স্কটল্যান্ডে ইসলাম

স্কটল্যান্ডে ইসলাম কথাটির মাধ্যমে স্কটল্যান্ডের ইসলাম ধর্মের সকল বিষয়কে বোঝায়। স্কটল্যান্ডে প্রথম মুসলিম একজন মেডিকেল ছাত্র ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি ১৮৫৮ থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। পণ্য উৎপাদন এবং গ্লাসগোর ব্যস্ত বন্দর কথা শুনলেই বোঝা যায় অনেক লস্কার সেখানে নিযুক্ত ছিল।[] স্কটল্যান্ডের বেশিরভাগ মুসলিমই বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে অভিবাসিত পরিবারের সদস্য। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী স্কটল্যান্ডের জনসংখ্যার ১.৪ শতাংশ মুসলিম (৭৬,৭৩৭)।[] ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী তা বৃদ্ধি পেয়ে মোট জনসংখ্যার ২.২% হয় (১১৯,৮৭২।[]

স্কটল্যান্ডে ইসলাম
মোট জনসংখ্যা
১১৯,৮৭২-২.২% (২০২২ সালের আদমশুমারি)[]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
গ্লাসগো সিটি৪৮,৭৬৬ - ৭.৯%
এডিনবরা সিটি১৮,০৩৪ - ৩.৫%
এবারডিন সিটি৬,৪৬৫ - ২.৯%
ডান্ডি সিটি৬,২৩২ - ৪.২%
ধর্ম
সংখ্যাগুরু সুন্নি ইসলাম

ইতিহাস

সম্পাদনা

স্কটল্যান্ডে প্রথম নামধারী মুসলিম ওয়াজির বেগ বোম্বে (বর্তমানে "মুম্বাই") থেকে এসেছিলেন বলেজানা যায়। ১৮৫৮ এবং ১৮৫৯ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একজন মেডিকেল ছাত্র হিসাবে তার নাম নথিবদ্ধ করা হয়েছে।[] উৎপাদন এবং গ্লাসগোর ব্যস্ত সমুদ্রবন্দরের কথা শুনলেই বোঝা যায় অনেক লস্কার সেখানে নিযুক্ত ছিল। ডান্ডি অঞ্চল ছিল পাট আমদানির শীর্ষে। এর বন্দরে বাংলার নাবিকদেরও দেখা যেত। গ্লাসগো নাবিকদের হোমের নথিপত্র থেকে দেখা যায়, ১৯০৩ সালে জাহাজের যাত্রীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ (৫,৫০০) ছিল মুসলিম লস্কর।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন][উদ্ধৃতি প্রয়োজন]

তবে স্কটল্যান্ডে মুসলমানদের অভিবাসন তুলনামূলকভাবে একটি সাম্প্রতিক ঘটনা। স্কটিশ মুসলমানদের অধিকাংশই বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে অভিবাসিত পরিবারের সদস্য। ২০০১ সালে স্কটল্যান্ডের মুসলমানরা (৪২,৫৫৭) ছিল মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৯%,[] যাদের মধ্যে গ্লাসগোতে বসবাস করত ৩০,০০০ জন।[] ২০১১ সাল নাগাদ মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে হয় ৭৬,৭৩৭; যা স্কটল্যান্ডের জনসংখ্যার ১.৪%।[]

জনমিতি

সম্পাদনা

স্কটল্যান্ডের মুসলমানরা জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী। যদিও মুসলমানদের অধিকাংশই পাকিস্তানি (৫৮%), ৯.৮% আরব, ৭.৮% শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় এবং ৭% আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী স্কটল্যান্ডের যেকোনো শহরের তুলনায় গ্লাসগোতে সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে, যেখানকার ৫% বাসিন্দা নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দেন। পোলোকশিল্ডস এবং সাউথসাইড সেন্ট্রাল, এই দুটি ওয়ার্ডে মুসলিম বাসিন্দাদের সবচেয়ে বেশি― যথাক্রমে ২৭.৮% এবং ১৫.৭%। স্কটল্যান্ডের ৩৭.৩% মুসলিমের জন্ম স্কটল্যান্ডে, এছাড়া ৭.৩% মুসলিমের জন্ম হয়েছে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে।[] স্কটল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুসলিম জনসংখ্যার আবাসস্থল রয়েছে এডিনবরাতে। একসাথে হিসাব করলে দেখা যায়, গ্লাসগো এবং এডিনবরা স্কটল্যান্ডের সমস্ত মুসলমানদের প্রায় ৬০% এর আবাসস্থল।[]

