাটিং উইকেটে তার বোলিং বেশ কার্যকর ছিল। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড দল টেস্ট সফরে ভারত গমন করে। ১৯৩৫ সালে লারউড ও বোসকে পূর্ববর্তী তিন বছর ধরে বডিলাইন বিতর্কের সাথে জড়িত থাকায় দলের বাইরে রাখা হয়েছিল। কেন ফার্নেসের আঘাতপ্রাপ্তি ও অ্যালেনের চাকুরীতে দায়িত্বপালনের ফলে নিকোলসকে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে জানান দিতে সুযোগ এনে দেয়। ট্রেন্ট ব্রিজে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৬/৩৫ পান। ঐ সিরিজে তিনি আরও তিন টেস্টে অংশগ্রহণ করেন।

ঐ গ্রীষ্মে নিকোলস তার সেরা মৌসুম অতিবাহিত করেন। ১৫৭ উইকেট লাভের পাশাপাশি ১,৪০০ রান সংগ্রহের কৃতিত্ব গড়েন। তন্মধ্যে, হাডার্সফিল্ডে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের ফলে জয় পায় তার দল। খেলায় তিনি ১১/৫৪ ও ১৪৬ রান তুলে ইয়র্কশায়ারকে ইনিংস ও ২০৪ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে।

১৯৩৬ সালে নিকোলস তার একমাত্র দ্বি-শতক রান তুলেন হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে। ট্রেন্ট ব্রিজে নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ৯/৩২ পান। ১৯৩৭ ও ১৯৩৮ সালে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে যথাক্রমে ১৫৯ ও ১৫/১৬৩ পেয়েছিলেন। ১৯৩৮ সালে ব্যক্তিগত সেরা ১৭১ উইকেট পান। এরফলে ইংল্যান্ডের মাটিতে তিনজন সেরা উইকেট সংগ্রাহকের একজন হন স্ট্যান নিকোলস। চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর কারণে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার জন্য মনোনয়ন পান। এ টেস্টটিই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বের সর্বশেষ টেস্ট ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে পুনরায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের প্রচলন ঘটে। এ সময় স্ট্যান নিকোলসের বয়স পঁয়তাল্লিশ বছর ছিল। শারীরিক সুস্থতা নিয়েও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। এরপর বেশ কয়েকবছর বার্মিংহাম ও জেলা লীগে খেলেছেন। কিন্তু, স্বাস্থ্যের ক্রমাগত অবনতি ঘটতে থাকলে সপ্তাহে একদিনও ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতে পারছিলেন না। অবশেষে ইংলিশ মিডল্যান্ডসের স্পায় অবসর নিতে বাধ্য হন।

২৬ জানুয়ারি, ১৯৬১ তারিখে নটিংহ্যামশায়ারের নিউয়ার্ক এলাকায় ৬০ বছর বয়সে স্ট্যান নিকোলসের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. [১] ESPNcricinfo, ESPN, সংগ্রহের তারিখ: ২১ নভেম্বর, ২০১৮
  2. "Wisden Cricketers of the Year"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২১ 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা