স্টেফি গ্রাফ
স্টিফানি মারিয়া "স্টেফি" গ্রাফ[৩] (জার্মান: Stefanie Maria "Steffi" Graf; জন্ম: ১৪ জুন, ১৯৬৯) পশ্চিম জার্মানির বাডেন-ভুর্টেমবার্গের মানহেইমে জন্মগ্রহণকারী বিশ্বের খ্যাতনামা সাবেক পেশাদার প্রমিলা টেনিস খেলোয়াড়। একসময় তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ও সেরা টেনিস খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভ করেছিলেন।[৪] ১৯৮০-এর দশকের শেষার্ধ্ব থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত মহিলাদের টেনিসে একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় আন্দ্রে আগাসি’র সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তিনি সর্বমোট ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম এককের শিরোপা জয় করেন।[৫] ১৯৮৮ সালে টেনিস ইতিহাসে নারী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড়রূপে এক পঞ্জিকাবর্ষে চারটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম এককের শিরোপাসহ অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ের বিরল কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।[৬] সিউলে অনুষ্ঠিত ১৯৮৮ সালের অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক জয়ের মাধ্যমে অনন্য সাধারণ খ্যাতি বহন করে গোল্ডেন স্ল্যাম জয় করেন।
দেশ | জার্মানি[১] |
---|---|
বাসস্থান | লাস ভেগাস, নেভাদা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
জন্ম | মানহেইম, বাদেন-ওর্টেমবার্গ, পশ্চিম জার্মানি | ১৪ জুন ১৯৬৯
উচ্চতা | ১.৭৬ মিটার (৫ ফুট ৯+১⁄২ ইঞ্চি) |
পেশাদারিত্ব অর্জন | ১৯৮২ |
অবসর গ্রহণ | ১৯৯৯ |
খেলার ধরন | ডানহাতি |
পুরস্কার | $২১,৮৯১,৩০৬[২]
|
টেনিস এইচওএফ | ২০০৪ (গ্রাফ/ সদস্য পাতা) |
একক | |
পরিসংখ্যান | ৯০২-১১৫ (৮৮.৭%) |
শিরোপা | ১০৭ (সর্বকালের ৩য়) |
সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিং | ১ নম্বর (১৭ আগস্ট, ১৯৮৭) |
গ্র্যান্ড স্ল্যাম এককের ফলাফল | |
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন | জয় (১৯৮৮, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯৪) |
ফ্রেঞ্চ ওপেন | জয় (১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৩, ১৯৯৫, ১৯৯৬, ১৯৯৯) |
উইম্বলডন | জয় (১৯৮৮, ১৯৮৯, ১৯৯১, ১৯৯২, ১৯৯৩, ১৯৯৫, ১৯৯৬) |
ইউএস ওপেন | জয় (১৯৮৮, ১৯৮৯, ১৯৯৩, ১৯৯৫, ১৯৯৬) |
অন্যান্য প্রতিযোগিতা | |
ট্যুর ফাইনাল | জয় (১৯৮৭, ১৯৮৯, ১৯৯৩, ১৯৯৫, ১৯৯৬) |
অলিম্পিক গেমস | স্বর্ণপদক (১৯৮৮) |
দ্বৈত | |
পরিসংখ্যান | ১৭৩-৭২ (৭০.৬%) |
শিরোপা | ১১ |
সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিং | ৩ নম্বর (৩ মার্চ, ১৯৮৭) |
গ্র্যান্ড স্ল্যাম দ্বৈতের ফলাফল | |
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন | সেমি-ফাইনাল (১৯৮৮, ১৯৮৯) |
ফ্রেঞ্চ ওপেন | ফাইনাল (১৯৮৬, ১৯৮৭, ১৯৮৯) |
উইম্বলডন | জয় (১৯৮৮) |
ইউএস ওপেন | সেমি-ফাইনাল (১৯৮৬, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৮৯) |
অন্যান্য দ্বৈত প্রতিযোগিতা | |
অলিম্পিক গেমস | ব্রোঞ্জপদক (১৯৮৮) |
গ্র্যান্ড স্ল্যাম মিশ্র দ্বৈতের ফলাফল | |
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন | ২রা. (১৯৯১) |
ফ্রেঞ্চ ওপেন | ২রা. (১৯৯৪) |
উইম্বলডন | সে.ফা. (১৯৯৯) |
ইউএস ওপেন | ১রা. (১৯৮৪) |
দলগত প্রতিযোগিতা | |
ফেড কাপ | জয় (১৯৮৭, ১৯৯২) |
হপম্যান কাপ | জয় (১৯৯৩) |
অলিম্পিক পদক রেকর্ড | ||
---|---|---|
মহিলাদের টেনিস | ||
পশ্চিম জার্মানি-এর প্রতিনিধিত্বকারী | ||
১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলেস | একক | |