পরিচয়

সম্পাদনা

২০১১ সালের স্কটিশ আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, স্কটল্যান্ডের ৭১% মুসলমান তাদের একমাত্র জাতীয় পরিচয় স্কটিশ বা ব্রিটিশ (বা যুক্তরাজ্যের পরিচয়ের যেকোন সমন্বয়) বলে মনে করে। আদমশুমারির উপসংহারে বলা হয়েছে, "মুসলিমরা বিশেষ করে স্কটল্যান্ড এবং সাধারণভাবে যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত হওয়ার প্রতি দৃঢ় অনুভূতি প্রকাশ করেছে।"[]

শিক্ষা ও কর্মসংস্থান

সম্পাদনা

২০১১ সালে স্কটল্যান্ডের ডিগ্রি স্তরের যোগ্যতার গড় যেখানে ছিল ২৭.১%, সেখানে স্কটিশ মুসলমানদের গড় ছিল ৩৭.৫%। স্কটল্যান্ডের ২১.৪% মুসলমান জনগোষ্ঠীর কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না, যা স্কটল্যান্ডের গড় ২২.৯% থেকে সামান্য কম। স্কটল্যান্ডের মাত্র ৪.৫% মুসলমান জনগোষ্ঠীর ইংরেজি ভাষার দক্ষতা দুর্বল ছিল।[]

২০১১ সালে স্কটল্যান্ডের মুসলমানদের সাধারণ জনসংখ্যার (৫১%) তুলনায় পূর্ণকালীন চাকরিতে নিযুক্ত (৩১%) হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। এর পেছনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সাধারণ জনসংখ্যার (৬%) তুলনায় মুসলিমদের ছাত্রত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা (১৯%) বেশি হওয়া এবং সামগ্রিকভাবে স্কটল্যান্ডের ৫.৬% মহিলা 'বাড়ি বা পরিবারের দেখাশোনা করেন', যা মুসলিম মহিলাদের ক্ষেত্রে ছিল ২৫%।[] ৮.৭% স্কটিশ ছিল মুসলমান বেকার, যেখানে সামগ্রিক বেকার ছিল সাধারণ জনসংখ্যার ৬.৩%।[] যেখানে পূর্ণকালীন-সময়ে কর্মরত স্কটিশ মুসলমানদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ আত্ম-কর্মসংস্থানে নিযুক্ত, সে তুলনায় সাধারণ জনসংখ্যার ১২% মানুষ আত্ম-কর্মসংস্থানে নিযুক্ত।[]

 
এডিনবরা কেন্দ্রীয় মসজিদ
 
অ্যাবরদিন মসজিদ ও ইসলামি কেন্দ্র
 
ডান্ডি কেন্দ্রীয় মসজিদ

স্কটল্যান্ডের প্রধান শহরগুলোর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হলো গ্লাসগো সেন্ট্রাল মসজিদ, এডিনবরা কেন্দ্রীয় মসজিদ, অ্যাবরদিন মসজিদ এবং ইসলামিক কেন্দ্র এবং ডান্ডি কেন্দ্রীয় মসজিদ

