সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী
সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী (জন্ম মার্চ ১৯৭২) হলেন একজন মুসলিম পন্ডিত, রাজনীতিবিদ, টিভি উপস্থাপক এবং বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান মহাসচিব। তিনি মানুষের কাছে চাঁদপুরী শাহ দরবার শরীফের পীর হিসেবেও পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার মামলা করে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছেন।[১][২][৩][৪]
সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী মা. জি. আ | |
---|---|
সাজ্জাদানশীন চাঁদপুরী শাহ দরবার শরীফ | |
অফিসে ২৩ জুন ২০২০ – বর্তমান | |
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব | |
অফিসে ১৭ এপ্রিল ২০১৮ – বর্তমান | |
পূর্বসূরী | এম এ আউয়াল |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | মার্চ ১৯৭২ (বয়স ৫২) |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পিতামাতা |
|
যুগ | আধুনিক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
কাজ | রাজনীতি |
দর্শন | সুফি |
মুসলিম নেতা | |
যার দ্বারা প্রভাবিত | |
যাদের প্রভাবিত করেন |
জন্ম ও পরিচয়
সম্পাদনারেজাউল হক চাঁদপুরী ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার আশরাফ নগরে একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা গাজীউল হক চাঁদপুরী ছিলেন প্রবীণ ইসলামী পন্ডিত, সুফী সাধক ও চাঁদপুরী শাহ দরবারের পীর। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে রেজাউল হক সবার বড়।[৫]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনা২০০৫ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের গঠনের মাধ্যমে রেজাউল হক চাঁদপুরীর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। ২০০৮ সালে দলীয় কাউন্সিলে তিনি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন এবং ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৫ ও কুমিল্লা-৮ আসন থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৮ সালে সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালকে দল থেকে বহিস্কারের পর দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী পুনরায় রেজাউল হককে দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দেন।[৬][৭][৮]
জামায়াতে ইসলামীর বিরোধীতা
সম্পাদনাআদর্শিক মতভিন্নতার কারণে সৈয়দ রেজাউল হক রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দল, জামায়াতে ইসলামীর বিরোধীতা করে আসছেন। ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশন থেকে রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে সৈয়দ রেজাউল হকসহ বিভিন্ন সংগঠনের ২৫জন ব্যক্তি ২০০৯ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এর পর ঐ বছরেই ২৭ জানুয়ারী বাংলাদেশ হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালতের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। পরবর্তিতে ২০১৩ সালের ১লা আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রুলের রায় ঘোষণা করে। রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।[৯]
নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদী প্রসঙ্গ
সম্পাদনা২০১০ সালের ১৭ মার্চ একটি জনসভায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলাম নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে নিজামীর জীবনকে ইসলামের নবী মুহাম্মাদের(সা.) সাথে তুলনা করেন। যার প্রেক্ষিতে, "ইসলাম ধর্মবলম্বী মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে" এমন অভিযোগ এনে সৈয়দ রেজাউল হক জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় ৫জন নেতার নামে মামলা করেন। বাংলাদেশের আদালত জামায়াতের এই তিন নেতাকে মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ডিত করলেও সৈয়দ রেজাউল হকের করা মামলাতেই প্রথমে তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল।[১০][১১]
জামায়াতের প্রার্থিতা বাতিলের প্রচেষ্টা
সম্পাদনা২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ২৫জন প্রার্থীর ২২জন ধানের শীষ প্রতীকে ও ৩জন স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করলে সৈয়দ রেজাউল হক জামায়াত প্রাথীদের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ২৫জন প্রার্থির প্রার্থিতা বাতিলের আইনগত সুযোগ নেই বলে জানালে রেজাউল হক চাঁদপুরী নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। এর পর শুনানিতে বিচারপতি বলেন, "আগের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে দলীয় প্রার্থী হতে হলে তিন বছর সংশ্লিষ্ট দলের সদস্য পদে থাকার যে বিধান ছিল সেটি সংশোধিত আদেশে বিলুপ্ত করা হয়েছে"; তাই তাদের প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই।[১২][১৩]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "তরিকত ফেডারেশনের নতুন মহাসচিব রেজাউল"। দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৬।
- ↑ "জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি"। ডিবিসি নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-৩০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "জামায়াতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা"। বিবিসি নিউজ বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-২১।
- ↑ "জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশের নামে আহলে সুন্নাতের চাঁদাবাজি!"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০২১-১২-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-৩১।
- ↑ "প্রখ্যাত সূফী সাধক সৈয়দ মোহাম্মদ গাজীউল হক চাঁদপুরী আর নেই"। কুমিল্লার কাগজ। ২০২০-০৬-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২২।
- ↑ "৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন" (পিডিএফ)। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ২৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ "রামগঞ্জের এমপি আউয়ালকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি"। দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৮।
- ↑ "আউয়ালকে সরিয়ে তরিকতের মহাসচিব রেজাউল"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০২১-১২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৭।
- ↑ "নিবন্ধন অবৈধ নির্বাচনে অযোগ্য জামায়াত"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০১৩-০৮-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-০১।
- ↑ "নিজামী মুজাহিদ সাঈদী গ্রেপ্তার"। কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-৩০।
- ↑ ""নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদী গ্রেপ্তার""। দৈনিক প্রথম আলো। ২০১০-০৭-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১০।
- ↑ "সংসদ নির্বাচন: জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বহালের বিরুদ্ধে রুল হাইকোর্টের"। বিবিসি নিউজ বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-২৭।
- ↑ "জামায়াত প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে রিট"। একুশে টেলিভিশন বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-১৭।