১৯৮৮ সিউল | একক | |
১৯৮৮ সিউল | দ্বৈত | |
জার্মানি-এর প্রতিনিধিত্বকারী | ||
১৯৯২ বার্সেলোনা | একক |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাবাবা পিটার গ্রাফের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় স্টেফি গ্রাফের টেনিসে হাতেখড়ি ঘটে। পিটার ছিলেন গাড়ি ও বীমা সেবাপ্রদানকারী এবং টেনিস কোচ হিসেবে উৎসাহপ্রদানকারী ব্যক্তি। তিনি তার তিন বয়সী কন্যাকে কাঠের র্যাকেটে কীভাবে বলকে সুইং করাতে হয় তা পারিবারিক শয়নকক্ষে শেখাতেন। চার বছর বয়সে কোর্টে টেনিস শিখতে যান ও মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তিনি তার প্রথম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর থেকেই দ্রুত জুনিয়রদের প্রতিযোগিতা নিয়মিতভাবে জিততে শুরু করেন। ১৯৮২ সালে তিনি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ১২ ও ১৮ বছর বয়সসীমা নির্ধারণী প্রতিযোগিতা জয় করেন। মাত্র তেরো বছর বয়সেই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক টেনিস র্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভুক্ত হন।
ক্রীড়াজীবন
সম্পাদনাগ্রাফ তার দূর্দান্ত গতি, শক্তিশালী সম্মুখের হাতের পুরোটা ধরে রাখা, তীক্ষ্ণতার জন্য পরিচিত হয়ে আছেন। ১৯৯০-এর দশকে তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়েছেন। ১৯৮৭ সালে তিনি তার প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন চেক বংশোদ্ভূত মার্কিন খেলোয়াড় মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাকে পরাভূত করার মধ্য দিয়ে। উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপে মহিলাদের এককের শিরোপা জয় করেন (১৯৮৮-৮৯, ১৯৯১-৯৩, ১৯৯৫-৯৬) সাতবার যা, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা’র নয়বার অর্জনের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। এছাড়াও, ফ্রেঞ্চ ওপেন (১৯৮৭-৮৮, ১৯৯৩, ১৯৯৫-৯৬ ও ১৯৯৯) ছয়বার, ইউএস ওপেনে (১৯৮৮-৮৯, ১৯৯৩, ১৯৯৫-৯৬) পাঁচবার এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের এককে (১৯৮৮-৯০, ১৯৯৪) চারবার বিজয়ী হন। এছাড়াও তিনি ১১বার দ্বৈত শিরোপার অধিকারীনি। ৫৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতায় জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যান হচ্ছে ২২৮-৩৪ (৮৯%)। তন্মধ্যে, ফ্রেঞ্চ ওপেনে ৮৭-১০, উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপে ৭৫-৮, ইউএস ওপেনে ৭৩-১০ এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ৪৭-৬।
সমগ্র ক্রীড়াজীবনে তিনি $২১,৮৯৫,২৭৭ মার্কিন ডলার উপার্জন করে রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীকালে লিন্ডসে ডেভেনপোর্ট জানুয়ারি, ২০০৮ সালে তা অতিক্রম করেন। মহিলাদের এককে তার জয়-পরাজয়ের পরিসংখ্যান ৯০০-১১৫ (৮৮.৭%)।[৭]
সম্মাননা
সম্পাদনাওম্যান’স টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউটিএ) পক্ষ থেকে প্রদত্ত র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের ১ নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন। এপ্রিল, ১৯৮৭ থেকে মার্চ, ১৯৯১ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ১৮৬ সপ্তাহ বিশ্বের ১ নম্বর স্থানের অধিকারীনি ছিলেন স্টেফি গ্রাফ যা অদ্যাবধি রেকর্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।[৮] তিনি যে-কোন পুরুষ কিংবা নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক ৩৭৭ সপ্তাহকাল শীর্ষস্থানে অবস্থান করেন। এছাড়াও তিনি বছর শেষে শীর্ষস্থানে ছিলেন আটবার।