উল্লেখযোগ্য স্কটিশ মুসলিম

সম্পাদনা
  • আমের আনোয়ার, শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী ও প্রচারক
  • আলী আব্বাসি, গ্যালিক টেলিভিশন উপস্থাপক।
  • বশির আহমেদ - স্কটিশ পার্লামেন্টের প্রথম এশীয় সদস্য (২০০৭-০৯)
  • তাসমিনা আহমেদ-শেখ - রাজনীতিবিদ, ওচিল এবং সাউথ পার্থশায়ারের সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ২০১৫-২০১৭, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মুখপাত্র, হাউস অফ কমন্সে হাউসটির ডেপুটি শ্যাডো লিডার এবং এসএনপি-এর জাতীয় মহিলা ও সমতা আহ্বায়ক মো.
  • আবদাল-কাদির আস-সুফী (ইয়ান ডালাস) - একজন শাইখ অফ ইনস্ট্রাকশন, দারকাওয়ি-শাদিলি-কাদিরি তরিকার নেতা এবং মুরাবিতুন ওয়ার্ল্ড মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা
  • বশির মান, সাবেক লেবার কাউন্সিলর
  • মিসবাহ ইরাম আহমেদ রানা (মলি ক্যাম্পবেল), একটি মিশ্র স্কটিশ-পাকিস্তানি ঐতিহ্য যা প্রচারিত পিতামাতার হেফাজতে সমস্যায় জড়িত
  • হামজা ইউসুফ এমএসপি - প্রথম এশীয় হিসেবে স্কটল্যান্ডের প্রথম মন্ত্রী হয়েছেন
  • আনাস সারওয়ার এমএসপি - স্কটিশ লেবার পার্টির নেতা
  • মোহাম্মদ সারওয়ার এমপি - ১৯৯৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ওয়েস্টমিনস্টারের প্রথম মুসলিম এমপি। তার ছেলে আনাস সারওয়ার ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত একই আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং ২০১৬ সাল থেকে এমএসপি ছিলেন।
  • মুনা সিদ্দিকী - একজন ব্রিটিশ মুসলিম শিক্ষাবিদ, বর্তমানে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম এবং আন্তঃধর্মীয় অধ্যয়নের একজন অধ্যাপক,[] পাশাপাশি বিবিসি রেডিও ৪, দ্য টাইমস, স্কটসম্যান, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য হেরাল্ডের নিয়মিত অবদানকারী
  • কাউকব স্টুয়ার্ট - পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত প্রথম মহিলা যিনি ২০২১ সালে স্কটিশ পার্লামেন্টের (এমএসপি) সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন
  • ভিসকাউন্ট রেইডেভেন, আর্ল অফ সিফিল্ডের বড় ছেলে।
  • ওসামা সাইদ, স্কটিশ-ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এবং আল-জাজিরা গ্লোবাল পিআর অ্যান্ড মার্কেটিং-এর সাবেক প্রধান
  • মুশতাক আহমেদ, ল্যানারকশায়ারের লর্ড লেফটেন্যান্ট।
  • জারা মোহাম্মদ, ব্রিটেনের মুসলিম পরিষদের প্রথম মহিলা এবং সর্বকনিষ্ঠ মহাসচিব

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Scotland's Census 2022 - Ethnic group, national identity, language and religion - Chart data"Scotland's CensusNational Records of Scotland। ২১ মে ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০২৪  Alternative URL 'Search data by location' > 'All of Scotland' > 'Ethnic group, national identity, language and religion' > 'Religion'
  2. "LTSCOTLAND.ORG.UK"www.ltscotland.org.uk। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৮ 
  3. Elshayyal, Khadijah। "Scottish Muslims in Numbers: Understanding Scotland's Muslim population through the 2011 Census" (পিডিএফ)। University of Edinburgh। 
  4. Scottish Government, St Andrew's House (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৫)। "Analysis of Religion in the 2001 Census"gov.scot। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৮ 
  5. Young Muslims UK ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ জুলাই ২০১১ তারিখে, accessed 4 August 2010
  6. "Scotland's Census 2011 – Table KS209SCb" (পিডিএফ)। scotlandscensus.gov.uk। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  7. Bonino, Stefano (২০১৫)। "Scottish Muslims Through a Decade of Change: Wounded by the Stigma, Healed by Islam, Rescued by Scotland": 78–105। আইএসএসএন 0966-0356ডিওআই:10.3366/scot.2015.0054 
  8. Cameron, Lucinda (২৯ নভেম্বর ২০১৬)। "Study finds Muslims more likely to have a degree than other Scots"dailyrecord.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৮ 
  9. "Summit on religious harmony is thrown into discord by Malaysia"The Times। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা