ব্রোঞ্জপদক (ইংরেজি: Bronze medal) এক ধরনের পদক যা ব্রোঞ্জ পদার্থ দিয়ে তৈরী। সাধারণতঃ অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে এ পদক প্রদান করা হয়। অলিম্পিক ক্রীড়া, কমনওয়েলথ গেমস এবং সমগোত্রীয় অন্যান্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত কিংবা দলগতভাবে তৃতীয় স্থান অধিকারী এ মর্যাদার দাবীদার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইসে অনুষ্ঠিত ১৯০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্‌সে সর্বপ্রথম প্রদান করা হয়। তৃতীয় স্থান অধিকারীর জন্য এ পদক বরাদ্দ করা হলেও এর পূর্বেকার অলিম্পিক আসরে ১ম ও ২য় স্থান অধিকারীকে ব্রোঞ্জপদক প্রদান করা হয়েছিল।

১৯৮০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্‌সে প্রদানকৃত ব্রোঞ্জপদক

এছাড়াও, শীর্ষস্থান বা চ্যাম্পিয়ন এবং দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী খেলোয়াড় বা দলকে সনাতনী ধারায় যথাক্রমে স্বর্ণপদক এবং রৌপ্যপদক প্রদান করা হয়ে থাকে।

প্রতিযোগিতা ক্ষেত্র

সম্পাদনা

জয়-পরাজয় নির্ধারণী প্রতিযোগিতায় পদক প্রদান অনেক পূর্ব থেকেই প্রবর্তিত হয়েছে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বিশেষতঃ এথলেটিক্সে বিভিন্ন ধরনের পদক প্রদান করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে পদকে বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তন্মধ্যে -

ধাতব পদার্থের প্রকারভেদের মাধ্যমে গ্রীক পুরাণে বর্ণিত তিন যুগের মানুষকে নির্দেশ করা হয়েছে। স্বর্ণযুগে মানুষ দেবতাদের সংস্পর্শে বসবাস করতো; রৌপ্যযুগে মানুষের যৌবন শত বৎসর এবং ব্রোঞ্জযুগে বীরদের রাজত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থান অর্জনকারীকে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদকের মাধ্যমে কমপক্ষে ঊনবিংশ শতক থেকে প্রদান করা হচ্ছে।

অলিম্পিক ক্রীড়া

সম্পাদনা

১৮৯৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্‌সের আসরে বিজয়ী বা চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগীদেরকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়নি।[] বিজয়ীকে রূপার পদক ও জলপাই পাতার মুকুট প্রদান করার মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়েছিল।[] দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে তামা বা ব্রোঞ্জের পদক ও লরেল পাতার মুকুট প্রদান করা হয়।[] ১৯০০ সালে অধিকাংশ বিজয়ীকে পদকের পরিবর্তে কাপ কিংবা ট্রফি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে প্রথম তিন স্থান অধিকারীকে স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদক এবং ব্রোঞ্জপদক প্রদান করা হয়। এ ধারাটি পরবর্তীকালে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনুসরণ করা হয়। পদক হিসেবে স্বাগতিক দেশের টাকশাল বা কোষাগার থেকে প্রদানের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯২৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্‌সের আসর থেকে শুরু করে ১৯৬৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্‌সের আসর পর্যন্ত ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত চিত্রকরভাস্কর গিউসেপ্পি ক্যাসিওলি'র অঙ্কিত নকশার একপার্শ্বে স্বাগতিক শহরের নাম ও অন্যপার্শ্বে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের প্রতিকৃতি সংবলিত পদকের প্রচলন ছিল। লক্ষ্যণীয় যে, ক্যাসিওলি'র অঙ্কিত নকশায় রোমানদের রঙ্গস্থলের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে যা গ্রীক নাম থেকে উদ্ভূত। ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্‌স থেকে ২০০০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্‌স পর্যন্ত ক্যাসিওলি'র অঙ্কিত নকশায় অল্প পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু সম্মুখ পার্শ্বের নকশা ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকে পরিবর্তিত হয়।

শীতকালীন অলিম্পিকে এ পদক আরো ভিন্নতর হয়েছে। তবে, পাতলা তুষারের আবরণ পদকে তুলে ধরা হতো। পাশাপাশি স্বর্ণ এবং ব্রোঞ্জপদকগুলোকে সর্বদাই একই নকশা অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়।

তবে, মুষ্টিযুদ্ধ, জুডো, তাইকোন্দো এবং কুস্তির ন্যায় কিছু কিছু ক্রীড়া বিষয়ে সেমি-ফাইনালে পরাজিত খেলোয়াড়দ্বয়কে ব্রোঞ্জপদক দেয়া হয়।

মনোবিজ্ঞানে প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা

১৯৫৫ সালে প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানীত্রয় - ভিক্টোরিয়া মেডভেক, স্কট ম্যাদে এবং থমাস গিলোভিচ আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ায় পদক প্রদানে বিপরীতধর্মী চিন্তা-ভাবনা সংবলিত প্রতিক্রিয়া গবেষণা আকারে তুলে ধরেন। তারা দেখিয়েছেন, যে সকল প্রতিযোগী ব্রোঞ্জপদক জয় করে তারা রৌপ্যপদক জয়ী ক্রীড়াবিদের তুলনায় অধিকতর সুখী। রৌপ্যপদক জয়ী ক্রীড়াবিদ মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভোগেন, কেননা তারা অল্পের জন্য স্বর্ণপদক প্রাপ্তি থেকে নিজেকে বিচ্যুত করেছেন। সে তুলনায় ব্রোঞ্জপদক জয়ী খেলোয়াড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে কমপক্ষে একটি পদক জয়ে সক্ষমতা ও পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। চতুর্থ স্থান অধিকারী প্রতিযোগীকে সাধারণতঃ কোন পদক দেয়া হয় না।[] নক-আউটভিত্তিক প্রতিযোগিতা হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলে পুনরায় ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করতে হয়। চূড়ান্ত খেলায় পরাজিত হবার প্রেক্ষাপটে পরাজিত দলকে রৌপ্যপদক প্রদান করা হয়।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. London 2012: Olympic medals timeline, BBC News. Accessed 27 July 2011.
  2. De Coubertin, Pierre (১৮৯৭)। The Olympic Games: BC 776–AD 1896 (পিডিএফ)The Olympic Games in 1896 - Second Part। Athens: Charles Beck। পৃষ্ঠা 232–4। ২৭ মে ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১২  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  3. “After this followed the distribution of the second prizes. The King presented each winner with a bronze medal and a laurel branch.” (English version) But: “Darauf treten die zweiten Sieger einzeln heran und empfangen aus den Händen des Königs einen Lorbeerzweig und eine kupferne Medaille” (German version) Pierre de Coubertin and others, The Olympic Games In 1 8 9 6, ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ মে ২০০৮ তারিখে Athens , London, Leipzig 1897, p.114 and p. 115. In: The Olympic Games B.C. 776. — A. D. 1896. Part II
  4. "social_studies:psychology"। ২৬ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১২