[৯] তিনি ১০৭ বার এককে শিরোপা জিতে তৃতীয় স্থানে আছেন। কেবলমাত্র ডব্লিউটিএ’র সর্বকালের সেরাদের তালিকায় তার সামনে আছেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা (১৬৭ শিরোপা) ও ক্রিস এভার্ট (১৫৭ শিরোপা)। ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক টেনিসের হল অব ফেমে প্রবেশ করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনা১৯৯০-এর দশকে তিনি সংক্ষিপ্তকালের জন্য জার্মান টেনিস খেলোয়াড় আলেকজান্ডার রোঞ্জের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।[১০] এছাড়াও, মাইকেল বার্তেলস নামীয় এক গাড়ি প্রতিযোগিতার চালকের সাথেও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ছিল তার।[১১] ১৯৯৯ সালের উইম্বলডন ফাইনালে পরাজয়ের পর বিশ্বের ৩ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে ক্রীড়াজীবন থেকে অবসর নেন স্টেফি গ্রাফ। এসময় তিনি শারীরিক আঘাতে পর্যদুস্ত ছিলেন। ২২ অক্টোবর, ২০০১ তারিখে তিনি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় টেনিস খেলোয়াড় আন্দ্রে আগাসি’র সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ সময় কেবলমাত্র উভয়ের মায়েরাই স্বাক্ষী হিসেবে ছিলেন।[১২] বিয়ের চারদিন পরই নির্দিষ্ট সময়ের ছয় সপ্তাহ পূর্বেই অপরিপক্ক অবস্থায় জাদেন জিল নামীয় এক পুত্র জন্মগ্রহণ করে। এছাড়াও ৩ অক্টোবর, ২০০৩ তারিখে জাজ এলি নামীয় কন্যা জন্ম নেয়।
১৯৯১ সালে লিপজিগে স্টেফি গ্রাফ ইয়ুথ টেনিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন।[১৩] চিলড্রেন ফর টুমরো নামীয় একটি অ-লাভজনক সংস্থার প্রতিষ্ঠান ও সভানেত্রী তিনি। এটি যুদ্ধ অথবা অন্য কোন সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সহায়তার লক্ষ্যে কাজ করছে। গ্রাফ-আগাসি দম্পতি সংস্থার অর্থসংগ্রহের লক্ষ্যে একত্রে টেলিভিশনের অনেকগুলো বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশগ্রহণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ জার্মানির পুণরেকত্রীকরণের পূর্বে পশ্চিম জার্মানির হয়ে খেলন
- ↑ "WTA , Players , Stats , Steffi Graf"। Sonyericssonwtatour.com। ৮ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১১।
- ↑ "Graf, queen of the lawn"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১২।
- ↑ "Andre Agassi revelations leave sport in state of shock"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-২৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Steffi Graf Year In Detail"। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৩।
- ↑ "Q&A: Steffi Graf"। The Guardian। ২২ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৩।
- ↑ "WTA profile of Steffi Graf"। Sonyericssonwtatour.com। ৮ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১১।
- ↑ "WTA bio"। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ "Steffi Graf"। Grove.ufl.edu। ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১১।
- ↑ "http://sportsillustrated.cnn.com/vault/article/magazine/MAG1068538/2/index.htm"। ৩ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৩।
|title=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ "From court ruler to cuddly mother, Graf all about grace". ESPN. 8 May 2008. Retrieved 17 May 2011.
- ↑ Knolle, Sharon. "Andre Agassi and Steffi Graf Wed". Abcnews.go.com. Retrieved 17 May 2011.
- ↑ "Steffi Graf Biography". Retrieved 24 June 2013.